১. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,اَلْعَالَم طَبِيبُ الدِّينٍ، وَالدِّرْهَمُ دَاءُ الدِّينِ، فَإِذَا جَذَبَ الطَّبِيبُ الدَّاءُ إِلَى نَفْسِهِ فَمَتَى يُدَاوِي غَيْرَهُ؟ ‘আলেম হ’লেন দ্বীনের চিকিৎসক এবং টাকা-পয়সা হ’ল দ্বীনের জন্য রোগ-ব্যাধি স্বরূপ। কিন্তু চিকিৎসকই যদি রোগের প্রতি তথা অর্থের মোহে মোহগ্রস্ত থাকেন, তাহ’লে তিনি অন্যের চিকিৎসা করবেন কখন?’।[1]
২. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,فَإِنَّ الْعَالَمَ إِذَا زَرَعَ عِلْمَهُ عِنْدَ غَيْرِهِ ثُمَّ مَاتَ؛ جَرَى عَلَيْهِ أَجْرُهُ وَبَقِيَ لَهُ ذِكْرُهُ، وَهُوَ عُمْرٌ ثَانٍ وَحَيَاةٌ أُخْرَى، ‘আলেম যখন অন্যের মাঝে জ্ঞানের চাষাবাদ (বিতরণ) করে মারা যান, তখন তার জন্য এর নেকী চলমান থাকে এবং তার সুনাম-সুখ্যাতি অক্ষুণ্ণ থাকে। ফলে সেটা হয় তার জন্য দ্বিতীয় জীবন এবং আরেকটি হায়াত’।[2]
৩. ইমাম আবূ ইউসুফ (রহঃ)-এর যখন মৃত্যু ঘনিয়ে আসে তখন তিনি বলেন,كُلُّ مَا أَفْتَيْتُ بِهِ فَقَدْ رَجَعتُ عَنْهُ، إِلَّا مَا وَافَقَ كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُولِ اللهِ صـ ‘আমি জীবনে যত ফৎওয়া দিয়েছি, সব ফৎওয়া থেকে ফিরে আসলাম (পরিত্যাগ করলাম), কেবল সেসব ফৎওয়া ব্যতীত যেগুলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হয়েছে’।[3]
৪. বেলাল বিন সা‘দ (রহঃ) বলেন,الْخَطِيئَةِ، وَلَكِنَّ انْظُرْ مَنْ عَصَيْتَ، ‘পাপের ক্ষুদ্রতার দিকে দৃষ্টিপাত করো না; বরং তুমি কার অবাধ্যতা করছ তার দিকে তাকাও’।[4]
৫. ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, رَهْبَةُ الْعَبْدِ مِنَ اللهِ عَلَى قَدْرِ عِلْمِهِ بِاللهِ، وَزُهْدِهِ فِي الدُّنْيَا عَلَى قَدْرِ رَغْبَتِهِ فِي الْآخِرَةِ، ‘আল্লাহ সম্পর্কে বান্দার জ্ঞান অনুপাতে আল্লাহর প্রতি বান্দার মনে ভয় বিরাজ করে। আর আখেরাতের প্রতি বান্দার আকর্ষণ অনুপাতে তার দুনিয়াবিমুখতা হয়ে থাকে’।[5]
৬. শুমাইত্ব ইবনে আজলান (রহঃ) বলেন, إنسانان معذبان في الدنيا: غني أعطي دنيا فهو بها مشغول، وفقير زويت عنه فهو يتبعها نفسه فنفسه تقطع عليها حسرات، ‘দুনিয়াতে দুই শ্রেণীর মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়। (১) ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে দুনিয়া দেওয়া হয়েছে আর সে তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। (২) দরিদ্র ব্যক্তি, যাকে দুনিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে, আর সে মনে-প্রাণে দুনিয়ার পিছনে ছুটছে। এভাবে দুনিয়ার জন্য আফসোস করতে করতে তার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে’।[6]
৭. মায়মূন বিন মেহরান (রহঃ) বলেন, ‘আমি ইবনে ওমর (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম এবং তার বাড়ির যাবতীয় আসবাবপত্রের মূল্য কত হ’তে পারে, তা নির্ণয় করলাম। কিন্তু আমি এখানে সব মিলিয়ে ১০০ দিরহাম সমমূল্যের আসবাবপত্রও পেলাম না’।[7]
৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, لأَنْ أَكُوْنَ عَاشِرَ عَشْرَةِ مَسَاكِيْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ، أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَكُوْنَ عَاشِرَ عَشْرَةِ أَغْنِيَاءَ، فَإِنَّ الأَكْثَرِيْنَ هُمُ الأَقَلُّوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ، إِلَاّ مَنْ قَالَ هَكَذَا وَهَكَذَا، يَقُوْلُ: يَتَصَدَّقُ يَمِيْناً وَشِمَالاً، ‘ক্বিয়ামতের দিন দশজন ধনীর মাঝে দশম হওয়ার চেয়ে দশজন মিসকীনের মাঝে দশম হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা ক্বিয়ামতের দিন ধনীরা সবচেয়ে বেশী নিঃস্ব হবে। তবে তারা ব্যতীত যারা এই এই করবে অর্থাৎ ডানে-বামে দান-ছাদাক্বাহ করবে’।[8]
৯. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,قد يكون امتناع إجابة الدعاء لآفة فيك، فربما يكون في مأكولك شبهة، أو قلبك وقت الدعاء في غفلة، أو تزاد عقوبتك في منع حاجتك لذنب ما صدقت في التوبة منه، ‘দো‘আ কবুল না হওয়াটা কখনো তোমার নিজের কৃতকর্মের কারণেও হ’তে পারে। হয়ত তোমার খাবারে হারামের সন্দেহ আছে। কিংবা দো‘আ করার সময় তোমার অন্তর উদাসীন ছিল। কিংবা যে গুনাহ থেকে তুমি সত্যিকারার্থে তওবা করতে পারনি- তার শাস্তিস্বরূপ তোমার চাহিদামত দো‘আতে সাড়া দেওয়া হচ্ছে না’।[9]
১০. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,إِذَا ظَهَرَ الْعِلْمُ فِي بَلَدٍ أَوْ مَحَلَّةٍ قَلَّ الشَّرُّ فِي أَهْلِهَا، وَإِذَا خَفِيَ الْعِلْمُ هُنَاكَ ظَهَرَ الشَّرُّ وَالْفَسَادُ، ‘যখন কোন শহরে বা মহল্লায় ইলমের প্রসার ঘটে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে অকল্যাণের প্রবণতা কমে যায়। আর যখন সেখানে ইলমের প্রদীপ নিভে যায়, তখন বিবিধ অন্যায় ও ফিৎনা-ফাসাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে’।[10]
১১. আওয়াব ইবনে হাওশাব (রহঃ) বলেন, الابْتِهَاج بِالذَّنْبِ أَشَدٌّ مِنْ رُكُوبِهِ، ‘গুনাহ নিয়ে আনন্দিত হওয়া তাতে লিপ্ত হওয়ার চেয়েও ভয়ংকর’।[11]
এমফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. আবূ নু‘আইম ইস্পাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৬/৩৬১।
[2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাত ১/৪৬১।
[3]. যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায ১/২১৪।
[4]. যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৭/৩২৮।
[5]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃ. ৭৪।
[6]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/২০৫।
[7]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব ২০/৫৬।
[8]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৯০।
[9]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃ. ৮৩।
[10]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুয়াক্কি‘ঈন ২/১৮২।
[11]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৫/৪২৯।