পৃথিবীর বজ্রপাত
প্রবণ অঞ্চল সমূহের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। ফলে বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে
প্রাকৃতিকভাবেই বজ্রপাত বেশী হয়। দেশের সবচেয়ে বেশী বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জের
হাওর এলাকায়। আর বেশী বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন মাসে। তবে সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
এ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা
নিম্নরূপ-
১. বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি যরূরী প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
২. বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহ’লে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
৩. বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
৪. যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
৫. খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক ।
৬. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
৭. কোনো অবস্থাতেই ভূমিতে শোবেন না বা বিচ্ছিন্ন কোনো বড় গাছের নিচে দাঁড়াবেন না।
৮. অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে (যেমন খেলার মাঠে) ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে হবে। বজ্রঝড়ের সময় মানুষ জড়ো অবস্থায় থাকলে অনেকজনের একসঙ্গে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন। সর্বোপরি নিজের বাসা সহ প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
বজ্রাঘাতে আহতদের চিকিৎসায় করণীয় :
কোন ব্যক্তির উপরে বজ্রপাত হ’লে তার শরীরের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ বয়ে যায়। ফলে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যায়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই তৎক্ষণাৎ মারা যায়। আহত হয়ে অল্প কিছু মানুষ বেঁচে যায়। তাদের জন্য করণীয় নিম্নরূপ :
১. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে।
২. আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
৩. যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিন্ড সচল থাকে, তাহ’লে তাকে সাথে সাথে সিপিআর দিতে হবে। সিপিআর অর্থ হাত-পা টানাটানি, বুকে চাপ ও মুখে হাওয়া দিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোন গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।
৪. বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না।