১.
আবু যার (রাঃ) বলেন,يَأَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي لَكُمْ نَاصِحٌ، إِنِّي
عَلَيْكُمْ شَفِيقٌ، صَلُّوا فِي ظَلاَمِ اللَّيْلِ لِوَحْشَةِ الْقُبُورِ،
وَصُومُوا فِي حَرِّ الدُّنْيَا لِحَرِّ يَوْمِ النُّشُورِ، وَتَصَدَّقُوا
مَخَافَةَ يَوْمٍ عَسِيرٍ لِعَظَائِمِ الأُمُورِ، ‘হে মানবমন্ডলী! আমি
তোমাদের উপদেশদাতা এবং তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ। তোমরা কবরের নিঃসঙ্গতা থেকে
বাঁচতে রাতের আঁধারে ছালাত আদায় কর এবং পুনরুত্থান দিবসের দাবদাহ থেকে
রক্ষা পেতে দুনিয়ার উত্তাপে ছিয়াম পালন কর। ক্বিয়ামতের কঠিন দিনের ভয়ে মহৎ
কাজের উদ্দেশ্যে দান-ছাদাক্বাহ কর’।[1]
২.
ত্বায়লাসা ইবনু মায়্যাস (রহঃ) বলেন, ইবনে ওমর (রাঃ) আমাকে লক্ষ্য করে
বললেন,أَتَفْرَقُ النَّارَ، وَتُحِبُّ أَنْ تَدْخُلَ الْجَنَّةَ؟ قُلْتُ:
إِي وَاللهِ، قَالَ: أَحَيٌّ وَالِدُكَ؟ قُلْتُ: عِنْدِي أُمِّي، قَالَ:
فَوَاللهِ لَوْ أَلَنْتَ لَهَا الْكَلَامَ، وَأَطْعَمْتَهَا الطَّعَامَ،
لَتَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ مَا اجْتَنَبْتَ الْكَبَائِرَ، ‘তুমি কি
জাহান্নামকে ভয় পাও এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পসন্দ কর? আমি বললাম, আবশ্যই,
আল্লাহর কসম! তখন তিনি বললেন, তোমার পিতা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম, আমার
তো শুধু মা বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! যদি তুমি তার সাথে নম্র
ভাষায় কথা বল এবং তাকে খাবার খাওয়াও, তাহ’লে অবশ্যই তুমি জান্নাতে প্রবেশ
করবে, যদি কবীরা গুনাহ পরিহার করতে পার’।[2]
৩.
এক ব্যক্তি ইউনুস ইবনে ওবায়েদ (মৃঃ ১৩৯ হিঃ)-এর কাছে এসে তার অভাব-অনটনের
অভিযোগ করল। তখন ইউনুস তাকে বললেন,أَيَسُرُّكَ بِبَصَرِكَ هَذَا الَّذِي
تُبْصِرُ بِهِ مِائَةُ أَلْفٍ ‘তুমি যে চোখ দিয়ে দেখতে পাও, এমন একটি চোখের
বিনিময়ে যদি তোমাকে এক লক্ষ দিরহাম দেওয়া হয়, তুমি কি তাতে আনন্দিত হবে?
সে বলল, না। তিনি বললেন, فَيَدَاكَ يَسُرُّكَ بِهِمَا مِائَةُ أَلْفٍ
‘তোমার দুই হাতের বিনিময়ে যদি তোমাকে এক লক্ষ দিরহাম দেওয়া হয়, তাতে কি
খুশি হবে?’ সে বলল, না। তিনি বললেন, فَرِجْلَاكَ؟ ‘যদি তোমার দুই পায়ের
বিনিময়ে এটা দেওয়া হয়?’ সে বলল, না। তখন ইউনুস (রহঃ) তার প্রতি আল্লাহর এই
নে‘মতগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন,أَرَى لَكَ مِئِينَ أُلُوفًا، وَأَنْتَ
تَشْكُو الْحَاجَةَ ‘আমি তো দেখতে পাচ্ছি তোমার কাছে লক্ষ লক্ষ দিরহামের
সম্পদ আছে, অথচ তুমি দারিদ্রের অভিযোগ করছ’।[3]
৪.
হায়ছাম ইবনু জামীল (রহঃ) বলেন, ‘আমি ইমাম মালেক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস
করলাম,يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ، الرَّجُلُ يَكُوْنُ عَالِمًا بِالسُّنَنِ
يُجَادِلُ عَنْهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ يُخْبِرُ بِالسُّنَّةِ، فَإِنْ
قُبِلَ مِنْهُ وَإِلَّا سَكَتَ،. ‘হে আবূ আব্দুল্লাহ! সুন্নাত সম্পর্কে
জ্ঞাত ব্যক্তি কি সুন্নাতের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করতে পারবে?’ তখন তিনি বললেন,
না, বরং সে কেবল সুন্নাত জানিয়ে দিবে। যদি লোকেরা মেনে নেয়, তাহ’লে তো
ভালো, অন্যথা সে চুপ থাকবে’।[4]
৫. শাক্বীফ
ইবনে ইবরাহীম বলখী (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক
(রহঃ)-কে বললাম,إِذَا صَلَّيْتَ مَعَنَا لِمَ لَا تَجْلِسُ مَعَنَا؟ ‘আপনি
তো আমাদের সাথেই ছালাত আদায় করেন, কিন্তু আমাদের সাথে বসেন না কেন?’ তখন
তিনি বললেন, أَذْهَبُ فَأَجْلِسُ مَعَ التَّابِعِيْنَ وَالصَّحَابَةِ ‘আমি
ফিরে গিয়ে ছাহাবী ও তাবেঈদের সাথে বসে কথা বলি’। আমরা বললাম,
‘ছাহাবা-তাবেঈদের আপনি কোথায় পেলেন’? তিনি বললেন,أَذْهَبُ أَنْظُرُ فِيْ
عِلْمِي فَأُدْرِكُ آثَارَهُمْ وَأَعْمَالَهُمْ، مَا أَصْنَعُ مَعَكُمْ؟
أَنْتُمْ تَجْلِسُونَ تَغْتَابُوْنَ النَّاسَ ‘আমি ফিরে গিয়ে ইলম চর্চায়
মনোনিবেশ করি। তখন তাদের কথা ও কর্মের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। তোমাদের সাথে
বসে আমি কী করব? তোমরা তো বসেই মানুষের গীবত করো’।[5]
৬.
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,مَا كَانَ مِنَ الْبِدْعِ فِي الدِّيْنِ
الَّتِي لَيْسَتْ فِي الْكِتَابِ، وَلَا فِيْ صَحِيْح السُّنَّةِ،
فَإِنَّهَا وَإِنْ قَالَهَا مَنْ قَالَهَا، وَعَمِلَ بِهَا مَنْ عَمِلَ
لَيْسَتْ مَشْرُوْعَةٌ، ‘দ্বীনের মধ্যে সেটাই বিদ‘আত হিসাবে পরিগণিত,
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের ছহীহ সুন্নাতে যার অস্তিত্ব নেই। সেটা যেই বলুক না
কেন এবং তার প্রতি যেই আমল করুক না কেন, তা শরী‘আতসিদ্ধ নয়’।[6]
৭.
ইয়াহইয়া ইবনে মু‘আয (রহঃ) বলেন,حُبُّكَ لِلْفُقَرَاءِ مِنْ أَخْلَاقِ
الْمُرْسَلِيْنَ، وَإِيثَارُكَ مُجَالَسَتَهُمْ مِنْ عَلَامَةِ
الصَّالِحِيْنَ، وَفِرَارُكَ مِنْ صُحْبَتِهِمْ مِنْ عَلَامَةِ
الْمُنَافِقِيْنَ، ‘গরীবদের প্রতি তোমার ভালবাসা প্রদর্শন নবী-রাসূলগণের
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সাথে উঠা-বসা করাকে
অগ্রাধিকার দেওয়া সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্যতম নিদর্শন। আর গরীবদের সাহচর্য
ত্যাগ করা মুনাফিকদের অন্যতম নিদর্শন’।[7]
৮.
ইয়াহইয়া ইবনে মু‘আয (রহঃ) বলেন, العُلَمَاءُ أَرْحَمُ بِأُمَّةِ مُحَمَّدٍ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ آبَائِهِمْ وّأُمَّهَاتِهِمْ،
قِيْلَ وَكَيْفَ ذَلِكَ؟ قَالَ لِأَنَّ آبَاءَهُمْ وَأُمَّهَاتَهْمُ
يَحْفَظُونَهُمْ مِنْ نَارِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْفَظُونَهُمْ مِنْ نَارِ
الآخِرَةِ، ‘পিতা-মাতার চেয়ে আলেম-ওলামাগণ উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি অধিকতর
দয়াবান। বলা হ’ল, সেটা কিভাবে? তিনি বললেন, কেননা পিতা-মাতা তাদের
সন্তান-সন্ততিকে দুনিয়ার আগুন থেকে হেফাযত করে। আর আলেমগণ তাদেরকে আখেরাতের
আগুন থেকে রক্ষা করে’।[8]
৯. ইবনু মেহরান
(রহঃ) বলেন,لَئِنْ أَتَصَدَّقْ بِدِرْهَمٍ فِي حَيَاتِي أَحَبُّ إِلَيَّ
مِنْ أَنْ يُتَصَدَّقَ عَنِّي بَعْدَ مَوْتِي بِمِائَةِ دِرْهَمٍ، ‘যদি আমি
আমার জীবদ্দশায় এক দিরহাম ছাদাক্বা করতে পারি, তাহ’লে এই দানটাই আমার নিকট
অধিকতর প্রিয় আমার মৃত্যুর পর আমার পক্ষ থেকে একশত দিরহাম ছাদাক্বাহ করার
চেয়ে’।[9]
১০. সালমান ফারেসী (রাঃ)
বলেন,إِنَّ اللهَ إِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ هَلَاكًا، نَزَعَ مِنْهُ
الْحَيَاءَ، فَإِذَا نَزَعَ مِنْهُ الْحَيَاءَ، لَمْ تَلْقَهُ إِلَّا
مَقِيتًا مُمَقَّتًا، فَإِذَا كَانَ مَقِيتًا مُمَقَّتًا، نَزَعَ مِنْهُ
الْأَمَانَةَ، فَلَمْ تَلْقَهُ إِلَّا خَائِنًا مُخَوَّنًا، فَإِذَا كَانَ
خَائِنًا مُخَوَّنًا، نَزَعَ مِنْهُ الرَّحْمَةَ، فَلَمْ تَلْقَهُ إِلَّا
فَظًّا غَلِيظًا، فَإِذَا كَانَ فَظًّا غَلِيظًا، نَزَعَ رِبْقَ
الْإِيمَانِ مِنْ عُنُقِهِ، فَإِذَا نَزَعَ رِبْقَ الْإِيمَانِ مِنْ
عُنُقِهِ لَمْ تَلْقَهُ إِلَّا شَيْطَانًا لَعِينًا مُلَعَّنًا، ‘আল্লাহ
যখন কোন বান্দার ধ্বংস চান, তখন তার থেকে লজ্জা উঠিয়ে নেন। আর যখন তার থেকে
লজ্জা উঠিয়ে নেওয়া হয়, তখন সে ঘৃণিত ও পাপী হয়ে যায়। যখন সে ঘৃণিত ও পাপী
হিসাবে গণ্য হয়, তখন তার থেকে আমানতদারীও উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে তুমি তাকে
স্পষ্ট খিয়ানতকারী হিসাবে দেখতে পাবে। আর যখন সে প্রকাশ্য খিয়ানতকারী হয়ে
যায়, তখন তার থেকে দয়া-মায়া ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তখন তুমি তাকে কর্কশ ও কঠোর
হৃদয়ের অধিকারী দেখতে পাবে। আর যখন সে কর্কশ ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হয়ে
যায়, তার গর্দান থেকে ঈমানের রজ্জু খুলে নেওয়া হয়। আর যখন তার থেকে ঈামনের
রজ্জু খুলে নেওয়া হয়, তখন তার সাথে সাক্ষাতের সময় তুমি কেবল একজন অভিশপ্ত
শয়তানকেই দেখতে পাবে’।[10]
১১. ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
لَيْسَ الْعِيْدُ لِمَنْ لَبِسَ الْجَدِيْدَ،
إِنَّمَا الْعِيْدُ لِمَنْ طَاعَاتُهُ تَزِيْدُ،
لَيْسَ الْعِيْدُ لِمَنْ تَجَمَّلَ بِاللِّبَاسِ وَالرُّكُوْبِ،
إِنَّمَا الْعِيْدُ لِمَنْ غُفِرَتْ لَهُ الذُّنُوْبُ،
‘যে
ব্যক্তি নতুন কাপড় পরিধান করে, তার জন্য ঈদ নয়; বরং ঈদের আনন্দ সেই
ব্যক্তির জন্য আল্লাহর প্রতি যার আনুগত্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যে ব্যক্তি বাহন ও
পোষাক-পরিচ্ছদে সজ্জিত হয়, ঈদের আনন্দ তার জন্য নয়; বরং ঈদের খুশি তো কেবল
সেই ব্যক্তির জন্য, যার পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে’।[11]
১১. মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইমরান বলেন, আমি হাতিম আল-আছাম (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, একদিন জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, عَلَى ما بَنَيْتَ أَمْرَكَ؟ ‘আপনি আপনার সব বিষয়কে কিভাবে পরিচালনা করেন?’ তিনি বললেন, عَلَى التَّوَكُّلِ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ‘আল্লাহ উপর তাওয়াক্কুলের ভিত্তিতে’। তারপর তিনি বললেন, بَنَيْتُ أَمْرِي عَلَى أَرْبَعِ خِصَالٍ : عَلِمْتُ أَنَّ رِزْقِي لا يَأْكُلُهُ غَيْرِي، فَاطْمَأَنَّتْ بِهِ نَفْسِي، وَعَلِمْتُ أَنَّ عَمَلِي لا يَعْمَلُهُ أَحَدٌ غَيْرِي، فأنا مشغول به، وَعَلِمْتُ أَنَّ الْمَوْتَ يَأْتِينِيْ بَغْتَةً، فَأَنَا أُبَادِرُهُ، وَعَلِمْتُ أَنِّي لا أَخْلُو مِنْ عَيْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَيْثُ كُنْتُ، فَأَنَا مُسْتَحْيٍ مِنْهُ أَبَدًا ‘আমি চারটি বিষয়ের উপর তা নির্ধারণ করি। তা হ’ল,
(১) আমি জানি যে, আমার জন্য নির্ধারিত রিযিক আমি ব্যতীত অন্য কেউ ভক্ষণ করবে না। তাই সে ব্যাপারে আমার হৃদয় নিশ্চিন্ত থাকে।
(২) আমি জানি যে, আমি ছাড়া আমার আমল আর কেউ এসে করে দিবে না। তাই আমি সৎ আমলে অধিক ব্যস্ত থাকি।
(৩) আমি জানি যে, মৃত্যু হঠাৎ করে চলে আসবে, তাই আমি দ্রুততার সাথে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় করি।
(৪)
আমি জানি যে, আমি যেখানেই থাকি না কেন, কখনোই আমি আল্লাহর দৃষ্টিসীমার
বাইরে যেতে পারব না। তাই সবসময় আমি তার অবাধ্য হ’তে লজ্জাবোধ করি’।[12]
* এম.এ. শেষ বর্ষ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক ৬৬/২১৪।
[2]. ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮, সনদ ছহীহ।
[3]. হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/২২।
[4]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ১/২৪৮।
[5]. খত্বীব বাগদাদী, তাকয়ীদুল ইলম, পৃ. ১২৬।
[6]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-উবূদিয়্যাহ, পৃঃ ৭২।
[7]. মাওইযাতুল মুমিনীন মিন ইহয়াই উলূমিদ্দীন, পৃঃ ২৯৪।
[8]. গাযালী, ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ১/১১।
[9]. হিলয়াতুল আওলিয়া ৪/৮৭।
[10]. জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম, ১/৪৯৮-৪৯৯।
[11]. ইবনু রজব, লাত্বায়িফুল মা‘আরিফ, পৃঃ ২৭৭।
[12]. শামসুদ্দীন যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৮৫; ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ২/৩৪০।