১. হাসান বাছরী (রহঃ) যুবকদেরকে প্রায়ই বলতেন,يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، عَلَيْكُمْ بِالْآخِرَةِ فَاطْلُبُوْهَا؛ فَكَثِيرًا رَأَيْنَا مَنْ طَلَبَ الْآخِرَةَ فَأَدْرَكَهَا مَعَ الدُّنْيَا، وَمَا رَأَيْنَا أَحَدًا طَلَبَ الدُّنْيَا فَأَدْرَكَ الْآخِرَةَ مَعَ الدُّنْيَا ‘হে যুব সমাজ! তোমরা আখেরাতের সন্ধানে নিয়োজিত থাকবে। কেননা অধিকাংশ সময় আমি দেখেছি, যে আখেরাতের জীবন প্রত্যাশা করে, সে আখেরাত তো অর্জন করেই, পাশাপাশি পার্থিব কল্যাণও লাভ করে। কিন্তু আমি কখনো এমন কাউকে দেখিনি, যে দুনিয়াবী জীবন অন্বেষণ করেছে এবং দুনিয়ার সাথে আখেরাতের কল্যাণও হাছিল করতে পেরেছে’।[1]

২. ইমাম মাওয়ার্দী (রহঃ) বলেন,اَلْحِرْصُ وَالشُّحُّ أَصْلٌ لِكُلِّ ذَمٍّ، وَسَبَبٌ لِكُلِّ لُؤْمٍ؛ لِأَنَّ الشُّحَّ يَمْنَعُ مِنْ أَدَاءِ الْحُقُوقِ، وَيَبْعَثُ عَلَى الْقَطِيعَةِ وَالْعُقُوقِ ‘লোভ ও কৃপণতা সকল নিন্দা ও নীচতার মূল কারণ। কেননা কৃপণতা মানুষকে বান্দার হক আদায়ে বাধা প্রদান করে এবং সম্পর্কছেদ ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার প্রতি উৎসাহিত করে’।[2]

৩. ইয়াহ্ইয়া ইবনু মু‘আয (রহঃ) বলেন,مَا فِي الْقَلْبِ لِلْأَسْخِيَاءِ إِلَّا حُبٌّ؛ وَلَوْ كَانُوْا فُجَّارًا، وَلِلْبُخَلاَءِ إِلاَّ بُغْضٌ؛ وَلَوْ كَانُوْا أَبْرَارًا ‘দানশীল ব্যক্তিরা পাপী হ’লেও মানুষের হৃদয়ে তাদের জন্য ভালোবাসা জাগরুক থাকে। আর কৃপণ ব্যক্তিরা সৎকর্মশীল হ’লেও মানুষের হৃদয়ে তাদের জন্য ঘৃণা বৈ অন্য কিছুই থাকে না’।[3]

৪. আবূ হাতেম (রহঃ) বলেন, الحَسَدُ مِنْ أَخْلاَقِ اللِّئَامِ، وَتَرْكُهُ مِنْ أَفْعَالِ الْكِرَامِ، وَلِكُلِّ حَرِيْقٍ مُطْفِئٌ، وَنَارُ الْحَسَدِ لاَ تُطْفَأ ‘হিংসা করা নিকৃষ্ট লোকদের চরিত্র। আর হিংসা পরিত্যাগ করা মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অন্যতম স্বভাব। প্রত্যেক আগুন নেভানোর ব্যবস্থা থাকলেও হিংসার আগুন নির্বাপিত করা যায় না’।[4]

৫. আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুনাযিল (রহঃ) বলেন, لَمْ يُضَيِّعْ أَحَدٌ فَرِيضَةً مِنَ الْفَرَائِضِ إِلَّا ابْتَلَاهُ اللهُ بِتَضْيِيعِ السُّنَنِ، وَلَمْ يُبْتَل بِتَضْيِيعِ السُّنَنِ أَحَدٌ إِلَّا يُوشِكُ أَنْ يُبْتَلَى بِالْبِدَعِ ‘যখনই কেউ কোন একটি ফরয ইবাদত নষ্ট করে, তখন আল্লাহ তাকে সুন্নাত বিনষ্ট করার পরীক্ষায় ফেলেন। আর যখন কেউ সুন্নাত বিনষ্ট করার পরীক্ষায় পড়ে, তখন সে বিদ‘আতে নিমজ্জিত হওয়ার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়’।[5]

. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, السَّعَادَةُ بِثَلاَثٍ: شُكْرُ النِّعْمَةِ، وَالصَّبْرُ عَلىَ الْبَلاَءِ، وَالتَّوْبَةُ مِنَ الذَّنْبِ ‘সৌভাগ্যের সোপান তিনটি। (১) আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা (২) বিপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং (৩) পাপ থেকে তওবা করা’।[6]

৭. শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, الدِّيْنُ لَيْسَ بِالْعَقْلِ وَلاَ بِالْعَاطِفَةِ، إِنَّمَا بِاتِّبَاعِ أَحْكَامِ اللهِ فِيْ كِتَابِهِ، وَأَحْكَامِ رَسُوْلِهِ فِي سُنَّتِهِ وَفِي حَدِيْثِهِ ‘বিবেক ও আবেগ দিয়ে কখনো দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয় না; বরং আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত নীতিমালার পূর্ণ অনুকরণ এবং রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ ও সুন্নাতে সঞ্চিত বিধি-বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল তা প্রতিষ্ঠিত হয়’।[7]

৮. ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রহঃ) বলেন,عَلَيْكَ بِطَرِيقِ الْحَقِّ، وَلَا تَسْتَوْحِشْ لِقِلَّةِ السَّالِكِينَ، وَإِيَّاكَ وَطَرِيقَ الْبَاطِلِ، وَلَا تَغْتَرَّ بِكَثْرَةِ الْهَالِكِينَ ‘তুমি অবশ্যই হকের পথে চলবে। এই পথের অনুসারীদের স্বল্পতা দেখে কখনো ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না। আর বাতিল পথের ব্যাপারে সাবধান থেকো। সে পথের ধ্বংসশীল পথিকদের আধিক্য দেখে কখনো প্রতারিত হবে না’।[8]

৯. জনৈক বিদ্বান বলেন,أَرْبَعَةٌ طَلَبْنَاهَا فَأْخَطَأْنَا طُرُقَهَا: طَلَبْنَا الْغِنَى فِي الْمَالِ، فَإِذَا هُوَ فِي الْقَنَاعَةِ، وَطَلَبْنَا الرَّاحَةَ فِي الْكَثْرَةِ فَإِذَا هِيَ فِي الْقِلَّةِ، وَطَلَبْنَا الْكَرَامَةَ فِي الْخُلُقِ، فَإِذَا هِيَ فِي التَّقْوَى، وَطَلَبْنَا النِّعْمَةَ فِي الطَّعَامِ وَاللِّبَاسِ، فَإِذَا هِيَ فِي السَّتْرِ وَالْإِسْلَامِ ‘আমি চারটি বিষয় অনুসন্ধান করেছি, কিন্তু সেগুলো ভুল পন্থায় হাছিল করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি। (১) আমি সম্পদের মাঝে প্রাচুর্য অনুসন্ধান করেছি, কিন্তু তা খুঁজে পেয়েছি অল্পে তুষ্টির মাঝে। (২) আমি সুখ-শান্তি তালাশ করেছি আধিক্যের মাঝে, কিন্তু স্বল্পতার মধ্যেই তা পেয়েছি। (৩) আমি নৈতিকতার মাঝে মান-মর্যাদা অনুসন্ধান করেছি, কিন্তু তাক্বওয়ার মাঝে সেটা লাভ করেছি। (৪) খানাপিনা ও পোশাক-পরিচ্ছদের মাঝে নে‘মতের খোঁজ করেছি, কিন্তু তা পেয়েছি আমার দোষ-ত্রুটি গোপন থাকা ও ইসলামের মাঝে’।[9]

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[1]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃঃ ৬৫।

[2]. আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ্দুনয়া, পৃ. ২২৪।

[3]. এহয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/২৫৬।

[4]. আবূ হাতেম বুস্তী, রাওযাতুল উক্বালা, পৃ: ১৩৪।

[5]. আল-ই‘তিছাম, পৃ: ১৩০।

[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ওয়াবিলুছ ছাইয়িব, পৃ: ৫।

[7]. সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, পৃঃ ৫৩০।

[8]. মাদারিজুস সালেকীন ১/৪৬; আল ই‘তিছাম, পৃঃ ১১২।

[9]. আবু লায়ছ সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃঃ ২৪৫।






আরও
আরও
.