অমর বাণী

১. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন,مَنْ بَخِلَ بِالْعِلْمِ ابتُلِيَ بِثَلَاثٍ: إِمَّا بِمَوْتٍ فَيَذْهَبُ عِلْمُهُ، أَوْ بِالنِّسْيَانِ، أَوْ يُبْتَلَى بِالسُّلْطَانِ، ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান বিতরণে কৃপণতা করে, সে তিনভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন হয় : ১. তার মৃত্যুতে তার ইলম বিলীন হয়ে যায়, ২. সে ঐ ইলম ভুলে যায় অথবা ৩. রাজা-বাদশাহদের মাধ্যমে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়’।[1]

২. ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন,أفضلُ ‌الأعمال ‌خشية ‌الله فِي السر والعلانية، وخشية الله فِي السر إنما تصدر عَن قوة إيمان ومجاهدةٍ للنفس والهوى، فإن الهوى يدعو فِي الخلوة إلى المعاصي، ‘সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আমল হ’ল প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহকে ভয় করা। মূলতঃ ঈমানী শক্তি এবং প্রবৃত্তি ও নফসের বিরুদ্ধে জিহাদের শক্তিমত্তা থেকে গোপনে আল্লাহকে ভয় করার অনুভূতি জাগ্রত হয়। কেননা নির্জনতায় কুপ্রবৃত্তি সর্বদা পাপের দিকে আহবান জানায়’।[2]

৩. শায়খ বিন বায (রহঃ)-এর এগারো বছরের শাগরেদ শায়খ খালেদ রাশেদ বলেন,إذا أردت أن تعرف مدى إيمانك فراقب نفسك في الخلوات، إن الإيمان لا يظهر ‌في ‌صلاة ‌ركعتين أو صيام نهار؛ بل يظهر في مجاهدة النفس والهوى، ‘তুমি যদি তোমার ঈমানের ব্যপ্তি জানতে চাও, তবে নির্জনতায় নিজের নফসকে পর্যবেক্ষণ কর। কেননা (রাতের) দুই রাক‘আত ছালাত এবং দিনের ছিয়ামের মাধ্যমে ঈমান প্রকাশ পায় না; বরং ঈমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্বীয় নফস ও কুপ্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করার মাধ্যমে’।[3]

৪. ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,مَا كَسَرَ اللهُ عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ إِلَّا لِيَجْبُرَهُ، ‌وَلَا ‌مَنَعَهُ ‌إِلَّا ‌لِيُعْطِيَهُ، وَلَا ابْتَلَاهُ إِلَّا لِيُعَافِيَهُ، وَلَا أَمَاتَهُ إِلَّا لِيُحْيِيَهُ، وَلَا نَغَّصَ عَلَيْهِ الدُّنْيَا إِلَّا لِيُرَغِّبَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَلَا ابْتَلَاهُ بِجَفَاءِ النَّاسِ إِلَّا لِيَرُدَّهُ إِلَيْهِ- ‘আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাকে সাহায্য করার জন্যই মূলতঃ তাকে বিপদে ফেলেন। তাকে বিশেষ কিছু দান করার জন্যই সাধারণ কিছু দেওয়া থেকে বিরত রাখেন। সুস্থতা দানের জন্য তাকে (শারীরিক রোগ-ব্যাধি দিয়ে) পরীক্ষা করে থাকেন। পরকালে নতুন জীবন দান করার জন্য পার্থিব মৃত্যু দান করেন। তাকে আখেরাতের প্রতি আগ্রহী করার জন্য দুনিয়াকে তার জন্য কঠিন করে দেন। নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মানুষের দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে কষ্ট দেন’।[4]

৫. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,التقوى ثلاث مراتب: إحداها: ‌حميةُ ‌القلبِ ‌والجوارح ‌عن ‌الآثام ‌والمحرَّماتِ. الثانية: حميتُها عن المكروهات. الثالثة: الحميةُ عن الفُضول وما لا يعني. فالأولى تُعطي العبدَ حياتَه، والثانيةُ تفيدُهُ صحَّتَه وقوَّتهُ، والثالثةُ تُكسِبُهُ سرورَه وفرحهُ وبهجَتَهُ، ‘তাক্বওয়ার তিনটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর: অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পাপাচার ও হারাম বিষয় সমূহ থেকে রক্ষা করা। দ্বিতীয় স্তর: অপসন্দনীয় বিষয় সমূহ থেকে অন্তরকে রক্ষা করা। তৃতীয় স্তর: অনর্থক কাজ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা। প্রথম স্তর বান্দাকে নবজীবন দান করে, দ্বিতীয় স্তর তার সুস্থতা ও শক্তিমত্তার জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে আর তৃতীয় স্তর তাকে আনন্দ, প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে’।[5]

৬. আব্দুর রহমান আস-সা‘দী (রহঃ) বলেন,فرحم الله عبدا اغتنم أيام القوة والشباب، وأسرع بالتوبة والإنابة قبل طَيِّ الكتاب، ‘আল্লাহ ঐ বান্দার প্রতি রহম করুন, যে যৌবন ও তারুণ্যের সময়গুলোকে (আল্লাহর আনুগত্যে) কাজে লাগিয়েছে এবং তার আমলনামার খাতা গুটিয়ে নেওয়ার পূর্বেই তওবা করে আল্লাহমুখী হয়েছে’।[6]

৭. প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন, كفى بالمرء نصرة من الله له أن يرى عدوه يعمل بمعصية الله، ‘কেউ যদি তার শত্রুকে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে দেখে, তবে আল্লাহর সাহায্য হিসাবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট’।[7]

৯. ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) বলেন,أَشَدُّكُم جَزَعاً عَلَى المُصِيْبَةِ، أَشَدُّكُم حُبًّا لِلدُّنْيَا، ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিপদাপদে অধিক ভেঙ্গে পড়ে, মনে করবে দুনিয়ার প্রতি তার আসক্তি সবচেয়ে বেশী’।[8]

১০. উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন,وَآخِ الْإِخْوَانَ عَلَى قَدْرِ تَقْوَاهُمْ، وَلَا تَجْعَلْ لِسَانَكَ بُذْلَةً لِمَنْ لَا يَرَى فِيهِ، وَلَا تَغْبِطِ الْحَيَّ إِلَّا بِمَا تَغْبِطُ الْمَيِّتَ، ‘মুসলিম ভাইদের সাথে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখ তাদের তাক্বওয়ার পরিমাণ অনুযায়ী। তবে যার মধ্যে তাক্বওয়া দেখা যায় না তার জন্য তোমার জিহবাকে নোংরা করো না। জীবিতদের প্রতি হিংসা করো না; যেমনভাবে তুমি মৃতদের প্রতি হিংসা করো না’।[9]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ইসমাঈল ইস্পাহানী, সিয়ারুস সালাফ আছ-ছালিহীন ৩/১০২১।

[2]. ইবনু রজব হাম্বলী, ফাৎহুল বারী ৬/৫০।

[3]. দুরূসুশ শায়েখ খালেদ রাশেদ, ক্যাসেট ১৬/২০।

[4]. ইবনুল মাওছিলী, মুখতাছার আছ-ছাওয়া‘ইকুল মুরসালাহ, পৃ. ৩০৬।

[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ ১/৪৫।

[6]. আব্দুর রহমান বিন নাছের আস-সা‘দী, আল-ফাওয়াকিহুশ শাহিইয়াহ, পৃ. ২১৮।

[7]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯/১১৮।

[8]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৪/৫৫৪।

[9]. আবূ নু‘আইম ইস্পাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৯/২১২।






আরও
আরও
.