তেঁতুল পসন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে তরুণীদের খাবারের তালিকায় উপরের দিকেই পাওয়া যায় এর নাম। তবে অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। এর পাতা, ছাল, ফলের কাঁচা ও পাকা শাঁস, পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সবকিছুই উপকারী। এর কচিপাতায় রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় কাজ দেয়। তেঁতুলের কিছু উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-

১. হার্ট ঠিক রাখে :

তেঁতুল হার্টকে সচল রাখে। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম করতে সাহায্য করে।

২. হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়ায় :

পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চাইলে তেঁতুলের সাহায্য নিন। তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড এবং পটাশিয়াম আছে, যা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। এখনো আয়ুর্বেদে তেঁতুল পাতা ডায়েরিয়া সারাতে ব্যবহার হয়। এছাড়া তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় পেটের ব্যথা সারাতে ব্যবহৃত হয়।

৩. ত্বক উজ্জ্বল করে :

তেঁতুল ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রে-এর হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে। যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।

৪. ডায়বেটিস কন্ট্রোল করে :

তেঁতুলের বিচি ডায়বেটিস কন্টোল করতে সক্ষম। এছাড়াও রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরনের এনজাইম যার নাম alpha-amylase রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৫. ক্যান্সার রোধ করে :

তেঁতুলে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা কিডনি ফেলিওর এবং কিডনি ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।

৬. ওযন কমায় :

তেঁতুলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার আছে। আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন তেঁতুল খেলে ওযন কমে।

৭. ক্ষত সারায় :

তেঁতুল গাছের পাতা এবং ছাল অ্যানিটসেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। ফলে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

৮. লিভার সুরক্ষিত রাখে :

দেখা গেছে তেঁতুল আমাদের লিভার বা যকৃতকেও ভালো রাখে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করে উচ্চ মাত্রায় মদ্যপানের ফলে ড্যামেজড লিভার অনেকটা সেরে উঠেছে।

৯. পেপটিক আলসার রোধ করে :

পেপটিক আলসার বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পেটে এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়। এই আলসার খুবই বেদনাদায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে তেঁতুল বীজের গুঁড়ো নিয়মিত খেলে পেপটিক আলসার সেরে যায়। আসলে তেঁতুলে উপস্থিত পলিফেনলিক কম্পাউন্ড আলসার সারিয়ে তোলে বা হ’তে দেয় না।

১০. সর্দি কাশি সারাতে সাহায্য করে :

তেঁতুল অ্যালার্জি প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া এতে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

অপকারিতা/সাবধানতা :

১. কিছু ঔষধ আছে সেসব ঔষধ সেবনের সাথে তেঁতুল খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করবে। যেমন অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সিন এর মতো নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগ, অ্যান্টি-প্লাটিলেগ ড্রাগ ও রক্ত পাতলা করার মেডিসিন, যেমন- হেপারিন, ওয়ারফেরিন ইত্যাদি। তাই যারা তেঁতুল খেতে অভ্যস্ত তারা ঔষধ সেবনের সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

২. মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হ’তে পারে। তাই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি তেঁতুল না খাওয়া। ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই তেঁতুল খেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

৩. তেঁতুলের প্রভাবে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের মধ্যে র‌্যাশ, চুলকানি, ইনফ্লামেশন, অজ্ঞান হওয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই তেঁতুল খেলে যাদের এইসব অসুবিধা মনে হবে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

৪. তেঁতুলে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় এসিড। তাই নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত তেঁতুল খেলে শরীরের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়।

৫. গবেষকরা প্রমাণ দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হয়। ফলে জন্ডিস, তীব্র জ্বর, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, লিভার ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা হ’তে পারে।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.