একাডেমিক কোন শিক্ষা না থাকলেও প্রবল ইচ্ছা এবং চেষ্টায় যে মানুষ বহু কিছু করতে পারে, যশোরের শার্শা উপযেলার মোটর সাইকেল মেকানিক মীযান তার দৃষ্টান্ত। কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল আগ্রহে মীযান এখন দেশসেরা আবিষ্কারক ও উদ্ভাবক হ’তে যাচ্ছে। নতুন নতুন চিন্তা আর গবেষণায় এখন তার আবিষ্কারের সংখ্যা ৮ টি।
দরিদ্রতার কারণে লেখাপড়া শিখতে পারেনি মীযান। মোটর মেকানিক হিসাবে র্কমজীবন শুরু হয় তার। বর্তমানে শার্শা বাজারে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে তার একটি মোটর সাইকেলের গ্যারেজ রয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই তার শখ ছিল নতুন কিছু করার, নতুন কিছু জানার। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে মীযান প্রথমে (১) উদ্ভাবন করেন হাফ ক্রানসেপ্ট দিয়ে একটি আলগা ইঞ্জিন। যা একবার জ্বালানী তেল দিয়ে চালু করলে পরবর্তীতে আর তেল লাগত না। ইঞ্জিনের সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে জ্বালানী তৈরী করে নিজে নিজে চলতো ইঞ্জিনটি।
ঢাকার তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির পর মীযান উদ্ভাবন করেন (২) স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, যা বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা, অফিস-আদালতে আগুন লাগলে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষার্থে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে আগুন নেভাতে শুরু করে। সাথে সাথে এটি স্বয়ংক্রিয় এলার্ম বাজায়, সংযুক্ত মোবাইল থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে ফোন করে ও পানির পাম্প অন করে দেয়।
অতঃপর (৩) দেশে পেট্রোল বোমায় যখন মানুষ পোড়ানো হচ্ছিল, তখন মীযান উদ্বাবন করেন অগ্নিনিরোধক জ্যাকেট। এ জ্যাকেট পরে ড্রাইভার বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে পারবেন এবং আগুনের মধ্যে গিয়ে সম্পদ রক্ষা করতে পারবেন। তাতে শরীরে আগুন স্পর্শ করবে না। আরো তৈরী করেন (৪) অগ্নিনিরোধক হেলমেট। এটি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আগুনে গলার শ্বাসনালী পুড়বে না।
কৃষকদের জন্য (৫) স্বয়ংক্রিয় সেচ যন্ত্র হ’ল তার আরেকটি উদ্ভাবন। কৃষকরা যেকোন দূরত্বের মাঠের জমিতে পানি দিতে বাড়ি বসেই সেচযন্ত্রটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্ধ বা চালু করতে পারবেন। তাছাড়া (৬) এ যন্ত্রটি জমিতে পানির প্রয়োজন হিসাবে নিজে নিজেই চালু ও বন্ধ হয়ে যায়। দেশীয় প্রযুক্তিতে মীযান তার সপ্তম উদ্ভাবন করেছেন (৭) ফ্যামিলি মোটরযান। ব্যবহারযোগ্য এ কার এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া পরিবেশ রক্ষার্থে (৮) সেফটি যন্ত্র উদ্ভাবনের কারণে ২০১৬ সালে তিনি জাতীয় পর্যায়ে মীযান পরিবেশ পদক লাভ করেন। এ পর্যন্ত মোট ১৭টি সাফল্য সনদ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন অসংখ্য ক্রেস্ট ও সাফল্য পুরস্কার।
এরইমধ্যে মীযানের আবিষ্কৃত দেশীয় প্রযুক্তির মোটরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুছ ছামাদ জানান, বিশ^বিদ্যালয়ে না পড়েও একজন অশিক্ষিত লোক বেশ কিছু নতুন জিনিস আবিষ্কার করে রীতিমত সাড়া ফেলেছে। আমরা তাকে উৎসাহিত করেছি। মীযান জানান, তার স্বপ্ন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। তার বর্তমান উদ্ভাবন গবেষণা চলছে দুষিত বায়ু শোধন যন্ত্র নিয়ে।
[এরূপ ব্যক্তিদের উৎসাহ দেওয়া সরকার ও ধনিক শ্রেণীর জন্য অপরিহার্য। ইতিপূর্বে বায়ু দিয়ে গাড়ী চালানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন দেশীয় বিজ্ঞানী নাজমুল হুদা। কিন্তু বিগত সরকারের সমর্থন না পেয়ে বিদেশীরা তার প্রযুক্তির মালিকানা খরীদ করে নিয়েছে। এরূপ যেন আর না হয় সেদিকে সরকারকে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে (স.স.)]