ধূমপান
একটি মারাত্মক ক্ষতিকর ও বিপদজনক অভ্যাস। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
এ সম্পর্কে জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ সিগারেটের
প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য
ক্ষতকর’। তারপরও অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে। অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপানের
মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত নন।
ধূমপান কাকে বলে?
Smoking
refers to the inhalation and exhalation of fumes from burning tobacco
in cigars, cigarettes and pipes. চুরুট, সিগারেট এবং পাইপের মাধ্যমে
জ্বলন্ত ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নেওয়া এবং তা বের করে দেওয়ার
প্রক্রিয়াকেই সাধারণত ধূমপান বলে।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সমূহ :
- ধূমপান
একটি বদ অভ্যাস। এর জন্য বিশ্বে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ।
১৯৫০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই মারা গেছে প্রায় ছয়
কোটি লোক। আর এদের অর্ধেকই ছিল যুবক শ্রেণী।
- সিগারেটের ধোঁয়ায় যে নিকোটিন থাকে তা হিরোইন অপেক্ষা শক্তিশালী।
- ধূমপানকারী দেশে ও সমাজে সর্বমহলে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসাবেই বিবেচিত হয়।
- ধূমপান
হ’ল অপচয়। আর আল্লাহ তা‘আলা অপচয় সম্পর্কে বলেন, وَلاَ تُبَذِّرْ
تَبْذِيْراً، إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ
‘তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’ (ইসরা ২৬, ২৭)।
- ধূমপান মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে। কারণ সে নিশ্চিত জানে যে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তারপরও সে তা পান করে।
- ধূমপায়ী তার ছেলে-সন্তান এবং উত্তরসূরীদের জন্য একজন আদর্শহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়।
- ধূমপানের অভ্যাস একজন মানুষকে ছিয়াম পালন হ’তে বিরত রাখে। কারণ ছিয়াম রাখলে সে ধূমপান করতে পারে না।
- ধূমপান
মানুষের অপমৃত্যু ঘটায়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে
প্রকাশিত হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবীতে ধূমপানের কারণে যত বেশি অপমৃত্যুর ঘটনা
ঘটে, অন্য কোন রোগ-ব্যাধির কারণে তত ঘটে না।
- ধূমপানের কারণে শরীরে তাপ বৃদ্ধি, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদি রোগ-ব্যাধি দেখা যায়।
- ধূমপানের কারণে রক্তনালিগুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং অনেক সময় তার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
- ধূমপানকারীর ফুসফুস, মুত্রথলি, ঠোঁট, মুখ, জিহবা ও কণ্ঠনালি, কিডনী ইত্যাদিতে ক্যান্সার হয়।
- ধূমপান স্মরণশক্তি কমিয়ে দেয় এবং মনোবল দুর্বল করে দেয়।
- ইন্দ্রিয় ক্ষমতা দুর্বল করে। বিশেষ করে ঘ্রাণ নেয়া এবং স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা লোপ পায়।
- ধূমপায়ীদের
শ্রবণশক্তি কমে যায়। সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় ৩৭৫০ জন লোকের উপর
এক সমীক্ষা চালায়। সেখানে লক্ষ্য করা যায় যে, অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদের
শ্রবণশক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী। গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, একজন
ধূমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধূমপায়ী উপস্থিত থাকলে তারও একই সমস্যা
দেখা দেবে।
- ধূমপানের ফলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বার বার সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। ধূমপায়ী সব সময় দুর্বলতা অনুভব করে এবং আতঙ্কগ্রস্ত থাকে।
- হার্টের সাথে সম্পৃক্ত ধমনিগুলো ব্লক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। এমনকি বক্ষ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ধূমপান উচ্চ রক্ত চাপের কারণ হয়।
- ধূমপানের ফলে যৌনশক্তি বিলুপ্ত হ’তে থাকে।
- ধূমপানের ফলে হজমশক্তি কমে যায়, ধারণক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর ঢিলে হয়ে যায়।
- ধূমপানের ফলে পাকস্থলী ক্ষত হ’তে থাকে এবং যকৃৎ শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ধূমপানের ফলে মুত্রথলি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং প্রস্রাব বিষাক্ত হয়।
- ধূমপান
নির্মল পরিবেশকে দূষিত করে। এর ফলে স্ত্রী-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও
আশে-পাশের লোকজনের কষ্ট হয়ে থাকে। বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য যানবাহনে
প্রকাশ্যে ধূমপান করার ফলে অনেক সহযাত্রী নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে
ধূমপায়ীকে অভিশাপ দেন। আবার কেউ প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে
যান। অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অপমানিত হন। কখনো ধূমপানকারীরা ধোঁয়ালো
কন্ঠে বলে উঠে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদাভাবে চলাফেরা করলেই হয়।
কেউ কেউ আবার এও বলেন যে, ‘মনে হয় গাড়ীটা উনি নিজেই কিনে নিয়েছেন বা গাড়ীটা
মনে হয় তার বাবার’। জেনে রাখা উচিত, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ধূমপানকারীর
প্রতিবেশী শারীরিকভাবে ধূমপায়ীর মতই ক্ষতিগ্রস্ত হন। হাদীছে প্রতিবেশীকে
কষ্টদানকারী ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يُؤْذِىْ جَارَهُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’ (বুখারী হা/৪৭৮৭; মুসলিম হা/৬৮)।
উল্লিখিত
মন্দ দিকগুলো প্রমাণ করে যে, ধূমপান অতীব ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে দুনিয়ার
সুস্থ বিবেক সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ একমত। আল্লাহ বলেন, وَيُحِلُّ لَهُمُ
الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَآئِثَ ‘তিনি তোমাদের জন্য
হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম বস্ত্ত, আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর
বস্ত্তগুলো’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। আলোচ্য আয়াতে ক্ষতিকর বস্ত্তগুলো হারাম করা হয়েছে। সুতরাং ধূমপানকে ইসলাম অনুমোদন করে না।
আল্লাহ আরো বলেন, وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ‘তোমরা নিজেদের জীবনটাকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)।
এ আয়াতও প্রমাণ করে যে, ধূমপান নিষেধ। কেননা ধূমপান মানুষের জীবনকে
ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অধিকাংশ ধূমপানকারী ব্যক্তি মারাত্মক দূরারোগ্য
ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
কেউ কেউ বলেন যে,
ধূমপানের মাঝে কিছু ভাল দিকও আছে। যেমন সাময়িক চিন্তামুক্তি ও ক্লান্তি দূর
করা ইত্যাদি। কিন্তু এই কারণে যদি ধূমপান বৈধ হয়। তাহ’লে মদ, জুয়া
ইত্যাদিও বৈধ হবে। কেননা তাতেও রয়েছে কিছু ভাল দিক। আল্লাহ বলেন,
يَسْأَلُوْنَكَ
عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ
لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا
‘তারা আপনাকে মদ
ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার
মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে উপকারের চেয়ে এগুলোর পাপ বড়’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)।
আল্লাহ
তাআলার এ বাণী দ্বারা বুঝা যায় যে, মদ-জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও
তা হারাম করা হয়েছে। ধূমপান তো মদ-জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারণ এতে কোন ধরনের
উপকারিতা নেই। বরং ১০০ একশ ভাগই ক্ষতি।
আবার ধূমপানের সাথে
জাহান্নামের খাবারের একটা সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- আল্লাহ জাহান্নামীদের
খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, لاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِيْ مِنْ جُوْعٍ
‘জাহান্নামের খাবার জাহান্নামীদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে
না’ (গাশিয়াহ ৮৮/৭)।
ধূমপান তথা বিড়ি, সিগারেট, চুরুট কিংবা
তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদিও সেবনকারীর জন্য কোন প্রকার পুষ্টির যোগান দেয়
না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত করে না। অতএব আসুন! আমরা সকলে মিলে আমাদের সমাজকে
ধূমপান মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন-
আমীন!!
হাফেয হাবীবুল্লাহ আল-কাসিম
মানামা, বাহরাইন।