১. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন,جمع النبى بَين تقوى الله وَحسن الْخلق لِأَن تقوى الله يصلح مَا بَين العَبْد وَبَين ربه وَحسن الْخلق يصلح مَا بَينه وَبَين خلقه فتقوى الله توجب لَهُ محبَّة الله وَحسن الْخلق يَدْعُو إِلَى محبته، ‘নবী (ছাঃ) আল্লাহভীতি ও উত্তম চরিত্রের মাঝে সমন্বয় করেছেন। কেননা তাক্বওয়া বান্দা ও তাঁর রবের মাঝে সম্পর্ক দৃঢ় করে। আর উত্তম চরিত্র বান্দা ও সৃষ্টিকুলের মাঝে সম্পর্কের বন্ধন মযবূত করে। ফলে তাক্বওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ভালবাসা অর্জিত হয়। আর উত্তম চরিত্র তাকে সৃষ্টির ভালবাসার দিকে টেনে নিয়ে যায়’।[1]

২. আলী (রাঃ) বলেন,من سعادة المرء خمسة أشياء: أن تكون زوجته موافقة، وأولاده أبرارًا، وإخوانه أتقياء، وجيرانه صالحين، ورزقه في بلده، ‘মানুষের সৌভাগ্যের বিষয় পাঁচটি : (১) তার মনের মত স্ত্রী (২) নেককার সন্তান-সন্ততি (৩) আল্লাহভীরু সঙ্গী-সাথী (৪) সৎ প্রতিবেশী এবং (৫) নিজ শহরে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা’।[2]

৩. ইমাম আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেন,اِصْبِرْ نفسك عَلَى السنة، وقِفْ حيث وقف القومُ، وقُلْ بما قالوا، وكف عما كفوا عنه، واسلك سبيل سلفك الصالح فإنه يسعك مَا وسعهم، ‘সুন্নাতের উপরে অটল থাকো। ছাহাবায়ে কেরাম যেখানে থেমেছেন, তুমিও সেখানে থামো। তারা যা বলেছেন, তুমিও তা বল। তারা যা থেকে বিরত থেকেছেন, তোমরাও তা থেকে বিরত থাক। সর্বদা সালাফে ছালেহীনের পথ অনুসরণ কর। তাহ’লে তারা যা পেয়েছিল, তুমিও তা-ই পাবে’।[3]

৪. ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন,إنَّ الْعَمَلَ إذَا كَانَ خَالِصًا وَلَمْ يَكُنْ صَوَابًا لَمْ يُقْبَلْ، وَإِذَا كَانَ صَوَابًا وَلَمْ يَكُنْ خَالِصًا لَمْ يُقْبَلْ، حَتَّى يَكُونَ خَالِصًا صَوَابًا فَالْخَالِصُ أَنْ يَكُونَ لِلَّهِ، وَالصَّوَابُ أَنْ يَكُونَ عَلَى السُّنَّةِ، ‘আমল খাঁটি হ’লেও যদি তা সঠিক না হয়, তাহ’লে তা কবুল করা হবে না। আবার যদি সঠিকভাবে আমল সম্পাদন করা হয়, কিন্তু সেটা যদি একনিষ্ঠভাবে না করা হয়, সে আমলও কবুল করা হবে না। যতক্ষণ সেই আমল একই সাথে খালেছ ও সঠিক না হবে। আমল খালেছ হওয়ার অর্থ হ’ল তা কেবল আল্লাহর জন্যই সম্পাদিত হওয়া। আর সঠিক হওয়ার অর্থ হ’ল সেই আমল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত মোতাবেক হওয়া’।[4]

৫. হাতেম আল-আ‘ছম (রহঃ) বলেন,مَنْ مَرَّ بِفنَاء الْقُبُور وَلم يتفكر فِي نَفسه وَلم يَدْعُ لَهُم فقد خَان نَفسه وخانهم، ‘যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে গেল, কিন্তু চিন্তিত হ’ল না এবং কবরবাসীর জন্য দো‘আ করল না; সে নিজের সাথে এবং কবরবাসীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল’।[5]

৬. ইমাম আওযা‘ঈ (রহঃ) বলেন,إذَا أَرَادَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِقَوْمٍ شَرًّا فَتَحَ عَلَيْهِمُ الْجِدَالَ، وَمَنَعَهُمُ الْعَمَلَ، ‘মহান আল্লাহ যখন কোন জাতির অকল্যাণ চান, তখন তাদের মাঝে তর্ক-বিতর্কের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন এবং তাদেরকে আমল থেকে বঞ্চিত করেন’।[6]

৭. আব্দুল্লাহ বিন আবূ যাকারিয়া (রহঃ) বলেন,مَنْ كَثُرَ كَلَامُهُ كَثُرَ سَقَطُهُ، وَمَنْ كَثُرَ سَقَطُهُ قَلَّ وَرَعُهُ، وَمَنْ قَلَّ وَرَعُهُ أَمَاتَ اللهُ قَلْبَهُ ‘যে বেশী কথা বলে তার ভুল বেশী হয়। যার ভুল বেশী হয়, তার তাক্বওয়া-পরহেযগারিতা হ্রাস পায়। আর যার পরহেযগারিতা হ্রাস পায়, আল্লাহ তার অন্তরের মৃত্যু ঘটান (অর্থাৎ তার অন্তর মরে যায়)’।[7]

৮. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,يجب على من لا يدري من يبغته الموت أن يكون مستعدًّا، ولا يغتر بالشباب والصحة، فإن أقل من يموت الأشياخ، وأكثر من يموت الشبان، ولهذا يندر من يكبر، ‘যে ব্যক্তি জানে না হঠাৎ কখন তাকে মৃত্যু পেয়ে বসবে, তার অবশ্য কর্তব্য হ’ল যৌবন ও সুস্থতার ধোঁকায় না পড়ে সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত থাকা। কেননা বৃদ্ধরা কম মারা যায় আর যুবকরা বেশী মারা যায়। সেজন্য খুব অল্প মানুষকেই বৃদ্ধ হ’তে দেখা যায়’।[8]

৯. আলী (রাঃ) বলেন,أوصيكم بتقوى الله في الغيب والشَّهادة، وكلمة الحقِّ في الرِّضا والغضب، والقصد في الغِنَى والفقر، والعدل في الصَّديق والعدو، والعمل في النَّشَاط والكسل، ‘আমি তোমাদেরকে (১) গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করার (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলার (৩) সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করার (৪) শত্রু-মিত্র উভয়ের প্রতি ন্যায়বিচার করার এবং (৫) উদ্যম ও অলসতা উভয় অবস্থায় কর্মনিষ্ঠ হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি’।[9]


আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ (অধ্যয়নরত) আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়াইদ, পৃ. ৫৪।

[2]. আব্দুল ওয়াহ্হাব আশ-শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ৭৭।

[3]. ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস, পৃ. ১০।

[4]. ইবনু তাইমিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাত্বিল মুস্তাক্বীম, ২/৩৭৩।

[5]. ইবনুল খার্রাত, আল-‘আকিবাহ ফী যিকরিল মাওত, পৃ. ১৯৫।

[6]. ইবনু মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার‘ঈয়াহ ১/২০২।

[7]. আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া ৫/১৪৯।

[8]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃ. ২০৬।

[9]. ছা‘আলাবী, আল-ই‘জায ওয়াল ঈ‘জায, পৃ. ৪৩।






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
আরও
আরও
.