. সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,يا بني! إذا طلبت الغنى فاطلبه بالقناعة، فإنها مال لا يَنْفَدُ؛ وإياك والطمَع فإنه فقر حاضر؛ وعليك باليأس، فإنك لم تيأس من شيء قطُّ إلا أغناك الله عنه، ‘হে বৎস! যদি তুমি প্রাচুর্য তালাশ কর, তাহ’লে অল্পেতুষ্টির মাধ্যমে তা অন্বেষণ কর। কেননা অল্পেতুষ্টি এমন সম্পদ, যা কখনো নিঃশেষ হয় না। আর তুমি লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা লোভ চাক্ষুষ নিঃস্বতা। পাশাপাশি তুমি অপরের থেকে বিমুখ থাক। কেননা যখনই তুমি কোন কিছু (পার্থিব জৌলুস) থেকে নিবৃত্ত থাকবে, মহান আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুখাপেক্ষীহীন করে দিবেন’।[1]

. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন,الدنيا سجن المؤمن، وأعظم أعماله في السجن الصبر وكظم الغيظ، وليس للمؤمن في الدنيا دولة، وإنما دولته في الآخرة، ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা স্বরূপ। আর এই জেলখানাতে তার সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ধৈর্য ধারণ করা এবং ক্রোধ দমন করা। দুনিয়াতে মুমিনের কোন রাজত্ব নেই। প্রকৃতপক্ষে তার রাজত্ব কায়েম হবে আখেরাতে’।[2]

. খলীফা হারূনুর রশীদ বলেন,طَلَبْتُ الْحَقَّ فَوَجَدْتُهُ مَعَ أَصْحَابِ الْحَدِيْثِ، ‘আমি হক অন্বেষণ করেছি, আর সেটা আহলেহাদীছদের কাছেই খুঁজে পেয়েছি’।[3]

. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,المَلاَئِكَةُ حُرَّاسُ السَّمَاءِ، وَأَصْحَابُ الحَدِيْثِ حُرَّاسُ الْأَرْضِ، ‘ফেরেশতাগণ আসমানের পাহারাদার আর আহলেহাদীছগণ যমীনের পাহারাদার’।[4]

. সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বলেন,تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ فِتْنَةِ الْعَابِدِ الْجَاهِلِ، وَفِتْنَةِ الْعَالِمِ الْفَاجِرِ، فَإِنَّ فِتْنَتَهُمَا فِتْنَةٌ لِكُلِّ مَفْتُونٍ، ‘তোমরা আল্লাহর নিকটে মূর্খ আবেদের এবং পাপিষ্ঠ আলেমের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা ফিতনায় নিপতিত ব্যক্তির জন্য এই দুই শ্রেণীর ফিতনাই সবচেয়ে বড় ফিতনা’।[5]

. সাহল বিন আব্দুল্লাহ তাসতুরী (রহঃ) বলেন,ترك الْأَمر عِنْد الله أعظم من ارْتِكَاب النَّهْي لِأَن آدم نهي عَن أكل الشَّجَرَة فَأكل مِنْهَا فَتَابَ عَلَيْهِ وإبليس أَمر أَن يسْجد لآدَم فَلم يسْجد فَلم يتب عَلَيْهِ، ‘নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে শরী‘আতের নির্দেশ অমান্য করা আল্লাহর নিকট গুরুতর অপরাধ। কেননা আদম (আঃ)-কে গাছের ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন। অতঃপর (তিনি তওবা করলে) আল্লাহ তার তওবা কবুল করেছিলেন। অপরদিকে আদমকে সিজদা করার জন্য ইবলীসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সে সিজদা করেনি। ফলে আল্লাহ্ তার তওবাও কবুল করেননি’।[6]

. ইয়ায বিন আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,الدَّين راية الله في أرضه، فإذا أراد أن يذلّ عبدا جعلها طوقا في عنقه، ‘যমীনের বুকে ঋণ আল্লাহর পতাকাসদৃশ। যখন তিনি কোন বান্দাকে লাঞ্ছিত করার ইচ্ছা করেন, তখন তার গলায় ঋণের দড়ি পেচিয়ে দেন’।[7]

. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,لا تتم له سلامة القلب مطلقا حتى يسلم من خمسة أشياء: من شرك يناقض التوحيد، وبدعة تخالف السنة، وشهوة تخالف الأمر، وغفلة تناقض الذكر، وهوى يناقض التجريد والإخلاص ‘পাঁচটি বিষয় থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্তরের পরিশুদ্ধিতা সুনিশ্চিত হয় না। (১) শিরক থেকে, যা তাওহীদের বিপরীত (২) বিদ‘আত থেকে, যা সুন্নাতের বিপরীত (৩) খেয়াল-খুশী থেকে, যা শারঈ নির্দেশের বিরোধিতা করে (৪) উদাসীনতা থেকে, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে এবং (৫) প্রবৃত্তি থেকে, যা পাপমুক্তি ও ইখলাছের বিপরীতে চলে’।[8]

. ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন,مسكين ابن آدم لو خاف من النار كما يخاف من الفقر لنجا منهما جميعاً ولو رغب في الجنة كما يرغب في الغنى لفاز بهما جميعاً ولو خاف الله في الباطن كما يخاف خلقه في الظاهر لسعد في الدارين جميعاً ‘আদম সন্তান কত অসহায়! সে অভাব-অনটনকে যেভাবে ভয় করে, সেভাবে যদি জাহান্নামকে ভয় করত, তাহ’লে এই দু’টি থেকেই সে মুক্তি পেত। সে যেভাবে ধন-সম্পদ কামনা করে, সেভাবে যদি জান্নাত কামনা করত, তাহ’লে (দুনিয়ার প্রাচুর্য ও জান্নাত) উভয়টিই সে লাভ করতে পারত। সে প্রকাশ্যে যেভাবে তাঁর সৃষ্টিকে ভয় করে, সেভাবে যদি গোপনে আল্লাহকে ভয় করত, তবে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জগতেই সে সৌভাগ্যবান হ’তে পারত’।[9]


[1]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, ২/৩৬৩।

[2]. আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতাররীন, পৃ. ১০৯।

[3]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ৫৫।

[4]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৭৪।

[5]. বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ ১/৩১৮; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম, ১/১১৯; ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ১/১০৬; আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১০২।

[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১৯৯।

[7]. ইবনু কুতায়বা, ‘উয়ূনুল আখবার ১/৩৬৩।

[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃ. ১২২।

[9]. গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/১৯৮।






বিষয়সমূহ: আমল
আরও
আরও
.