পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩।  পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬। পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯।

(৩০৬/৩৩) পৃ. ১১৩ চতুর্থ তাকবিরে (হাত না উঠিয়ে)...চতুর্থ তাকবির বলে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে সালাতুল জানাজা শেষ করবে।

মন্তব্য : প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে ও বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে (বিন বায, মাজমু‘ ফাতাওয়া ১৩/১৪৮; উছায়মীন, মাজমু‘ ফাতাওয়া ১৭/১৩৪)

(৩০৭/৩৪) পৃ. ১১৪ (মৃত ব্যক্তির জন্য) দোআর পদ্ধতি

মৃত ব্যক্তির জন্য দোআকে ইসালে সওয়াব বা সওয়াব রেসানি বলা হয়।...কুরআন খতম, মিসকিনদের খাওয়ানো, দোআ ও মিলাদ মাহফিল করলে জীবিতদের মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়, তা মনকে আল্লাহমুখী করতে সহায়ক হয়। তবে ঐ দিনই করতে হবে এমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই। আর ঐ দিন করলেও শরিয়তে নিষেধ নেই।      

মন্তব্য  : দো‘আকে কখনোই ঈছালে ছওয়াব বলা হয়না। বরং ঈছালে ছওয়াব বলা হয় জীবিত ব্যক্তির কোন দৈহিক ইবাদতের ছওয়াব মৃত ব্যক্তিকে বখশে দেওয়া। এটি ইসলামের নামে একটি বিদ‘আতী প্রথা মাত্র।[1] কুরআন খতম একটি দৈহিক ইবাদত। যার নেকী পাঠক পাবেন, মৃত ব্যক্তি নন। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, সে তার নিজের জন্যই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি অসৎকর্ম করে তার প্রতিফল তার উপরেই বর্তাবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৪৬)

(৩০৮/৩৫) পৃ. ১১৫ কবর যিয়ারতের সুন্নত পদ্ধতি ...বিশেষ করে শুক্রবার কবর যিয়ারত করা খুবই উত্তম কাজ। রাসূলুল্লাহ (r) ইরশাদ করেন,مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فِي كُلِّ جُمُعَةٍ غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَرًّا- (যে প্রত্যেক জুমুয়ার দিন তার পিতা-মাতা অথবা তাদের যে কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে তাকে ক্ষমা করা হবে এবং সে সদাচরণকারী সন্তান হিসাবে তালিকাভুক্ত হবে)।

মন্তব্য : হাদীছটি জাল (বায়হাক্বী হা/৭৫২২, ১০/২৯৭; মিশকাত হা/১৭৬৮; যঈফাহ হা/৪৯)। বরং বছরের যে কোন দিন যে কোন সময় আত্মীয়-স্বজনের কবর যিয়ারত করা যায়।

(৩০৯/৩৬) পৃ. ১১৫ কবরস্থানে গিয়ে প্রথমে নিম্নের দোআটি পড়ে মৃতদের উদ্দেশ্যে সালাম করতে হয় :اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ...يَرْحَمُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ. ‘হে কবরস্থিত মুমিন মুসলমান ব্যক্তিগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ...আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের প্রতি রহম করুন।

মন্তব্য : হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/১০৫৩; যঈফুল জামে‘ হা/৩৩৭২; মিশকাত হা/১৭৬৫)। আর শেষাংশটি কবর যিয়ারতের দো‘আ হিসাবে বইয়ে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ হ’ল,

اَلسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَيَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَآءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ-

‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি’।[2] এছাড়া আরও কয়েকটি দো‘আ আছে।[3]

(৩১০/৩৭) পৃ. ১১৮ সালাতুল আওয়াবীন মাগরিবের ফরয ও সুন্নত সালাতের পর দু’রাকাত করে ছয় রাকাত সালাতকে সালাতুল আউয়াবিন বলে। সালাতুল আউয়াবিন আদায়ের ফযিলত সম্পর্কে আল্লাহর হাবিব (r) বলেন- مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيمَا بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً অর্থ : যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত সালাত পড়বে এবং এর মাঝে কোন খারাপ কথা বলবে না তার এই সালাতে ১২ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব হবে।

মন্তব্য : পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত হাদীছটি নিতান্তই যঈফ (ضعيف جدّا)। একই হাদীছের শেষে রয়েছে ২০ রাক‘আতের কথা। সবই যঈফ।[4] এছাড়া মাগরিব হ’তে এশার মধ্যে পঠিত নফল ছালাত সমূহকে ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলার হাদীছটিও যঈফ।[5] বরং ছালাতুয যোহা বা চাশতের ছালাতকে রাসূল (ছাঃ) ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বলেছেন’।[6] কিন্তু সেখানে এইসব ফযীলতের কথা নেই।

(৩১১/৩৮) পৃ. ১২৩  ইফতারের পরিচয় ও মর্যাদা ইফতারের সময় এই দোআ পড়া সুন্নত- اَللَّهُمَّ لَكَ صَمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার জন্য সাওম পালন করছি এবং আপনার দেওয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করছি। 

মন্তব্য : হাদীছটি ‘মুরসাল ও যঈফ’ (আলবানী, তারাজু‘আত হা/৩৫)। বরং ইফতারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলাই যথেষ্ট (মুসলিম হা/২৭৩৪; মিশকাত হা/৪২০০) এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও সেই সাথে ‘যাহাবায যামাউ...বলবে।[7]

(৩১২/৩৯) পৃ. ১২৫ তারাবিহ সালাতের রাকাতের সংখ্যা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (t)-এর খেলাফত কালেই সবাই রমযান মাসে প্রতি রাতে ২০ রাকাত করে তারাবিহ সালাত আদায় করতেন। তারাবিহ সালাত ২০ রাকাত। এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা বা সম্মিলিত মত এটাই। এর বাইরে কিছু করার অবকাশ নেই।

মন্তব্য : এটি স্রেফ মাযহাবী গোঁড়ামী। উপরোক্ত দাবীর কোনই ভিত্তি নেই।                                      

(৩১৩/৪০) পৃ. ১২৫ তবে...রসুলুল্লাহ (সা.) রাতে ৮ রাকাত নফল সালাত আদায় করতেন। এ আট রাকাত ছিল রাতের নফল বা তাহাজ্জুদ। যা তিনি রমযান ব্যতীত অন্য মাসেও আদায় করতেন। সর্বপ্রথম যখন উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর মাধ্যমে মসজিদে নববিতে তারাবিহ জামাতের সাথে আদায় শুরু হয়, তখন ২০ রাকাত আদায় করা হয়। এজন্য ২০ রাকাত তারাবিহ সুন্নত।

মন্তব্য : আয়েশা (রাঃ) বলেন, রামাযান বা রামাযানের বাইরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাত্রির ছালাত এগার রাক‘আতের বেশী আদায় করেননি। তিনি প্রথমে (২+২)[8] চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিন রাক‘আত পড়েন।[9] আর ‘খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হযরত উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম দারী (রাঃ)-কে রামাযানের রাত্রিতে ১১ রাক‘আত ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন’।[10]

বিশ রাক‘আত তারাবীহ : প্রকাশ থাকে যে, উক্ত রেওয়ায়াতের পরে ইয়াযীদ বিন রূমান থেকে ‘ওমরের যামানায় ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়া হ’ত’ বলে যে বর্ণনা এসেছে (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৮০), তা ‘যঈফ’ এবং ২০ রাক‘আত সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে ‘মরফূ’ সূত্রে যে বর্ণনা এসেছে, তা ‘মওযূ’ বা জাল।[11] এতদ্ব্যতীত ২০ রাক‘আত তারাবীহ সম্পর্কে কয়েকটি ‘আছার’ এসেছে, যার সবগুলিই ‘যঈফ’।[12] ২০ রাক‘আত তারাবীহর উপরে ওমরের যামানায় ছাহাবীগণের মধ্যে ‘ইজমা’ বা ঐক্যমত হয়েছে বলে যে দাবী করা হয়, তা একেবারেই ভিত্তিহীন ও বাতিল কথা(بَاطِلَةٌ جِدًّا) মাত্র।[13] তিরমিযীর ভাষ্যকার খ্যাতনামা ভারতীয় হানাফী মনীষী দারুল উলূম দেউবন্দ-এর মুহতামিম (অধ্যক্ষ) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (১২৯২-১৩৫২/১৮৭৫-১৯৩৩ খৃ.) বলেন, একথা না মেনে উপায় নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তারাবীহ ৮ রাক‘আত ছিল।[14]

(৩১৪/৪১) পৃ. ১২৫ ...প্রতি দুই রাকাত পরপর অন্তত একবার নিচের দরুদ শরিফ পড়া উত্তম।اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيْعِنَا وَمَوْلاَنَا مُحَمَّدٍ অতঃপর চার রাকাত অন্তর বসে তিনবার নিম্নের দোআ পড়তে হয়- سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَ الْمَلَكُوْتِ... শেষ পর্যন্ত। অতঃপর এ সময় মুনাজাত করা উত্তম।...তবে ২০ রাকাত শেষ করেও একবার মুনাজাত করা যেতে পারে।

মন্তব্য : এ ধরনের দো‘আ এবং এভাবে পড়ার রীতি রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হয়নি। চার রাক‘আত শেষে অথবা তারাবীহ শেষে মুনাজাত করার কোন নিয়ম নেই।

(৩১৫/৪২) পৃ. ১৩০ শবে বরাতের সাওম

শাবান চাঁদের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত। এই রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা ও সাওম পালন করা সুন্নত। এ মর্মে হজরত আলী (t) বলেন,إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا، وَصُومُوا نَهَارَهَا- যখন শাবান চাঁদের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত আসে তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে সাওম পালন কর।...সুতরাং সকল মুমিন মুসলমানের উচিত, পবিত্র শবে বরাতের সাওম পালন করে ও বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি হাসিল করা।

মন্তব্য : পাঠ্যবইয়ে উল্লেখিত হাদীছটি ‘জাল’।[15] বরং শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল, এ মাসের অধিকাংশ দিন ছিয়াম পালন করা। যেমন রাসূল (ছাঃ) শা‘বানের অধিকাংশ দিন ছিয়াম রাখতেন’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২০৩৬)

(৩১৬/৪৩) পৃ. ১৫৫ শিক্ষকের প্রতি আদব ৬. শিক্ষক সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আদবের সাথে পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকা।

মন্তব্য : ইসলামী শরী‘আতে কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো বা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা নাজায়েয। এটি একটি জাহেলী প্রথা, যা বর্জন করা আবশ্যক। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ছাহাবায়ে কেরামের নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলেন না। অথচ তারা কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখে দাঁড়াতেন না (তিরমিযী হা/২৭৫৪; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৬৯৮)। 

(৩১৭/৪৪) পৃ. ১৫৫  হযরত আলী (t) বলেন,مَنْ عَلَّمَنِي حَرْفًا فَقَدْ صَيَّرَنِي عَبْدًا (যে আমাকে একটি হরফ শিক্ষা দিল সে আমাকে দাসে পরিণত করল)।

মন্তব্য : আলী (রাঃ)-এর উক্তি হিসাবে উক্ত বর্ণনাটি প্রমাণিত নয়। কেউ কেউ বলে থাকেন যে, উক্তিটি হোসায়েন (রাঃ)-এর। মূলতঃ এটি বিগত কোন বিদ্বানের প্রবাদ বাক্য।

(৩১৮/৪৫) পৃ. ১৭০ দোআ ও মুনাজাত

হাদিসের আলোকে দোআ রাসূলে করিম (r) ইরশাদ করেন- الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ   দোআ ইবাদতের মগজ স্বরূপ।

মন্তব্য : হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/৩৩৭১; মিশকাত হা/২২৩১; যঈফুল জামে‘ হা/৩০০৩)

(৩১৯/৪৬) পৃ. ১৭০مَنْ فُتِحَ لَهُ بَابُ الدُّعَاءِ، فُتِحَتْ لَهُ أبْوَابُ الرَّحْمَةِ অর্থ : যার জন্য দেআর দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য : এ হাদীছটিও যঈফ (তিরমিযী হা/৩৫৪৮; মিশকাত হা/২২৩৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৭২০)

পাঠ্যপুস্তকে ‘বিবর্তনবাদ’

(৩২০/৪৭) নবম-দশম শ্রেণীর ‘জীববিজ্ঞান’ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘বিবর্তনের বিপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। জীবজগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যতই সমৃদ্ধ হচ্ছে, বিবর্তনকে অস্বীকার করা ততই অসম্ভব হয়ে পড়ছে’ (২৭৬ পৃ.)

(৩২১/৪৮) নবম-দশম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান’ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘জীবজগতের যে পরিবর্তন বা বিবর্তন ঘটেছে, তার স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণ আছে’ (১০২ পৃ.)। ‘পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীকে নিয়ে একবার একটা জরিপ নেওয়া হয়েছিল, জরিপের বিষয়বস্ত্ত ছিল পৃথিবীর নানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ কোনটি। বিজ্ঞানীরা রায় দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ তত্ত্ব হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব’ (১১২ পৃ.)

(৩২২/৪৯) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ‘জীববিজ্ঞান’ বইয়ের ২৮৭ পৃষ্ঠা থেকে বিবর্তনবাদের পাঠ শুরুই হয়েছে এভাবে- ‘জীব জগতে যে বিবর্তন ঘটেছে, এ প্রত্যয় জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে জন্মেছে বহু বছর আগেই’। ‘মানুষের পূর্বপুরুষের লেজ ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে কক্কিক্স-এ রূপান্তরিত হয়েছে’। ‘বিবর্তনের ক্ষেত্রে ডারউইনের মতবাদ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী ও সাড়া জাগানো অবদান’। ‘বিবর্তনের স্বপক্ষে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো একত্র করলে কারও পক্ষে এর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি তৈরি বা উত্থাপন করা সম্ভব হবে না’।

এভাবে নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মনে এইরূপ বদ্ধমূল ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে, মানব জাতিসহ সমগ্র প্রাণী জগত ও সমগ্র মহাবিশে^র অবয়ব বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বর্তমান অবস্থায় এসেছে। সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই।

বিবর্তনবাদের শিক্ষা মতে, মহান আল্লাহর ধারণা ভিত্তিহীন। তারা প্রচলিত কোন ধর্মকেই স্বীকার করে না। বরং ধর্মকে তারা উল্লেখ করেছে ‘নিরক্ষর সমাজের সরল মানুষের চিন্তা-চেতনার ফসল’ হিসাবে।

(৩২৩/৫০) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ‘সমাজ বিজ্ঞান’ বইয়ে ২৫১ থেকে ২৫৬ পৃষ্ঠায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ধর্মের ধারণা শিক্ষা দিতে সম্পূর্ণ পাঠটাই বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। ধর্মের ধারণা শিক্ষাদানের এই ৬ পৃষ্ঠার পাঠে এক লাইনও ইসলামের আলোকে ধর্মের ব্যাখ্যামূলক কোন কথা রাখা হয়নি।

বিবর্তনবাদের এই শিক্ষা স্পষ্টতঃই কুফরী শিক্ষা। বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না। এই শিক্ষা অব্যাহত থাকলে কয়েক প্রজন্ম পর পুরো জাতির মধ্যে নাস্তিক্যবাদ ছড়িয়ে পড়বে। এটা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জাতির চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস থেকে ঈমান হরণের এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র।

ইসলাম বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের বিরোধী নয়। বরং মানব কল্যাণে জ্ঞানের চর্চা, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। কিন্তু বির্বতনবাদ শিক্ষা বিজ্ঞান চর্চার নামে ইসলামকে উৎখাতের এক পুঁজিবাদী মহাপ্রকল্প। এতে করে সমাজ ও ব্যক্তিজীবন থেকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ উঠে যেতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিবাহ উঠে যাবে। বিবাহের সকল দায়বদ্ধতা ছাড়াই নারী-পুরুষ লিভ টুগেদারে আগ্রহী হবে। জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। মদ-জুয়ার বিধি-নিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা নিয়ে আন্দোলন হবে। মানবতাবোধ হারিয়ে যাবে এবং ভোগবাদে মানুষ ডুবে যবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও পরকাল নিয়ে কটূক্তি এবং আলেম-ওলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনীকে ছুঁড়ে ফেলেছে। যে কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে বিবর্তন শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আমাদের দেশে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে ‘বিবর্তন’ শিক্ষা ছিল না। ২০১৩ সালে একযোগে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের পাঠ্যবইয়ে বিবর্তন পাঠ যুক্ত করা হয়। দৃশ্যতঃই বুঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী ও পুঁজিবাদীদের চাপ ও প্ররোচনাতেই এটা করা হয়েছে। সংবিধান মতেও মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ঈমান-আক্বীদা বিরোধী মতবাদ শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই।

 [উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : লেখক প্রণীত ও হা.ফা.বা. প্রকাশিত ‘এক্সিডেন্ট’ ও ‘বিবর্তনবাদ’ বই]

হাইস্কুল ও মাদ্রাসার নবম ও দশম শ্রেণি

পদার্থ বিজ্ঞান

প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর, ২০১২

পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ : সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ

পৃ. ১১৩-১১৪ চতুর্থ অধ্যায় কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি 

4.5 শক্তির নিত্যতা ও রূপান্তর

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি অবিনশ্বর। এর কোনো ক্ষয় নেই, এটি শুধু একটি রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয়।...আমাদের পরিচিত সব শক্তিই এক রূপ থেকে অন্য রূপে যেতে পারে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি সেটি সৃষ্টিও হয়না ধ্বংসও হয়না। শুধু তার রূপ পরিবর্তন করে। এটাই হচ্ছে শক্তির নিত্যতার সূত্র।

মন্তব্য : এটি সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী কথা। আল্লাহ ছাড়া সবকিছুই ধংস হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ، ‘প্রত্যেক বস্ত্তই ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৮)। তিনি আরও বলেন,كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ- وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ- ‘ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংসশীল’ (২৬)। ‘কেবল অবশিষ্ট থাকবে তোমার প্রতিপালকের চেহারা। যিনি মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী’ (রহমান ৫৫/২৬-২৭)। শক্তি সৃষ্টি ও তার কমবেশী করার ক্ষমতা স্রেফ আল্লাহর হাতে। যেমন তিনি বলেন,اَللهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَّشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ- ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়। অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তি দান করেন। অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনিই সর্ব ও সর্বশক্তিমান’ (রূম ৩০/৫৪)। কাজও সৃষ্টি করেন তিনি। যেমন আল্লাহ বলেন,وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ- ‘আল্লাহ তোমাদেরকে এবং যা কিছু তোমরা কর সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন’ (ছ-ফফা-ত ৩৭/৯৬)। বরং এটাই শাশ্বত সত্য যে, কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা হ’লেন আল্লাহ। তিনি বলেন,اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَّكِيلٌ-  ‘আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক’ (যুমার ৩৯/৬২)

পরিশেষে আমরা সরকারের কাছে তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করতে চাই। (১) ঈমান-আক্বীদা ও সমাজিক শৃঙ্খলাবিরোধী ডারউনের কুফরী ‘বিবর্তনবাদ’ পাঠ্যপুস্তক থেকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। (২) এই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। (৩) শিক্ষার সর্বস্তরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন।

আল্লাহ আমাদের সন্তানদের পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে গড়ে তোলার তাওফীক দান করুন -আমীন!

\ সমাপ্ত \


[1]. দ্র. হা.ফা.বা. প্রকাশিত কোরআন ও কলেমাখানী ৬ পৃ.।

[2]. মুসলিম হা/৯৭৪; মিশকাত হা/১৭৬৭।

[3]. মুসলিম হা/২৪৯, মিশকাত হা/২৯৮; মুসলিম হা/৯৭৪, মিশকাত হা/১৭৬৬; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৫৪ পৃ.।

[4]. তিরমিযী হা/৪৩৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৭৬; মিশকাত হা/১১৭৩; যঈফাহ হা/৪৬৯। 

[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬১৭। 

[6]. মুসলিম হা/৭৪৮; মিশকাত হা/১৩১২; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৬১ পৃ.।  

[7]. দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৮৬ পৃ.। 

[8]. বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৩৮ প্রভৃতি; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৭৪ পৃ.।

[9]. বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৮৮ প্রভৃতি; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৭৪ পৃ.।

[10]. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৭৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৩০২ ‘রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ।

[11]. আলবানী, হাশিয়া মিশকাত হা/১৩০২, ১/৪০৮ পৃ.; ইরওয়া হা/৪৪৬, ৪৪৫, ২/১৯৩, ১৯১ পৃ.।

[12]. মির‘আত হা/১৩১০ -এর আলোচনা দ্র’ব্য, ৪/৩২৯-৩৫ পৃ.; ইরওয়া হা/৪৪৬-এর আলোচনা দ্র. ২/১৯৩ পৃ.।

[13]. তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৮০৩-এর আলোচনা দ্র. ৩/৫৩১ পৃ.; মির‘আত ৪/৩৩৫।

[14]. كَانَتْ ثَمَانِيَةَ رَكْعَاتٍ)  r(وَلاَ مَنَاصَ مِنْ تَسْلِيْمٍ أَنَّ تَرَاوِيْحَهُ আল-‘আরফুশ শাযী শরহ তিরমিযী হা/৮০৬-এর আলোচনা, দ্র. ২/২০৮ পৃ.; মির‘আত ৪/৩২১।

[15]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৮; মিশকাত হা/১৩০৮; যঈফাহ হা/২১৩২।





বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য (পূর্বে প্রকাশিতের পর) - ইহসান ইলাহী যহীর
ইবাদতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইসলামের আলোকে সম্পদ বৃদ্ধির উপায় - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আত-তাহরীকের সাহিত্যিক মান - প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
মানবাধিকার ও ইসলাম (১৩তম কিস্তি) - শামসুল আলম
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
ব্রেলভীদের কতিপয় আক্বীদা-বিশ্বাস - মুহাম্মাদ নূর আব্দুল্লাহ হাবীব
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.