কক্সবাজার ৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুম‘আর খুৎবা : রাজশাহী থেকে আগের দিন বৃহস্পতিবার বিমান যোগে ঢাকা এসে পরদিন ড. সাখাওয়াত হোসাইনকে সাথে নিয়ে আমীরে জামা‘আত বিমান যোগে বেলা সাড়ে ১১-টায় কক্সবাজার পৌঁছেন। সেখানে যেলা সভাপতি সহ অন্যান্যগণ তাঁদের স্বাগত জানান। অতঃপর তাঁরা হোটেল লাইট হাউজের নির্ধারিত কক্ষে ব্যাগ-পত্র রেখে ওযূ সেরে নব নির্মিত পাহাড়তলী আহলেহাদীছ জামে মসজিদে গমন করেন। অতঃপর আমীরে জামা‘আত জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। এ সময় তিনি কক্সবাজার শহরে সর্বপ্রথম নির্মিত আহলেহাদীছ জামে মসজিদে জুম‘আর খুৎবা দানের সুযোগ লাভে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। ইন্টারনেটে খবর জানতে পেয়ে দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে আগত পর্যটকরা জুম‘আয় উপস্থিত হন। যারা ছালাত শেষে আবেগভরে কুশল বিনিময় করেন এবং এখানে আহলেহাদীছ জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণভরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
খুৎবায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত মুছল্লীদেরকে স্ব স্ব জীবনের সফরসূচী স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবনে একটা সময় ছিল যখন সে কিছুই ছিলনা। মহান আল্লাহই তাকে মায়ের গর্ভে রূহ ফুঁকে দেন ও চার মাস বয়সে তার তাক্বদীর লিখে দেন। অতঃপর দুনিয়াতে শৈশব-কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য পেরিয়ে আবার সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হয়। এই দীর্ঘ সফরসূচীর রূপকার ও নিয়ন্ত্রক যিনি, তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ। অতএব আমাদেরকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করতে হবে। আর তা অবশ্যই তাঁর প্রেরিত শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শিখানো ও দেখানো পদ্ধতিতে করতে হবে। মানব রচিত কোন ভ্রান্ত পদ্ধতিতে নয়। তিনি মুছল্লীদের নিকট নির্যাতিত ও সর্বস্বহারা রোহিঙ্গা মুসলমানের সোনালী অতীত তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী এই সকল অসহায় ভাই-বোনদের সহযোগিতায় উদারহস্তে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
সুধী সমাবেশ : একইদিন বাদ এশা উক্ত মসজিদে কক্সবাজার যেলা কমিটি পুনর্গঠন উপলক্ষ্যে এক সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি এ্যাডভোকেট শফীউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহাতারাম আমীরে জামা‘আত দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের সাগর বিধৌত পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ‘আন্দোলন’-এর কর্মী ও সাথী ভাইদের দাওয়াতী ও সামাজিক কর্মতৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তাদের জন্য খাছ দো‘আ করেন। এ সময়ে তিনি সাংগঠনিক জীবনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দায়িত্বশীলদেরকে নব নব ফিৎনা ও ধোঁকাসমূহ থেকে দূরে থেকে স্রেফ পরকালীন মুক্তির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অভ্রান্ত দাওয়াত সর্বমহলে পৌঁছে দেয়ার আহবান জানান।
যেলা গঠন : অতঃপর পৃথক স্থানে সদস্যদের সাথে পরামর্শক্রমে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন ২০১৭-২০১৯ সেশনের জন্য কক্সবাজার যেলার নতুন কর্ম পরিষদ প্রস্তাব করেন। অতঃপর মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের অনুমোদনক্রমে সেটি সুধী সমাবেশে ঘোষণা করেন। পরে ‘কর্মীদের গুণাবলী’র উপরে নাতিদীর্ঘ ভাষণ শেষে আমীরে জামা‘আত তাদের বায়‘আত গ্রহণ করেন ও তাদের সার্বিক সাফল্যের দো‘আ করেন।
চট্টগ্রাম ১০ই সেপ্টেম্বর রবিবার : কক্সবাজার সফর শেষে পরদিন সকাল সাড়ে ৯-টার কোচ যোগে আমীরে জামা‘আত কক্সবাজার যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি এ্যাডভোকেট শফীউল ইসলামকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রাম পৌঁছলে সেখানে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ সা‘দী ও প্রচার সম্পাদক আছিফুল ইসলাম। অতঃপর যেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা ও উত্তর পতেঙ্গাস্থ নব নির্মিত বায়তুর রহমান আহলেহাদীছ জামে মসজিদ কমপ্লেক্স -এর জমিদাতা জনাব আব্দুশ শুকূর-এর বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।
সুধী সমাবেশ : ১০ তারিখ বাদ মাগরিব আমীরে জামা‘আত নির্মাণাধীন উক্ত মসজিদে চট্টগ্রাম যেলা কমিটি পুনর্গঠন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে যোগদান করেন। যেলা আন্দোলন-এর সভাপতি ডা. শামীম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সমবেত কর্মী ও সুধীদের উদ্দেশ্যে আহলেহাদীছের বিশুদ্ধ আক্বীদা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আক্বীদাগত বিভ্রান্তির কারণেই আজ কেউ চরমপন্থী হচ্ছে, কেউ শৈথিল্যবাদী হচ্ছে। অথচ এর কোনটিই সঠিক আক্বীদা নয়, বরং সঠিক আক্বীদা হ’ল আহলেহাদীছের মধ্যবর্তী আক্বীদা। তিনি সকলকে আমল বিশুদ্ধ করার সাথে সাথে আক্বীদা বিশুদ্ধ করার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের আহবান জানান।
উল্লেখ্য যে, পাঁচ তলা ভিতের উক্ত জামে মসজিদের চার তলার ছাদ দেওয়া হয়েছে। নীচ তলা মেয়েদের এবং দো‘তলা ও তিন তলা পুরুষ মুছল্লীদের ছালাত চলছে। সামনের মার্কেটটি ভেঙ্গে সেখানে বহুতল মাদরাসা, হেফযখানা, ইয়াতীমখানা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত হবে। মসজিদের বহু কাজ বাকী রয়েছে। যা দানশীল মুমিন ভাই-বোনদের অর্থ সাহায্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। পুরা কমপ্লেক্সটি ‘ইসলামিক কমপ্লেক্স রাজশাহী’-এর নামে ঘোষণাকৃত এবং তার অনুমোদিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত। আমীরে জামা‘আত ৩০শে অক্টোবর’১৫ জুম‘আর ছালাতের মাধ্যমে অত্র মসজিদ উদ্বোধন করেন।
অফিস উদ্বোধন : সুধী সমাবেশ শেষে আমীরে জামা‘আত বায়তুর রহমান জামে মসজিদ সংলগ্ন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ চট্টগ্রাম যেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন। উক্ত মসজিদের খত্বীব ও যেলা ‘যুবসংঘে’র সভাপতি মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর প্রশিক্ষণ সম্পাদক শামসুল আলম কর্তৃক কুরআন তেলাওয়াত ও জাগরণীর পর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত যেলা দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত নছীহতমূলক বক্তব্য পেশ করেন। তিনি কর্মীদেরকে দাওয়াতী কাজ আরও যোরদার করার আহবান জানান।
যেলা গঠন : অতঃপর তিনি সদস্যদের পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৭ -২০১৯ সেশনের জন্য চট্টগ্রাম যেলা ‘আন্দোলন’-এর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। অতঃপর দায়িত্বশীলদের আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন। অতঃপর সকলের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক রাজধানীতে দাওয়াতের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও থানায় পৃথক পৃথক কমিটি গঠনের মাধ্যমে ‘আন্দোলন’কে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান।
রাজশাহী প্রত্যাবর্তন : কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে চারদিনের সফর শেষে পঞ্চম দিন ১১ই সেপ্টেম্বর সোমবার আমীরে জামা‘আত সফরসঙ্গী সহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হ’তে পূর্বাহ্নে বিমান যোগে ঢাকা, অতঃপর ঢাকা থেকে অপরাহ্নে রওয়ানা হয়ে বিকাল ৪-২০ মিনিটে রাজশাহী বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।