ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য[1]
মূল : এমএ এম শুকরী[2]
সাহিত্য সবসময় মানব সমাজে একটি জীবন্ত ও গতিশীল শক্তি হিসাবে বিরাজ করেছে। কেবল মানুষের নান্দনিক অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসাবেই নয়, বরং ইতিহাসের কোন কোন পর্যায়ে তো এটা সমাজ পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখেছে। বৃহত্তর পরিসর থেকে দেখলে, সাহিত্য কেবল মানুষের সৌন্দর্যবোধ, নান্দনিক অনুভূতি আর কল্পনার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং এতে সংশ্লিষ্ট সমাজের নানা ছবি ফুটে ওঠে। যদিও প্রত্যেকটি জাতির ইতিহাসের একটা পর্যায়ে দেখা যায় ‘শিল্পের নিমিত্ত শিল্প’-ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছে এবং পরবর্তীতে এটা শিল্প-সাহিত্যের জগতে একটা শক্তিশালী দর্শন হিসাবে টিকে থেকেছে। তবুও সাহিত্যের যে একটা সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে, তা কোন সাহিত্য সমঝদার বা চিন্তাশীল বিশ্লেষক অস্বীকার করেননি। যাইহোক, মার্ক্সবাদ[3], ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব, অস্তিত্ববাদ[4]-সহ নানা মতবাদ ও দর্শন সাহিত্যের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। ১৯১৭-এ রুশ বিপ্লবের পর, রাশিয়া ও তার অধীন অন্য দেশগুলো সাহিত্যের সামগ্রিক উদ্দেশ্যকে জটিল করে ফেলল। যেমন তাদের নিকট সাহিত্যের সামাজিক ও নৈতিক দিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। ফলে সেসময়ের সব সাহিত্যকর্ম সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদের[5] লক্ষ্য অর্জনে নিবেদিত হ’ল, যেখানে সামাজিক সম্প্রদায় গঠনে সাহিত্যের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হ’ল।
ইসলামে সাহিত্যের সামাজিক ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। ফলে ‘শিল্পের নিমিত্ত শিল্প’[6] ধারণাটি ইসলামী সাহিত্যচিন্তার সাথে কোনমতেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সাহিত্যের ভূমিকাকে ইসলামের প্রচলিত জ্ঞানতত্ত্বের বাইরে থেকে দেখাই ভাল। কেননা ইসলামে জ্ঞান মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত। অর্জিত জ্ঞান আর অহীর জ্ঞান। সাহিত্য যদিও অর্জিত জ্ঞানের মধ্যে পড়ে, তবুও এটা সামাজিক বিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত অর্জিত জ্ঞানের অন্যান্য শাখা থেকে ভিন্ন। এটাকে বরং অহীর জ্ঞানের কাছাকাছি বলা যায়, কারণ সাহিত্য-দক্ষতা সহজাত অন্তর্দৃষ্টির উপর নির্ভরশীল।[7]
যদিও ব্যক্তির সহজাত অনুভূতি থেকেই নান্দনিক অভিজ্ঞতা আর শৈল্পিক কর্মকান্ডের উদ্ভব ঘটে, তবুও সেই অনুভূতি প্রকাশকালে সাহিত্য এক নতুন মাত্রা ধারণ করে এবং সংশ্লিষ্ট সমাজের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। সাইয়েদ কুতুবের মতে, ‘শিল্পের অন্যান্য শাখার মতো সাহিত্যও হচ্ছে আবেগ-অনুভূতি আর মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। মূল্যবোধ আবার স্বয়ং শিল্পীর চৈতন্যের সাথে বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়। এই মূল্যবোধ ব্যাপারটি কিন্তু যুগের দাবি অনুযায়ী বা ব্যক্তির নিজস্ব চাহিদা অনুসারে বদলে যায়। তবে এটা সর্বক্ষেত্রেই একজন মানুষ এই মহাবিশ্বকে, মহাবিশ্বে মানুষের অবস্থানকে এবং সর্বোপরি মানবজীবনকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে, তার উপর নির্ভর করে। সুতরাং শিল্প-সাহিত্যকে মূল্যবোধ থেকে আলাদা করে দেখাটা হাস্যকর, কেননা সেগুলো হচ্ছে খোদ মূল্যবোধের বাহ্যিক রূপ। এমনকি কেউ যদি এই আলাদাকরণে সফলও হয়, তাহ’লে বলতে হয় যে, এক্ষেত্রে সে কেবল কতিপয় শব্দ আর বাক্যের মুখোমুখি হবে, যা কোন অর্থ বহন করে না। এমনিভাবে ব্যক্তি বা সমাজের মূল্যবোধকে সামগ্রিক জীবনদর্শন থেকে আলাদা করাটাও অর্থহীন। ওমর খৈয়ামের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সাইয়েদ কুতুব নিজের বক্তব্য সমর্থন করেছেন, কারণ ওমর খৈয়ামের কবিতা ছিল তার জীবনবোধ হ’তে উৎসারিত।[8]
ইসলাম মানুষকে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করে। ফলে তার কোন কাজই সমাজের উপর প্রভাব ফেলা থেকে মুক্ত নয়। মানুষের প্রতিটি কাজেরই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক- দুই ধরনের গুরুত্ব রয়েছে। যাহোক, সাহিত্যের সামাজিক ভূমিকাটি বর্তমানে, বিশেষত মুসলিম সমাজে এক নতুন মাত্রা ধারণ করেছে। কারণ একদিকে মানুষের মূল্যবোধ আর দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণে গণমাধ্যমের ভূমিকা বেড়েই চলেছে, অপরদিকে সাহিত্য, যার কিনা রয়েছে শব্দের জাদু আর মায়া। তা তরুণদেরকে মূল্যবোধ আর চিন্তাজগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। এক্ষণে যেহেতু ‘ধ্বংসাত্মক সাহিত্যে’র জোয়ার দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা কিনা সমাজের নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ-মূল্যবোধ সবকিছুর জন্য ক্ষতিকর, তাই একজন মুসলিম কিভাবে তার নান্দনিক অনুভূতির প্রকাশ ঘটাবে, সে ব্যাপারে কুরআনী নির্দেশনা-ভিত্তিক মানদন্ড নির্ধারণ করা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেনেসাঁ-পরবর্তী সময়ে যে বস্ত্তবাদী-মানবতাবাদী দর্শন বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে আর সামাজিক ক্ষেত্রে ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছে, সেটার কবলে পড়ে, কি প্রাকৃতিক ধর্ম কি আসমানী ধর্ম, সব ধর্মচিন্তায় মানুষের এক বিকৃত ও খন্ডিত চিত্র জায়গা করে নিয়েছে। ফলে আজকের দিনে মানুষের কোন সর্বজনগ্রাহ্য আধ্যাত্মিক পরিচয় নেই। আর তাই ফ্রয়েডের কাছে মানুষ হ’ল কেবলই এক জৈবিক সত্ত্বা, যে তার প্রবৃত্তির তাড়নার কাছে পরাস্ত। ডারউইনের নিকট মানুষ হ’ল প্রকৃতির অংশবিশেষ। মার্ক্সের মতে, মানুষ হ’ল সামাজিক আর অর্থনৈতিক শক্তির ফলাফল। আর বৈজ্ঞানিক মানবতাবাদ[9] তো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পরমাণুর দৈববিন্যাসের ফল হিসাবে বিবেচনা করে।
মানুষের এই বিকৃত সত্তার হাত ধরে, পশ্চিমা-বস্ত্তবাদী দর্শনে ভর করে এমন এক সাহিত্যের জন্ম হ’ল যার বিকাশে ব্যক্তি ও পরিবারের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ল। অতঃপর সেই সাহিত্যের কৃত্রিম আধ্যাত্মিকতা মানুষের জীবনের মহান আদর্শটাই ছিনিয়ে নিল। আর এভাবে তার জীবনকে গভীর শূন্যতা আর হতাশায় ডুবিয়ে দিল। টি.এস.ইলিয়ট (১৮৮৬-১৯৬৪) তার "The Hollow Men" কবিতায় কথিত মানবতাবাদী সাহিত্যে গড়া সেই ‘খন্ড মানবের’ এক জীবন্ত ছবি এঁকেছেন।
‘‘আমরা সব ফাঁপা মানুষ
আমরা সব ঠাসা মানুষ
ঠেস দিয়ে এ ওর গায়ে
মাথার খুলি খড়ে ঠুসে! হায়রে!
যখন ফিসফিসিয়ে আলাপ করি
আমাদের শুকনো গলা শোনায়
চাপা অর্থহীন
যেন শুকনো ঘাসে বাতাসের দীর্ঘশ্বাস
কিংবা যেন আমাদের শরাবখানার ফাঁকা ভাঁড়ারে
ভাঙা কাচের উপর ইঁদুরের আনাগোনা
রূপহীন কিমাকার, বর্ণহীন ছায়া,
পক্ষাঘাতগ্রস্ত বেগ, অঙ্গভঙ্গি নিশ্চল;
যারা পার হয়
প্রত্যক্ষ নয়নে যারা মরণের
পরপারে যায় অলকায়
তারা আমাদের মনে রাখে
যদি রাখে মনে রাখে
শুধু ফাঁপা মানুষ ফাঁকা মানুষ হ’লে।[10]
এবার মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমের রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম হ’ল, আর সেই সাথে পশ্চিমা শিক্ষা বিস্তারের ফলে মুসলিম বিশ্ব সর্বক্ষেত্রে পশ্চিমা সংস্কৃতির গ্রাস হ’ল। যেহেতু সাহিত্য-সংস্কৃতি হচ্ছে শিক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তাই মুসলিম বিশ্ব এবার ত্বরিত গতিতে পশ্চিমা সাহিত্যের শিকার হ’ল এবং সময়ের আবর্তে এও দেখা গেল যে পশ্চিমা, সাহিত্যদর্শনে মুগ্ধ কবি ও লেখকেরা পশ্চিমা লেখকদের অনুকরণ করতে শুরু করল। পরিণতিতে তাদের হাতে এমন এক সাহিত্যের জন্ম হ’ল, যা কিনা মুসলিম বিশ্বের চিরাচরিত মূল্যবোধের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এমনকি এক পর্যায়ে দেখা গেল, পশ্চিমা সাহিত্যধারা মুসলিম বিশ্বে এত প্রবল হ’ল যে মার্ক্সবাদ, ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব এবং অস্তিত্ববাদের মতো পশ্চিমা দর্শন-নির্ভর সাহিত্য খোদ মুসলিম বিশ্বে তার জয়গান শুনতে পেল। আর এভাবেই মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে এক গভীর সঙ্কটের সৃষ্টি হ’ল।
অবশেষে ইসলামী চিন্তার যে পুনর্জাগরণ ঘটল, ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতির উপর তার নানাবিধ প্রভাব ছিল। ইসলামী রেনেসাঁর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হ’ল, পশ্চিমা দর্শন-নির্ভর আত্মা-বিধ্বংসী সাহিত্যের কুপ্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং সাথে সাথে তারা ইসলামী সাহিত্যধারায় সিক্ত এবং ইসলামী মূল্যবোধে-পুষ্ট সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা। সাইয়েদ কুতুব ও সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীকে ইসলামী সাহিত্য জগতে অগ্রদূত হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সাইয়েদ কুতুব তার ‘ফীত-তারীখ ফিকরাতুন ওয়া মিনহাজুন’ গ্রন্থে ইসলামী সাহিত্যের একেবারে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় দিক তুলে ধরেছেন। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী তার ‘মুখতারাত মিন আদাবিল আরাব’ গ্রন্থে ইসলামী সাহিত্য প্রসঙ্গে তার নিজস্ব ভাবনা তুলে ধরেছেন। অবশ্য একাডেমী অব এ্যারাবিক ল্যাঙগুয়েজ, দামেশক-এর সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, তিনি সেখানে ইসলামী সাহিত্যের উপর একটি গবেষণাপত্র পাঠিয়েছিলেন। এছাড়াও নাজীব কায়লানী তাঁর ‘আল-ইসলামিয়্যাহ ওয়াল-মাসাহীব আল-আদাবিয়্যাহ’ গ্রন্থে এবং ইমাদুদ্দীন খলীল তাঁর ‘ফিন-নাকদিল ইসলামী আল-মু'আছির’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। মুহাম্মাদ কুতুবও বিভিন্ন বক্তৃতা-গবেষণার মাধ্যমে ব্যাপক কাজ করেছেন। তিনি তাঁর ‘মানহাজুল ফান্নিল ইসলামী’ গ্রন্থে ইসলামী সাহিত্যতত্ত্ব ও ইসলামী নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন।
পূর্বোল্লিখিত মুসলিম মনীষীদের অমূল্য অবদানের ফলে উম্মতের সার্বিক অঙ্গনে এই মর্মে সচেতনতার জোয়ার সৃষ্টি হ’ল যে, ইসলামী আদর্শ, মূল্যবোধ ও সাহিত্যচিন্তার আলোকে একটি ইসলামী সাহিত্যধারার বিকাশ ঘটাতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি, বিকল্প ইসলামী সাহিত্যের ব্যবস্থা না করে, ‘ধ্বংসাত্মক সাহিত্য’ মুসলিম সমাজকে নষ্ট করে ফেলল, কেবল এটা বলে চিৎকার করে কোন লাভ নেই। ফলে যখন মানদন্ড নির্ধারণ করা হবে এবং ইসলামী সাহিত্যের একটি অবকাঠামো তৈরী হবে, কেবল তখনই মুসলিম বিশ্ব উৎকৃষ্ট সাহিত্য জন্মদানের জন্য প্রস্ত্তত হবে। যে সাহিত্য কিনা সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ এবং ইসলামী সাহিত্য চিন্তা থেকে উৎসারিত। অতঃপর উত্তম ও উপকারী সাহিত্য বাছাই করার জন্য ইসলামী মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিকতার আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন করা যরূরী হবে। ইসলামী নন্দনতত্ত্বনির্ভর এসব মূলনীতি মুসলিম শিল্পী-সাহিত্যিকদের জন্য পথনির্দেশিকা হিসাবে কাজ করবে। নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানসহ অন্যান্য সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইসলামী মানদন্ড নির্ধারণ করা যেমন যরূরী, ঠিক তেমনিভাবে ইসলামী নন্দনতত্ত্ব ও সাহিত্য ভাবনাকে সুসংবদ্ধ করাটাও যরূরী। লামিয়া ফারূকীর ভাষায়, ‘সমকালীন মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষণে তারা যদি তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের ধর্ম ও ঐতিহ্যের প্রকৃত উৎস থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে তাহ’লে তারা হয় সাংস্কৃতিক বিলুপ্তির মুখে পড়বে, না হয় চরম গোঁড়ামির সাগরে হাবুডুবু খাবে। শিল্পকর্ম বিচারের ক্ষেত্রে এই বিকল্পসত্তা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। মুসলিমদের নান্দনিক উৎকর্ষ আসলে তাদের সূক্ষ্ম রুচিবোধের পরিচায়ক’।[11]
মক্কায় অনুষ্ঠিত ‘ইসলামী শিক্ষা’-শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে[12] সাহিত্য প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত সুফারিশ করা হয়। ‘ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে নন্দনতত্ত্ব ও সাহিত্য সমালোচনার জন্যে একটি খাঁটি ইসলামী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে, যেটা কিনা মুসলিমরা যে বিভিন্ন ঘরানার সাহিত্যের সংস্পর্শে আসছে, তা মূল্যায়নের জন্যে মানদন্ড প্রদান করবে’।[13]
প্রথম সম্মেলনের পর থেকে, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নকল্পে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নদওয়াতুল উলামা’র পৃষ্ঠপোষকতায় মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী ভারতের লক্ষ্ণৌতে ইসলামী সাহিত্যের উপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ইসলামী সাহিত্যের নানা দিক সম্বলিত গবেষণাপত্র সেখানে পেশ করেন। এখানে প্রণিধানযোগ্য যে, সেই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে ‘রাবেতাতুল আদাবিল ইসলামী’ আত্মপ্রকাশ করে। এক্ষেত্রে আলী আশরাফের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ এ প্রসঙ্গে তিনি মুসলিম এডুকেশনাল কোয়ার্টারলি (কেমব্রিজ)-এ অনেকগুলো নিবন্ধ প্রকাশ করেন।
ইসলামী সাহিত্যের এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে অত্র নিবন্ধ, যে মূলনীতিগুলো ইসলামী সাহিত্যের নির্মাণকাঠামো হিসাবে কাজ করবে, সেগুলোকে চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামী সাহিত্য ধারণাটিকে আরো পরিষ্কার করবে।
প্রকৃত প্রস্তাবে ইসলামী সাহিত্য হ’ল ইসলামের সৌন্দর্যভাবনা বা ইসলামী নন্দনতত্ত্বেরই বর্ধিতরূপ। এটি এই অর্থে যে, সাহিত্য হ’ল মানুষের নান্দনিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। আর এই বহিঃপ্রকাশ ঘটে মুখে বলা বা লেখার মাধ্যমে। মানবজীবনে সৌন্দর্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের মধ্যে সৌন্দর্য-বস্ত্ত অবলোকন করে তা মূল্যায়ন করার এক সহজাত প্রবণতা রয়েছে। নান্দনিক-অনুভূতি ইন্দ্রিয়ের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত, আর তাই এটাকে বলা হয় ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা। 'Aesthetics' (নন্দনতত্ত্ব) শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে গ্রীক শব্দ Aesthesis থেকে। যার অর্থ হ’ল 'ইন্দ্রিয় জ্ঞানতত্ত্ব। অন্যভাবে বললে ‘সংবেদনশীলতা’।[14] যাইহোক, ইসলামী সৌন্দর্যবোধ কেবল ইন্দ্রিয়সুখেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইসলামে সৌন্দর্যতত্ত্বের একটি ব্যাপক ও গভীর অর্থ রয়েছে। ইসলামী নন্দনতত্ত্ব, সত্যিকার অর্থে রাসূলের (ছাঃ) একটি হাদীছের উপর নির্ভরশীল, ‘আল্লাহ সুন্দর, আর তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন’।[15] স্পষ্টত, আল্লাহর একটি ছিফাত হ’ল সৌন্দর্য (জামাল)। ফলে একজন মুসলিমের নিকট থেকে এটা প্রত্যাশা করা হয় যে, সে তার নিজের মধ্যে ইলাহী ছিফাত লালন করবে- ‘তাখাল্লাকূ বি আখলাকিহী’ (তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর ছিফাত লালন করো)। এভাবে একজন মুসলিম সৌন্দর্যপ্রেমীও বটে। কিন্তু তার সৌন্দর্য-অনুভূতি কেবল ইন্দ্রিয়সুখ বা স্থূল আবেগে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সৌন্দর্য সে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। এভাবে সৌন্দর্যকে অতি লৌকিক উপায়ে অনুভব করার মাধ্যমে একজন মানুষ তার প্রবৃত্তি তাড়নার ঊর্ধ্বে আরোহণ করে। ফলে তার কামানুভূতি দমিত হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রাচ্যের সৌন্দর্য-ভাবনার আলোকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘একটি শিল্পকর্ম কোন সৌন্দর্য-পণ্য নয়; বরং ওতে নিহিত সৌন্দর্য শিল্পের প্রকাশে সহায়ক মাত্র। মোটেই শিল্পের পরম বা মুখ্য বস্ত্ত নয়’।[16] যাইহোক সৌন্দর্যের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যা বলেছেন, ইসলামের সৌন্দর্যভাবনা তার চেয়েও সমৃদ্ধ। সৃষ্টিতত্ত্ব বা মনস্তত্ত্বের ব্যাপারে ইসলামের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার সাথে নন্দনতত্ত্ব পুরোপুরি মিলে যায়।
সৌন্দর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যেমন: বিন্যাস, অনুপাত, সামঞ্জস্য এবং শব্দে-বর্ণে-ছন্দে-লয়ে ভারসাম্য- এসব আসলে ইলাহী ছিফাত- সৌন্দর্য (জামাল)-এর বহিঃপ্রকাশ। যেমন আল্লাহ বলেন,
‘তুমি তোমার মহান রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, যিনি সৃষ্টি করেন ও সুবিন্যস্ত করেন’ (আ'লা ৮৭/১-২)।
‘তিনি আসমান ও যমীন যথার্থরূপে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন- ‘তোমাদের আকৃতি করেছেন সুশোভিত এবং প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই নিকট’ (তাগাবুন ৬৪/৩)।
"আমি নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি’ (ছাফফাত ৩৭/৬)।
এমনকি ঘোড়া, গাধা ও খচ্চরের মতো ভারবাহী পশুর ব্যাপারেও কুরআন শুধু কাজের কথাই নয়, বরং সৌন্দর্যের কথাও বলেছে। যেমন-
‘তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভাবর্ধনের জন্য তিনি ঘোড়া, গাধা ও খচ্চর সৃষ্টি করেছেন’ (নাহল ১৬/৮)।
সূরা আন‘আমে আল্লাহ শাকসবজি ও ফলফলাদির কথা উল্লেখ করে মানুষকে আহবান জানিয়েছেন তারা যেন টাটকা ও পাকা ফলের সৌন্দর্য উপভোগ করে। আর আল্লাহর সৃষ্টিমহিমা নিয়ে গবেষণা করে।
মুহাম্মাদ কুতুব তাঁর ‘মানহাজুল ফান্নিল ইসলামী[17] গ্রন্থে ইসলামী নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। কুরআনের সৌন্দর্যভাবনা সবকিছুকেই শামিল করে। এটা কেবল বস্ত্তর মধ্যেই নয়, বরং আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা ও কর্মের মধ্যেও সৌন্দর্য তালাশ করে। যেমন কথা বলায় সৌন্দর্য- আহসানু কাওলান (৪১:৩), কাজে সৌন্দর্য- আহসানু আমালান (১১:৮), নছীহতে সৌন্দর্য- মাওয়িযাতুল হাসানাহ (১৬:১২৫), বিতর্কে সৌন্দর্য- জাদিলহুম বিল্লাতী হিয়া আহসান (১৬:১২৫)- কুরআন সবকিছুর মধ্যে সৌন্দর্য তালাশ করে। এটি নবী ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনিকে সর্বোত্তম বর্ণনা হিসাবে অভিহিত করেছে- আহসানাল ক্বাছাছ (১২:৩)। অতএব আমরা দেখতে পাই, ইসলামের সৌন্দর্যবোধ কেবল স্পর্শগ্রাহ্য বস্ত্ততে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটা মানুষের আবেগ-অনুভূতি, নীতি-নৈতিকতার মত বিষয়কেও শামিল করে।
যেমনটা প্রফেসর আলী আশরাফ মনে করেন, ‘সত্য ও সৌন্দর্য হ’ল আল্লাহর দু’টি ছিফাত এবং তাঁর ছিফাতের প্রকাশস্বরূপ। এ দু’টো মাখলূকের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়’।[18] এমনিভাবে জীবনের সত্য ও সৌন্দর্য সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। এ কারণে নন্দনতত্ত্ব নৈতিকতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
স্পষ্টত, ইসলামী সাহিত্য মোটেই মানুষের স্থূল আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি হ’ল মানুষের কুপ্রবৃত্তির (নাফস) সুড়সুড়ি থেকে মুক্ত, শুদ্ধ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। এ সাহিত্য হ’ল আক্বীদা ও আখলাক-ভিত্তিক সাহিত্য। এই আক্বীদাচেতনা থেকেই জন্ম হয় ইসলামী মূল্যবোধের, যা একজন ঈমানদারের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। আর এভাবেই মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাপদ্ধতি থেকে উৎসারিত হয় ইসলামী সাহিত্য। এ কারণে এই সাহিত্যকে ঈমান ও আক্বীদা-নির্ভর সাহিত্য হিসাবে বিবেচনা করা যায় (আদাবুল ঈমান ওয়াল আক্বীদা)।
ইসলামী সাহিত্য আক্বীদা ও বিশ্বাস-নির্ভর হওয়ার অর্থ এটা নয় যে, এ সাহিত্য কেবল ধর্মীয় নছীহত আর সাবধানবাণীতে পূর্ণ হবে, বা ধর্মীয় বিষয়-বস্ত্ততে সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ এমনটা যদি হয়, সেক্ষেত্রে মুসলিম কবি, শিল্পী ও লেখকদের লেখালেখির বিষয়বস্ত্ত সীমিত হয়ে যাবে। একজন মুসলিম সাহিত্যিক মানবজীবনে ঘটে যাওয়া যেকোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন। এই বিশ্বজগত, জীবনের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না- সবকিছু তার লেখালেখির বিষয়বস্ত্ত হ’তে পারে। তবে এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হচ্ছে এগুলোকে সে ইসলামের ছাঁচে ফেলে বিচার করবে। যে শিল্পীর শৈল্পিক সত্তা ইসলামী মূল্যবোধে পুষ্ট, জীবনের কোন ঘটনা যদি তার কাছে শিল্পিত করার যোগ্য বলে মনে হয়, যেটা তার মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তাহ’লে সে তা সানন্দে গ্রহণ করবে। অন্যথা সে তা ছুঁড়ে ফেলে দিবে। উল্লিখিত মানদন্ড সামনে রেখে, মহাবিশ্ব, মানবজীবনের সার্বিক দিক, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও বিশালতা- সবকিছুকে একজন মুসলিম শিল্পী তার শিল্পের বিষয়বস্ত্ত হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন। জীবন তার সম্মুখে অফুরন্ত উপাদান পেশ করছে। এমনকি ‘প্রেম’, যেটা কিনা বিশ্বের অধিকাংশ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেটাও ইসলামী সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছে। কেবল প্রকৃতি-প্রেমই নয়, বরং মানবপ্রেম, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি প্রেম, সত্য ও সুন্দরের প্রতি প্রেম এবং সর্বোপরি আল্লাহর জন্য ভালোবাসা- এ সবগুলো ইসলামী শিল্পকর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
ইসলামী সাহিত্য হ’ল সত্যের (হক্ব) সাহিত্য। এটা মানুষের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে। ফলে ইসলাম মানুষের দোষ-ত্রুটির কথাও স্বীকার করে। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে’ (নিসা ৪/২৮)। ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে তাড়াহুড়ো-প্রবণ’ (আম্বিয়া ২১/৩৭)। ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থিরচিত্তরূপে। ফলে তাকে যখন বিপদ স্পর্শ করে, সে হতাশ হয়ে পড়ে। আবার যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, সে অতি কৃপণ হয়ে যায়’ (মা‘আরিজ ১৯-২১)।
কিন্তু ইসলাম চায়, মানুষ দোষ-ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার নিরন্তর সংগ্রামে নিয়োজিত হোক। আর নিশ্চিত করুক যে সত্য, ন্যায়, সুন্দর, সাম্য ও সামঞ্জস্যের মতো সদগুণগুলো সে ধারণ করছে এবং সেগুলো চর্চার মাধ্যমে নিজেকে এক মহোত্তম মানবে রূপান্তর করছে। মানবিক দুর্বলতার প্রতি ইসলামের যে দৃষ্টিভঙ্গি, কথিত মানবতাবাদী দর্শন-নির্ভর পশ্চিমা সাহিত্যের সাথে তা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। অস্তিত্ববাদ ও মনঃসমীক্ষণের[19] মতো মানবতাবাদী দর্শনগুলো মানুষের দোষ-ত্রুটিকেই বড় করে দেখে। ফলে তাদের হাতে এমন এক সাহিত্যের জন্ম হয় যা যন্ত্রণা, হতাশা আর অসহায়ত্বে ভরা। অস্তিত্ববাদী দর্শনে বিশ্বাসী সাহিত্যিকদের অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম ভারসাম্যহীন ব্যক্তিত্বের ফল। আর এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে শিল্পীর ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পীর ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইকবাল বলেন, ‘একটি সমাজের নৈতিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে, সে সমাজের কবি-সাহিত্যিকগণ কোন ধরনের অনুপ্রেরণা গ্রহণ করছেন তার উপর। অনুপ্রেরণা আবার ব্যক্তির ইচ্ছাধীন বিষয় নয়। এটি হ’ল একটি উপহার, ফলে তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রহীতা এটার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোমতো জানতে পারে না। এটা ব্যক্তির নিকট অপ্রত্যাশিতভাবে আগমন করে এবং খোদ ব্যক্তির মাঝে দাখিল হয়ে যায়। এজন্য প্রাপ্ত বস্ত্ত ও তার গুণাবলী মানুষের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মাত্র একজন অধঃপতিত (decadent) শিল্পীর চেতনা, যদি সে শিল্পী মানুষকে তার শিল্পকর্মের প্রতি প্রলুব্ধ করতে পারে, তাহ’লে তা মানুষের জন্য চেঙ্গিস[20] ও অ্যাটিলার[21] সম্মিলিত বাহিনীর চেয়েও বেশি ধ্বংসাত্মক হ’তে পারে।[22]
ভারসাম্যহীন ব্যক্তিত্বের অধিকারী শিল্পী উত্তম গুণাবলীর পরিবর্তে মানুষের দোষ-ত্রুটি বড় করে দেখে। ফলে এমন এক সাহিত্যের জন্ম হয়, ইকবাল যাকে 'অধঃপতিত সাহিত্য' (Literature of decadence) বলে অভিহিত করেছেন। অপরদিকে ইসলাম মানবিক ভুল-ভ্রান্তির কথা স্বীকার করলেও তাকে কিন্তু পাপ-কাম-ঈর্ষাপ্রবণ সত্তা হিসাবে বিবেচনা করে না, বা তার প্রকৃত রূপকে বিকৃত করে না; বরং মানুষকে সর্বগুণের ধারক হিসাবে চিত্রিত করে। এটা মানুষের ভালো দিক, মন্দ দিক- দু’টোই তুলে ধরার পাশাপাশি তার মধ্যে এক ধরনের আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত রাখে এবং তার সহজাত গুণ (ফিতরাত)-এর প্রতি অটুট আস্থা রাখে। মানুষের আদি উৎস হ’ল কাদামাটি। কিন্তু সে আবার ইলাহী গুণেরও ধারক।
আল্লাহ বলেন, ‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কর্দম হ’তে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হ’তে। পরে তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রূহের অংশবিশেষ’ (সাজদাহ ৭-৯)।
এভাবে মানুষ ইলাহী গুণের ধারক, যেটা তার মধ্যেকার অপার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। এই অপার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম মুমিনের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার পথে প্রচেষ্টা চালায় আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব’ (আনকাবূত ৬৯)।
ইসলামী সাহিত্য অবশ্যই একজন মুমিনের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য, ঈমান-আক্বীদার মযবূতি তুলে ধরার পাশাপাশি অন্যায়-অপরাধ, যুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার অবিরাম জিহাদের চিত্রও তুলে ধরবে। ইসলামী সাহিত্য হতাশা-ব্যর্থতার সাহিত্য নয়, আশা-আকাঙ্ক্ষার সাহিত্য। এক্ষেত্রে ইসলামী সাহিত্য অস্তিত্ববাদী সাহিত্যের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইসলাম ভালো-মন্দ মিশ্রিত সামাজিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে। বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। কিন্তু সাথে সাথে ইসলামী সমাজের মূলনীতির আলোকে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠনের মাধ্যমে বিদ্যমান সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে চায়। একারণে ইসলামী সাহিত্য শ্রেণী-সংগ্রামকে বড় করে দেখায় না, যেমনটা মার্ক্সবাদী সাহিত্যে হয়ে থাকে, বরং সমাজ ও অর্থনীতির ভালো দিক তুলে ধরার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায়।
এটা ‘বাস্তববাদী সাহিত্য’, তবে তা মার্ক্সবাদী অর্থে নয়, বরং এটাকে ‘ইসলামী বাস্তববাদী’ (Islamic realism) সাহিত্য হিসাবে অভিহিত করা যায়। এটা বাস্তববাদের নামে মানুষের মন্দপ্রবণতা, সমাজের অন্যায়-অবিচার আর মানবজীবনের অন্ধকার দিককে বাড়িয়ে দেখায় না। যেহেতু সর্বশক্তিমান আল্লাহ ‘দোষ-ত্রুটি গোপনকারী’ (সাত্তারুল ঊয়ূব)। তাই একজন মুমিনও নষ্ট ও খারাপ দিক ঢেকে রেখে সত্য, সুন্দর আর পূর্ণতার সন্ধান করবে। ইসলামী সাহিত্য কোন ভাববাদীর কল্পনাপ্রসূত সাহিত্য নয়, বরং এটি এমন এক সাহিত্য, যা সরাসরি মানবজীবন ও মানবিক কর্মকান্ডের মঞ্চ। এই পৃথিবী হ’তে রসদ গ্রহণ করে পুষ্ট হ’তে চায়। ইসলামী সাহিত্য এমন এক সাহিত্য, যা মানুষকে পার্থিব জীবনের জটিল গোলকধাঁধায় পথ চলতে সাহায্য করে। এমনিভাবে নিজের ও সমাজের মধ্যে জেঁকে বসা অন্যায়-দুর্নীতির মতো অপশক্তিকে রুখে দিয়ে অস্তিত্বের উচ্চতর স্তরে আরোহণ করতে সাহায্য করে।
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের পথে যে যাত্রা, ইসলামী সাহিত্য সে যাত্রায় কান্ডারী হিসাবে কাজ করে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা এক স্তর হ’তে আরেক স্তরে আরোহণ করবে’ (ইনশিক্বাক্ব ৮৪/১৯)।
ইসলামী সাহিত্য কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাহিত্য নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে এবং যে কোন সময়ের যে কোন ঘরানার সাহিত্যের সাথে খাপ খাইয়ে নেবে। তবে এটা কোন অবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধকে ম্লান হ’তে দেবে না বা এর আসল উদ্দেশ্য হ’তে বিচ্যুত হবে না।
সাহিত্যের বাহ্যিকরূপ (Form) ও বিষয়বস্ত্তর (Content) প্রশ্ন বিশ্বের প্রায় সব গবেষককে চিন্তিত করে রেখেছে। এখানে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা অসঙ্গত হবে না। কারো কারো মতে, সাহিত্যের সৌন্দর্য হ’ল তার অবয়বে,একারণে সারবস্ত্ত যাই-ই হোক, যতক্ষণ তা সবধরনের সাহিত্য-অলংকার সহযোগে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিবেশিত হবে, ততক্ষণ তা সফল সাহিত্য হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে ইসলামী সাহিত্য বাহ্যরূপ নয়, বরং বিষয়বস্ত্তকে সবমসময় মুখ্য মনে করে। এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও বাহ্যিকরূপ (ছূরত) নয়, বরং হৃদয়ের শুদ্ধতাকে বিবেচ্য বলে গণ্য করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা নয়, বরং অন্তর ও কর্মের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন’।[23]
রাসূল (ছাঃ)-এর এই হাদীছকে সাহিত্যের রূপ ও বিষয়বস্ত্তর
প্রশ্নে ইসলামী সমাধান হিসাবে গ্রহণ করা যায়। উপরন্তু, যেসব কবির কবিতা কোন অর্থ বহন করে না, কেবল শব্দ নিয়ে খেলা করে, কুরআন তাদের সমালোচনা করেছে। ‘এবং কবিদেরকে অনুসরণ করে বিভ্রান্তরাই। তুমি কি দেখ না তারা উদভ্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুড়ে বেড়ায়? এবং তারা তো বলে যা তারা নিজেরা করে না। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে’ (শু‘আরা ২৬/২২৪-২৭)।
উক্ত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় সাইয়েদ কুতুব বলেন, এখানে কবিদের তিরস্কার করার অর্থ এই নয় যে, ইসলাম কাব্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, বরং এখানে কেবল কবিদের লাগামহীন কল্পনা আর উদ্দাম আবেগের নিন্দা করা হয়েছে, কেননা তা মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সত্তার জন্য ক্ষতিকর।[24] ইমরুল কায়েসের মু‘আল্লাকাতসহ ইসলাম-পূর্ব যুগের কবিতাসমূহ অর্থহীন কাব্যের উজ্জবল নিদর্শন। অতএব ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হ’ল সাহিত্যকর্ম মূল্যায়নে বিষয়বস্ত্তকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ইসলামী সাহিত্য হ’ল তাওহীদী প্রেরণায় ঋদ্ধ। তাই এই সাহিত্যের লক্ষ্য হওয়া উচিত তাওহীদী চেতনাকে সংহত করা। এই সাহিত্য একজন মুসলিমের মূল্যবোধ হ’তে উৎসারিত। ফলে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কোন সাহিত্য ইসলামী সাহিত্য বলে বিবেচিত হ’তে পারে না। এই সাহিত্য একজন মুসলিমের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি কামনা করে। এই সাহিত্য কেবল মূল্যায়নের জন্য নয়, বরং চিন্তা ও গবেষণার জন্য। এই সাহিত্য মানুষের স্থূল আবেগে নয়, বরং আত্মার উচ্চতর জগতে নাড়া দিবে। এটি প্রত্যেক যুগের প্রচলিত সাহিত্য ঘরানার মাধ্যমে সমসাময়িক সমস্যা তুলে ধরবে। এই সাহিত্যের ক্ষেত্র মহাবিশ্বের সমান বড়। এই সাহিত্য কেবল ইহকালের জন্য নয়, পরকালের জন্যও। এককথায় আল্লাহর দেয়া আদর্শ সম্বলিত এই সাহিত্য সর্বযুগের সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য।
অনুবাদ : আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ (২য় বর্ষ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. TOWARDS AN ISLAMIC THEORY OF LITERATURE Author(s): M. A. M. SHUKRI Source: Islamic Studies , Winter 1992, Vol. 31, No. 4 (Winter 1992), pp. 411-421, Published by: Islamic Research Institute, International Islamic University, Islamabad Stable URL: https://www.jstor.org/stable/20840093
[2]. এম এ এম শুকরি: (জন্ম.১৯৪০- মৃত্যু. ১৯ মে ২০২০ খ্রি.) একজন শ্রীলঙ্কান মুসলিম বিদ্বান। তিনি ১৯৭৩ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি লাভ করেন এবং ১৯৭৬ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য) হ’তে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (শ্রীলংকা) এ্যারাবিক অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ১৯৮২ সাল হ’তে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় চার দশক যাবৎ শ্রীলংকায় ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ‘নালীমিয়াহ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ’-এর পরিচালক পদে আসীন ছিলেন। তিনি আরবী, ইংরেজী, তামিল ও সিংহলী ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে ‘মুসলিমস অব শ্রীলংকা’, ‘রেলিজিওন অ্যান্ড সায়েন্স’, ‘ইসলাম অ্যান্ড এজুকেশন’ প্রভৃতি।-অনুবাদক
[3]. মার্ক্সবাদ (Marxism): কার্লমার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩ খ্রি.)-প্রদত্ত একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক তত্তব। এ তত্ত্ব মতে, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সংঘাতই হ’ল ইতিহাসের প্রধান চালিকাশক্তি, একসময় এমন একটি সমাজ কায়েম হবে, যেখানে কোন শ্রেণী বিভাজন থাকবে না।-অনুবাদক
[4]. অস্তিত্ববাদ (Existentialism): এ তত্ত্ব মতে, নির্লিপ্ত ও প্রতিকূল বিশ্বে মানুষ এক অনন্য নিঃসঙ্গ প্রাণী, যে নিজ কর্মের জন্য দায়ী এবং নিজ নিয়তি নির্ধারণের ব্যাপারে স্বাধীন।-অনুবাদক
[5]. সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ (Socialist realism): এটি এক ধরনের শিল্পশৈলী, যা সোভিয়েত রাশিয়ায় শুরু হয় এবং ১৯৩২-৮৮ সাল পর্যন্ত সেদেশে আনুষ্ঠানিক শিল্পরীতি হিসাবে স্বীকৃত ছিল। এই শৈলী মতে, শিল্পে, সাহিত্যে ও সঙ্গীতে নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা-উপাদান থাকা দরকার, যাতে সাধারণ মানুষ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের ব্যাপারে সচেতন হয়।-অনুবাদক
[6]. শিল্পের নিমিত্ত শিল্প (Art for Art's Sake): এটি একটি ঊনিশ শতকের ফরাসি শ্লোগান। এ মতে, একটি সত্যিকার শিল্পকর্ম যে কোন ধরনের নৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষামূলক বিষয় থেকে মুক্ত।-অনুবাদক
[7]. সাইয়েদ আলী অ্যা আশরাফ ‘লিটারেরি এডুকেশন অ্যান্ড রিলিজিয়াস ভ্যালু: দি ইসলামিক প্রোচ’, মুসলিম এডুকেশনাল কোয়ার্টারলি, ভলিউম. ১, নং ৪, পৃ. ৫৫।
[8]. সাইয়েদ কুতুব, ফিত তারীখ ফিকরাহ ওয়া মিনহাজ (বৈরুত, ১৯৭৮), পৃ. ১৩-১৬।
[9]. বৈজ্ঞানিক মানবতাবাদ (Scientific Humanism): এ তত্ত্ব মতে, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসঙ্গত উপায়ে মানুষের জীবনকে অধ্যয়ন করতে হবে। আর এভাবে মানুষকে সমৃদ্ধির পথে চালিত করা সম্ভব।-অনুবাদক
[10]. বিষ্ণু দে অনূদিত, এলিঅটের কবিতা (২০১৫), আনন্দ পাবলিশার্স (ভারত), ২য় মুদ্রণ, পৃ. ৩৫।-অনুবাদক
[11]. লুই লামিয়া আল-ফারুকী, ইসলাম অ্যান্ড আর্ট (লাহোর, ১৯৮২), পৃ.১৩।
[12]. এটি ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়।-অনুবাদক
[13]. সাইয়েদ হুসাইন নছর (সম্পাদক), ফিলোসোফি, লিটারেচার অ্যান্ড ফাইন আর্টস (১৯৮২), পৃ.১১৬।
[14]. তোসান বেইরাক, ‘আর্ট: দি ইসলামিক অ্যাপ্রোচ’, মুসলিম এজুকেশনাল কোয়ার্টারলি, ভলিউম. ১, নং. ৪, পৃ. ৩০।
[15]. মুসলিম হা/৯১।
[16]. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পার্সোনালিটি (লন্ডন, ১৯৪৮), পৃ. ২৭।
[17]. সাইয়েদ মুহাম্মাদ কুতুব, মানহাজ আল-ফান্ন আল-ইসলামী (বৈরুত, ১৯৮০), অধ্যায়. ‘আল-জামালু ফিত তাছাওয়ুরিল ইসলাম’, পৃ. ৮৫-৯৬।
[18]. সাইয়েদ আলী আশরাফ ‘লিটারেরি এডুকেশন অ্যান্ড রিলিজিয়াস ভ্যালু: দি ইসলামিক অ্যাপ্রোচ’, মুসলিম এডুকেশনাল কোয়ার্টারলি, খন্ড. ১, নং. ৪, পৃ.৮৪।
[19]. মনঃসমীক্ষণ (Psycho-analysis): মানসিক রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি বিশেষ, যাতে রোগীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে তার শৈশব জীবনের ঘটনাবলির মধ্যে রোগের নিহিত কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করা হয় এবং ঐসব ঘটনা সম্বন্ধে তাকে সচেতন করে তুলে রোগ নিরাময় করা হয়।-অনুবাদক
[20]. চেঙ্গিস খান: (১১৬২- ১২২৭ খ্রি.) একজন মঙ্গল যোদ্ধা, শাসক ও ইতিহাসবিখ্যাত বিজেতাদের অন্যতম।-অনুবাদক
[21]. অ্যাটিলা দ্য হান: (জন্ম. ৪০৬- মৃত্যু. ৪৫৩ খ্রি.) ৪৩৪ হতে ৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হান সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন।-অনুবাদক
[22]. বশীর আহমেদ দার, আ স্টাডি অন ইকবাল'স ফিলোসোফি (লাহোর, ১৯৪৪), পৃ. ২৪।
[23]. ছহীহ মুসলিম হা/২৫৬৪।
[24]. সাইয়েদ কুতুব, ফী যিলালিল কুরআন-এ অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।