. হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ وَتَعَلَّمُوا لِلْعِلْمِ السَّكِينَةَ وَالْحِلْمَ وَتَوَاضَعُوا لِمَنْ تُعَلِّمُونَ، وَلْيَتَوَاضَعْ لَكُمْ مَنْ تُعَلِّمُونَ وَلَا تَكُونُوا مِنْ جَبَابِرَةِ الْعُلَمَاءِ، وَلَا يَقُمْ عِلْمُكُمْ مَعَ جَهْلِكُمْ ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং এজন্য ধীর-স্থিরতা ও সহনশীলতার শিক্ষাও অর্জন কর। শিক্ষার্থীদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন কর, তাহ’লে তারাও তোমাদের প্রতি বিনয়ী হবে। নিজেকে কখনো অহংকারী বিদ্বানদের মাঝে গণ্য করো না। আর তোমাদের জ্ঞান যেন অজ্ঞতার উপর ভিত্তিশীল না হয়’।[1]

২. আলী ইবনে আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন,لِلْمُرَائِي أَرْبَعُ عَلَامَاتٍ: يَكْسَلُ إِذَا كَانَ وَحْدَهُ، وَيَنْشَطُ إِذَا كَانَ مَعَ النَّاسِ، وَيَزِيدُ فِي الْعَمَلِ إِذَا أُثْنِيَ عَلَيْهِ، وَيَنْقُصُ إِذَا ذُمَّ بِهِ ‘লোকদেখানো আমলকারীর আলামত চারটি। (১) লোকচক্ষুর অন্তরালে সৎকাজে অবহেলা করে। (২) মানুষের সামনে বেশ আগ্রহ ও উদ্যমের সাথে আমল করে। (৩) তার প্রশংসা করা হ’লে আমলের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর (৪) নিন্দা করা হ’লে আমলের পরিমাণ কমে যায়’।[2]

৩. হযরত ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,ثَلاَثٌ يُصَفِّيْنَ لَكَ وُدَّ أَخِيْكَ: تُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيْتَهُ، وَتُوَسِّعُ لَهُ فِي الْمَجْلِسٍ، وَتَدْعُوْهُ بِأَحَبِّ أَسْمَائِهِ إِلَيْكَ ‘তিনটি গুণ তোমার এবং তোমার ভাইয়ের মাঝে হৃদ্যতার বন্ধন রচনা করে। (১) যখন তার সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে সালাম দিবে। (২) মজলিসে তার জন্য জায়গা প্রশস্ত করে দিবে এবং (৩) তার প্রিয় নাম ধরে তাকে ডাকবে’।[3]

৪. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,اُطْلُبُوا الْعِلْمَ وَزيِّنُوهُ بِالوَقَارِ والحِلْمِ ‘তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর এবং গাম্ভীর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে সেই জ্ঞানকে সুসজ্জিত কর’।[4]

৫. আহমাদ ইবনু হারব (রহঃ) বলেন, عَبَدْتُ اللهَ خَمْسِيْنَ سَنَةً فَمَا وَجَدْتُ حَلاَوَةَ العِبَادَةِ حَتَّى تَرَكْتُ ثَلاَثَةَ أَشيَاءٍ: تَرَكْتُ رِضَى النَّاسِ حَتَّى قَدِرْتُ أَنْ أَتَكَلَّمَ بِالحَقِّ، وَتَرَكْتُ صُحْبَةَ الفَاسِقِيْنَ حَتَّى وَجَدْتُ صُحْبَةَ الصَّالِحِيْنَ، وَتَرَكْتُ حَلاَوَةَ الدُّنْيَا حَتَّى وَجَدْتُ حَلاَوَةَ الْآخِرَةِ ‘আমি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করেছি। তবে তিনটি বিষয় পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি ইবাদতের পূর্ণ স্বাদ পাইনি। (১) আমি মানুষকে খুশী রাখার চিন্তা বাদ দিয়েছি, ফলে আমি হক কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করেছি। (২) আমি পাপী ব্যক্তির সাহচর্য পরিত্যাগ করেছি, ফলে নেককার ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছি। (৩) আমি দুনিয়ার সৌন্দর্য পরিত্যাগ করেছি, ফলে আমি আখিরাতের মিষ্টতা অনুভব করতে পেরেছি’।[5]

৬. শাক্বীক বিন ইবরাহীম বলখী (রহঃ) বলেন,حُسْنُ الْعَمَلِ ثَلَاثَةُ أَشْيَاءَ: أَوَّلُهَا أَنْ يَرَى أَنَّ الْعَمَلَ مِنَ اللهِ تَعَالَى لِيَكْسِرَ بِهِ الْعُجْبَ، وَالثَّانِي أَنْ يُرِيدَ بِهِ رِضَا اللهِ لِيَكْسِرَ بِهِ الْهَوَى، وَالثَّالِثُ أَنْ يَبْتَغِيَ ثَوَابَ الْعَمَلِ مِنَ اللهِ تَعَالَى لِيَكْسِرَ بِهِ الطَّمَعَ وَالرِّيَاءَ، وَبِهَذِهِ الْأَشْيَاءِ تَخْلُصُ الْأَعْمَالُ ‘তিনটি বিষয় আমলকে পরিশুদ্ধ বা রিয়ামুক্ত রাখে। (১) এই মর্মে বিশ্বাস রাখা যে, নেক আমল সম্পাদনের তাওফীক্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, তাহ’লে আত্মঅহংকার সৃষ্টি হবে না। (২) আমলের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা, যাতে প্রবৃত্তির চাহিদা অবদমিত হয়। (৩) নেক আমলের নেকী একমাত্র আল্লাহর নিকটেই কামনা করা, তাহ’লে রিয়া ও লোভ দমে যাবে। এই তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে আমল পরিশুদ্ধ বা রিয়ামুক্ত হয়’।[6]

৭. আহনাফ ইবনু ক্বায়েস (রহঃ) বলেন,مَا خَانَ شَرِيفٌ، وَلا كَذَبَ عَاقِلٌ، وَلا اغْتَابَ مُؤْمِنٌ ‘নেককার মানুষ কখনো খেয়ানত করতে পারে না, বিবেকবান মানুষ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না এবং প্রকৃত মুমিন বান্দা কখনো গীবত করতে পারে না’।[7]

৮. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, إِضَاعَة الْوَقْت أَشد من الْمَوْت لِأَن إِضَاعَة الْوَقْت تقطعك عَن الله وَالدَّار الْآخِرَة وَالْمَوْت يقطعك عَن الدُّنْيَا وَأَهْلهَا- الدُّنْيَا من أَولها إِلَى آخرهَا لَا تُسَاوِي غم سَاعَة فَكيف بغم الْعُمر ‘সময়ের অপচয় মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর। কেননা সময়ের অপচয় তোমাকে আল্লাহ এবং আখিরাতের নিবাস থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। পক্ষান্তরে মৃত্যু তোমাকে কেবল দুনিয়া ও তার অধিবাসীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারে। দুনিয়ার জীবনের আগাগোড়া এক ঘণ্টা পরিমাণ দুশ্চিন্তা করার মতো সময় নয়। তাহ’লে তুমি সময় অপচয় করে কিভাবে সারাজীবন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাবে’?[8]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[1]. ইমাম অকী‘, আয-যুহদ, পৃ: ৫৩৮; আহমাদ বিন হাম্বল, আয-যুহদ, পৃ: ৯৯।

[2]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ: ৩০।

[3]. ইবনু কুদামা মাক্বদেসী, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছেদীন, পৃ:১০২।

[4]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/১৭৮।

[5]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/৯৯।

[6]. তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ: ৩০।

[7]. আল-মুজালাসা ৩/৫১৫; তারীখু দিমাশক্ব ২৪/৩৪৩।

[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়াইদ, পৃ:৩১।






আরও
আরও
.