সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণসমূহ
(ক) ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত :
মানব জাতিকে ভুল এবং বিস্মৃতির উপরে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত। পবিত্র কুরআনে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর মিথ্যার উপর যিদ করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর সর্বোত্তম ভুলকারী তারাই, যারা সর্বাধিক তওবাকারী’।[1]
অতএব দীর্ঘ ৬০ বছর যাবৎ হাযার হাযার হাদীছ তাখরীজের ক্ষেত্রে আলবানীর কিছু ভুল প্রতিভাত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সেকারণে তিনি কোন বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশের পূর্বে তা পুনরায় সম্পাদনা করতেন। অতঃপর কোন ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন করে দিতেন অথবা অন্য গ্রন্থে পরিবর্তিত মত উল্লেখ করতেন। যেমন ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ছহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীব গ্রন্থটি ১ম প্রকাশিত[2] হওয়ার পর পরবর্তী সংস্করণের ভূমিকায় আলবানী বলেন, ... এখানে গ্রন্থটি পর্যালোচনার আরেকটি কারণ হ’ল, মানুষকে ভুল ও বিস্মৃতির উপরেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সাথে সাথে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ ভুল, বিস্মৃতি ও বাধ্যগত অবস্থায় যে গোনাহ করে থাকে, তা থেকে (কলম) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই এরূপ ভুল-ভ্রান্তি স্পষ্ট হ’লে তার উপর যিদ করা জায়েয নয়। সেকারণে আমার অভ্যাস হ’ল, যখনই কোন গ্রন্থে আমি আমার ভুল-ত্রুটি দেখতে পাই, তার টীকায় আমি তা অবহিত করি বা নতুন সংস্করণে তা সংশোধন করে দেই। আমার কোন গ্রন্থ পুনঃপ্রকাশিত হ’লেই আমি এরূপ করে থাকি। সুন্নাতের বিরোধিতা ও সেদিকে আহবানের ক্ষেত্রে কিছু পরিচিত প্রবৃত্তিপূজারী ও অপবাদ আরোপকারী এ থেকে সুবিধা ভোগ করলেও তা আমাকে এ শুদ্ধিকরণ থেকে পিছপা করতে পারেনি।[3]
(খ) ইলম স্থবিরতাকে গ্রহণ করে না :
একথা সর্বজন বিদিত যে, জ্ঞান কখনো স্থবিরতাকে গ্রহণ করে না। বরং সর্বদা তা পরিশুদ্ধি, সংস্কার ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। আলবানী বলেন, আমি এ ব্যাপারে পরিতৃপ্ত যে, বিশুদ্ধ জ্ঞান কখনো স্থবিরতাকে গ্রহণ করে না। তাই অনেক লেখকের ব্যাপারে আমি বিস্মিত হই, যাদের বিশ বছর পূর্বে লিখিত বই এখনো প্রকাশ হচ্ছে। অথচ তাতে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন নেই। এটা কি ইলম! না আসমান থেকে নাযিলকৃত অহী! না এটা মানবীয় প্রচেষ্টা, যা ভুল হ’তে পারে সঠিকও হ’তে পারে?[4]
বরং প্রকৃত আলেম কখনো সঠিক বিষয় জানার পর ভুলের উপর যিদ করেন না। আলবানী বলেন, এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয় যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন তাকে জ্ঞানগত অক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ، ‘তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হ’তে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি ইচ্ছা করেন (বাক্বারাহ ২/২৫৫)। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে, একজন গবেষক যখন তার নিকটে নতুন কোন সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হবে, তখন তিনি পূর্বে প্রদত্ত তার বিপরীত কোন ইজতিহাদ বা মতামতের উপর অনঢ় থাকবেন না। সেকারণে আমরা ওলামায়ে কেরামের গ্রন্থাবলীতে একজন ইমাম থেকে হাদীছ, রাবীগণের জীবনী, ফিক্বহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী মতামত খুঁজে পাই। বিশেষত ইমাম আহমাদের এরূপ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। ইমাম শাফেঈও এক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সেকারণ তাঁর মতামতের ক্ষেত্রে প্রাচীন ও আধুনিক বলে দু’টি মাযহাব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। অতএব কিছু সিদ্ধান্ত ও হুকুম-আহকামের ব্যাপারে আমার মত পরিবর্তন দেখে সম্মানিত পাঠকদের বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।[5]
(গ) নতুন নতুন হাদীছ গ্রন্থের সন্ধান লাভ :
তাহক্বীক্ব ও তাখরীজের ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা ও অধ্যবসায় যতই বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই তিনি এমন এমন হাদীছ গ্রন্থের সন্ধান পেয়েছেন, যা ইতিপূর্বে পাননি। সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অনেক পান্ডুলিপি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে, যা অধ্যয়নে তিনি বিভিন্ন হাদীছের শাওয়াহেদ, মুতাবা‘আত এবং একাধিক সূত্র খুঁজে পান। যার ভিত্তিতে অনেক হাদীছের ক্ষেত্রে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। আলবানী বলেন, ...এসব উৎসসমূহ আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আরেকটি কারণ। যা আমার পূর্বে কৃত তাহক্বীক্বের উপর আরো বিস্তৃত গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দেয়। ফলে আমি অনেক হাদীছের মুতাবা‘আত, শাওয়াহেদ ও তুরুকের উপর নির্ভর করার সুযোগ লাভ করি। ইতিপূর্বে যেসব ক্ষেত্রে আমি মুনযিরী বা অন্যান্য মুহাদ্দিছের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলাম। ...এসব নতুন উৎসসমূহের মধ্যে এমন অনেক তুরুক আমাকে হাদীছের গোপন ত্রুটিসমূহ উদঘাটনে সাহায্য করেছে, যেসব হাদীছকে তার সংকলনকারী বা অন্য কোন মুহাদ্দিছ শক্তিশালী বলেছেন।[6]
(ঘ) কারণবশত দ্রুততার সাথে তাখরীজ সম্পন্ন করা :
কোন কোন গ্রন্থ তাখরীজের ক্ষেত্রে অনিবার্য কারণবশত আলবানীকে দ্রুততার সাথে তাখরীজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে তিনি তুরুক ও শাওয়াহেদ অনুসন্ধানের দিকে গভীরভাবে নযর দিতে পারেননি। ফলে পরবর্তীতে সেগুলো পুনরায় পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তিনি ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে পান এবং সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। যেমন মিশকাতুল মাছাবীহ-এর উপর কৃত তাঁর প্রথম তা‘লীক্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, মিশকাতুল মাছাবীহ-এর তা‘লীক্ব রচনার সময় আমি তাদের কথায় ধোঁকায় পতিত হয়েছিলাম। কেননা বিশেষ অবস্থার চাহিদা মোতাবেক আমাকে দ্রুততার সাথে তা সম্পন্ন করতে হয়েছিল। যা আমাকে আমার নীতি অনুযায়ী হাদীছের তুরুকসমূহ নিয়ে গভীর অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়নি।[7]
(ঙ) হাসান সাব্যস্তের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছদের মত পরিবর্তন নতুন কিছু নয় :
কোন হাদীছ হাসান সাব্যস্তের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণের মাঝে বিস্তর মতবিরোধ দেখা যায়। বিশেষত হাসান লি গায়রিহী হাদীছের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনশীল হয়েই থাকে। কারণ হাসান হাদীছ ছহীহ ও যঈফ-এর মধ্যবর্তী হুকুম সম্বলিত। একই হাদীছকে কখনো তারা হাসান বলেছেন, কখনো তাকে যঈফের সীমারেখা থেকে বের করতে অক্ষম হয়েছেন। তাই ছহীহ ও যঈফ হাদীছ থেকে হাসান হাদীছ পৃথক করা ইলমে হাদীছের সবচেয়ে কঠিন ও সূক্ষ্ম বিষয়। বিশেষত রাবীর দুর্বলতার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হাদীছ বিশারদগণের অনেক কষ্ট পোহাতে হয় এবং দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয়। সেকারণে আহলে ইলমগণ বলে থাকেন যে, এটা এমন একটি বিষয় যে ব্যাপারে পরিতৃপ্ত হওয়া যায় না। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, হাসান-এর ব্যাপারে তুমি কখনোই পরিতৃপ্ত হবে না। এমনকি আমি নিজেও এ ব্যাপারে হতাশায় নিমজ্জিত হই। কত হাদীছের ক্ষেত্রে হাফেযগণ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব করেছেন যে, হাদীছটি হাসান, যঈফ না-কি ছহীহ? এমনকি কোন হাফেয একটি হাদীছ সম্পর্কে স্বীয় ইজতিহাদ পরিবর্তন করে একবার তাকে যঈফ বলেছেন, তারপর তাকে ছহীহ এবং আরেকবার তাকে হাসান সাব্যস্ত করেছেন।[8]
এ ব্যাপারে আলবানী বলেন, অধিকাংশ হাসান হাদীছের হুকুমের ব্যাপারে হাফেযগণ মতভেদ করেছেন। কারণ হ’ল- হাদীছের দুর্বলতার পরিমাপ কেন্দ্রিক মতভেদ। এমনকি এক্ষেত্রে একজন মুহাদ্দিছের একাধিক মতও পাওয়া যায়। যেমন একটি হাদীছকে প্রথমে তিনি হাসান সাব্যস্ত করেছেন, কিন্তু পরবর্তীতে হাদীছটির দুর্বলতার দিকগুলো তাঁর নিকটে শক্তিশালী গণ্য হওয়ায় তা যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। ইলমে হাদীছের গবেষণায় যারা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছেন তারা এর বাস্তবতার ব্যাপারে অবগত আছেন।[9]
অন্যত্র তিনি বলেন, একই হাদীছের ক্ষেত্রে গবেষকের অন্তরে কখনো হাসান আবার কখনো তা যঈফ হিসাবে প্রতিভাত হয়। বিশেষত হাসান লি গায়রিহী এবং হাসান লি যাতিহী হাদীছ সম্পর্কে বলা যায় যে, এটি ইলমে হাদীছের সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও কঠিন বিষয়। কেননা এটা এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে ওলামায়ে কেরাম রাবীদের ক্ষেত্রে মতবিরোধ করেছেন। কোন রাবীকে কেউ ছিক্বাহ সাব্যস্ত করেছেন, কেউ যঈফ বলেছেন। ফলে একটি সিদ্ধান্তকে অন্য সিদ্ধান্তসমূহের উপর প্রাধান্য দেওয়া বা উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এমন আলেমের পক্ষেই সম্ভব হয়, যিনি উছূলে হাদীছ ও তার নীতিমালা সম্পর্কে সমধিক অবগত। যিনি জারহ-তা‘দীল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। যিনি জীবনের একটি দীর্ঘ সময় তাখরীজ গ্রন্থসমূহ থেকে ফায়েদা গ্রহণ করে বিষয়টি চর্চা করেছেন। যিনি কঠোরপন্থী, মধ্যপন্থী ও নরমপন্থী মুহাদ্দিছদের সম্পর্কে অবগত হয়ে এবং বাড়াবাড়ি বা অবহেলার মধ্যে পতিত না হয়ে জারহ ও তা‘দীলের ইমামদের সমালোচনা করেন। আর এটাই হ’ল কঠিনতম বিষয়। অল্প সংখ্যক মানুষই এক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে পারে এবং যথার্থ ফলাফল লাভে ধন্য হয়। সেকারণে হাদীছ গবেষণার এই অভিজ্ঞানটি ওলামায়ে কেরামের মাঝে বিরল হয়ে পড়েছে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার রহমত লাভের জন্য নির্ধারণ করে থাকেন।[10]
(চ) সত্যের দিকে ফিরে আসা সালাফে ছালেহীনের নীতি :
সত্য প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে ভুল থেকে ফিরে আসা একজন আলেমের ন্যায়পরায়ণতা ও আমানদারিতার অন্যতম দলীল। সালাফে ছালেহীন এপথেই পরিচালিত হয়েছেন। হাদীছ শাস্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র যেমন ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ), ছহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নববী (রহঃ), মুস্তাদরাক হাকেমের মুহাক্কিক ইমাম যাহাবী (রহঃ), ইবনু হিববান (রহঃ) প্রমুখ খ্যাতিমান মুহাদ্দিছগণের তাহক্বীক্বে এরূপ মত পরিবর্তনের ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।
যেমন হাফেয ইবনু হাজার স্বীয় তালখীছুল হাবীরে রাবী হোসাইন হুবরানীর অপরিচিতির কারণেمَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لاَ فَلاَ حَرَجَ، ‘যে ব্যক্তি চোখে সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যক লাগায়। যে এরূপ করল সে ভাল কাজ করল। আর যে করল না, তাতে কোন দোষ নেই’ মর্মে বর্ণিত মারফূ‘ হাদীছটিকে ত্রুটিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।[11] আবার একই হাদীছকে তিনি স্বীয় ফাৎহুল বারীতে হাসান সাব্যস্ত করেছেন।[12] একইভাবে فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا আয়াত দ্বারা ক্বোবাবাসীকে বুঝানো হয়েছে মর্মে বর্ণিত রেওয়ায়াতটিকে তিনি তালখীছুল হাবীরে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন।[13] কিন্তু ফাৎহুল বারীতে ছহীহ বলেছেন।[14]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর ফিক্বহী সিদ্ধান্তাবলীর ক্ষেত্রে দু’টি মাযহাব প্রসিদ্ধ। একটি ক্বাদীম বা পুরাতন, যা তিনি মিসরে গমনের পূর্বে প্রদান করেন। অন্যটি জাদীদ বা নতুন, যা তিনি মিসরে গমনের পরে প্রদান করেন। নতুন ও পুরাতন মাসআলার মধ্যে অনেক বিরোধ রয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, মিসরে অবস্থানকালে তিনি নতুনভাবে বহু হাদীছ ও আছার সম্পর্কে অবগত হন, যা তিনি ইতিপূর্বে অবগত ছিলেন না। একই সাথে তিনি ইমাম আওযাঈর ফিক্বহ সম্পর্কে অবগত হন। ফলে স্বীয় নীতি ‘ছহীহ হাদীছ পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব’-এর আলোকে শক্তিশালী ও অগ্রাধিকারযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে নতুন নতুন সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।[15]
ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) স্বীয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,وَيْحَكَ يَا يَعْقُوْبُ! لَا تَكْتُبْ كُلَّ مَا تَسْمَعُ مِنِّيْ، فَإِنِّيْ قَدْ أَرَى الْرَأْيَ الْيَوْمَ وَأَتْرُكُهُ غَدًا، وَأَرَى الْرَأْيَ غَدًا وَأَتْرُكُهُ بَعْدَ غَدٍ- ‘তোমার জন্য আফসোস হে ইয়াকুব (আবূ ইউসুফ)! তুমি আমার থেকে যা শোন তাই লিখে নিও না। কারণ আমি আজ যে সিদ্ধান্ত প্রদান করি, কাল তা প্রত্যাখ্যান করি এবং কাল যে সিদ্ধান্ত প্রদান করি, পরদিন তা প্রত্যাখ্যান করি’।[16]
তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে শায়খ আলবানী একদিকে যেমন ইলমী আমানত রক্ষায় পূর্ণ ইখলাছের পরিচয় দিয়েছেন, অন্যদিকে পূর্ববর্তী মুহাদ্দেছীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন।[17]
সারকথা :
চিন্তা ও গবেষণার ক্ষেত্রে মানুষকে দুর্বল হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের বয়স বৃদ্ধি ও গবেষণার উৎকর্ষের সাথে সাথে চিন্তা-চেতনা, জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর তাহক্বীক্বী ময়দানে গবেষকদের জন্য ইলমে হাদীছের জ্ঞান ভান্ডার সীমাহীন। তাই গবেষণা যত বৃদ্ধি পায়, তাহক্বীক্ব যত পূর্ণতা পায়, সূক্ষ্মতা ও নির্ভুলতার মান ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। একারণেই তাখরীজের ইজতিহাদী ময়দানে শায়খ আলবানীসহ অন্যান্য বিদ্বানগণের মতামত সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন হয়েছে। এটা দোষের কিছু নয়। বরং ভুল প্রতিভাত হওয়ায় মত পরিবর্তন করা বিদ্বানদের তাক্বওয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও ইলমী দায়বদ্ধতার অন্যতম দলীল।
প্রখ্যাত আলেম, সঊদী আরবের রাষ্ট্রীয় ফৎওয়া বিভাগের সদস্য শায়খ বকর আবু যায়েদ রাবী ছালেহ বিন বাশীর আল-মুর্রা সম্পর্কে বলেন, ইমামদের মত অনুযায়ী তিনি মাতরূকুল হাদীছ। যদিও তিনি পরহেযগার ও দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। আর মাতরূক রাবীর বর্ণনা শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতের ক্ষেত্রেও গ্রহণযোগ্য নয়। শায়খ আলবানী সিলসিলা যঈফাহ-তে (১/২১৪, ৩০৯) এই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন। তবে এটা মিশকাতের (১/৩৬, হা/৯৮) তা‘লীক্বে প্রদত্ত তাঁর সিদ্ধান্তের বিপরীত। সেখানে তিনি উক্ত রাবীর হাদীছ ই‘তিবারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন এবং এর সহযোগিতায় হাদীছ ‘হাসান’ সাব্যস্ত করেছেন। আহলে ইলমের নিকটে এটা কোন দোষের নয়। বরং এটি বিভিন্ন ফিক্বহী বিষয়াদি, হাদীছের হুকুম বর্ণনা, রাবীর অবস্থা ইত্যাদি বর্ণনায় একজন ইমাম থেকে পরস্পর বিরোধী একাধিক মত প্রকাশের ন্যায়। যেমন দেখা যায়, হাফেয যাহাবী ও ইবনু হাজারের ক্ষেত্রে। যাহাবীর কাশিফ ও মুগনী গ্রন্থের মধ্যে এবং ইবনু হাজার (রহঃ)-এর তাক্বরীব, তালখীছ ও ফাৎহুলবারীর মধ্যে তুলনা করলে এরূপ অনেক পরিবর্তিত মত সম্পর্কে জানা যাবে। এক্ষেত্রে বহুবিধ ওযর বিদ্যমান। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হয়েছে ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) রচিত ‘রাফ‘ঊল মালাম’ গ্রন্থে।[18]
ড. মুহাম্মাদ বিন ওমর বাযমূল বলেন, বাস্তবতা হ’ল এরূপ মতপরিবর্তন কখনোই স্ববিরোধিতা নয়। বরং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে হুকুম পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। প্রথমে যে দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তিনি হাদীছটির হুকুম পেশ করেছিলেন, সে মোতাবেক তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। আবার নতুন যে দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন, তদনুযায়ীও তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। তারপরেও কি এটা স্ববিরোধিতা বলে গণ্য হবে? কখনোই নয়। বরং এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। (১) কিছু হাদীছের ব্যাপারে তিনি যে সূত্রের ভিত্তিতে হুকুম পেশ করেছিলেন, পরবর্তীতে অন্য আরো সূত্রের সন্ধান পেয়েছেন। (২) কিছু হাদীছের রাবীর অবস্থার ব্যাপারে অগ্রগণ্য মত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন। অতঃপর সেই রাবীর ব্যাপারে তাঁর ইজতিহাদ পরিবর্তন হওয়ায় মূল হাদীছের হুকুমও পরিবর্তন হয়েছে। (৩) কিছু হাদীছের ব্যাপারে তিনি প্রথমে কোন ‘ইল্লত খুঁজে পাননি। কিন্তু পরে তা নযরে এসেছে। (৪) কোন ক্ষেত্রে তিনি কোন সনদ বা মতনকে ইল্লতযুক্ত মনে করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য তুরুকের ভিত্তিতে উক্ত ইল্লত দূরীভূত হয়েছে। (৫) কিছু হাদীছের শাহেদ বা মুতাবি‘ সম্পর্কে প্রথমে জানতেন না। কিন্তু পরে তা জেনেছেন।[19]
গবেষক ড. মু‘ঈদ আল-জা‘ফর বলেন, ‘আলবানী কোন কোন হাদীছের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সংস্করণে একই হাদীছের ব্যাপারে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন। এটাকে আমরা তাঁর জ্ঞান ও যোগ্যতার ক্রমবিকাশ বলতে পারি। সেকারণে কেউ যদি কোন হাদীছের ব্যাপারে আলবানীর সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবে জানতে চায়, তার জন্য প্রকাশনার তারিখ অনুযায়ী শায়খ আলবানীর গ্রন্থরাজির উপর পূর্ণ জ্ঞান থাকা যরূরী’।[20]
সর্বোপরি শায়খ আলবানী তাহক্বীক্বের ময়দানে যে একনিষ্ঠ খেদমত পেশ করেছেন, তা তাকে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু মতপরিবর্তনের পরেও তিনি যে কোন ভুল করেননি তা নয়। আর কেনই বা হবে না! তিনি তো উম্মতের বিদ্বানদের মধ্যে যারা বিপুল পরিমাণ সনদ নিয়ে কাজ করেছেন তাদের অন্যতম! বরং পরবর্তীতেও তথা আধুনিক যুগের মুহাদ্দিছদের মধ্যে তাঁর মত এত বেশী সংখ্যক হাদীছের বিশুদ্ধতা বা দুর্বলতা আর কেউ যাচাই করেননি। তাই বিস্তর এই গবেষণাকর্মের মধ্যে কিছু ভুল থাকাই স্বাভাবিক।[21] অনেক গবেষক তা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং করছেন এবং পাঠকের উপকারার্থে তা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে একই সাথে তারা এ মন্তব্যও করেছেন যে, তাঁর যেসব অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি তুলে ধরা হ’ল তা হাদীছ শাস্ত্রে তাঁর অনন্য খেদমতের তুলনায় বিশাল সমুদ্রের মাঝে এক ফোঁটা পানি সদৃশ।[22]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আব্দুল মুহসিন আববাদ বলেন, ‘আলবানী (রহঃ)-এর কিছু চিন্তাধারাকে আমরা ভুল হিসাবে গণ্য করি। কিন্তু তার সঠিক সিদ্ধান্তের সাগরে তা নিমজ্জিত হয়ে গেছে। সুন্নাতে রাসূলের খেদমতের মাধ্যমে তার দ্বারা মুসলমানদের জন্য যে কল্যাণ অর্জিত হয়েছে, তার ব্যাপকতায় তা হারিয়ে গেছে। এছাড়া যেসব ক্ষেত্রে তিনি ভুলের মধ্যে পতিত হয়েছেন বলে আমরা মনে করি, সেক্ষেত্রে মুজতাহিদ হিসাবে স্বীয় ইজতিহাদের জন্য তিনি নেকী পাবেন’।[23]
অভিযোগ নং ২ : আলবানী প্রচলিত আমলসমূহের বিপরীতে একক সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন :
একদল মানুষ অভিযোগ করেন, আলবানী মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচলিত বিভিন্ন আমলের ব্যাপারে একতরফা বিরোধিতা করেছেন এবং বিভিন্ন মাসআলার ক্ষেত্রে কোন হাদীছকে ছহীহ বা যঈফ সাব্যস্ত করে অনেক শায বা অপ্রচলিত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।
উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। বরং আল্লাহ রাববুল আলামীন আলবানীর মাধ্যমে মানুষের মাঝে অপ্রচলিত অনেক সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করেছেন।[24] এক্ষণে জানা আবশ্যক যে, শায কাকে বলে? শায-এর সীমারেখা কি?
এ ব্যাপারে ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, ‘শুযূয হওয়ার সীমারেখা হ’ল, হকের বিপরীত হওয়া। যে ব্যক্তি কোন মাসআলার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ মাসআলার বিরোধিতা করবেন, তিনি সে ক্ষেত্রে শায। যদিও দুনিয়ার সকল মানুষ বা অধিকাংশ মানুষ তার পক্ষে থাকে। জামা‘আত বলতে এককথায় বলা যায়, যারা সত্যের অনুসারী। সেটা যদি একজনও হয় তবুও তিনিই জামা‘আত। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবুবকর ও খাদীজা (রাঃ)। তাই তারাই একটি জামা‘আত। তখন রাসূল (ছাঃ) ও উক্ত দু’জন ব্যতীত দুনিয়ার সমস্ত মানুষ ছিল শায ও বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। আমরা যা বললাম সে ব্যাপারে বিদ্বানদের মাঝে কোন মতভেদ নেই’।[25]
অতএব একজন আলেম একদল আলেমের বিপরীত সিদ্ধান্ত দিলেই সেটা তাফাররুদ (বিচ্ছিন্ন মত) হবে, একথা সঠিক নয়। একইভাবে মানুষের মাঝে প্রচলিত কোন আমলের বিরোধিতা করলেই সেটা শায গণ্য হবে না। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত এমন অনেক ফৎওয়া রয়েছে, যা তিনি একক ভাবে প্রদান করেছেন। একইভাবে ইমাম মালিকের অনেক সিদ্ধান্ত তাঁর থেকে এককভাবেই বর্ণিত হয়েছে। একইভাবে বর্ণিত হয়েছে ইমাম আহমাদ ও শাফেঈ (রহঃ) থেকে।
হাফেয আবুবকর ইবনু আবী শায়বাহ স্বীয় ‘আল-মুছান্নাফ’ গ্রন্থে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, যার শিরোনামে লিখেছেন, ‘ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর খন্ডন : ঐসকল হাদীছের বর্ণনা যেগুলিতে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের বিপরীত মত পোষণ করেছেন’(كِتَابُ الرَّدِّ عَلَى أَبِي حَنِيفَةَ هَذَا مَا خَالَفَ بِهِ أَبُو حَنِيفَةَ الْأَثَرَ الَّذِي جَاءَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)।[26]
লাইস ইবনু সা‘দ (রহঃ) বলেন,أَحْصَيْتُ عَلَى مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ سَبْعِينَ مَسْأَلَةً، كُلُّهَا مُخَالِفَةٌ لِسُنَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا قَالَ فِيْهَا بِرَأْيِهِ، ‘আমি ইমাম মালিক বিন আনাস-এর এমন ৭০টি মাসআলা গণনা করেছি, যার সবগুলোই রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বিরোধী। যে মাসআলাগুলো তিনি স্বীয় মতামতের ভিত্তিতে প্রদান করেছেন’।[27]
অথচ এটাকে কোন বিদ্বান তাদের দোষ হিসাবে গণনা করেননি, তাদের মর্যাদার ক্ষতি হিসাবে গ্রহণ করেননি। তাদেরকে শায বা তাফাররুদ সিদ্ধান্ত প্রদানের দোষে অভিযুক্ত করা হয়নি। উপরোক্ত ইমামগণের উক্ত মুখালাফার ক্ষেত্রে তাদের ওযর রয়েছে। যা ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) স্বীয় ‘রাফ‘ঊল মালাম ‘আন আইম্মাতিল আ‘লাম’ গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।[28]
এক্ষণে সুন্নাহর বিপরীত সিদ্ধান্ত প্রদান করা সত্ত্বেও যদি উক্ত ইমামগণকে দোষী সাব্যস্ত করা না যায়, তাহ’লে সমাজে প্রচলিত আমলের বিরোধিতার কারণে আলবানীকে দোষী বা শায সাব্যস্ত করা হবে কেন? বিশেষত প্রচলিত কোন আমলের পক্ষে দলীল না পাওয়ার কারণে অথবা বিপক্ষে দলীল পাওয়ার কারণে যদি তিনি তাঁর বিরোধিতা করে থাকেন, তাহ’লে কি তাকে গায়ের ফক্বীহ, শায, মুতাফার্রিদ ইত্যাদি অভিযোগ দ্বারা অভিযুক্ত করা যাবে? কখনোই নয়।
মুহাম্মাদ ইবনু ওযযা (রহঃ) পূর্ববর্তী কিছু বিদ্বান থেকে নকল করে বলেন, ‘আজকের দিনে এমন কিছু আমল বহু মানুষের নিকটে নেক আমল বলে গৃহীত। অথচ তা পূর্ববর্তীদের নিকটে মুনকার বা প্রত্যাখ্যাত ছিল! ... প্রত্যেক বিদ‘আতই সুন্দর ও চাকচিক্যময় হয়ে থাকে।[29]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (মৃ. ৯৪ হি.) বলেছেন, ‘ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আঙ্গুলের গুরুত্ব বিবেচনায় ইবহাম বা বুড়ো আঙগুলের জন্য ১৫, তার পাশেরটির জন্য ১০, মধ্যমার জন্য ১০, তার পাশেরটির জন্য ৯ এবং খিনছার বা কড়ে আঙ্গুলের জন্য ৬ দিরহাম রক্তমূল্য নির্ধারণ করেন। কেননা ওমর (রাঃ) এটা জানতেন যে রাসূল (ছাঃ) হাতের রক্তমূল্য ৫০ দিরহাম নির্ধারণ করেছেন। আর হাতের আঙগুল সৌন্দর্য ও উপকারিতা বিবেচনায় ভিন্ন ভিন্ন। তাই তিনি হাতের দিয়তের ভিত্তিতে তার প্রত্যেকটি অংশের উপর পৃথক পৃথক হুকুম প্রদান করেছিলেন।[30]
কিন্তু পরে যখন তিনি ইয়ামনের অধিবাসী আমর ইবনু হাযম পরিবারের নিকট হ’তে রাসূল (ছাঃ)-এর লিখিত ফরমান অবগত হ’লেন এই মর্মে যে, রক্তমূল্যের ক্ষেত্রে প্রত্যেক আঙ্গুলের গুরুত্ব সমান। হাত বা পায়ের প্রত্যেকটি আঙ্গুলের বিনিময়ে রক্তমূল্য হ’ল দশটি করে উট’ (فِي كُلِّ أُصْبُعٍ مِنْ أَصَابِعِ الْيَدِ وَالرِّجْلِ عَشْرٌ مِنَ الْإِبِلِ)।[31]
সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, ‘এ হাদীছ শোনার পর ওমর (রাঃ) স্বীয় সিদ্ধান্ত হ’তে প্রত্যাবর্তন করলেন। কাযী শুরাইহ-এর নিকটে একদা একজন এসে বলল, ‘বুড়ো আঙ্গুল ও কড়ে আঙ্গুলের মূল্য কি সমান হ’তে পারে? কাযী শুরাইহ তখন কঠোর ভাষায় বললেন, وَيْحَكَ إِنَّ السُّنَّةَ منعت الْقيَاس اتبع وَلاَ تبتدع، ‘তোমার ধ্বংস হৌক! হাদীছ যাবতীয় ক্বিয়াসকে প্রতিরোধ করে। তুমি কেবল অনুসরণ করে যাও, বিদ‘আতী হয়ো না’।[32]
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, وفي الحديث دلالتان: أحدهما: قبول الخبر، والآخر: أن يُقبل الخبر في الوقت الذي يثبت فيه، وإن لم يمضي عمل من الأئمة بمثل الخبر الذي قبلوا ‘উক্ত ঘটনা দু’টি বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে। (১) হাদীছ গ্রহণ (২) হাদীছ সঠিকভাবে প্রমাণিত হ’লেই তা গ্রহণ করা, যদিও তার উপর ইমামদের কোন আমল জারি না থাকে’।[33] অতএব মানুষের মাঝে কোন আমলের প্রচলন বিশুদ্ধ দলীলের উপর ভিত্তিশীল কোন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের কারণ হ’তে পারে না।
অতএব আলবানীসহ কোন বিদ্বান যদি বিশুদ্ধ দলীলের ভিত্তিতে মৃত কোন সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করেন, তখন আমলকারীদের কর্তব্য হবে, উক্ত সুন্নাতের পক্ষে পেশকৃত দলীল কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা জানা। যদি তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তবে তার উপর আমল করাই হবে সুন্নাতে রাসূলের প্রতি নিরঙ্কুশ ভালোবাসার প্রকৃত পরিচয়।
আর যদি তা সুন্নাতের পরিপন্থী এবং মুসলিম উম্মাহর ইজমা বিরোধী প্রমাণিত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সকল বিদ্বানের মত তাঁর মতটিও গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং কোন বিষয়ে একক বা শায সিদ্ধান্ত হ’লেই যে তা সুন্নাতবিরোধী হবে, একথা সঠিক নয়।
অভিযোগ নং ৩ : আলবানী মুহাদ্দিছ, কিন্তু ফক্বীহ নন :
শায়খ আলবানীর ব্যাপারে যেসব বিদ্বান এরূপ বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হ’লেন প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শু‘আইব আরনাঊত্ব। তিনি আলবানী সম্পর্কে বলেন, ‘ফিক্বহ তাঁর বিষয়ই নয়’।[34] একইভাবে বলেছেন শায়খ আলী তানতাবী।[35]
এর জবাবে বলা যায়, ইলমে হাদীছের ময়দানে শায়খ আলবানীর সার্বিক দক্ষতা এবং গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁর লেখনী ও সমসাময়িক বিদ্বানগণ কর্তৃক স্বীকৃত। সেইসাথে তাঁর হাদীছভিত্তিক ফিক্বহ ও দিরায়াত সকলের নিকটে সমাদৃত। তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব ফী ফিক্বহিস সুন্নাতি ওয়াল কিতাব’ ফিক্বহুল হাদীছের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অনুরূপভাবে ‘আত-তালীক্বাতুল মারযিয়াহ ‘আলার রওযাতিন নাদিয়াহ’, আহকামুল জানায়েয, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ), তামামুল মিন্নাহ, আত-তা‘লীক্বাতু ‘আলা সুবুলিস সালাম, আদাবুয যিফাফ ইত্যাদি গ্রন্থগুলোও তাঁর ফিক্বহ ও ইজতিহাদী দক্ষতার প্রমাণ বহন করে। সিলসিলা ছহীহাহ ও সিলসিলা যঈফাহ গ্রন্থের বহু স্থানে তিনি হাদীছের ফিক্বহ ও ফাওয়াইদ তুলে ধরেছেন। নিঃসন্দেহে তাঁর ফিক্বহের আলোচ্য বিষয় ছিল হাদীছভিত্তিক ফিক্বহ, ফক্বীহদের ন্যায় রায় ভিত্তিক ফিক্বহ নয়।
বস্ত্ততঃ আহলুর রায়গণ বরাবরই আহলুল হাদীছদের উপর ফিক্বহী জ্ঞান না রাখার এ অভিযোগ উত্থাপন করে থাকেন। আলবানীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মূলতঃ সে কথারই প্রতিধ্বনি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের প্রসিদ্ধ ইমাম, দশ লক্ষ হাদীছের হাফেয ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে একই অপবাদ দেওয়া হয়েছিল। সেসময় একদল লোক তাঁর ব্যাপারে বলেছিল, أحمد ليس بفقيه، ولكنه محدث ‘আহমাদ ফক্বীহ নন, তবে তিনি মুহাদ্দিছ।[36]
ইমাম যাহাবী সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আহলুর রায়, মু‘তাযিলা প্রমুখ লোকেরা বলে থাকে যে, من أحمد وما ابن المديني وأي شيء أبو زرعة وأبو داود هؤلاء محدثون ولا يدرون ما الفقه ما أصوله ولا يفقهون الرأي، ‘আহমাদ (বিন হাম্বল) কে? ইবনুল মাদীনী, আবু যুর‘আহ, আবূদাঊদ কে? তারা তো মুহাদ্দিছ। তারা তো জানে না ফিক্বহ কি? উছূল কি? তারা তো (ফক্বীহদের) মতামত অনুধাবন করে না’।[37]
ইমাম ওয়াকী‘ ইবনুল জার্রাহ বলেন, একদা ইমাম আবু হানীফার সাথে সাক্ষাৎ হ’ল। তিনি আমাকে বললেন, যদি আপনি হাদীছ লেখা ছেড়ে ফিক্বহের জ্ঞান হাছিল করেন তাহ’লে সেটিই কি উত্তম হবে না? ওয়াকী‘ বললেন, কেন, হাদীছ কি পূর্ণাঙ্গ ফিক্বহ নয়? তখন তিনি বললেন, আচ্ছা বলুন তো একজন নারী গর্ভধারণের দাবী করছে, কিন্তু তার স্বামী তা অস্বীকার করছে; তাহ’লে এর সমাধান কি হবে? তখন ইমাম ওয়াকী‘ এ ব্যাপারে স্বীয় সনদে ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনা করলেন যে, এমতাবস্থায় রাসূল (ছাঃ) লি‘আনের হুকুম দিয়েছেন। অতঃপর ইমাম আবু হানীফা প্রস্থান করলেন। এরপর থেকে তিনি আমাকে যে রাস্তায় আসতে দেখতেন, সে রাস্তা ত্যাগ করে অন্য রাস্তা ধরতেন।[38]
ইমাম ওয়াকী‘ তাই বলতেন, يَا فَتَيَانُ تَفَهَّمُوْا فِقْهَ الْحَدِيثِ فَإِنَّكُمْ إِنْ تَفَهَّمْتُمْ فِقْهَ الْحَدِيْثِ لَمْ يَقْهَرْكُمْ أَهْلُ الرَّأْيِ، ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমরা হাদীছের ফিক্বহ বুঝার চেষ্টা কর। যদি তোমরা এটা বুঝতে সক্ষম হও তাহ’লে আহলুর রায়গণ তোমাদের উপর বিজয়ী হ’তে পারবে না’।[39]
পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ ইরশাদুল হক আছারী বলেন, ‘আল্লামা আলবানীর ফৎওয়াসমগ্র প্রায় ত্রিশ খন্ডে প্রকাশিতব্য। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো এর চেয়েও বড়। শায়খ শু‘আইব আলবানীর ফিক্বহী জ্ঞানকে অস্বীকার করলেও তাঁর সমকালীন অসংখ্য বিদ্বান রয়েছেন, যারা তাঁর ফিক্বহী দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর তাঁর জীবনীকারগণ তাদের সেসব মতামত উল্লেখ করেছেন’।[40]
মিসরের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু ইসহাক্ব আল-হুওয়াইনীকে শায়খ আলবানী ফক্বীহ কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বহু পূর্ব থেকে আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ একদল মানুষ এ দাবী করে আসছে। অথচ কিভাবে এটা কল্পনা করা যায় যে, একজন মানুষ দলীলের ধারক-বাহক হওয়া সত্ত্বেও দলীলের উপর তাঁর কোন বুঝ নেই? তবে কি যার নিকটে কোন দলীল নেই, তিনিই কি তা অধিক বুঝেন? শায়খ আলবানী এমন একজন ব্যক্তি, যার মাধ্যমে আল্লাহ রববুল আলামীন সুন্নাহকে, ফিক্বহুল হাদীছকে পুনর্জীবিত করেছেন (الشيخ ناصر الدين رحمه الله رجل أحيا الله تبارك وتعالى به السنة، وأحيا به فقه الحديث)। কোন কোন মাসআলায় তিনি ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। যেমনটি ওলামায়ে কেরাম করে থাকেন। এর অর্থ এই নয় যে, ভিন্ন মতের কারণে তাঁর ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া যাবে যে, তিনি ফক্বীহ নন’।[41]
শায়খ শাদী বিন মুহাম্মাদ বিন সালেম আলে নু‘মান-এর নেতৃত্বে جامع تراث العلامة الألباني নামে আলবানীর রচনাবলী ও বক্তব্যসমূহ থেকে বিষয়, অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ ভিত্তিক গ্রন্থ সংকলনের যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তন্মধ্যে কেবল ফিক্বহ সংক্রান্ত যাবতীয় রচনা ও বক্তব্যসমূহ নিয়ে جامع تراث العلامة الألباني في الفقه، প্রকাশিত হয়েছে মোট ১৮ খন্ডে। যার মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৫৫০।
পরিশেষে বলা যায়, কুরআনের পাশাপাশি ফিক্বহ, উছূলে ফিক্বহ, তাফসীরুল কুরআন সবকিছুর মূল উৎস হ’ল হাদীছ। সুতরাং একজন মুহাদ্দিছ স্বাভাবিকভাবেই ফক্বীহ হয়ে থাকেন। শায়খ আলবানী বলেন, لزم الفقيه أن يكون محدثاً، ولا يلزم المحدث أن يكون فقيهاً؛ لأن المحدث فقيه بطبيعة الحال، ‘একজন ফক্বীহের জন্য মুহাদ্দিছ হওয়া আবশ্যক। কিন্তু একজন মুহাদ্দিছের জন্য ফক্বীহ হওয়া আবশ্যক নয়। কেননা মুহাদ্দিছগণ সাধারণভাবেই ফক্বীহ হয়ে থাকেন’।
তিনি বলেন, ছাহাবায়ে কেরাম ফিক্বহ অধ্যয়ন করতেন কি? কোন্ ফিক্বহ তারা অধ্যয়ন করতেন? তারা তো সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকেই দ্বীন গ্রহণ করতেন। অর্থাৎ তারা হাদীছ অধ্যয়ন করতেন। অথচ ফক্বীহগণ কেবল ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য ও তাদের ফিক্বহ অধ্যয়ন করে থাকেন। তারা রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ অধ্যয়ন করেন না। অথচ হাদীছ ফিক্বহের উৎস। অতএব এরূপ ফক্বীহদের জন্য হাদীছ অধ্যয়ন করা আবশ্যক। হাদীছের জ্ঞান তথা হাদীছ মুখস্থকরণ ও ছহীহ-যঈফ পার্থক্যকরণ ব্যতীত বিশুদ্ধ ফিক্বহ কল্পনা করা যায় না। একইভাবে ফিক্বহী জ্ঞান ব্যতীত কেউ মুহাদ্দিছ হবেন, এটা আমরা কল্পনা করতে পারি না! কেননা কুরআন ও হাদীছই সকল ফিক্বহের মূল উৎস। আর বর্তমান যুগের প্রচলিত ফিক্বহ মূলতঃ আলেমদের ফিক্বহ। সেটা কুরআন-সুন্নাহর ফিক্বহ নয়। ফলে তার কিছু অংশ কুরআন-সুন্নাহ। আর কিছু অংশ ওলামায়ে কেরামের মতামত ও ইজতিহাদ। যার মাঝে বহু কিছু রয়েছে, যা হাদীছ বিরোধী। কেননা তারা হাদীছ বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান রাখেন না’।[42]
অতএব মুহাদ্দিছগণের ফিক্বহই অধিক বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য। বিখ্যাত হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষেণŠবী (রহঃ) বলেন, من نظر بنظر الإنصاف، وغاص في بحار الفقه والأصول متجنبا الاعتساف، يعلم علما يقينيا أن أكثر المسائل الفرعية والأصلية التي اختلف العلماء فيها، فمذهب المحدثين فيها أقوى من مذاهب غيرهم، وإني كلما أسير في شعب الاختلاف أجد قول المحدثين فيه قريبا من الإنصاف، فلله درهم، وعليه شكرهم (كذا) كيف لا وهم ورثة النبي صلى الله عليه وسلم حقا، ونواب شرعه صدقا، حشرنا الله في زمرتهم، وأماتنا على حبهم وسيرتهم-‘যদি কোন ব্যক্তি ন্যায়ানুগ দৃষ্টিতে দেখে এবং ফিক্বহ ও উছূলে ফিক্বহের সমুদ্রে নিরপেক্ষতার সাথে অবগাহন করে, সে নিশ্চিতভাবে অবগতি লাভ করবে যে, অধিকাংশ মৌলিক ও শাখাগত যে সকল মাসআলায় ওলামায়ে কেরাম মতভেদ করেছেন, তাতে অন্যান্যদের তুলনায় মুহাদ্দিছদের মাযহাবই অধিকতর শক্তিশালী। আমি মতভেদের শাখা-প্রশাখাগুলোতে পরিভ্রমণ করতে গিয়ে প্রতিবারই দেখেছি যে, মুহাদ্দিছদের বক্তব্যই অধিকতর ন্যয়সঙ্গত। সর্বাঙ্গীন কল্যাণ এবং অনুগ্রহ তাদের জন্য এক আল্লাহর পক্ষ থেকেই। আর কেনইবা হবে না, তারা যে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী এবং তাঁর (আনীত) শরী‘আতের যথার্থ প্রতিনিধি। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরুত্থান দিবসে তাদের দলভুক্ত করে দিন এবং তাদের ভালবাসায় ও তাদের যাপিত জীবনধারায় আমাদের মৃত্যু দান করুন’।[43]
শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, وصية هذا الفقير: الاعتصام بالكتاب والسنة في العقيدة، والعمل والتفكير فيهما دائماً... واتباع العلماء المحدّثين في الفروع، فهم قد جمعوا بين الحديث والفقه ‘এই দীনের প্রথম অছিয়ত এই যে, আক্বীদা ও আমলে কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধর এবং এ দু’টির গবেষণায় রত থাক। ...শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণের অনুসরণ কর। যারা ছিলেন ফিক্বহ ও হাদীছের মধ্যে সমন্বয়কারী’।[44]
(ক্রমশঃ)
[1]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১।
[2]. জর্দান : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১ম প্রকাশ, ১৯৮৬ খ্রি.।
[3]. ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, পৃ. ৪-৭।
[4]. আলবানী প্রদত্ত সাক্ষাৎকার, মাজাল্লাতুল বায়ান, (রিয়াদ, সঊদী আরব, রবীউল আখের, ১৪১১ হি), ৩৩শ সংখ্যা, পৃ. ১২।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ, ১/৪।
[6]. তারাজু‘ঊল আল্লামা আলবানী, ১/১৪ পৃ.।
[7]. সিলসিলা ছহীহাহ, ১/২০০ পৃ.।
[8]. ইবনু হাজার, নুযহাতুন নাযার, পৃ. ৯১-৯২।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ, ১৩/১০৭৭ পৃ.।
[10]. ইরওয়াউল গালীল, ৩/৩৬৩ পৃ.; আদ-দুরার ফী মাসাইলিল মুছত্বলাহি ওয়াল আছার, পৃ. ২৭।
[11]. ইবনু হাজার, আত-তালখীছুল হাবীর (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৮৯ খ্রি.), ১/৩০১-৩০২ পৃ.।
[12]. ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী, ১/২০৬ পৃ.।
[13]. আত-তালখীছুল হাবীর, ১/৩২৩।
[14]. ফাৎহুল বারী, ৭/২৪৫।
[15]. ড. লামীন আন-নাজী, আল-ক্বাদীম ওয়াল জাদীদ ফী ফিক্বহিশ শাফেঈ, (রিয়াদ : দারু ইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম প্রকাশ ২০০৭ খ্রি.), পৃ. ১/৩৫০; ড. আকরাম ইউসুফ ‘উমার আল-ক্বাওয়াসিমী, আল-মাদখাল ইলা মাযহাবিল ইমামিশ শাফেঈ (আম্মান : দারুন নাফাইস, ১ম প্রকাশ, ২০০৩ খ্রি.), পৃ. ৩০৭।
[16]. ড. অছিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আববাস, আত-তাক্বলীদ ওয়া হুকমুহূ ফী যুইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ (কায়রো : মাকতাবাতুল ইস্তিকামাহ, ১ম প্রকাশ, ২০১০ খ্রি.), পৃ. ২০।
[17]. আলী হালাবী, আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ লি তানাকুযাতিল খাসসাফিয যাএকাহ (যারক্বা, জর্দান : দারুল আছালাহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ২১-২২।
[18]. ড. বকর ইবনু আব্দিল্লাহ আবী যায়েদ, আল-আজঝাউল হাদীছিইয়াহ (রিয়াদ : দারুল ‘আছেমাহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৬ খ্রি.), পৃ. ২৬১।
[19]. আল-ইনতিছার লি আহলিল হাদীছ, পৃ. ২১৪-১৫।
[20]. Contribution of Shaykh Nāṣir al-Dīn al-Albanī to ḥadīth literature, P. 347.
[21]. যাকারিয়া ইবনু গোলাম ক্বাদের, আলবানী ওয়া মানহাজুল আইম্মাতিল মুতাক্বাদ্দিমীন ফী ইলমিল হাদীছ, পৃ. ২৭৭।
[22]. শায়খ আব্দুল্লাহ আদ-দুওয়াইশ, তানবীহুল ক্বারী লি তাকবিয়াতি মা যা‘আফাহুল আলবানী (আল-কাছিম : দারুল আয়লান, ১ম প্রকাশ, ১৯৯০ খ্রি.), ভূমিকা দ্র.; ফাহাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুনাইদ, আল-ই‘লাম মা খুফিয়া আলাল ইমাম (কায়রো : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৬ খ্রি.), ভূমিকা দ্র.।
[23]. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, ফী রাহীলিল আল্লামা আল-মুহাদ্দিছ; কাবযুল ইলম বি মাওতিল ওলামা (মাজাল্লাতুল আছালা, আম্মান, জর্দান, ৪র্থ বর্ষ, সংখ্যা ২৩, শা‘বান, ১৪২০ হি.), পৃ. ১৪।
[24]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহূ, পৃ. ৪৮৩।
[25]. ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ফী উছূলিল আহকাম (বৈরূত : দারুল আফাকিল জাদীদাহ, তাবি), পৃ. ৫/৮৭।
[26]. আবুবকর ইবনু আবী শায়বাহ, আল-মুছান্নাফ, (রিয়াদ : মাকতাবাতুর রুশদ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৯ হি.), পৃ. ৭/২৭৭।
[27]. ইউসুফ ইবনু আব্দিল্লাহ আল-কুরতুবী, জামি‘উ বায়ানিল ‘ইলমি ওয়া ফাযলিহী, (রিয়াদ : দারু ইবনিল জাওযী, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৪ খ্রি.), পৃ. ২/১০৮০।
[28]. তাকীউদ্দীন ইবনু তায়মিয়াহ, ‘রাফ‘ঊল মালাম ‘আন আইম্মাতিল আ‘লাম (আর-রিআসাতুল ‘আম্মাহ লি ইদারাতিল বুহূছিল-‘ইলমিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৪১৩ হি.), পৃ. ৯-৩৩।
[29]. ইবনু ওযযা‘ কুরতুবী, আল-বিদ‘ঊ ওয়ান নাহী ‘আনহা, (কায়রো : মাকতাবাতু ইবনি তায়মিয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৪১৬ হি.), পৃ. ২/৮৮।
[30]. মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফেঈ, আর-রিসালাহ (মিসর : মাকতাবাতুল হালবী, ১ম প্রকাশ, ১৯৪০ হি.), পৃ. ৪২০।
[31]. নাসাঈ হা/৪৮৫৩; ইরওয়াউল গালীল হা/২২৭৩, সনদ ছহীহ।
[32]. বুখারী ৯/৮, হা/৬৮৯৫।
[33]. আর-রিসালাহ, পৃ. ৪২০।
[34]. আল্লামা শায়খ শু‘আইব আল-আরনাঊত্ব; সীরাতুহূ ফী ত্বলাবিল ‘ইলমি ওয়া জুহূদুহূ ফী তাহক্বীক্বিত তুরাছ, পৃ. ২০৮।
[35]. ইমাম আলবানী : শায়খুল ইসলাম ওয়া ইমামি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ফী ‘উয়ূনি আ‘লামিল ‘উলামা ওয়া ফুহূলিল উদাবা, পৃ. ২৫৬।
[36]. ইবনুল জাওযী, মানাক্বিবুল ইমাম আহমাদ ইবনি হাম্বল (কায়রো : দারু হিজর, ২য় প্রকাশ, ১৪০৯ হি.), পৃ. ৬৭।
[37]. যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফায, ২/১৫০।
[38]. খত্বীব বাগদাদী, আল-ফাক্বীহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ, (রিয়াদ : দারু ইবনিল জাওযী, ৩য় প্রকাশ ১৪২১ হি.), পৃ. ২/১৬১।
[39]. পূর্বোক্ত, ২/১৬২।
[40]. ইরশাদুল হক আছারী, ‘আল্লামা আলবানী পার শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব কী নাওাযেশাত পার এক নযর। গৃহীত : আল্লামা আলবানী সম্পর্কে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্বের সমালোচনার জবাব (শেষ কিস্তি), মাসিক আত-তাহরীক, জুলাই ২০১৮ সংখ্যা, পৃ. ৭।
[41]. দুরূসুন লিশ শায়খ আবী ইসহাক্ব আল-হুওয়াইনী, ক্রমিক নং- ১৪৬, http://islamport.com/w/amm/Web/1478/420.htm,26.1.2019
[42]. ‘আমর আব্দুল মুন‘ঈম সালীম, আল-মানহাজুস সালাফী ‘ইনদাশ শায়খ আলবানী (তানতা : মাকতাবাতুয যিয়া, তাবি), পৃ. ৬০।
[43]. আব্দুল হাই লাক্ষেণŠবী, ইমামুল কালাম ফীমা ইয়াতা‘আল্লাকু বিল ক্বিরাআতি খালফাল ইমাম (জেদ্দা : মাকতাবাতুস সাওয়াদী, ১ম প্রকাশ, ১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ১০৬।
[44]. শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, অছিয়ত নামা (উত্তর প্রদেশ, প্রকাশকাল : ১২৭৩ হি./১৮৫৭ খ্রি.), পৃ. ২; ঐ, অনুবাদ : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব (রাজশাহী: হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম প্রকাশ, ২০০৭ খ্রি.), পৃ. ৬-৭; মাহমূদ ইসমাঈল সালাফী, হারাকাতুল ইনতিলাকিল ফিকরী ওয়া জুহূদুশ শাহ অলিউল্লাহ ফিত তাজদীদ (বানারাস : জামি‘আতুস সালাফিইয়াহ ইদারাতুল বুহূছিল-ইসলামিইয়াহ, প্রকাশকাল : ১৯৭৭ খ্রি.), পৃ. ৫৭।