শায়খুল ইসলাম, ইমামুল হুফফায এবং ইবাদতগুযার আলেমদের নেতা হিসাবে পরিচিত প্রখ্যাত তাবে তাবেঈ আবু আব্দুল্লাহ সুফিয়ান বিন সাঈদ আছ-ছাওরী (রহঃ) ৯৭ হিজরীতে কূফার বনু তামীম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবল জ্ঞানান্বেষী এই মুহাদ্দিছের শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ছয়শ’ এবং ছাত্র প্রায় বিশ হাযার। তাঁর সম্পর্কে সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বলেন, ‘সুফিয়ান ছাওরীর মত হালাল-হারাম সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি আমি আর কাউকে দেখিনি’ (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩৮)

আববাসীয় খলীফা মানছূর তাঁকে বিচারকের দায়িত্ব পালনের আহবান জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে কূফা ছেড়ে মক্কা-মদীনায় চলে যান এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। পরবর্তীতে খলীফা মাহদী তাঁকে ডেকে পাঠালে তিনি আত্মগোপন করেন এবং বছরায় চলে যান। অতঃপর ১৬১ হিজরীতে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন (যিরিকলী, আল-আ‘লাম ৩/১০৪)

সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) একদা আলী ইবনুল হাসান আস-সালামীকে উদ্দেশ্য করে নিম্নোক্ত অছিয়ত করেন-

তোমার কর্তব্য হ’ল- সদা সত্যবাদিতা অবলম্বন করা। আর মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকতা, লৌকিকতা ও দাম্ভিকতা পরিহার করা। কেননা সৎকর্মকে আল্লাহ তা‘আলা এ সকল জিনিস দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছেন।

তুমি এমন ব্যক্তির নিকট থেকে দ্বীনকে গ্রহণ কর, যে স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে সতর্ক। তোমার সঙ্গী যেন এমন ব্যক্তি হয়, যে তোমাকে দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহী করে তুলবে। তুমি মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করবে এবং বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর তোমার যতটুকু আয়ুষ্কাল বাকি আছে তার জন্য আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করবে। যখন তোমাকে কেউ কোন দ্বীনী বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে তখন তুমি প্রত্যেক মুমিনকে সদুপদেশ দিবে, আর কোন মুমিন ব্যক্তির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা থেকে বিরত থাকবে। কেননা যে ব্যক্তি কোন  মুমিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করল। তুমি ঝগড়া ও অনর্থক বিতর্ক থেকে বেঁচে থাকবে এবং যা তোমাকে সন্দেহে নিপতিত করে এমন বিষয় ছেড়ে দিয়ে সন্দেহাতীত বিষয় গ্রহণ করবে। তাহ’লেই তুমি নিরাপদ থাকবে। সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। তাহ’লে তুমি আল্লাহর বন্ধু হ’তে পারবে।

তুমি তোমার গোপন বিষয়গুলোকে সুন্দর কর, তাহ’লে আল্লাহ তোমার প্রকাশ্য বিষয়গুলোকে সুন্দর করে দিবেন। আর যে তোমার নিকট কোন বিষয়ে ওযর পেশ করে, তার ওযর গ্রহণ কর।

তুমি কোন মুসলিমকে ঘৃণা করবে না। যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে, আর যে তোমার প্রতি যুলুম করবে তাকে তুমি ক্ষমা করে দিবে, তাহ’লে নবীগণের বন্ধু হ’তে পারবে। তোমার গোপন ও প্রকাশ্য প্রত্যেকটি বিষয় যেন আল্লাহর নিকট ন্যস্ত করা হয়। তুমি আল্লাহ্কে ভয় করবে ঐ ব্যক্তির মত, যে জানে যে সে মৃত্যুবরণ করবে, পুনরুত্থিত হবে, হাশরের ময়দানে যাত্রা করবে এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে। দু’টি আবাসস্থলের যে কোন একটিকে তোমার প্রত্যাবর্তনস্থল হিসাবে স্মরণ করবে। হয় তা সুউচ্চ জান্নাত অথবা জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুন (আবু নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া)






আরও
আরও
.