কংক্রিটের তৈরী ১৬০ তলা ও ৯০০ অ্যাপার্টমেন্ট বিশিষ্ট বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা তৈরী করার রেকর্ড গড়ল দুবাই। দুবাই সিটির শেখ যায়েদ রোডে ৫শ’ একর জমির উপর নির্মিত ‘বুর্জ খলীফা’ নামের এই সুরম্য ভবনটি গত ৪ জানুয়ারী উদ্বোধন করা হয়। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে দেড়শ’ কোটি মার্কিন ডলার। সময় লেগেছে পাঁচ বছর। ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ভবনটির কাজ শুরু হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন (২ হাযার ৭১৭ ফুট, ৮২৮ মিটার) হওয়া ছাড়াও ‘বুর্জ খলীফা’ গোটা দশেক বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে। বুর্জ খলীফা উচ্চতায় এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের দ্বিগুণ। এর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর উচ্চতম দালান ছিল তাইওয়ানের ‘তাইপে ১০১’। তাইপের উচ্চতা এক হাযার ৬৬৭ ফুট। পোল্যান্ডের ‘ওয়ারশ রেডিও মাল্ট’কে (২,১২০.৬৭ ফুট) টপকে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনার রেকর্ডটিও দখলে নিয়েছে বুর্জ খলীফা। উচ্চতম আবাসন ব্যবস্থা (১০৮ তলা পর্যন্ত), সর্বোচ্চ স্থানে (১৫৮ তলা) মসজিদ, উচ্চতম স্থানে সুইমিংপুল (৭৬ তলা), সর্বোচ্চ স্থানে পর্যবেক্ষণ ডেস্ক (৪৪২ মিটার উঁচুতে) প্রভৃতি রেকর্ড গড়েছে ভবনটি।

বুর্জ খলীফাকে ঢাকতে ১৫ লাখ ২৮ হাযার বর্গফুট কাঁচ লেগেছে। বহিরাঙ্গে সাজসজ্জার জন্য চীন থেকে আনা হয়েছিল ৩০০ বিশেষজ্ঞ। বিশাল এই ভবনটি একসঙ্গে ২৫ হাযার লোকের ভার সইতে পারবে। এতে ৫৭টি লিফট আছে, আছে ৮টি চলন্ত সিঁড়ি। এত উঁচুতে ওঠাটা যেন ক্লান্তিকর না ঠেকে সেটি বিবেচনায় বিশ্বের দ্রুততম লিফট তৈরী করা হয়েছে। একেকটি এলিভেটর সেকেন্ডে ৩৩ ফুট উপরে উঠতে পারে। এ ভবনে রয়েছে ৪০ বর্গমিটারের একটি হোটেল, ১৭৫টি লাক্সারি গেষ্ট রুম, ৪৯টি অফিস ফ্লোর স্পেস, ২০টি অলিম্পিক সুইমিংপুল, ১৫ হাযার বর্গফুটের ফিটনেস লাইব্রেরী। ঝড়ো হাওয়ায় যাতে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ১৬৪ ফুট গভীর থেকে স্থাপন করা হয়েছে ১৯২টি পাথরের খুঁটি। সুশৃংখল গাড়ী পার্কিং-এর জন্য রয়েছে ৭ হাযার ৩শ’ গাড়ী পার্কিং-এর ব্যবস্থা। বুর্জ খলীফায় প্রতি বর্গফুট জায়গার মাসিক ভাড়া (অফিস-আদালতের জন্য) চার হাযার ডলার বা দুই লাখ ৮০ হাযার টাকা। ভবনটির নকশা করেছে স্কিডমোর ওয়িংস অ্যান্ড মেরিল (এসওএম) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ করেছে এমার প্রপার্টিজ।

[নূহের প্লাবনের পরে বিগত যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত শক্তিশালী ‘আদ’ জাতির অহংকার ও বিলাসিতার অন্যতম নিদর্শন ছিল উঁচু উঁচু প্রাসাদ ও টাওয়ার নির্মাণ করা। তারাও ছিল আরব ভূখন্ডের অধিবাসী। নবী হূদ (আঃ) তাদের অঢেল ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয়ের আহবান জানান। কিন্তু তারা তা অগ্রাহ্য করে। ফলে নেমে আসে আল্লাহর গযব আকারে প্রচন্ড ঝঞ্ঝাবায়ু চলে একটানা সাত রাত্রি ও আট দিন। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সবকিছু। মুছে যায় এ জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য। কুরআন তাদের কথা জানিয়ে আমাদেরকে সাবধান করেছে (ফজর ৬-৮; হা-ক্কাহ ৬-৮)। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যেখানে ক্ষুধার্ত, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল, সেখানে মুসলিম নেতাদের এই বিলাসভবন নির্মাণ আল্লাহ কখনোই পসন্দ করবেন না। অতএব হে উপসাগরীয় নেতারা! পিছনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও। (স.স)]






আরও
আরও
.