দেশী ফলের মধ্যে পেয়ারা পুষ্টিগুণে ভরপুর, বেশ সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় একটি ফল। সহজলভ্য এই ফলটির পুষ্টিগুণ অনেক। ফল হিসাবে, ভর্তা করে, এমনকি জেলী বানিয়ে খাওয়া যায় মজাদার এই ফলটি। পেয়ারার পুষ্টি উপাদান ও গুণাবলী জানলে পেয়ারাকে আর কখনোই কেউ উপেক্ষা করবে না। প্রতিদিন মাত্র ১টি পেয়ারা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা খুব সহজেই দূর করে দিতে পারে। পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এছাড়া ভিটামিন বি, ই, কে, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রণ, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম রয়েছে। এর উচ্চমাত্রার ভিটামিন-এ ও সি ত্বক, চুল ও চোখের পুষ্টি জোগায়, ঠান্ডাজনিত অসুখ দূর করে।

পেয়ারার পুষ্টিগুণ : পেয়ারা নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ প্রাম পেয়ারাতে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৬৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ২.৫৫ গ্রাম, শর্করা ১৪.৩ গ্রাম, ফাইবার ৫.৪ গ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.৯৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৬২৪ আইইউ, ভিটামিন সি ২২৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস      ১১ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.২৬ মিলিগ্রাম, জিংক ০.২৩ মিলিগ্রাম, লাইকোপেন ৫২০৪ মাইক্রোগ্রাম।

উপকারিতা : পেয়ারার বিভিন্ন উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ : পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এটি কোষকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া পেয়ারার ভিটামিন সি বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে৷

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে : পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিতভাবে লাইকোপিন সমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া পেয়ারা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL নামক একটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। যার ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য পেয়ারা দারুণ উপকারী। পেয়ারার ফাইবার দেহে চিনি শোষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও বেশ কার্যকর। পেয়ারাতে প্রচুর ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি কিছুটা কম থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি প্রদান করে। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশন থেকে পেয়ারা শরীরকে সুস্থ রাখে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে : পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন-এর মত অনেকগুলো উপাদান রয়েছে, যা শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষ করে এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে : পেয়ারাতে ভিটামিন-এ আছে, যা চোখের জন্য উপকারী। ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া এটি খেলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন-এ এর ভাল উৎস।

ওযন কমায় ও ত্বক সুস্থ রাখে : পেয়ারা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওযন খুব সহজেই কমানো যেতে পারে৷ যাদের ওযন অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা পেয়ারা খেতে পারেন৷ পেয়ারা ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ত্বক, চুল ও দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

গর্ভবতী মায়ের জন্য : পেয়ারা গর্ভবতী মায়েদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। পেয়ারায় বিদ্যমান ফলিক অ্যাসিড গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠনে ভূমিকা রাখে এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ প্রতিহত করে।

তাছাড়া পেয়ারা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও লাইকোপিন রয়েছে, যার ফলে রক্ত পরিষ্কার হয় ও ত্বক অনেক বেশী উজ্জ্বল হয়৷ পেয়ারা চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পেয়ারা নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। ভিটামিন সি থাকার কারণে সাধারণ সর্দি-কাশি দূর করতেও সাহায্য করে পেয়ারা।                      \ সংকলিত \






আরও
আরও
.