প্রখ্যাত মিসরীয় বিদ্বান ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা ড. ইউসুফ আল-ক্বারযাভী গত ২৬শে সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ড. ক্বারযাভী মিসর ভিত্তিক সংগঠন
ইখওয়ানুল মুসলিমীনের উপদেষ্টা ছিলেন। ইখওয়ানের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে
তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন এবং সবশেষে মাতৃভূমি ত্যাগ করে কাতারে স্থায়ী
হন।
মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। যেমন মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স-এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি), রাবেতা ‘আলম আল-ইসলামী ও ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড-এর সম্মানিত সদস্য হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ১৭০টি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। এছাড়া জুম‘আর খুৎবাসহ বিভিন্ন টিভিতে তিনি নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করতেন।
ড. ক্বারযাভী ১৯২৬ সালে মিসরে নীল-নদের তীরবর্তী ছাফাত তোরাব গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দু’বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর চাচার নিকটে লালিত-পালিত হন। তিনি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার অধীনে শিক্ষকতা ও গবেষণায় ব্যাপৃত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ স্ত্রী, ৩ কন্যা এবং ৪ পুত্র রেখে যান।
ইসলামী শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৪ সনে তিনি সঊদীআরব থেকে মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসাবে গণ্য ‘বাদশাহ ফয়ছাল পুরস্কার’ এবং ১৯৯০ সালে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জেদ্দা (আইডিবি) পুরস্কার লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ড. ক্বারযাভী মুসলিম সমাজের ইখওয়ানী ও আধুনিকতাপন্থী ঘরানায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করলেও শরী‘আতের বিভিন্ন বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি ও শৈথিল্যবাদী অবস্থানের কারণে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। যেমন শারঈ বিধান বাস্তবায়নের উপর ব্যক্তি স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার প্রদান, নারীর ক্ষমতায়নের পশ্চিমা ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করা, সর্বধর্ম সমন্বয় মতবাদ বা আন্তঃধর্ম সংলাপের পৃষ্ঠপোষকতা করা, ইক্বামতে দ্বীনের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতাকে উৎসাহিত করা, রজমের বিধানকে শরী‘আত বিরোধী মনে করা, গান-বাজনাকে জায়েয মনে করা, আরব বসন্তের সময় মিসরসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকার বিরোধী তৎপরতাকে সমর্থন করা ইত্যাদি।
[আল্লাহ তাঁর ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফেরদাঊস নছীব করুন- আমীন!]