১. হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, إِيَّاكُمْ وَأَصْحَابَ الرَّأْيِ فَإِنَّهُمْ أَعْدَاءُ السُّنَنِ أَعْيَتْهُمُ الْأَحَادِيثُ أَنْ يَحْفَظُوهَا فَقَالُوا بِالرَّأْيِ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا، ‘তোমরা রায়পন্থীদের থেকে সাবধান থেকো। কেননা তারা সুন্নাতের শত্রু। হাদীছের রক্ষণাবেক্ষণে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে তারা রায় ভিত্তিক কথা বলে, নিজেরা যেমন পথভ্রষ্ট হয়েছে, তেমনি অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করেছে’।[1]

২. আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,لَا عَلَيْكَ أَنْ تَصْحَبَ إِلَّا مَنْ أَعَانَكَ عَلَى ذِكْرِ اللهِ، ‘আল্লাহ্কে স্মরণ করার ব্যাপারে যে তোমাকে সহযোগিতা করে, সে ব্যতীত অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা তোমার জন্য আবশ্যক নয়’।[2]

৪. হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ) বলেন,الْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلَّا فِي خَمْسٍ، إِطْعَامُ الطَّعَامِ إِذَا حَضَرَ الضَّيْفُ وَتَجْهِيزُ الْمَيِّتِ إِذَا مَاتَ، وَتَزْوِيجُ الْبِكْرِ إِذَا أَدْرَكَتْ، وَقَضَاءُ الدَّيْنِ إِذَا وَجَبَ، وَالتَّوْبَةُ مِنَ الذَّنْبِ إِذَا أَذْنَبَ- ‘পাঁচটি ক্ষেত্র ছাড়া তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে সংঘটিত হয়। (১) মেহমান উপস্থিত হ’লে তাকে খাবার খাওয়ানো। (২) মৃতের দাফন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা। (৩) প্রাপ্ত বয়সে উপনীত কুমারী মেয়েকে বিবাহ দেওয়া। (৪) নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করা এবং (৫) পাপ করার সাথে সাথে সেই পাপ থেকে তওবা করা’।[3]

৫. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘হৃদয়কে সঞ্জীবিত করার চাবিকাঠি হ’ল, কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা, শেষ রাতে (ইবাদতে প্রভুর প্রতি) বিনীত হওয়া এবং পাপ পরিহার করে চলা। আর আল্লাহর রহমত হাছিলের সূত্র হ’ল, সৃষ্টিকর্তার ইবাদত ইহসানের[4] সাথে সম্পাদন করা, তাঁর বান্দাদের উপকার সাধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করা। রিযিক লাভের উপায় হ’ল, ক্ষমাপ্রার্থনা ও আল্লাহভীতির কাজে ব্যস্ত থাকা। মান-মর্যাদা লাভের চাবিকাঠি হ’ল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আখেরাতের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণের উপায় হ’ল, আশা-আকাঙ্ক্ষা কম করা। আর প্রত্যেক কল্যাণের চাবিকাঠি হ’ল- আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের কামনায় ব্যাকুল থাকা এবং প্রত্যেক অকল্যাণের মূল কারণ হ’ল, দুনিয়ার প্রতি মোহ ও দীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা’(مفتاح كل خير الرغبة في الله والدار الآخرة ومفتاح كل شر حب الدنيا وطول الأمل)।[5]

৬. ইয়াহইয়া ইবনু মু‘আয (রহঃ) বলেন,مِنْ أَعْظَمِ الِاغْتِرَارِ عِنْدِي التَّمَادِي فِي الذُّنُوبِ عَلَى رَجَاءِ الْعَفْوِ مِنْ غَيْرِ نَدَامَةٍ، وَتَوَقُّعُ الْقُرْبِ مِنَ اللهِ تَعَالَى بِغَيْرِ طَاعَةٍ، وَانْتِظَارُ زَرْعِ الْجَنَّةِ بِبَذْرِ النَّارِ، وَطَلَبُ دَارِ الْمُطِيعِينَ بِالْمَعَاصِي، وَانْتِظَارُ الْجَزَاءِ بِغَيْرِ عَمَلٍ وَالتَّمَنِّي عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مَعَ الْإِفْرَاطِ، ‘আমার মতে সবচেয়ে বড় প্রতারণা হ’ল, পাপের কাজ অব্যাহত রেখে কোন অনুশোচনা ছাড়াই ক্ষমা পাওয়ার প্রত্যাশা করা, আল্লাহর আনুগত্য না করেই তাঁর নৈকট্য লাভের প্রতীক্ষায় থাকা, জাহান্নামের বীজ বপন করে জান্নাতের ফসল প্রত্যাশা করা, পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত থেকে আল্লাহর অনুগত বান্দাদের মত মর্যাদা তালাশ করা, কোন আমল না করেই তার প্রতিদান লাভের প্রতীক্ষা করা এবং আল্লাহর সাথে সীমালঙ্ঘন-বাড়াবাড়ি করা সত্ত্বেও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশা করা। অতঃপর তিনি কবিতা আবৃত্তি করে বলেন,

تَرْجُو النَّجَاةَ وَلَمْ تَسْلُكْ مَسَالِكَهَا * إِنَّ السَّفِينَةَ لَا تَجْرِي عَلَى الْيَبَسِ

‘তুমি নাজাতের রাস্তা অবলম্বন না করেই নাজাত কামনা করছ, (তুমি কি জান না?) জাহায শুষ্ক ভূমিতে চলে না?’[6]

৭. হিকাম বিন আমর আল-গিফারী (রাঃ) বলেন,أُقْسِمُ بِاللهِ، لَوْ كَانَتِ السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ رَتْقاً عَلَى عَبْدٍ، فَاتَّقَى اللهَ, يَجْعَلُ لَهُ مِنْ بَيْنِهِمَا مَخْرَجاً، ‘আল্লাহর কসম! যদি কোন বান্দার উপরে আকাশ-যমীন মিলিত করে দেওয়া হয়, আর সে যদি আল্লাহকে ভয় করে তাহ’লে আল্লাহ তাকে এতদুভয়ের মাঝ থেকে বের হয়ে আসার পথ সৃষ্টি করে দিবেন’।[7] 

৮. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই জ্ঞানই (দ্বীনের) মূল স্তম্ভ এবং সবচেয়ে বড় আলোকবর্তিকা। কখনো কখনো (দ্বীনী জ্ঞানার্জনের নিমিত্তে) বইয়ের পাতাগুলো উল্টানো নফল ছিয়াম, ছালাত, হজ্জ এবং জিহাদ অপেক্ষা উত্তম হয়ে থাকে। এমন অনেক মানুষ আছে, যে ইলম থেকে বিমুখ থাকার কারণে নিজের ইবাদতে প্রবৃত্তির অনুসরণে ডুবে থাকে। সে নফল ইবাদত করতে গিয়ে অনেক অকাট্য ফরয ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়। স্পষ্ট ওয়াজিবকে তরক করে তার ধারণাপ্রসূত উত্তম (?) কাজ করে (অথচ শরী‘আতে সেটা উত্তম কাজ নয়)। হায়! যদি তার নিকটে সঠিক জ্ঞানের আলোকবর্তিকা থাকত, তাহ’লে অবশ্যই সে সঠিক পথের দিশা লাভ করত’।[8]


[1]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ১৩/২৮৯।

[2]. আবূদাঊদ, আয-যুহদ, পৃ. ১৪৩।

[3]. আবু নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া, ৮/৭৮।

[4]. হাদীছে জিবরীলে রাসূল (ছাঃ) ইহসানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর তুমি যদি তাকে দেখতে না পাও, তাহ’লে (দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে যে) তিনি তোমাকে দেখছেন’ (মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২)।

[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদীউল আরওয়াহ, পৃ. ৬৯।

[6]. মাওইযাতুল মুমিনীন মিন ইহইয়াই উলূমিদ্দীন, পৃ. ২৯০।

[7]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৪/৯৪।

[8]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের পৃ. ১১৩।






আরও
আরও
.