আমার বাংলা বই
ইবতেদায়ি দ্বিতীয় শ্রেণি
পুনর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১৮
(৭৫/৫) পৃ. ২৩
বোর্ডে লেখা সংখ্যাগুলো নিচে ফাঁকা জায়গায় কথায় লিখি।
মন্তব্য : একই ব্ল্যাকবোর্ডের বাম পাশে একটি মেয়ে ও ডান পাশে একটি ছেলে অংক করছে যা সহশিক্ষার ইঙ্গিত বহন করে। আর হিজাব পরিহিতা মেয়ে টুপি পরিহিত ছেলের দিকে পরস্পরে তাকিয়ে আছে। এখনকার ইভটিজিং আক্রান্ততরুণ সমাজকে বাঁচানোর জন্য এধরণের ছবি সহায়ক নয়।
(৭৬/৬) পৃ. ২৪-২৫ ‘জলপরি ও কাঠুরে’
গল্পের শিক্ষা ভাল হ’লেও কাহিনী অলীক। এর চাইতে শিক্ষণীয় ও বাস্তব কাহিনী ইসলামের ইতিহাসে বহু রয়েছে।
পৃ. ৩৬-৩৭ দাদির হাতে মজার পিঠা- গল্পে মায়ের বেগুনী যমীনের শাড়ি ও দাদির সাদা যমীনের শাড়ি এবং উভয়ের দু’হাতে শঙ্খ চুড়িতে হিন্দু সংস্কৃতির ছাপ।
আর গল্পে নাম ব্যবহৃত হয়েছে- যথাক্রমে- তুলি, অনু, তপু ও পলা।
(৭৭/৭) পৃ. ৪০, ৪৩ ছড়া : ‘ট্রেন’
মেয়ের কাঁধে ছেলে তারপর ছেলের কাঁধে মেয়ে দুইহাত রেখে পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে ছেলে ও মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মন্তব্য : শামসুর রহমান (১৯২৯-২০০৬ খৃ.) রচিত ‘ট্রেন’ ছড়াটিতে শিক্ষণীয় কিছুই নেই। যেমন ‘থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি একটু কেশে খক। আমায় নিয়ে ছুটবে আবার ঝক ঝকাঝক ঝক’ (পৃ. ৪০)। শব্দটি কয়লার ইন্জিনের হলেও বর্তমান যুগের ট্রেনে ঐ শব্দ হয়না।
৪৩পৃষ্ঠায় ছড়াটির অনুশীলনীতে শূন্যস্থান পূরণ করার স্থলে ৬জন ছেলে ও মেয়ে পরপর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সুকৌশলে পর্দাহীনতা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
(৭৮/৮) পৃ. ৪৮ প্রার্থনা
সুফিয়া কামাল
কতো ভালো তুমি,
কতো ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান।
মন্তব্য : মুনাজাতে আমরা গান গাই না। বরং বিনম্রচিত্তে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করি। আর মুনাজাতরত মেয়ের ছবির কোন প্রয়োজন ছিলনা। ছেলের ছবিও দেওয়া যেত।
(৭৯/৯) পৃ. ৫১ ছেলেরা ও মেয়েরা একই সাথে ক্রিকেট খেলছে। ওমর বাদে খেলোয়াড়দের নামগুলি ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণীর বাংলার ন্যায় অনৈসলামী নাম। আর ছেলে-মেয়ে এক সাথে খেলছে। যা আদৌ শোভনীয় নয়। ছবিতে একজন মেয়ে উইকেট কিপার। সে কেন উইকেট কিপার থাকবে? স্ত্রী তো হবে হাউজ কিপার। সে তার স্বামীর ঘরের দায়িত্বশীল ও সে এ বিষয়ে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৬৮৫)।
(৮০/১০) পৃ. ৫২-৫৩ ‘খামার বাড়ির পশুপাখি’
গনি মিয়ার মেয়ে রিতা।... পাশেই পরান বাবুর ছাগলের খামার।... মুরগির খামারের পাশে রয়েছে একটা বড় পুকুর। সেখানেই শীতল বড়ুয়ার হাঁসের খামার।
মন্তব্য : রিতা, পরান বাবু ও শীতল বড়ুয়া সব নামই অনৈসলামিক। গনি মিয়া মুসলিম নাম। পরান বাবু সম্ভবতঃ হিন্দু। আর শীতল বড়ুয়া সম্ভবতঃ বৌদ্ধ। এখানে গল্পের ছত্রছায়ায় মুসলিম ও মুশরিকদের একাকার করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ মুসলিম ও মুশরিক কখনোই এক নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি লোকদের মধ্যে মুসলমানদের জন্য সর্বাধিক শত্রু পাবে ইহূদী ও মুশরিকদের’ (মায়েদা ৫/৮২)। তাহ’লে মাদ্রাসায় সন্তান পাঠিয়ে আমাদের শিশুরা কি শিখে আসছে?
(৮১/১১) পৃ. ৫৫ রেখা টেনে মিল করি।
(বামে পশু-পাখির ছবি ও ডানে)
ব্যাঁ ব্যাঁ
হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া
হাম্বা হাম্বা
কুক্কুরু কু কুক্কুরু কু
ঘেউ ঘেউ
মন্তব্য : মুসলমান বাচ্চাদেরকে কুকুর-শৃগাল, গরু-ছাগলের ডাক শিখানো হচ্ছে। একটা ৮ বছরের শিশু এগুলি ভালভাবেই জানে। তাহ’লে এতে কি শিক্ষণীয় রয়েছে?
(৮২/১২) পৃ. ৫৬ ‘ছয় ঋতুর দেশ’
৫৬ পৃষ্ঠায় মাথাল ওয়ালা কিষাণী বৃষ্টিতে ভিজছে। আর ৫৭ পৃষ্ঠায় একটি মেয়ে খোলা মাথায় ফুল তুলছে। আর একটি মেয়ে একটি ছেলেকে নিয়ে খোলা মাথায় খেজুর গাছে ঝুলানো মাটির কলসের দিকে তাকিয়ে আছে। ৫৮ পৃষ্ঠায় মহিলা খোলা মাথায় ধান মাড়াই করছে।
মন্তব্য : বাংলাদেশের কোন ভদ্র মহিলা কি বর্ষায় কিষাণী হয়ে মাঠে যায়? তারা কি এভাবে প্রকাশ্যে ধান মাড়াই করে? তারা তি শীতকালে খেজুর গাছের রস পাড়তে যায়? তাহ’লে এগুলি কিসের ইঙ্গিত?
মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে বাচ্চাদের ছয় ঋতু শেখাতে অনুশীলনী সহ মোট ১৩টি ছবি দেওয়া হয়েছে। লিঙ্গ সমতার নামে প্রতিটি ছবি যেন পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। যেগুলি শিখে সন্তানদের দুনিয়া ও আখেরাতের কোনই উপকার হবেনা। বরং আগামীর মুসলিম সমাজ কৃষ্টি-কালচারে একটি উদ্ভট ধর্মহীন সমাজের রূপ পরিগ্রহ করবে।
(৮৩/১৩) পৃ. ৬৬ ‘কাজের আনন্দ’
এখন না কব কথা
আনিয়াছি তৃণলতা
আপনার বাসা আগে বুনি।
মন্তব্য : নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য (১৮৫৯-১৯৪১ খৃ.) বিরচিত উক্ত কবিতার শেষের লাইন গুলিতে বাচ্চাদেরকে স্বার্থপরতার কুশিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
(৮৪/১৪) পৃ. ৭১ ‘সবাই মিলে করি কাজ’ নামক গল্প। ৭৮ পৃষ্ঠার পুরা বইয়ে এই একটি মাত্র শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে, তাও সবার শেষে ৭১ পৃষ্ঠায়।
আমার বাংলা বই
ইবতেদায়ি তৃতীয় শ্রেণি
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা
(৮৫/১) পৃ. ১-৩
মন্তব্য : ছবিতে বয়ঃপ্রাপ্তা মেয়ের মাথা খোলা বেপর্দা ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। এখানে ‘বেগুনখেত’ বানান লেখা হয়েছে, যা অপ্রচলিত। কারণ খাওয়া থেকে ‘খেত’ হয়ে থাকে। আর ‘ক্ষেত’ অর্থ জমি। যেখানে বেগুন চাষ করা যায়। তিনটি নামের মধ্যে ঐশী ও সীমা লেখা হয়েছে, যা ইসলামী নাম নয়।
গল্প : রাজা ও তার তিন কন্যা
(৮৬/২) পৃ. ৯, ১০ বহুসংখ্যক পুরুষের সামনে বেপর্দা নারীর উপবেশন। ...তার জিভে এল জল (পৃ. ১০)।
মন্তব্য : গল্পটি স্রেফ উদ্ভট ও অবাস্তব। আর রাজা-রাণীর গল্প হিন্দুদের মধ্যেই বেশী প্রচলিত। আর তাদের জিভেই কেবল ‘জল’ আসে। আর মুসলমানদের জিভে আসে ‘পানি’। এভাবে সুকৌশলে গল্পের নামে ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামী বানানের বিরুদ্ধে মিছরীর ছুরি চালানো হয়েছে।
(৮৭/৩) পৃ. ১৪ ছড়া ‘হাটে যাবো’
মন্তব্য : কবি আহসান হাবীব (১৯১৭-১৯৮৫ খৃ.) লিখিত ‘হাটে যাবো’ ছড়ায় বাচ্চাদের কি শিখানো হচ্ছে? হাটে যাবো হাটে যাবো ঘাটে নেই নাও, ‘নি-ঘাটা নায়ের মাঝি আমায় নিয়ে যাও’ বলে কি নাস্তিক লালন ফকীরের (১৭৭৪-১৮৯০ খৃ.) ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’-র অদ্বৈতবাদী দর্শনের দিকে আহবান করা হচ্ছে না?
(৮৮/৪) পৃ. ১৬ ‘ভাষা শহিদদের কথা’
মন্তব্য : ‘ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হয়েছে’। এটা বলে বইয়ে প্রদত্ত চারজনের ছবি দিয়ে ১৯৫২ সালের পূর্বেকার ও পরের সকল নেতা-কর্মীদের অবদানকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয়েছে। ১৭ পৃষ্ঠায় নারী-পুরুষের সম্মিলিত গণমিছিল দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মুসলিম মা-বোনদের পর্দাহীনতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।
(৮৯/৫) পৃ. ২২ চল্ চল্ চল্
মন্তব্য : কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খৃ.) বিরচিত উক্ত কবিতার শিরোনামের উপরে মেয়েদের পিটি এবং কবিতার নীচে ছেলেদের পিটির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের দৃশ্যটি উপরে দেওয়ার কারণ কি?
(৯০/৬) পৃ. ২৩ ধুতি পরিহিত এজজন পুরুষ ঢোল বাজাচ্ছে। আর হলুদ শাড়ি, হাতে চুড়ি ও পায়ে নুপুর পরিহিতা তিনজন মহিলা নাচছে।
মন্তব্য : এটা কি ইসলামী সংস্কৃতি? যা মাদ্রাসার ছাত্রদের শিখানো হচ্ছে?
(৯১/৭) পৃ. ২৬ গল্প ‘স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে’
মন্তব্য : গল্পের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনিস বাদে ছাত্রী তিথি, রুনু, নীলা, রবি, পারুল কোন নামই ইসলামী নয়। তারা রঙিন কাগজ দিয়ে আর্টবোর্ডে ফুল এঁকেছে। কাজটি খুব সুন্দর হয়েছে বলে ‘ছবি আঁকার শিক্ষক রূপা আপা’ তাদের বললেন, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তোমাদের পুরস্কার দেওয়া হবে। তাতে ‘খুশিতে সকলে হাততালি দিল’। এ গল্পে কয়েকটি বিষয় প্রশ্নসাপেক্ষ। ১. স্বাধীনতা দিবসে ফুল আঁকাই কি বড় কাজ, না কি স্বাধীনতার তাৎপর্য বুঝানোই বড় কাজ? ২. মাদ্রাসায় ছবি আঁকার জন্য পৃথক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে কি? ৩. ঐ শিক্ষককে মহিলা হ’তে হবে কি? ৪. শিক্ষক শব্দের কোন স্ত্রীলিঙ্গ থাকবেনা কি? ৫. প্রাণীর ছবি অঙ্কন ইসলামে নিষিদ্ধ। ছবি অঙ্কন কারীদেরকে ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪৯৭)। ৬. ‘খুশিতে সকলে হাততালি দিল’। অথচ ইসলামের বিধান হ’ল, খুশীতে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলা। ৩০ পৃষ্ঠায় একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পুষ্পস্তবক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো কি ইসলামী রীতি?
(৯২/৮) পৃ. ৩২-৩৪ ‘কুঁজো বুড়ির গল্প’
লাউ গুড় গুড় লাউ গুড় গুড়
চিঁড়ে খায় আর খায় গুড়
বুড়ি গেল অনেক দূর।
মন্তব্য : ‘কুঁজো বুড়ির গল্প’ নামে একটি উদ্ভট গল্প বানানো হয়েছে। যাতে নাই কোন শিক্ষা, নাই কোন উপদেশ। বুড়ির তিনটি কুকুরের নাম রঙ্গা, বঙ্গা, ভুতু। ঐ গল্পের ভিত্তিতে ৩৬ পৃষ্ঠার নীচে শিক্ষার্থীদের অভিনয় করতে বলা হয়েছে এবং তাতে শিক্ষককে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। শিশু অবস্থাতেই বাচ্চাদের যদি এইরূপ মিথ্যা অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহ’লে আজকের শিশুরা আগামী দিনে মিথ্যার অভিনয়ে পারদর্শী হয়ে গড়ে উঠবে।
(৯৩/৯)পৃ. ৫২ গল্প ‘পাখিদের কথা’
মন্তব্য : এর মধ্যে কাক, কোকিল, ময়না, বুলবুলি, টিয়া, দোয়েল, টুনটুনি, বাবুই, শালিক ও মাছরাঙ্গা ১০টি পাখির ছবি দেয়া হয়েছে ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কতই না ভাল হ’ত বাবুই পাখির উপরে রজনীকান্ত সেনের (১৮৬৫-১৯১০ খৃ.) লেখা প্রসিদ্ধ ও শিক্ষণীয় কবিতাটি দিলে! যেখানে বলা হয়েছে,
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
‘কুঁড়ে ঘরে থাকি কর, শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে’।
বাবুই হাসিয়া কহে, ‘সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক তবু ভাই, পরের ও বাসা
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা’।
(৯৪/১০) পৃ. ৫৯ কবিতা ‘আমাদের গ্রাম’
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ।
মন্তব্য : বন্দে আলী মিঞা (১৯০৬-১৯৭৯ খৃ.) রচিত উক্ত কবিতায় গ্রামকে ‘মা’ বলা হয়েছে এবং গ্রামই ‘আলো দিয়ে বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ’ বলা হয়েছে। যা তাওহীদের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। এর বদলে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬ খৃ.) ‘এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি’ কবিতাটি পাঠ্য করলে কতই না সুন্দর হ’ত!
(৯৫/১১) পৃ. ৬২ কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলার ছবিতে ছেলে-মেয়ে একাকার। ...সেদিন খেলার শুরুতে রাতুলের দুই চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল সোমা। এমনটাই নিয়ম। শেষে বলা হয়েছে,
আনি মানি জানি না
পরের ছেলে মানি না।
আনি মানি জানি না
পরের মেয়ে মানি না।
এর পরেই চোখ বাঁধা রাতুল কান্তা আপুকে ধরে ফেলল। ব্যস, রাতুলের মুক্তি।
মন্তব্য : ছেলে রাতুলের চোখ মেয়ে সোমা বেঁধে দিবে এমনটাই নিয়ম নয়। বরং যেকোন ছেলে কোন ছেলের ও মেয়ে মেয়ের চোখ বাঁধবে এটাই স্বাভাবিক। এটা ‘প্লে টুগেদার /লিভ টুগেদার’-এর অপপ্রয়াস। যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
(৯৬/১২) পৃ. ৭১ ছবি দেখি ও ইচ্ছামতো তিনটি বাক্য লিখি।
উক্ত ছবিতে বই বুকে নিয়ে একজন শিক্ষিকা শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করছেন ও বেঞ্চে পাশাপাশি বসা ছাত্র-ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে শিক্ষিকাকে সালাম দিচ্ছে।
মন্তব্য : শিক্ষিকা সালাম দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসেই সালামের উত্তর দিবে, এটাই সুন্নাত। দাঁড়ানোটা ইসলামী রীতি নয়। ছাত্র-ছাত্রী পাশাপাশি বসা ইসলামে নিষিদ্ধ।
(৯৭/১৩) পৃ. ৭২ গল্প ‘একজন পটুয়ার কথা’
বাবা তাকে ভর্তি করে দিলেন কলকাতা মাদরাসায়। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা ছবি অাঁকার স্কুলে পড়বেন। বাবা শেষে বাধ্য হয়ে তাঁকে ছবি অাঁকার স্কুলে ভর্তি করালেন। বাবা বললেন, পড়ার খরচ তিনি দেবেন না। পড়ার খরচ জোগাতে তিনি কাজ করেছেন পুতুলের কারখানায় (পৃ. ৭৩)।
মন্তব্য : উক্ত লেখাগুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষাকে হেয় করে ছবি অাঁকার স্কুলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দিয়েই মাদ্রাসা শিক্ষাকে ভিতর থেকে ছুরিকাঘাত করা হচ্ছে। অথচ প্রাণীর ছবি অাঁকা ইসলামে নিষিদ্ধ। ক্বিয়ামতের দিন ঐসব ছবি অঙ্কনকারীকে আল্লাহ বলবেন, ওতে জীবন দাও। সে জীবন দিতে পারবে না। ফলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (বুখারী হা/৭৫৫৭)। এরপরে লেখা হয়েছে, ‘তিনি দেশ সেবক তরুণদের সংগঠন ব্রতচারীদের দলে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছেন খাঁটি বাঙালি হওয়ার শিক্ষা’ (পৃ. ৭৩)। অথচ গুরু সদয় দত্ত (১৮৮২-১৯৪১ খৃ.) কর্তৃক ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত উক্ত আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ঐক্যবদ্ধভাবে লোকনৃত্য ও লোকসঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে মানসিক ও আত্মিক বিকাশ লাভ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। ...ইউরোপে এ আন্দোলন জনপ্রিয়তা পায়। ইংরেজ সরকারেরও এ আন্দোলনের প্রতি সপ্রশংস সমর্থন ছিল’।
দখলদার ইংরেজদের আশীর্বাদ পুষ্ট এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি খাঁটি বাঙালী হওয়ার শিক্ষা পেয়েছিলেন। অথচ কে না জানে, বাঙালী হিন্দুরাই ছিল ইংরেজদের আশীর্বাদ পুষ্ট, বাঙালী মুসলমানরা নয়। আর ‘খাঁটি বাঙালী হওয়ার শিক্ষা’ বলতে খাঁটি হিন্দু হওয়ার শিক্ষা বুঝানো হয়েছে। তাই আলোচ্য ‘একজন পটুয়ার কথা’ গল্পে স্বাধীন বাংলাদেশের কোন স্বাধীনচেতা শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষণীয় কিছুই নেই। বরং এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনরায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাদের দাসত্ব বরণের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। যেভাবে তারা গোয়া, জুনাগড়, মানভাদর, হায়দরাবাদ, সিকিম প্রভৃতি স্বাধীন রাজ্যগুলিকে গ্রাস করে নিয়েছে এবং অতি সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে গ্রাস করার সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
উক্ত বইয়ে ব্রতচারীদের ১৪ লাইন বিশিষ্ট নিয়মনীতি শিখানো হয়েছে। অথচ কুরআন-হাদীছ বা ছাহাবীগণের কোন বাণী শিখানো হয়নি। গল্পের শেষে বলা হয়েছে, ‘আমরাও তাঁর মত দেশকে ভালবাসব। ছবিকে ভালবাসব। মানুষকে ভালবাসব’। অথচ দেশকে ভালবাসা মানুষের স্বভাবজাত। এজন্য কোন পটুয়ার মত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ছবিকে ভালবাসারও কোন প্রয়োজন নেই।
বইয়ে পটুয়া কামরুল হাসানের (১৯২১-১৯৮৮ খৃ.) ‘তিন কন্যা’, ‘নাইওর’, ‘উঁকি’ ইত্যাদি ছবির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব ছবির প্রধান উপাদান হ’ল নারী। বিশেষতঃ নারীর দেহ। এর মধ্যে তরুণ শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কোন কিছুই শিক্ষণীয় নেই। বরং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার শিক্ষা রয়েছে। ‘পটুয়া’ অর্থ চিত্রকর।
(৯৮/১৪) পৃ. ৮৬ গল্প ‘পাল্লা দেওয়ার খবর’
মন্তব্য : এখানে একজন শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন। অথচ এখানে একজন শিক্ষককে দেওয়া যেত। এর মাধ্যমে সহশিক্ষার বিপক্ষে ইসলামী নীতির প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে। এভাবে ১০৯ পৃষ্ঠার পুরা বইটিতে ৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ‘খলিফা হযরত আবু বকর (রা)’ ব্যতীত কোন স্থানে উল্লেখযোগ্য কোন ইসলামী শিক্ষা নেই।
আমার বাংলা বই
পঞ্চম শ্রেণি
(৯৯/১) পৃ. ১ ‘এই দেশ এই মানুষ’
পৃ. ২ ‘আমাদের আছে নানা ধরনে উৎসব। মুসলমানদের রয়েছে দুটি ঈদ। ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা। হিন্দুদের দূর্গাপূজা সহ আছে নানা উৎসব আর পার্বণ’। ... অতঃপর নীচে দেওয়া হয়েছে হুতোম পেঁচা ও অন্যান্য ছবি। সব নীচে লেখা হয়েছে, পহেলা বৈশাখের উৎসব।
মন্তব্য : এর দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, পহেলা বৈশাখের উৎসব সকল ধর্মের মানুষের। অথচ এটি কেবল হিন্দুদের উৎসব। নইলে হুতোম পেঁচা ও সাপ ইত্যাদির মূর্তি কেন? মুসলানদের ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার উৎসবে কি এগুলি থাকে?
মূলত দেব-দেবীকে উদ্দেশ্য করে এসব আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা কল্যাণ কামনা করে থাকে। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে পেঁচা, রামের বাহন হিসাবে হনুমান, দুর্গার বাহন হিসাবে সিংহ, দেবতার প্রতীক হিসাবে সূর্য ইত্যাদি নিয়ে শরীরে দেব-দেবী ও জন্তু-জানোয়ারের প্রতিকৃতি এবং কালীর লোহিত বরণ জিহবা, গণেশের মস্তক ও মনসার উল্কি ইত্যাদি এঁকে এদিন তারা পূজা-অর্চনা করে এবং শোভাযাত্রা করে। এটাকে তারা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বলে। অথচ তাদের এই শিরকী সংস্কৃতিকে বাংলাদেশী সংস্কৃতি গণ্য করে ৯০ শতাংশ তাওহীদবাদী মুসলিম শিক্ষার্থীদের মগযে সুকৌশলে শিরকী চিন্তাধারা প্রবেশ করানোর অপচেষ্টা চরম অন্যায়।
(১০০/২) পৃ. ২ ‘ধর্ম যার যার, উৎসব যেন সবার’।
মন্তব্য : কথাটি চরম আপত্তিকর। কারণ অধিকাংশ উৎসবের সৃষ্টি হয়েছে ধর্মের আলোকে। তাই অন্যদের উৎসবের সাথে ইসলামী উৎসব সব দিক দিয়েই পৃথক। ইসলামের উৎসব নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। এই উৎসবে যেমন রয়েছে ইবাদতের পবিত্রতা, তেমনি রয়েছে শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের আপোষহীন ঘোষণা। অতএব মুশরিকদের উৎসবকে মুমিনদের উৎসবের সমান গণ্য করা প্রকারান্তরে শিরক ও তাওহীদকে একাকার করার শামিল। অতএব মুসলিম শিক্ষার্থীদের সিলেবাস থেকে উক্ত বক্তব্য অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিৎ।
(১০১/৩) পৃ. ৩ : দেশ হলো জননীর মতো। জননী যেমন স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন। দেশও তেমনই তার আলো, বাতাস ও সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।
মন্তব্য : এগুলি স্রেফ শিরকী বক্তব্য। এখানে দেশকে একটি প্রণবান সত্তা কল্পনা করা হয়েছে। যার হাতে আলো, বাতাস ও সম্পদের মালিকানা রয়েছে। অথচ সবকিছুর মালিকানা আল্লাহর হাতে এবং তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা।
(১০২/৪) পৃ. ১০ গল্প ‘সুন্দরবনের প্রাণী’ পৃ. ১১ প্রাণী বৃক্ষলতা সব কিছুই প্রকৃতির দান।
মন্তব্য : সব কিছুই প্রকৃতির দান নয়। বরং প্রকৃতির স্রষ্টা আল্লাহ। আর সব কিছুই আল্লাহর দান। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু। অতঃপর তিনি মনঃসংযোগ করেন আকাশের দিকে। অতঃপর তাকে সপ্ত আকাশে বিন্যস্ত করেন। আর তিনি সকল বিষয়ে জ্ঞাত’ (বাক্বারাহ ২/২৯)।
(১০৩/৫) পৃ. ৩৪ ‘শখের মৃৎশিল্প’
মন্তব্য : মৃৎশিল্প শখের নয়। বরং এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। যা হাযার হাযার মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। অতঃপর পহেলা বৈশাখের মেলার প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘গেল বছর পহেলা বৈশাখের ছুটিতে গিয়েছিলাম আনন্দপুর। সেখানে পহেলা বৈশাখের মেলা বসে। মামা বললেন, তোমাদের মেলা দেখাতে নিয়ে যাব। ...মামা পড়েন ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউটে।...মামা বললেন, সুযোগ মতো একসময় তোমাদের শালবন বিহারে নিয়ে যাব’ (পৃ. ৩৭)।
মন্তব্য : ধান ভানতে শিবের গীত কেন? মৃৎশিল্প বুঝাতে গিয়ে পহেলা বৈশাখের মেলা কেন? পহেলা বৈশাখের ছুটি বাংলাদেশে কবে থেকে চালু হয়েছে? এটা কি হিন্দু-মুসলিম সকলের জন্য সার্বজনীন ও চিরন্তন উৎসব? কয়জনের মামা চারুকলা ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করে? আমি ও মামাতো বোনের নাম বৃষ্টি ও সোহানা কেন? ফাতেমা-আয়েশা হ’তে পারতো না? সবশেষে মামা তাদেরকে শালবন বিহারে নিয়ে যাবে কেন? সুন্দরবন-ষাট গুম্বজ মসজিদ দেখাতে নিয়ে যেতে পারে না কেন? এদেশে বৌদ্ধ কতজন আছে? যে তাদের পূজার স্থান শালবন বিহার দেখতে যেতে হবে? সবকিছুর মধ্যেই অতি সূক্ষ্মভাবে শিক্ষার্থীদের মগয থেকে ইসলাম ও ইসলামী ঐতিহ্য চেতনা নিঃশেষ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(১০৪/৬) পৃ. ৫৬-৬১ গল্প ‘কাঞ্চনমালা আর কাঁকনমালা’ ‘এক রাতে রাজা ঘুমাতে যান। কিন্তু ভোরবেলা যখন তার ঘুম ভাঙে, তখনই দেখা যায় কী সর্বনাশ ঘটেছে! রাজা দেখেন যে তার শরীরে গেঁথে আছে অগুনতি সুচ’।
পৃ. ৬০ অচিন মানুষ নতুন মন্ত্র পড়া ধরে :
সূতন সূতন সরুলি, কোন দেশে ঘর
সুচ রাজার সুচ গিয়ে আপনি পর।
সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ সুতা রাজার গায়ের লাল লাখ সুচে ঢুকে যায়। আবার মন্ত্র পড়ে অচিন মানুষ। সব সুচ রাজার শরীর থেকে বেরিয়ে এসে নকল রানির চোখে মুখে বিঁধে যায়। জ্বালা যন্ত্রণায় ছটফট করে। নকল রানি শেষে মারা যায়’।
মন্তব্য : শিক্ষাহীন এক উদ্ভট হিন্দুয়ানী গল্প। যার কোন ভিত্তি নেই।
(১০৫/৭) পৃ. ৬৪-৬৯ নাটক ‘অবাক জলপান’
পথিক : নাঃ একটু জল না পেলে আর চলছে না। সেই সকাল থেকে হেঁটে আসছি, এখনও প্রায় এক ঘন্টার পথ বাকি। তেষ্টায় মগজে ঘিলু পর্যন্ত শুকিয়ে উঠল। কিন্তু জল চাই কার কাছে? ...মশাই, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন?
মন্তব্য : বাংলাদেশের মুসলিম শিক্ষার্থীরা জল নয়, পানি পান করে। তাদের তেষ্টা লাগেনা, বরং পিপাসা লাগে। তারা কোন মশাইয়ের কাছে চায় না। বরং ভাই বা চাচাজীর কাছে চায়। পশ্চিম বাংলার কবি সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩ খৃ.)-এর প্রাচীন বাংলা আধুনিক যুগে শিখানোর উদ্দেশ্য কি? মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিন্দু বাংলায় অভ্যস্ত করানোই কি উদ্দেশ্য? এরূপ শিক্ষাহীন ও ভদ্রতা বিবর্জিত নাটক অবশ্যই সিলেবাস থেকে ছাঁটাই করা উচিৎ।
(১০৬/৮) পৃ. ৮১-৮২ ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’
‘উচ্ছ্বাস ভরি শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে,
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে’।
মন্তব্য : কবি কাদের নেওয়াজ (১৯০৯-১৯৮৩ খৃ.) রচিত উক্ত কবিতায় ‘কুর্ণিশ করি’ কথা এসেছে। ইসলামে কুর্ণিশ করার কোন বিধান নেই। এটি অমুসলিমদের রীতি। যা আজও দেশের আদালত সমূহে ও কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু আছে। এগুলি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। শিক্ষকদেরকে এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে বুঝিয়ে দিতে হবে।
(১০৭/৯) পৃ. ৯৭ গল্প ‘বিদায় হজ’
...নিজের ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদের ওপর তোমরা ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কর না। ...‘তোমরা সাক্ষী, আমি আমার কর্তব্য পালন করছি। বিদায়!’
মন্তব্য : আরাফাতের ময়দানে এবং কুরবানী ও মিনার দিনগুলির ভাষণে রাসূল (ছাঃ) সর্বমোট ১৩টি হাদীছে ৩১টি বিষয় বর্ণনা করেছেন। যার প্রতিটি মানব জীবনে চিরন্তন দিক নির্দেশনা মূলক। কিন্তু সেখানে বোর্ডের বইয়ে লিখিত উপরোক্ত প্যারাটি পাওয়া যায় না। এটি নিজেদের বানানো এবং বিদায় হজ্জের ভাষণকে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া এর মাধ্যমে ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মকে সমমর্যাদায় দেখানো হয়েছে। অথচ ইসলাম আল্লাহ প্রেরিত ধর্ম। আর অন্যগুলি মানুষের তৈরী। যেগুলির রহিতকারী হিসাবে মানবজাতির জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হিসাবে ইসলাম নাযিল হয়েছে (আলে ইমরান ১৯; মায়েদাহ ৩)। ইসলামকে অস্বীকার কারী মানুষ অবশ্যই জাহান্নামবাসী হবে (মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০)। তবে এজন্য অন্য ধর্মের লোকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা যাবেনা। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন যবরদস্তি নেই। নিশ্চয়ই সুপথ ভ্রান্তপথ হ’তে স্পষ্ট হয়ে গেছে’ (বাক্বারাহ ২৫৬)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন এবং আমার জন্য আমার দ্বীন’ (কাফেরূন ৬)। এর অর্থ সূর্যোদয়ের পর যেমন অন্ধকার থাকেনা। ইসলাম আসার পর তেমনি ভ্রান্ত পথ থাকেনা। এর পরেও যদি কেউ ভ্রান্ত পথে চলে, তাহ’লে তাদের জন্য ভ্রান্ত পথ এবং আমাদের জন্য সরল পথ।
(১০৮/১০) পৃ. ১১৫ গল্প ‘শহিদ তিতুমীর’
তেতো, তিতু, তিতুমীর। ...শিশুকালে তার একবার কঠিন অসুখ হলো। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হল ভীষণ তেতো ঔষধ। ...এ জন্যে ওর ডাক নাম রাখা হলো তেতো। তেতো থেকে তিতু। তার সাথে মীর লাগিয়ে তিতুমীর।
মন্তব্য : লেখকের নামহীন এই গল্পে ‘তিতু’ নামের যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা রীতিমত হাস্যকর। পশ্চিমবঙ্গের বৃটিশ বিরোধী একজন বিশ্ববিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামীর শৈশবকালে যদি এরূপ ঘটনা থেকেও থাকে, তবে সেটি বোর্ডের বইয়ে প্রকাশ করার কি প্রয়োজন ছিল? এর মাধ্যমে শিশুমনে তাঁর সম্পর্কে কেমন ধারণা তৈরী হবে? এতে তাঁর মর্যাদাহানি করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু নেই। বরং হাসির খোরাক রয়েছে। অতএব এই ঘটনা অবশ্যই প্রত্যাহার যোগ্য।
মোশাররফ হোসেন খান রচিত ও বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা প্রকাশিত সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর বইয়ে (২০০৭ খৃ.) উক্ত গল্পটি দেখা যায়। কিন্তু সেখানে কোন সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।
(১০৯/১১) পৃ. ১২০ গল্প ‘অপেক্ষা’
...দুই বোন খুশিতে হাততালি দেয়।
মন্তব্য : ইসলামে খুশীতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হয়। হাততালি দেওয়ার কোন বিধান নেই। এটি অমুসলিমদের রীতি। অতএব এটি পরিত্যাজ্য।
সবশেষে বলব, ইবতেদায়ী পঞ্চম শ্রেণীর ১৩৪ পৃষ্ঠার পুরা বইয়ে ৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ‘বিদায় হজ’ ব্যতীত কোন স্থানে উল্লেখযোগ্য কোন ইসলামী শিক্ষা নেই। বইয়ের প্রথম কভার পেজের উপরে হাঁটু ও মাথা আলগা দু’জন ছেলে-মেয়ে পাশাপাশি মুনাজাতের ভঙ্গিতে চোখ বুঁজে বসে আছে। তাছাড়া বইয়ের সর্বত্র নারী-পুরুষের ছবির ছড়াছড়ি। যা ইসলামের পর্দানীতির ঘোর বিরোধী। শেষ কভার পেজে একটি ভাল উপদেশ লেখা হয়েছে, ‘পরনিন্দা ভালো নয়’। এটা শিক্ষার্থীদের পাঠ্য তালিকার বাইরে কেন? এর দ্বারা যদি বোর্ড কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে থাকেন যে, তারা আমাদের বাচ্চাদের আক্বীদা ধ্বংস করার জন্য যা খুশী লিখবেন, তার প্রতিবাদ করা যাবে না, তাহ’লে তারা মহা ভুলের মধ্যে আছেন। কারণ আমরা মুসলমান। আমাদের রাসূলের বাণী এই যে, ‘তোমরা কোন অন্যায় দেখলে হাত দ্বারা প্রতিরোধ কর অথবা যবান দ্বারা প্রতিবাদ কর’... (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম গোপন করে, ক্বিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরানো হবে’ (আবুদাঊদ হা/৩৬৫৮; মিশকাত হা/২২৩)।