গোপন ইবাদত : গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ভূমিকা :

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। পার্থিব জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করাই মানবজীবনের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটাই দুনিয়া-আখেরাতে মুক্তি ও শান্তি লাভের অনন্য উপায়। বান্দা যখন আল্লাহর নৈকট্য লাভে সমর্থ হয়, তখন তার নাজাতের পথ সুগম হয়। আর আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের বড় মাধ্যম হ’ল- গোপন ইবাদত। যার আমলনামায় গোপন ইবাদতের পরিমাণ বেশী থাকে, আল্লাহর রেযামন্দি ও জান্নাত লাভে সে তত বেশী অগ্রগামী হয়। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন কিছু গোপন আমল থাকা উচিত, যে আমলের ব্যাপারে পৃথিবীর কোন মানুষ জানতে পারবে না; জানবেন কেবল আল্লাহ রাববুল আলামীন।

গোপন ইবাদতের পরিচয় :

ইবাদত (العبادة) শব্দের অর্থ হ’ল- দাসত্ব, উপাসনা, বন্দেগী, গোলামী। আল্লাহর ইবাদত করার অর্থ হ’ল- আল্লাহর দাসত্ব করা, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, চূড়ান্ত বিনয়ের সাথে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিনম্র হয়ে তাঁর সামনে নিজেকে তুচ্ছ করে উপস্থাপন করা, আল্লাহর নির্দেশিত ও রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য তালাশ করা ইত্যাদি। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, العبادة هي اسم جامع لكلّ ما يحبّه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الظاهرة والباطنة، ‘ইবাদত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। আল্লাহ পসন্দ করেন ও সন্তুষ্ট হন- এমন সব প্রকাশ্য ও গোপনীয় কথা ও কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত’।[1] এই সংজ্ঞার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ইবাদত দুই রকম হ’তে পারে: প্রকাশ্য ও গোপনীয়।

যে ইবাদত সম্পাদনকালে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়, সেটা প্রকাশ্য ইবাদত। আর যেটা নির্জনে সবার অগোচরে আদায় করা হয়, সেটা গোপন ইবাদত। গোপন ইবাদতের সংজ্ঞা দিয়ে ড. বদর আব্দুল হামীদ হামীসাহ বলেন, عبادة السر هي العبادة التي تكون خالصة لله تعالى وحده، بعيدة كل البعد عن الرياء والسمعة، ‘গোপন ইবাদত হচ্ছে সেই ইবাদত, যা একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা হয় এবং শ্রুতি ও লৌকিকতা থেকে দূরে থেকে অন্যসব বান্দার অন্তরালে গিয়ে আদায় করা হয়’।[2]

ড. আব্দুর রহমান আল-‘আক্বল বলেন, ‘নেক আমল সমূহের মাঝে গোপন ইবাদত কেবল বান্দা ও তাঁর রবের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে। আর এধরনের ইবাদতের মর্যাদা সুমহান। কারণ এতে আল্লাহর প্রতি বান্দার একনিষ্ঠতা ও সততা ফুটে উঠে। বান্দা রিয়া, শ্রুতি ও খ্যাতি লাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে দূরে থাকতে পারে’।[3]

জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) বলেন,مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ تَكُونَ لَهُ خَبِيئَةٌ مِنْ عَمَلٍ صَالِحٍ، فَلْيَفْعَلْ، ‘কেউ যদি কোন গোপন নেক আমল করতে সক্ষম হয়, তবে সে যেন তা করে’।[4] ইবনে দাঊদ আল-খুরাইবী (রহঃ) বলেন,‌كَانُوا ‌يستحبون ‌أَن ‌يَكُون ‌للرجل ‌خبيئة من عمل صَالِح لا تعلم بِهِ زوجته، ولا غيرها، ‘সালাফগণ প্রত্যেকে চাইতেন যে, তার যেন এমন কোন গোপন নেক আমল থাকে, যে সম্পর্কে না জানবে তার স্ত্রী, না অন্য কেউ’।[5]

আক্বীল ইবনে মা‘ক্বিল বলেন, আমি আমার চাচা ওয়াহ্হাব ইবনে মুনাবিবহ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘হে বৎস! গোপনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত কর। তাহ’লে আল্লাহ প্রকাশ্যে তোমার কর্মকে সত্যে পরিণত করবেন। কারণ যে গোপনে নেক আমল করে এবং সেই নেক আমল তার এবং আল্লাহর মাঝে থাকে, তাহ’লে সে পন্থা গ্রহণ করতে পেরেছে এবং গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছে। আর যে ব্যক্তি তার নেক আমল গোপন করে, যে আমলের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, তবে তার আমল সম্পর্কে তিনিই জেনেছেন- যিনি জানলে যথেষ্ট, যাঁর কাছে তার আমল সংরক্ষিত থাকবে এবং যিনি তার প্রতিদান বিনষ্ট করবেন না। আল্লাহর জন্য কৃত গোপন নেক আমল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না’।[6] শুমাইত্ব ইবনে আজলান (রহঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَسَمَ الدُّنْيَا بِالْوَحْشَةِ، لِيَكُونَ أُنْسَ الْمُطِيعِينَ بِهِ، ‘মহান আল্লাহ দুনিয়ার সাথে নির্জনতাকে যুক্ত করে দিয়েছেন, যাতে অনুগত বান্দারা নির্জনতায় তাঁর সান্নিধ্য গ্রহণ করতে পারে’।[7]

আমরা কোন ইবাদত গোপনে করব?

গোপন ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার আগে এটা জানা যরূরী যে, কোন ইবাদত গোপনে করা শরী‘আত সম্মত এবং কোন ইবাদত প্রকাশ্যে করাই শরী‘আতের বিধান। এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে যে কেউ গোপন ইবাদতের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করতে পারে। গোপন ইবাদতের মূলনীতি হ’ল- ঐচ্ছিক, নফল, সুন্নাত, মুস্তাহাব প্রভৃতি আমলগুলো গোপনে করা। তবে ফরয ও ওয়াজিব আমল প্রকাশ্যে করতে হবে। অনুরূপভাবে যে ইবাদতগুলো ইসলামের শি‘আর বা নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত সেগুলো প্রকাশ্যে আদায় করাই শরী‘আতের নির্দেশ।

ইবনুল আরাবী (রহঃ) বলেন,‌الْأَصْلُ ‌فِي ‌الْأَعْمَالِ ‌الْفَرْضِيَّةِ ‌الْجَهْرُ، وَالْأَصْلُ فِي الْأَعْمَالِ النَّفْلِيَّةِ السِّرُّ، ‘আমল সম্পাদনের মূলনীতি হ’ল ফরয আমল সমূহ প্রকাশ্যে সম্পাদিত হবে। আর নফল আমল গোপনীয় হবে’।[8] যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত জামা‘আতে প্রকাশ্যে আদায় করতে হবে এবং নফল ছালাতসমূহ গোপনে আদায় করা উত্তম হবে। অনুরূপভাবে যাকাত প্রকাশ্যে আদায় করা হবে এবং নফল দান-ছাদাক্বাহ গোপনে আদায় করা উত্তম হবে। কারণ কেউ যদি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় না করে এবং বায়তুল মালে যাকাত প্রদান না করে; তবে তাকে ছালাত পরিত্যাগকারী ও যাকাত অনাদায়কারী মনে করা হ’তে পারে এবং তাকে ফাসেক বা পাপিষ্ঠ ভাবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে আমল গোপন করাই উত্তম এবং এর ফযীলতও অনেক বেশী। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‌صَلَاةُ ‌الرَّجُلِ ‌تَطَوُّعًا ‌حَيْثُ ‌لَا ‌يَرَاهُ ‌النَّاسُ ‌تَعْدِلُ ‌صَلَاتَهُ ‌عَلَى ‌أَعْيُنِ ‌النَّاسِ ‌خَمْسًا ‌وَعِشْرِينَ، ‘কোন ব্যক্তি যদি এমনভাবে নফল ছালাত আদায় করে যে, সেটা মানুষ দেখতে পায়নি, তবে তার সেই ছালাত মানুষের সামনে পাঁচিশবার আদায় করার মতো মর্যাদাপূর্ণ’।[9]

অন্যত্র তিনি (ছাঃ) বলেছেন,صَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ صَلاَةِ الـمَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلَّا الصَّلاَةَ الـمَكْتُوبَةَ، ‘হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে (নফল) ছালাত আদায় কর। কেননা মানুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম ছালাত হ’ল যা সে তার ঘরে আদায় করে, তবে ফরয ছালাত ব্যতীত’।[10] অত্র হাদীছের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেসব নফল ও সুন্নাত ছালাত বাড়িতে আদায় করতে বলেছেন, যেগুলো আদায়ের জন্য জামা‘আতে যোগদান করা বা মসজিদে যাওয়া শর্ত নয়। যেমন তাহাজ্জুদের ছালাত, চাশতের ছালাত ইত্যাদি। কিন্তু যে ছালাতগুলো ইসলামের শি‘আর বা নিদর্শন, সেগুলো প্রাকশ্যে আদায় করাই বিধেয়। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত, ঈদায়েনের ছালাত, ছালাতুল কুসূফ ও ইস্তিসক্বার ছালাত প্রভৃতি।[11]

এই মাসআলার ক্ষেত্রে কুরআনের একটি আয়াত প্রাসঙ্গিক। যেমন- আল্লাহ বলেন,إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ‌وَإِنْ ‌تُخْفُوهَا ‌وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيْرٌ- ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান কর, তবে তোমাদের জন্য সেটা আরো উত্তম। (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দিবেন। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭১)

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, ‘অত্র আয়াত নাযিল হয়েছে নফল ছাদাক্বাহর ব্যাপারে। কেননা নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে আমল প্রকাশ করার চেয়ে গোপন করার ফযীলত বেশী। এটা শুধু দান-ছাদাক্বার ক্ষেত্রে নয়; বরং অন্যান্য নফল ইবাদতের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। কারণ গোপনে যে ইবাদত করা হয় সেটা রিয়া মুক্ত ও খুলূছিয়াতপূর্ণ হয়ে থাকে। তবে ফরয ইবাদতের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়; বরং সেটা প্রকাশ্যে আদায় করাই উত্তম’।[12] হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘তবে প্রকাশ্যে আমল করার মধ্যে যদি অধিক কল্যাণ ও উপকারের সম্ভাবনা থাকে এবং মানুষের উপকৃত হওয়ার ব্যাপরটি নিশ্চিত থাকে, তাহ’লে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমল প্রকাশ্যে করাই উত্তম হবে’।[13] যেমন কেউ যদি গোপনে আল্লাহর পথে দান করে, তবে সেটা উৎকৃষ্ট ইবাদত। কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে প্রকাশ্যে দান করলে তার দেখাদেখি আরো মানুষ দানে উৎসাহিত হ’তে পারে, তবে সেই ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দান করাই উত্তম। অর্থাৎ কখনো নফল ইবাদত প্রকাশ্যে করাও উত্তম হ’তে পারে।

যেমন ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন,أن في إسرار الأعمال فائدة لإخلاص والنجاة من الرياء، وفي الإظهار فائدة الاقتداء، وترغيب الناس في الخير. ومن ‌الأعمال ‌ما ‌لا ‌يمكن ‌الإسرار ‌به ‌كالحج ‌والجهاد. والمظهر للعمل ينبغي أن يراقب قلبه، حتى لا يكون فيه حب الرياء الخفي، بل ينوي الاقتداء به، ولا ينبغي للضعيف أن يخدع نفسه بذلك، ‘আমল গোপন করার মাধ্যমে ইখলাছ ও রিয়া থেকে মুক্তি লাভের উপকার পাওয়া যায়। অপরদিকে প্রকাশ্য আমলেরও ফায়েদা হ’ল- তা অনুসরণ করা হয় এবং মানুষ সৎকাজে উৎসাহিত হয়। কিন্তু এমন কিছু আমল আছে, যেগুলো গোপন করা সম্ভব নয়। যেমন- হজ্জ ও জিহাদ। তবে প্রকাশ্যে আমলকারীকে নিজের মনের নিয়ন্ত্রণে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে লৌকিকতা বা প্রদর্শনেচ্ছা মনে জাগ্রত না হয়। বরং উক্ত প্রকাশ্য আমলের মাধ্যমে তিনি (শরী‘আতের নির্দেশ) অনুসরণের নিয়ত করবেন। সেজন্য দুর্বলমনা লোকদের প্রকাশ্য আমলের মাধ্যমে নিজেকে ধোঁকায় ফেলা মোটেও উচিত নয়’।[14] অর্থাৎ যারা দুর্বল ঈমানের অধিকারী তাদের জন্য নফল ইবাদত গোপনে করাই উত্তম।

ওলামায়ে কেরাম বিষয়টিকে স্পষ্ট করে বুঝানোর জন্য বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন- আমল প্রকাশ্য ও গোপন করার বেশ কিছু অবস্থা আছে, এই অবস্থা অনুযায়ী ইবাদতকারীকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবস্থাগুলো সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত হ’ল।-[15]

১ম অবস্থা : সুন্নাত ও নফল আমল গোপনে করা সম্ভব হ’লে গোপনে করবে এবং এটাই উত্তম। যেমন- তাহাজ্জুদ ছালাত, চাশতের ছালাত, দান করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, যিক্র করা, আল্লাহর কাছে দো‘আ করা, তওবা-ইস্তিগফার, কারো ঋণ পরিশোধ করা, নফল ছিয়াম পালন করা, অন্তরে আল্লাহভীতি বজায় রাখা, মন থেকে হিংসা-অহংকার দূর করা ইত্যাদি।

২য় অবস্থা : শারঈ বিধান অনুযায়ী যে আমল প্রকাশ্যে করার কথা, তবে সেটা প্রকাশ্যেই করতে হবে। যেমন- জুম‘আর ছালাত, মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের জন্য জামা‘আতে হাযির থাকা, জিহাদে অংশগ্রহণ করা, হজ্জ করা, তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা, জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করা, ঈদের ছালাতে হাযির হওয়া, ঈদায়েনের তাকবীর পাঠ করা, চাঁদ দেখে রামাযানের ছিয়াম রাখা ও ছাড়া, কুরবানী করা, ইলমি মসলিসে উপস্থিত হওয়া, দাওয়াতী কাজ করা, সত্য কথা জোরে-শোরে বলা, ছালাতের জন্য আযান ও ইক্বামত দেওয়া, শিক্ষা দেওয়ার জন্য তেলাওয়াত করা, মানুষের মাঝে দ্বীনী জ্ঞান বিতরণ করা প্রভৃতি। ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রহঃ) বলেন, اهْرَبُوا ‌مِنَ ‌النَّاسِ ‌كَهَرَبِكُمْ مِنَ السَّبْعِ الضَّارِي، وَلا تَخَلَّفُوا عَنِ الْجُمُعَةِ، وَالْجَمَاعَةِ، ‘হিংস্র পশু থেকে যেভাবে পালাও, একইভাবে মানুষের কাছ থেকে পালিয়ে যাও। তবে জুম‘আ ও জামা‘আতে ছালাত আদায় করা থেকে পিছনে থেকো না’।[16]

৩য় অবস্থা : আমলটি প্রকাশ্যে করা যায়, আবার গোপনেও করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রকাশ্যে করতে যার অন্তরে রিয়া বা লোক দেখানোর ভাব জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, তার জন্য আমলটি গোপনে করা সুন্নাত হবে। আর যে মনে করবে আমলটি প্রকাশ করলে অন্য লোকেরা তার অনুকরণ করে শিখবে, তাকে দেখে সেই আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে বা আমলের পদ্ধতি জানবে, তবে তার জন্য সেই আমলটি প্রকাশ্যে করা সুন্নাত হবে। যেমন কোন আলেম জনসম্মুখে নফল ছালাত আদায় করল বা তেলাওয়াতের সেজদা দিল- এতে উপস্থিত আম জনতা নফল ছালাতের পদ্ধতি, রাক‘আত সংখ্যা, বিধান সম্পর্কে জানতে পারল। অনুরূপভাবে কেউ একজন কোন মহতী কাজে দান করল, ফলে তার দেখাদেখি আরো অনেক মানুষ দান করল। এরকম আরো অনেক আমল আছে, যা অবস্থা ও নিয়ত ভেদে প্রকাশ্যে করা যায়। তবে যাদের ঈমান দুর্বল তাদের এই সুযোগ গ্রহণ না করাই উত্তম।

গোপন ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আল্লাহর রেযামন্দি হাছিলে গোপন ইবাদত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। কেননা যারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা, কেবল তারাই গোপন নেকআমলে আত্মনিয়োগ করতে পারে। নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া অবশ্যক। আর এই আবশ্যকীয় কাজটি তখনই করা সহজ হয়, যখন এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জিত হয়। নিমেণ গোপন ইবাদতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হ’ল।-

(১) একনিষ্ঠ ঈমানের পরিচায়ক :

বান্দা যখন দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করবে- তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবধরণের কর্মকান্ড ও নড়াচড়া আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করছেন, তখন তার বাহ্যিক ইবাদতের ন্যায় গোপন আমলগুলোও সুনিপুণ হবে। কারণ এমনটা কখনো হয় না যে, কোন বান্দা গোপন ইবাদতে খুবই সক্রিয় থাকে; কিন্তু প্রকাশ্য ইবাদত-বন্দেগীতে গাফেলতি ও অলসতা করে। সাধারণত কারো ক্ষেত্রে এরকম হওয়া অসম্ভব। আর মুনাফিক্বরা যেখানে প্রকাশ্য ও ফরয ইবাদতেই অলসতা করে, সেখানে তাদের জন্য গোপন ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা তো আকাশ কুসুম কল্পনা। সেজন্য একনিষ্ঠ ঈমানের একটি বড় আলামত হ’ল গোপন ইবাদত করতে পারা। বান্দার গোপন নেক আমল যখন বেড়ে যায়, তখন তিনি ঈমানের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হ’তে পারেন। আর ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে- ইহ্সান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,الإِحْسَانُ أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ، ‘ইহসান হচ্ছে তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ; যদি তাকে দেখতে না পাও তবে বিশ^াস রাখবে- তিনি তোমাকে দেখছেন’।[17] এই অনুভূতি নিয়ে আল্লাহর আনুগত্য করা যেমন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইবাদত, ঠিক তেমনি গোপনে তাঁর অবাধ্যতা ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাও অনেক উঁচু দরের ইবাদত।

এজন্য ছাহবায়ে কেরাম গোপনে আল্লাহর ইবাদতে যত সক্রিয় ছিলেন, তেমনি গোপনে পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতেন। তারা গোপন ইবাদতকে ঈমান ও নেফাক্বীর মধ্যে পার্থক্যকারী মনে করতেন। অর্থাৎ তারা বিশ^াস করতেন যার মধ্যে গোপন আমল আছে তিনি প্রকৃত ঈমানদার এবং তিনি মুনাফিক্বী থেকে মুক্ত। যেমন একবার এক লোক এসে হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, إني أخشى أن أكون منافقا، ‘আমি নিজের জন্য মুনাফিক্ব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি’। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন,أتصلي إذا خلوت؟ وتستغفر إذا أذنبت؟ ‘তুমি কী নির্জনে গেলে (নফল) ছালাত আদায় কর? পাপ করে ফেললে ক্ষমা প্রার্থনা কর? লোকটা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল। তখন তিনি বললেন, اذهب فما جعلك الله منافقا، ‘যাও! আল্লাহ তোমাকে মুনাফিক্ব বানাবেন না’।[18] আব্দুল আযীয আত্ব-ত্বারীফী বলেন, ‘মানুষের যদি গোপন ইবাদতের কোন অংশ না থাকে, তবে তার ইবাদতের প্রকাশ্য দিকটা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। তাই তো অনেককে দেখা যায়, তারা প্রকাশ্যে আল্লাহর জন্য ইবাদত করে; কিন্তু তাদের গোপন ইবাদত ত্রুটিপূর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী হয়’।[19] সুতরাং গোপন আমল বান্দার খাঁটি ঈমানের পরিচয় বহন করে এবং নিফাক্বীর কদর্যতা থেকে পবিত্র হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

(২) আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন :

হৃদয় যমীনে ঈমান ও তাক্বওয়ার শিকড় যত শক্তিশালী হয়, নেক আমলের বৃক্ষ ততবেশী ফলবতী হয়। কারণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ইবাদতগুলোর ভিত্তি হ’ল হৃদয়ে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে গোপন ইবাদত যার যত সুন্দর হয়, তার বাহ্যিক আমলগুলো ততই পরিপাটি হয়। এজন্য মহান আল্লাহ গোপন ইবাদত অত্যধিক পসন্দ করেন। তিনি বান্দাকে সঙ্গোপনে দো‘আ-প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,ادْعُوا ‌رَبَّكُمْ ‌تَضَرُّعًا ‌وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ، ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাক বিনীতভাবে ও চুপে চুপে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘন কারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)। তিনি তাঁর সন্তোষভাজন নবী ও বান্দা যাকারিয়া (আঃ)-এর প্রশংসা করে বলেন, ‌إِذْ ‌نَادَى ‌رَبَّهُ ‌نِدَاءً ‌خَفِيًّا ‘যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করেছিল চুপে চুপে’ (মারয়াম ১৯/৩)। মুফাসসিরগণ বলেন, ‘যাকারিয়া (আঃ) চুপিসারে দো‘আ করেছিলেন এজন্য যে, এটা আল্লাহর কাছে অধিক পসন্দনীয়’।[20]

শুধু দো‘আ নয়, অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও আল্লাহর মুখলিছ বান্দাগণ তাদের নেক আমল গোপন করতে অনেক আগ্রহী থাকেন। তারা প্রশংসা ও সুনাম কুড়ানোর জন্য আল্লাহর দাসত্ব করেন না। তাই তারা কামনা করেন- তার ও তার রবের মধ্যকার সম্পর্কটা সবার কাছে গোপন থাকুক। আর আল্লাহও বান্দার মনের এই অনুভূতি ভালোবাসেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ، الْغَنِيَّ، الْخَفِيَّ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বান্দাকে ভালোবাসেন, যে মুত্তাকী, মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী এবং গোপনে আল্লাহর ইবাদতকারী’।[21] অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,إِنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي فِتَنٌ خَيْرُ النَّاسِ فِيهَا الْغَنِيُّ الْخَفِيُّ التَّقِيُّ، ‘আমার পরে নানাবিধ ফিৎনার আবির্ভাব হবে, তখন সেসব মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যারা সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী, নির্জনে ইবাদতকারী এবং পরহেযগার’।[22] শায়খ ইবনে উছায়মীন (রহঃ) বলেন, গোপনে ইবাদতকারী সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে যাহির করে না এবং ইবাদতের কারণে মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তি ফুটে উঠুক এটাও কামনা করে না।[23]

গোপন ইবাদত সমূহের মাঝে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আমল হ’ল রাত্রিকালীন তাহাজ্জুদ। সালাফগণ বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের আহবানকারী বা মুওয়ায্যিন হ’ল মানুষ। আর তাহাজ্জুদ ছালাতের আহবানকারী স্বয়ং রাববুল আলামীন। কেননা এসময় তিনি দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে তার বান্দাদের ডাকতে থাকেন এবং বলতে থাকেন,مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ؟ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ؟ ‘কে আছে, আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে প্রদান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’[24]

রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ العَبْدِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ الآخِرِ، فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ اللهَ فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ، ‘মহান রব শেষ রাতে তাঁর বান্দার সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হন। অতএব যারা এ সময় আল্লাহর যিকর করে, তুমি পারলে তাদের দলভুক্ত হয়ে যাও’।[25] তিনি আরো বলেন,أَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ- ‘ফরয ছালাতের পরে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ ছালাত হ’ল রাতের ছালাত’।[26] তাহাজ্জুদের এত ফযীলত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল এই ইবাদত অধিক গোপনীয়তার সাথে আদায় করা হয়। যেমন ড. ছালেহ আল-ফাওযান (হাফি.) বলেন, فالتطوع المطلق أفضله قيام الليل؛ لأنه أبلغ في الإسرار، وأقرب إلى الإخلاص، ولأنه وقت غفلة الناس، ولما فيه من إيثار الطاعة على النوم والراحة، ‘সাধারণ নফল ইবাদতের মধ্যে ক্বিয়ামুল লায়লের ফযীলত বেশী। কেননা এটা সর্বাধিক গোপনীয়, ইখলাছের অধিক নিকটবর্তী এবং এটা মানুষের গাফলতির সময় আদায় করা হয়। আর এই ইবাদতের মাধ্যমে বিশ্রাম ও ঘুমের উপরে আল্লাহর আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়’।[27] সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যমে হ’ল এই গোপন ইবাদত।

(৩) ইখলাছ অর্জন এবং রিয়া থেকে নিষ্কৃতি লাভ :

ইবাদতের নেকী বিনষ্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হ’ল রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা। সেজন্য ইবাদত যখন রিয়ামুক্ত হয়, তখন সেটা খাঁটি ও কবুলযোগ্য হয়। আর এজন্যই মহান আল্লাহ গোপন ইবাদতকে সবচেয়ে বেশী পসন্দ করেন। আল্লাহ বলেন,إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ‌وَإِنْ ‌تُخْفُوهَا ‌وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ، ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান কর, তবে তোমাদের জন্য সেটাই উত্তম। (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দিবেন। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭১)। হাফেয ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে যে, প্রকাশ্যে ছাদাক্বাহ করার চেয়ে গোপনে ছাদাক্বাহ করা অধিকতর উত্তম। কেননা গোপন আমলের মাধ্যমে রিয়া বা লৌকিকতা থেকে অধিক নিরাপদ থাকা যায়’।[28]

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,ادْعُوا ‌رَبَّكُمْ ‌تَضَرُّعًا ‌وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ، ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাক বিনীতভাবে ও চুপে চুপে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘনকারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)। অত্র আয়াতে লেŠকিকতা বা প্রদশনেচ্ছা থেকে মুক্ত থাকাতে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হয়ে এবং সংগোপনে প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।[29] মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতী (রহঃ) বলেন, إنما كان الإخفاء أفضل من الإظهار؛ لأنه أقرب إلى الإخلاص، وأبعد من الرياء، ‘ইবাদত প্রকাশ করার চেয়ে গোপন করাই উত্তম। কেননা এটা ইখলাছের অধিক নিকটবর্তী এবং রিয়া বা লেŠকিকতা থেকে অধিক দূরবর্তী’।[30] ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‌خَيْرُ ‌الْعَمَلِ ‌أَخْفَاهُ، أَمْنَعُهُ مِنَ الشَّيْطَانِ وَأَبْعَدُهُ مِنَ الرِّيَاءِ، ‘সর্বোত্তম আমল হচ্ছে গোপন আমল। এটা শয়তান থেকে সবচেয়ে বেশী নিরাপদে রাখে এবং রিয়া থেকে বেশী দূরে রাখে’।[31]

হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ‘আমি এমন সব মানুষের সময়কাল পেয়েছি, যাদের কেউ একান্ত আমল গোপন করতে না পারলে তবেই তা প্রকাশ করতেন। তারা জানতেন, শয়তান থেকে সর্বাধিক সুরক্ষিত আমল হ’ল গোপন আমল। তাদের কারও কাছে মেহমান থাকলে তারা গৃহের পিছনে গিয়ে নফল ছালাত আদায় করতেন, যা মেহমান কোনভাবেই টের পেত না’।[32] সুতরাং ইবাদত যত গোপনে করা হবে, সেটা ততই রিয়ামুক্ত ও শয়তানের প্রভাবমুক্ত হবে। ফলে আমলটি খুলূছিয়াতের সাথে সম্পাদিত হবে এবং দ্রুত আল্লাহর কাছে কবূল হবে।

(৪) আল্লাহর ক্রোধ প্রশমন :

বান্দা যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করে, তাঁর নির্দেশ লঙ্ঘন করে, শরী‘আত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি ভীষণ রাগান্বিত হন। পার্থিব জীবনে পিতা তার সন্তানের প্রতি রাগান্বিত হ’লে সেই সন্তানের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। অফিসের বস যদি তার কর্মচারীর উপরে ক্ষিপ্ত হয়, তবে তার চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। সেখানে আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা মহান আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি রেগে যান, তবে আমাদের জীবনটা আরো কত দুর্বিসহ হয়ে পড়বে তা কল্পনা করাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহর বিরাগভাজন ব্যক্তির সার্বিক জীবন থেকে বরকত ও রহমত উঠে যায়। সেজন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহ্কে রাযী-খুশি করা বান্দার জন্য আবশ্যক। আর আল্লাহর রাগ ও ক্রোধকে ঠান্ডা করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হ’ল গোপন ইবাদত। বিশেষ করে গোপন ছাদাক্বাহ।

আল্লাহ বলেন, الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، ‘যারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য উত্তম পারিতোষিক রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকটে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৭৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ، وَصِلَةُ الرَّحِمِ تَزِيدُ فِي الْعُمُرِ، وَفِعْلُ الْمَعْرُوفِ يَقِي مَصَارِعَ السُّوءِ، ‘গোপন ছাদাক্বাহ প্রতিপালকের রাগকে প্রশমিত করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধি করে। আর নেকীর কাজ পাপের অনিষ্টকারিতা থেকে রক্ষা করে’।[33] ছান‘আনী (রহঃ) বলেন, ‘বান্দা যখন গুনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়, তখন গোপন দান-ছাদাক্বাহ সেই ক্রোধ প্রশমিত করে দেয়’।[34] সুতরাং আমাদের উচিত বেশী বেশী গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া, যাতে আল্লাহ আমাদের উপর সর্বাবস্থায় রাযী-খুশি থাকেন।

(৫) আত্মমুগ্ধতা থেকে নিরাপদ :

আত্মমুগ্ধতা হ’ল নিজের নেক আমলে আত্মতুষ্ট হয়ে নিজেকে অনেক নেককার মনে করা এবং অন্যের আমলকে তুচ্ছ মনে করা। হাদীছের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘উজ্ব’। এই উজ্ব বা আত্মমুগ্ধতা অন্তরের একটি গোপন ব্যাধি। এই রোগ মুমিন বান্দার জন্য ক্যান্সারের মত ভয়ংকর। তবে যারা গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হ’তে পারে, এই দুরারোগ্য ব্যাধি তাদের হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الجَاهِرُ بِالقُرْآنِ كَالجَاهِرِ بِالصَّدَقَةِ وَالمُسِرُّ بِالقُرْآنِ كَالمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ، ‘প্রকাশ্যে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর সমতুল্য এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর সমতুল্য’।[35] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, ‘আলেমগণের মতে, হাদীছের তাৎপর্য হ’ল- ব্যক্তি যেন (ইবাদতের সময়) আত্মমুগ্ধতা থেকে নিরাপদ থাকে। কেননা যে ব্যক্তি গোপনে আমল করে তার ইবাদতে আত্মমুগ্ধ হওয়ার আশংকা থাকেনা,

যতটা আশংকা থাকে প্রকাশ্য ইবাদতের ক্ষেত্রে’।[36]

(৬) অন্তরের পরিশুদ্ধিতা :

সঙ্গোপনে ইবাদতের অমলিন মুহূর্তে হৃদয় জুড়ে যে প্রশান্তি বিরাজ করে, লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে নিজের আকুতি ও প্রার্থনা আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, কারো সামনে ইবাদত করার সময় সেটা পাওয়া যায় না। গোপন আমলের প্রভাব হৃদয়ের যত গভীরে প্রোথিত হয়, অন্যান্য স্বাভাবিক আমল সেইভাবে মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না। সেকারণ বান্দা যখন গোপন আমলে নিজেকে সোপর্দ করে দেয় তখন তার হৃদয় থেকে শিরক ও নিফাক বের হয়ে যায়। আল্লাহর ভালোভাসায় তার হৃদয় পূর্ণ হয় এবং সেখানে তৈরী হয় জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের এলাহী দ্যোতনা। ফলে তিনি হয়ে ওঠেন ‘ক্বলবে সালীম’ বা পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী। যারা বুকের পিঞ্জরে ‘ক্বলবে সালীম’ গঠন করতে পারেন- পার্থিব বিপদাপদ, রোগ-শোক, দুশ্চিন্তা-টেনশনে তারা কখনো বিচলিত হন না। হাশরের ময়দানে সবাই যখন দিশেহারা হয়ে যাবে, তখন তারা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে প্রশান্ত চিত্তে। ঐ শুনুন এলাহী ঘোষণা-يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ، إِلَّا مَنْ أَتَى اللهَ ‌بِقَلْبٍ ‌سَلِيمٍ، وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ- ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না, কেবল যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকটে আসবে, সে ব্যতীত। (সেদিন) জান্নাতকে আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে’ (শু‘আরা ২৬/৮৮-৯০)

আয়াতটির দিকে একটু লক্ষ্য করে দেখুন! মহান আল্লাহ পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারীকে মুত্তাক্বী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদের সম্মানে জান্নাতকে তাদের নিকটবর্তী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা জান্নাতে যাওয়ার আগেই জান্নাতকে তাদের কাছে নিয়ে আসা হবে। পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী হওয়ায় পরকালীন সম্মান তো আছেই, দুনিয়াবী জীবনেও রয়েছে এর অবর্ণনীয় মর্যাদা। আর পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী তারাই হ’তে পারেন, যারা অন্তরের ইবাদত ও গোপন ইবাদতে বেশী তৎপর থাকেন। তাদের কথা ও কাজে কখনো বৈপরিত্ব থাকে না। মুহাম্মাদ ইবনে আবূ আয়েশা (রহঃ) বলেন, ‘তুমি মানুষের সামনে দু’মুখো এবং দু’কথার হয়ো না। তুমি মানুষের সামনে প্রকাশ করবে যে, তুমি আল্লাহকে ভালোবাস এবং তারাও তোমার কথা শুনে প্রশংসা করবে; অথচ সেসময় তোমার অন্তর এ দাবীতে মিথ্যা ও পঙ্কিলতায় যুক্ত থাকবে’।[37] ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‌مَا ‌أَجِدُ ‌لَذَّةَ رَاحَةٍ، وَلَا قُرَّةَ عَيْنٍ إِلَّا حِينَ أَخْلُو فِي بَيْتِي بِرَبِّي، ‘ঘরের কোণে নির্জনে রবকে স্মরণ করা ছাড়া অন্য কোন কিছুতে আমি মনে প্রশান্তি ও চোখের শীতলতা অনুভব করি না’।[38]

সুতরাং যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভালোবাসে ও ভয় করে, গোপন ইবাদত তাদের কাছে হয়ে ওঠে প্রশান্তির সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। অন্যরা যখন দুনিয়াবী স্বার্থের পিছনে ছুটতে থাকে, তারা তখন আল্লাহর সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। লোকেরা যখন টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, মজাদার খাবার, পার্থিব সম্মানের মাঝে তৃপ্তি ও সুখ তালাশ করে- তখন তারা নিরালায় আল্লাহর ইবাদতে অপার্থিব শান্তি খুঁজে পান। জান্নাতের আকাঙ্খায় ও জাহান্নানের ভয়ে তাদের চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে অশ্রুধারা। ফলে তাদের হৃদয় যমীন সর্বদা সজীব থাকে। অন্তরজুড়ে প্রবাহিত হয় প্রশান্তির হাওয়া।

(৭) সৃষ্টিকূলের আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান অর্জন :

কেউ যদি আল্লাহর রেযামন্দি ও নৈকট্য হাছিলের পাশাপাশি মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা পেতে চায়, তবে তাকে গোপন ইবাদতে খুব বেশী জোর দেওয়া উচিত। কেননা মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান লাভ করা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত, যেটা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন আকাশের অধিবাসী ও যমীনবাসী সবার অন্তরে এর প্রভাব পড়ে, ফেরেশতাগণ ও মানবমন্ডলীর অন্তরে সেই বান্দা ব্যাপারে সুধারণা তৈরী হয় এবং সবাই তাকে ভালোবাসে। বিপরীতদিকে আল্লাহ যখন কাউকে ঘৃণা করেন, সৃষ্টিকূলও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।[39]

আমাদের সমাজে এমন অনেক পরহেযগার মানুষ আছেন, যাদের বেশ-ভুষা, টাকা-পয়সা, সমাজিক স্ট্যাটাস না থাকলেও সবাই তাদের সম্মান করে। অন্তরে তাদের জন্য এক ধরণের ভালোবাসা ও মর্যাদার অনুভূতি কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে হয়ত তাকে সম্মান দেওয়া হয় না; কিন্তু আমাদের মন ঠিক তাদের সম্মান করে থাকে। কোন মুসলিমের জন্য আমাদের অন্তরের এমন অনুভূতি আসার কারণ হচ্ছে তার গোপন ইবাদত। মূলতঃ তিনি তার গোপন নেক আমলের শক্তি দিয়ে আমাদের অজান্তেই আমাদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। যায়েদ ইবনে আসলাম (রহঃ) বলেন, مَنِ اتَّقَى اللهَ حَبَّهُ النَّاسُ وَإِنْ كَرِهُوا، ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, মানুষ তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসে; যদিও বাহিক্যভাবে তাকে অপসন্দ করে’।[40]

অপরদিকে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে- যাদের লেবাস পরিপাটি, বাহ্যিকভাবে তাকে নেককার মনে হয়, তাদের কথার কারুকার্য আমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করে; কিন্তু তাদের জন্য অন্তর থেকে শ্রদ্ধা কাজ করে না। আমরা হয়তো সৌজন্যতার খাতিরে তাকে সম্মান করি; কিন্তু আমাদের অন্তর তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় না এবং তাদের ভালোবাসতে চায় না। মূলতঃ সেই বাহ্যিক দ্বীনদার মানুষের গোপন পাপের কারণে আমাদের অন্তরে এমন অনুভূতি তৈরী হয়। তাই তো আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, ‘কোন বান্দা যদি আল্লাহ ও তার মধ্যকার সম্পর্ক সুন্দর না করে, তাহ’লে আল্লাহ সেই বান্দা ও অপর মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক সুন্দর করবেন না। সবাইকে আকৃষ্ট করার চেয়ে একজনকে আকৃষ্ট করা অনেক সহজ। যদি তুমি (নেক আমলের মাধ্যমে) সেই অদ্বিতীয় সত্তাকে আকৃষ্ট করতে পার, তবে পৃথিবীর সবাই তোমার প্রতি আকৃষ্ট হবে। আর যদি তোমার ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করে দাও, তাহ’লে সবাই তোমাকে ঘৃণা করবে’।[41]

আব্দুর রহমান ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, ‌ما ‌رأيت ‌رجلا ‌ارتفع ‌مثل مالك بن أنس، ليس له كثير صلاة ولا صيام، إلا أن تكون له سريرة، ‘আমি মালেক ইবনে আনাসের মতো এত মর্যাদাবান মানুষ আর কাউকে দেখিনি। তার এতো বেশী নফল ছালাত ও ছিয়ামের আমল ছিল না, তবে যা ছিল সবই গোপন ছিল’।[42] ইবনুল মুবারক (রহঃ)ও ছিলেন একজন সর্বজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তার যুগে মানুষ খলীফার চেয়েও ইবনুল মুবারককে বেশী সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো। তাঁর ছিল দিগন্তজোড়া খ্যাতি ও সুনাম। এটা ছিল ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর পার্থিব পুরষ্কার। তিনি ছিলেন একাধারে মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ্, আলেম, মুজতাহিদ, কবি, সাহিত্যিক, দানশীল এবং একজন সাহসী বীর মুজাহিদ। তিনি ছিলেন গোপন ইবাদতের রাজপথে এক নিভৃতচারী অগ্রপথিক। তিনি যুদ্ধের সময় মুখ ঢেকে রেখে যুদ্ধ করতেন, যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে। তিনি ঋণগ্রস্থের ঋণ পরিশোধ করে দিতেন, অথচ ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি সেটা বুঝতে পারত না। তিনি ছিলেন নির্জনে পরিশ্রমী তাহাজ্জুদগুযার। তার ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‌ما ‌رفع ‌الله ‌ابن ‌المبارك إلا بخبيئة كانت له، ‘গোপন নেক আমলের কারণেই আল্লাহ ইবনুল মুবারককে এতোটা মর্যাদামন্ডিত করেছেন’।[43]

ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এমন অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা অনেক ছালাত আদায় করে, ছিয়াম রাখে এবং চুপচাপ থাকে, পোষাক-আচরণে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করে; কিন্তু মানুষের অন্তর তবুও তার দিকে আকর্ষণবোধ করে না। তার ব্যাপারে মানুষের অন্তরে তেমন একটা সম্মানবোধ জাগে না।

আবার এমন অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা অভিজাত পোষাক পরিধান করে, খুব বেশী বিনয়ীভাব প্রকাশ করে না। আবার তারা যে খুব বেশী নফল ইবাদত করে- এমনও না। কিন্তু মানুষের অন্তরগুলো তার ভালোবাসায় পাগলপারা। তার জন্য সবার অন্তরে অন্য ধরনের একটা সম্মানবোধ কাজ করে। আমি এর কারণ অনুসন্ধান করলাম এবং চিন্তা-ভাবনা করে পেলাম- গোপন আমলই এর মূল কারণ। সুতরাং যে ব্যক্তি তার গোপনীয় আমলকে পরিশুদ্ধ করে নিবে, তার শ্রেষ্ঠত্বের সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। অন্তরসমূহ তার সুবাসে সুরোভিত হয়ে উঠবে। আল্লাহর শপথ! নিজেদের অভ্যন্তরকে বিশুদ্ধ করে নাও। বাহ্যিক দিকটা যতই চাকচিক্যময় ও উজ্জ্বল হোক না কেন, ভিরতটা যদি সঠিক না হয়- তবে এগুলো কোনই কাজে আসবে না।[44]

(৮) বিপদাপদে ও শত্রুর মোকাবেলায় মোক্ষম হাতিয়ার :

বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদে আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ লাভের একটি শাক্তিশালী মাধ্যম হ’ল গোপন আমল। কারণ গোপন আমলে ফযীলত বেশী এবং খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়। আর কবুলযোগ্য কোন আমলের ওসীলায় আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে, যে কোন বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন পূর্ব যুগের তিনজন ব্যক্তি পাহাড়ের গুহায় আটকা পড়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় তাদের ছিল না। অতঃপর তারা যখন তাদের নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, তখন আল্লাহ তাদেরকে গুহা থেকে বের করে আনেন।[45] ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে অবরুদ্ধ হয়ে কায়মনো বাক্যে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং তাঁর তাসবীহ পাঠ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাকে মাছের অন্ধকার পেটের ভিতর থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ বলেন,فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ، لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ، ‘যদি সে এ সময় আল্লাহর গুণগানকারী না হ’ত, তাহ’লে সে তার পেটে অবস্থান করত পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (ছাফ্ফাত ৩৭/১৪৩-১৪৪)। এসময় তিনি দো‘আ পাঠ করেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন’ (আম্বিয়া ২১/৮৭-৮৮), যা দো‘আয়ে ইউনুস নামে প্রসিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুমিন কঠিন বিপদে এই দো‘আ পাঠ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।[46]

গোপন ইবাদতের মাধ্যমেই ছাহাবায়ে কেরাম সারা বিশে^ দুর্দমনীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ফলে কাফেররা তাদের নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপত। ইয়ারমূকের যুদ্ধে রোমকরা যখন মুসলিমদের আক্রমণের সামনে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছিল তখন তারা মুসলিমদের এই অজেয় শক্তির উৎস সন্ধানের জন্য একজন গুপ্তচরকে মুসলিম সেনাছাউনিতে পাঠিয়েছিল। গুপ্তচর তথ্য অনুসন্ধান করে তাদের সেনাপতির কাছে রিপোর্ট করেছিল যে, أنهم بالليل ‌رهبان وبالنهار ‌فرسان ‘তারা (মুসলিমরা) রাতের বেলা তাহাজ্জুদগুযার এবং দিনের বেলা ঘোড়সওয়ার’।[47] অর্থাৎ মুসলিমদের শক্তিমত্তার মূল উৎস ছিল তাদের তেজোদীপ্ত ঈমান এবং তাহাজ্জুদের পরিশ্রম।

সুতরাং কোন বান্দা যদি তার গোপন আমলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়, তবে দুনিয়ার মানুষ তার সাথে শত্রুতা করে কুলিয়ে উঠতে পারে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর শিষ্য আবূ হাযেম আল-আশজাঈ (রহঃ) বলেন, ‘কোন ব্যক্তির সাথে শত্রুতা ও বিরোধ করার আগে দেখে নাও যে, তার সাথে ও আল্লাহর সাথে কোন গোপন কিছু আছে কি-না। যদি তার গোপন দিকটা উত্তম হয় (অর্থাৎ তার যদি গোপন ইবাদত থাকে), তবে তোমার শত্রুতার কারণে আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন না। আর আল্লাহর সাথে তার গোপন দিকটা যদি মন্দ হয় (অর্থাৎ তার গোপন পাপ থাকে), তবে সেটাই তার দুর্ভাগ্যের জন্য যথেষ্ট। যদি তুমি এর চেয়েও বেশী কিছু করতে চাও, তবে আল্লাহর অবাধ্যতার চাইতে বড় কোন ক্ষতি তার করতে পারবে না, যেটার মধ্যে সে ইতিমধ্যেই পতিত হয়েছে’।[48]

(৯) উত্তম মৃত্যুর সম্ভাবনা :

পার্থিব জীবনে গোপন নেক আমলের সবচেয়ে বড় ফযীলত ও উপকারিতা হ’ল এর মাধ্যমে উত্তম মৃত্যুর তাওফীক্ব লাভ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، ‘কোন ব্যক্তি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে জান্নাতীদের মতো আমল করে, অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আবার কোন মানুষ জনসাধারণের দৃষ্টিতে জাহান্নামীদের ন্যায় আমল করে, অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[49]

অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীছে ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষের ভিতরের আমল তার বাহ্যিক আমলের বিপরীত হ’তে পারে। মানুষের খারাপ মৃত্যুর প্রধান কারণ হ’ল তার গোপন পাপ, যা মানুষ জানত না। হয়ত তার প্রকাশ্য দিকটা ভালো ছিল, যার কারণে তাকে জান্নাতী মনে করা হ’ত। কিন্তু মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার মন্দ কর্মগুলো বাহ্যিক জীবনকেও প্রভাতি করে, ফলে সে খারাপ মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়া ত্যাগ করে। অপরদিকে অনেক মানুষকে বাহ্যিকভাবে জাহান্নামী মনে হ’তে পারে। কিন্তু তার যদি গোপনীয় নেক আমল ও ভালো অভ্যাস থাকে, তবে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সেই গোপন আমলগুলো তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, ফলে তাকে ‘হুসনুল খাতেমাহ’ বা উত্তম মৃত্যু দেওয়া হয়’।[50] কিং সঊদ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ছুগাইয়ির বলেন, ‘বান্দা যখন গোপনে নেক আমল করে, তখন আল্লাহর অনুগ্রহের মাধ্যমে তাকে সৎকাজের তাওফীক্ব দেওয়া হয়, সফলতা ও সম্মান প্রদান করা হয় এবং তার জন্য উত্তম মৃত্যুর সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। আর যখন সে পাপ করে এবং পাপকে নগণ্য মনে করে, তখন তাকে খারাপ মৃত্যু দেওয়া হয় এবং সে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়’।[51]

(১০) আরশের ছায়া ও জান্নাত লাভের সুসংবাদ :

ক্বিয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহ যে সাত শ্রেণীর বান্দাকে ছায়া দান করবেন, তন্মধ্যে তিন শ্রেণীর লোক হবে গোপন আমলকারী। যেমন নবী কারীম (ছাঃ) বলেন, ‘সেদিন সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। ...(তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল)- رَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إِنِّي أَخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ، أَخْفَى حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ، সেই ব্যক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। আর সেই ব্যক্তি ছায়া পাবে- যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি ব্যয় করে বাম হাত সেটা জানতে পারে না। অতঃপর সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, ফলে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়’।[52]

নিভৃতচারী ইবাদগুযারদের জন্য মহান আল্লাহ জান্নাতের মধ্যে অদর্শনীয় ও অকল্পনীয় নে‘মত তৈরী করে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ، ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন সব বস্ত্ত প্রস্ত্তত করে রেখেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি, কোন হৃদয় যা কল্পনা করেনি’। অতঃপর তোমরা চাইলে পাঠ কর বলেই তিনি অত্র আয়াত পাঠ করেন, تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ، فَلَا ‌تَعْلَمُ ‌نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘যারা (রাত্রি বেলায়) শয্যাত্যাগ করে (তাহাজ্জুদের ছালাতে) তাদের প্রভুকে ডাকে ভয় ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এবং আমরা তাদের যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। অতঃপর কেউ জানে না তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী কি কি বস্ত্ত লুক্কায়িত রয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’।[53]

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত করুন এবং যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী কেবল তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করার তাওফীক্ব দিন- আমীন!


[1]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-‘উবূদিইয়াহ, পৃঃ ০৮।

[2]. ড. বদর আব্দুল হামীদ হামীসাহ, আছ-ছাওম ও ইবাদাতুস সির্র, পৃঃ ১।

[3]. ড. আব্দুর রহমান আল-‘আক্বল, আত-তাবারীহ, পৃঃ ৯৩।

[4]. মুসনাদে ইবনিল জা‘দ, পৃ. ১১৩; আবূদাঊদ, আয-যুহদ, পৃঃ ১১৯।

[5]. হাফেয জামালুদ্দীন মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ১৪/৪৬৪; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/৩৪৯।

[6]. আবূ নু‘আইম আস্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৪/৬৯।

[7]. ইবনু আবীদ্দুনইয়া, আল-‘উযলাতু ওয়াল ইনফিরাদ, পৃঃ ৪৫।

[8]. আবূ বকর ইবনুল আরাবী, আহকামুল কুরআন ২/৩১৪।

[9]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮২১, সনদ ছহীহ।

[10]. বুখারী হা/৭২৯০; মুসলিম হা/৭৮১; মিশকাত হা/১২৯৫ ।

[11]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪/৩১৩।

[12]. তাফসীরে কুরতুবী ৩/৩৩২।

[13]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৭০১।

[14]. ইবনু কুদামা মাক্বাদেসী, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছেদীন, পৃঃ ২৬২।

[15]. মুহাম্মাদ নাছ্রুদ্দীন ‘উওয়াইযাহ, ফাছলুল খিত্বাব ফিয যুহ্দি ওয়ার রাক্বায়েক্ব, ২/৫৫; আব্দুল আযীয আত্ব-তারীফী, আত-তাফসীর ওয়াল বায়ান লি আহকামিল কুরআন, ৩/১৩১০-১৩১১।

[16]. হাফেয যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৪/২৯৮।

[17]. বুখারী হা/৫০; মুসলিম হা/০৮।

[18]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, ৬১/২৫১।

[19]. আব্দুল আযীয আত্ব-তারীফী, ইস্তা‘ইন বিল্লাহ, পৃ. ১১।

[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৫/২১১।

[21]. মুসলিম হা/২৯৬৫; মিশকাত হা/৫২৮৪।

[22]. মুসনাদে আবী ইয়া‘লা মাওছিলী হা/৭৪৯, সনদ ছহীহ।

[23]. শারহু রিয়াযিছ ছালিহীন, ৩/৫১১।

[24]. বুখারী হা/১১৫৪; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাতা হা/১২২৩।

[25]. তিরমিযী হা/৩৫৭৯; নাসাঈ হা/৫৭২; মিশকাত হা/১২২৯, সনদ ছহীহ।

[26]. মুসলিম হা/১১৬৩; মিশকাত হা/২০৩৯।

[27]. ড. ছালেহ আল-ফাওযান, আল-মুলাখ্খাছুল ফিক্বহী, ১/১৮৪।

[28]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/৭০১।

[29]. তাফসীরে সা‘দী, পৃঃ ২৯১।

[30]. আযওয়াউল বায়ান, ৩/৩৫৯।

[31]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, ৯/১৯৩।

[32]. আহমাদ ইবনে হাম্বল, কিতাবুয যুহদ, পৃঃ ২১২।

[33]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩১৬৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৬০, সনদ ছহীহ। রাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)।

[34]. ছান‘আনী, আত-তানবীর শারহু জামি‘ইছ ছাগীর ৬/৫৮০।

[35]. আবূদাঊদ হা/১৩৩৩; তিরমিযী হা/২৯১৯, সনদ ছহীহ।

[36]. সুনানে তিরমিযী ৫/১৮০।

[37]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৫/৩৬০।

[38]. বায়হাক্বী, আয-যুহদুল কাবীর, পৃঃ ১০০।

[39]. বুখারী হা/৩২০৯; মুসলিম হা/২৬৩৭।

[40]. আবূ নু‘আইম আস্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৩/২২২।

[41]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/১৫৭।

[42]. আবূ নু‘আইম আস্ফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া, ৬/৩২০।

[43]. ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/৩৩০।

[44]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃঃ ২২০।

[45]. বুখারী হা/২২১৫; মুসলিম হা/২৭৪৩; মিশকাত হা/৪৯৩৮।

[46]. তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২; সনদ ছহীহ।

[47]. ইবনু জারীর ত্বাবারী, তারীখুত ত্বাবারী ৩/৪১৮; ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব ২/৯৪।

[48]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/১০০; আল-মাজালাসা ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম ৩/৪৮৭।

[49]. বুখারী হা/৪২০২; মুসলিম হা/১১২।

[50]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম ১/১৭২-১৭৩।

[51]. ড. ছুগাইয়ির ইবনে মুহাম্মাদ, ইয়ানাবী‘উল মিম্বার, পৃ. ৩২৮।

[52]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১।

[53]. বুখারী হা/৩২৪৪; মুসলিম হা/২৮২৪; মিশকাত হা/৫৬১২।






বিষয়সমূহ: আমল
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরিখে যেলাসমূহের মাঝে সময়ের পার্থক্যের কারণ - তাহসীন আল-মাহী
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের আবশ্যকতা (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (শেষ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা (২য় কিস্তি) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
একটি ঐতিহাসিক রায়ের ইতিবৃত্ত - রেযাউল করীম
ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি আমাদের কর্তব্য - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
ইসলাম ও গণতন্ত্র - ডাঃ মুহাম্মাদ আব্দুল হাফীয, চাঁপাই নবাবগঞ্জ
শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ (২য় কিস্তি) - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (২য় কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
প্রসঙ্গ : মাসিক আত-তাহরীক - মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম প্রধান
আরও
আরও
.