১. মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন,تَعَلَّمُوا الْعِلْمَ، فَإِنَّ تَعَلُّمَهُ لِلَّهِ خَشْيَةٌ، وَطَلَبَهُ عِبَادَةٌ، وَمُذَاكَرَتَهٌ تَسْبِيحٌ، وَالْبَحْثَ عَنْهُ جِهَادٌ، وَتَعْلِيمَهُ لِمَنْ لَا يَعْلَمُهُ صَدَقَةٌ، وَبَذْلَهُ لِأَهْلِهِ قُرْبَةٌ- ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞানার্জন করা পরহেযগারিতা, তা অন্বেষণ করা ইবাদত এবং এর পঠন-পাঠন তাসবীহ। আর জ্ঞান-গবেষণায় নিয়োজিত হওয়া জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। যারা জানে না তাদেরকে ইলম শিক্ষা দান করা ছাদাক্বাহ এবং জ্ঞান আহরণে আগ্রহীদের কাছে তা বিতরণ করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম’।[1]
২. আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) বলেন,ابتلينا بالضراء فصبرنا وابتلينا بالسراء فلم نصبر ولذلك حذر الله عباده من فتنة المال والأزواج والأولاد- ‘আমাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হ’লে আমরা ধৈর্যধারণ করি। কিন্তু যখন আমাদেরকে সুখ-শান্তি দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তখন আমরা ধৈর্যধারণ করতে পারি না। এজন্যই আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির ফিৎনা থেকে সতর্ক করেছেন’।[2]
৩. ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَصْلِحُوا آخِرَتَكُمْ يُصْلِحِ اللهُ لَكُمْ دُنْيَاكُمْ، وَأَصْلِحُوْا سَرَائِرَكُمْ يُصْلِحِ اللهُ لَكُمْ عَلَانِيَتَكُمْ- ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের আখেরাতকে ঠিক কর, তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের দুনিয়া ঠিক করে দিবেন। তোমাদের গোপন বিষয়গুলি শুধরে নাও, তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়গুলো সংশোধন করে দিবেন’।[3]
৪. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, خير الدنيا والآخرة في خمس خصال غنى النفس وكف الأذى وكسب الحلال ولباس التقوى والثقة بالله عز وجل على كل حال- ‘দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ পাঁচটি বিষয়ে নিহিত থাকে। (১) মনের প্রাচুর্য (২) কাউকে কষ্ট না দেওয়া (৩) হালাল উপার্জন (৪) তাক্বওয়ার পোষাক পরিধান করা এবং (৫) সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা’।[4]
৫. উহাইব ইবনুল ওয়ার্দ (রহঃ) বলেন, اتق أن تسب إبليس في العلانية وأنت صديقه في السر، ‘তুমি প্রকাশ্যে ইবলীসকে গালি দিবে এবং গোপনে তার সাথে মিতালী করবে এমন দ্বিচারিতা হ’তে সাবধান থেকো’।[5]
৬. ইবনুল মুনকাদার (রহঃ) বলেন, ما بقي من لذات الدنيا إلا ثلاث: قيام الليل، ولقاء الإخوان، والصلاة في جماعة، ‘দুনিয়ার স্বাদ কেবল তিনটি বিষয়ে অবশিষ্ট রয়েছে। (১) ক্বিয়ামুল লায়ল (২) দ্বীনী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ এবং (৩) জামা‘আতে ছালাত আদায় করা’।[6]
৭. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, إخواني! احْذَرُوا الدُّنْيَا فَإِنَّهَا أَسحر من هاروت وماروت ذَانك يفرقان بَين الْمَرْء وزوجه وَهَذِه تفرق بَين العَبْد وربه، ‘ভ্রাতৃমন্ডলী! তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সতর্ক হও। কেননা এটা হারূত ও মারূতের চেয়েও দক্ষ যাদুকর। কারণ তারা স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতো। আর দুনিয়া বান্দা ও তার রবের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়’।[7]
৮. দাঊদ আত্ব-ত্বায়ী (রহঃ) বলেন, من أكبر همه التقوى لو تعلقت جميع جوارحه بالدنيا لردته نيته يوماً إلى نية صالحة، فكذلك الجاهل بالله تعالى وأيامه همه الدنيا والهوى، ولو تعلقت جوارحه بكل أعمال الصالحات لكان مرجوعًا إلى إرادة الدنيا وموافقة الهوى، لأن سرّها كان همه النفس لعاجل عرض الدنيا، ‘তাক্বওয়া অবলম্বনই যার বড় চিন্তা-ভাবনার কারণ তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত হ’লেও একদিন তার নিয়তই তাকে নেক উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে আনবে। অপরদিকে আল্লাহ ও তাঁর নে‘মতরাজি সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির কাছে দুনিয়া ও প্রবৃত্তিপরায়ণতাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। যদিও তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেক আমলে যুক্ত থাকে তবুও সে দুনিয়ার স্বার্থ ও প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থ করার দিকে ফিরে আসে। কেননা তার নফসের গোপন উদ্দেশ্য হ’ল পার্থিব অভিলাষ পূর্ণ করা’।[8]
৯. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, إتباع الهوى وَطول الأمل مَادَّة كل فَسَاد فَإِن اتِّبَاع الْهوى يعمي عَن الْحق معرفَة وقصدا وَطول الأمل ينسي الْآخِرَة ويصد عَن الاستعداد لَهَا، ‘সকল অকল্যাণের মূল হ’ল প্রবৃত্তির অনুসরণ ও দীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা। কেননা প্রবৃত্তির অনুরসরণ হক জানা ও বুঝার পরেও তাকে সে বিষয়ে অন্ধ করে রাখে। আর দীর্ঘ আশা আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে’।[9]
[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/২৪৬।
[2]. ঐ, উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ: ৬৪।
[3]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আল-ইখলাছ ওয়ান নিয়্যাহ, পৃ: ৭০।
[4]. নববী, বুস্তানুল ‘আরেফীন, পৃ: ৩১।
[5]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৪২২।
[6]. আবূ ত্বালেব মাক্কী, কূতুল কুলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব ১/৭১।
[7]. ইবনুল জাওযী, আল-মুদহিশ, পৃ: ৩৮৬; তাসলিয়াতু আহলিল মাছায়েব, পৃ: ২৪৮।
[8]. কূতুল কুলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব ২/২৬৮।
[9]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৯৯।