সমাজে অপরাধপ্রবণতা হ্রাসে কুরআনে বর্ণিত শাস্তিবিধানের অপরিহার্যতা

মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা ও বিধানদাতা মহান আল্লাহ তা‘আলা। তিনি মানুষ ও জিনকে বুদ্ধিমান প্রাণী করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উপর আদেশ-নিষেধের বিধান জারী করেছেন। জিনদের আমরা দেখতে পাই না। আমাদের কথা তাই মানুষকে কেন্দ্র করে। মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে প্রেরণের সময় বলে দিয়েছিলেন,قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، ‘আমরা বললাম, তোমরা সবাই জান্নাত থেকে নেমে যাও। অতঃপর যখন আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে কোন হেদায়াত পেŠঁছবে, তখন যারা আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/৩৮)। কুরআনের ভাষায় এই হেদায়াত হচ্ছে নবী-রাসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীন ইসলাম। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মনোনীত একমাত্র দ্বীন হ’ল ইসলাম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)। আর আল্লাহ তা‘আলা দ্বীন ইসলামেই পুরোপুরি দাখিল হ’তে বলেছেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’ (বাক্বারাহ ২/২০৮)

‘ইসলাম’ শব্দের অর্থই আত্মসমর্পণ। পরিভাষায়, এ আত্মসমর্পণ করতে হবে আল্লাহর নিকটে, যা হবে রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দেখানো পথে। সে পথ স্পষ্ট উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে। সুতরাং মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর নিকট সৃষ্টি হিসাবে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য। দ্বীন হিসাবে তাদের মানতে হবে একমাত্র ইসলাম। কেউ যদি তা না মেনে অন্য দ্বীন মেনে চলে তবে আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরিণামে সে চিরস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ، ‘আর যে ব্যক্তি ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং ঐ ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)। ইসলামকে জানা ও মানার মূলে রয়েছে কুরআন ও তার বাহক রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)। ইসলামকে জানতে ও মানতে এই দু’টি সূত্রের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। কুরআন তার বিষয়বস্ত্তসহ সন্দেহাতীতভাবে সত্য। ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সংসার জীবন ইত্যাদির মূলনীতি এ গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এটি আল্লাহর গ্রন্থ কি-না তা নিয়ে মনে সন্দেহ জাগা অস্বাভাবিক নয়। সে সন্দেহ খন্ডন করতে আল্লাহ কুরআনের একাধিক জায়গায় অনুরূপ একটি গ্রন্থ অথবা দশটি সূরা অথবা নিদেনপক্ষে একটি সূরা রচনা করতে বলেছেন। তিনি সূরা বাক্বারায় বলেছেন,وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ- ‘আর যদি তোমরা তাতে সন্দেহে পতিত হও, যা আমরা আমাদের বান্দার উপর নাযিল করেছি, তাহ’লে অনুরূপ একটি সূরা তোমরা রচনা করে নিয়ে এসো। আর (এ কাজে) আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের যত সহযোগী আছে সবাইকে ডাকো, যদি তোমরা (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না পারো, আর কখনোই তা পারবে না, তাহ’লে তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যার ইন্ধন হ’ল মানুষ ও পাথর। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য’ (বাক্বারাহ ২/২৩-২৪)। কুরআনই রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী বলে আমাদের নিকট পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ، ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষনবী’ (আহযাব ৩৩/৪০)

কাজেই মানব জাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা আইন বিচার ইত্যাদি যে দিবেন সেটাই স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বাস করতে হবে এবং জানতে হবে যে, ইসলাম শুধু ব্যক্তিগতভাবে পালনীয় কোন দ্বীন নয়, বরং ব্যক্তি জীবনসহ সমষ্টিগতভাবে পালনীয় দ্বীন। সমষ্টির স্বার্থেই ইসলাম জামা‘আতবদ্ধভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা বলে। আধুনিক রাষ্ট্রের রয়েছে তিনটি বিভাগ। যথা আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও এ তিনটি বিভাগই রয়েছে। এখানে কুরআন ও সুন্নাহর আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্পষ্ট রয়েছে। যদি কোন আইন অস্পষ্ট থাকে কিংবা প্রণয়নের প্রয়োজন পড়ে তবে ইসলামী সরকারের মজলিসে শূরা ও মুজতাহিদ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আহলুল হাল্লে ওয়াল আকদ’ নামে পরিচিত তার একটি দফতর কুরআন ও সুন্নাহর মূলনীতির আলোকে তা প্রণয়ন করবেন। সে আইন অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ দেশ পরিচালনা করবে এবং বিচার বিভাগ বিচার করবে। অপরাধপ্রবণতা রোধ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নির্বাহী বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব। আইনের মূল উদ্দেশ্য সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা স্থাপন এবং জনগণ যাতে তাদের অধিকার নির্বিঘ্নে লাভ করে তার নিশ্চয়তা বিধান। যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের পরও মানুষ বেআইনি কাজ ও অপরাধ করে বসতে পারে। তাই অপরাধী যাতে শাস্তির কথা ভেবে অপরাধ থেকে দূরে থাকে এবং অপরাধ করে বসলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেজন্য ইসলামে রয়েছে বিচার বিভাগ। আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘সমাজে অপরাধপ্রবণতা হ্রাসে কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত হুদূদের অপরিহার্যতা’ এই বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট।

বর্তমান বিশ্বে যে সাতটি মহাদেশ রয়েছে তার ছয় মহাদেশে মানুষ বাস করে। তন্মধ্যে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পুরোটাই পাশ্চাত্য শাসিত। সেখানে পাশ্চাত্যের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। তাদের আইনের গোড়ায় রয়েছে বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি দেশের সিভিল ও ক্রিমিনাল ল। এসব আইন আবার এসেছে রোমক ও গ্রীক আইন থেকে। অন্য দু’টি মহাদেশ এশিয়া ও আফ্রিকা আয়তনে ও জনসংখ্যায় বড় হ’লেও তাদের অধিকাংশ দেশ এক সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কলোনী বা উপনিবেশ ছিল। এসব দেশের দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন বদল করে তারা নিজেদের দেশের আইন চালু করে। ফলে বলতে গেলে চীন, জাপান ও সঊদী আরবের মতো কিছু দেশ বাদে গোটা এশিয়া ও আফ্রিকাতেও পাশ্চাত্যের আইন ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়। এসব আইন মানব রচিত এবং তারা তাদের সুবিধামতো আইন পরিবর্তন করে। সে যাই হোক, আইন ও বিচার শূন্য বিশ্ব-জগত অতীতেও ছিল না, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নবুঅতী যিন্দেগী থেকে শুরু করে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ওছমানীয় খেলাফতের সমাপ্তি পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে কুরআন ও সুন্নাহ প্রবর্তিত আইন চালু ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশেও ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজ শাসকগণ ইসলামী আইন মোতাবেক বিচার-ফায়ছালা করত। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সঊদী আরব প্রতিষ্ঠার পর তাদের আইন ও বিচারের উৎস ছিল কুরআন ও সুন্নাহ। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এখনও কুরআনিক বিচার ব্যবস্থা চালু আছে।

অপরাধ হ্রাসে ইসলামের নীতি : অপরাধ হ্রাসে ইসলাম প্রধানত দু’টি নীতি অবলম্বনের কথা বলে। (১) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। (২) প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে : (১) ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমাজ জীবনে ঈমান ও আমলে ছালেহ বা সৎকর্মের চর্চা। (২) ঈমান ও সৎকর্ম বিরোধী বিশবাস যেমন শিরক, কুফর, নিফাক, জাহেলিয়াত ও কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত অসৎকর্ম পরিহার। (৩) পরিবার ও সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের জন্য ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অব্যাহত প্রচেষ্টা। (৪) ব্যক্তি-মানুষের চরিত্রে ভালোগুণের সমাবেশ ঘটান ও মন্দগুণ অপনোদনের ব্যবস্থা। (৫) আখেরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার দৃঢ় বিশ্বাসের অনুভূতি তৈরী। (৬) মহান আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি এবং জীবনের নানা ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের নিমিত্তে তার নিকট দো‘আ করা। প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের। তবে রাষ্ট্র অপরাধ হ্রাসে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা মূলতঃ বিচার ব্যবস্থা। বিচারের অধিকার রয়েছে কেবল প্রশাসন ও বিচারের সাথে নিযুক্ত ব্যক্তিদের, অন্য কারও তা নেই। ইসলামী বিচার ব্যবস্থায় অপরাধ ভেদে তিন প্রকার শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে : (১) ক্বিছাছ, (২) হদ, (৩) তা‘যীর।

কুরআন ও সুন্নাহর আইন শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং তা গোটা বিশ্বের মানব জাতির জন্য। খোদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইহূদীদের উপর ব্যভিচারের শাস্তি আরোপ করেছিলেন। অবশ্য ইহূদীদের তাওরাত ও কুরআন-সুন্নাহর ব্যভিচারের শাস্তি একই। এ আইন শাশ্বত চিরন্তন। অতীতের জন্য যেমন তা উপযোগী, বর্তমানের জন্যও তেমনি উপযোগী এবং একইভাবে তা ভবিষ্যতের জন্যও। সকল মানুষের জাতির জন্যই তা সমভাবে প্রযোজ্য। কারণ মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তিনিই জানেন, কোন আইন মানুষের জন্য উপযোগী এবং কোনটা অনুপযোগী। কিন্তু এ আইন মেনে নিতে অনিচ্ছুক মানব গোষ্ঠী সব যুগেই তার বিরুদ্ধে নানা আপত্তি ও প্রশ্ন তুলেছে এবং তুলছে।

স্মর্তব্য যে, অপরাধ কিন্তু আদালতে তথ্য ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যসহ বাদীকে আসামীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لو يعطي الناس بدعواهم لادعي رجال اموال قوم و دماءهم لكن البينه علي المدعي واليمين علي من انكر، ‘মানুষ দাবী করা মাত্রই যদি দিয়ে দেওয়া হ’ত তাহ’লে লোকেরা কোন গোষ্ঠীর জান-মাল দাবী করে বসত। কিন্তু নিয়ম হ’ল, বাদীর দায়িত্ব প্রমাণ তুলে ধরা, আর বিবাদীর দায়িত্ব শপথ করা’।[1] বাদী প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হ’লে বিবাদী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে আল্লাহর নামে শপথ করে অস্বীকার করবে। বিবাদী স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করলে সেটাও বিচারক আমলে নিবেন। বাদীকে মিথ্যা মামলা করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। মিথ্যা মামলা মিথ্যা কথার মতই কবীরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন, وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ ‘তারা মনগড়া মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না। (মুমতাহিনাহ ৬০/১২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَلاَ تَأْتُوا بِبُهْتَانٍ تَفْتَرُونَهُ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَأَرْجُلِكُمْ ‘তোমরা কারও প্রতি মনগড়া মিথ্যা অপবাদ আরোপ করো না’।[2] উপরন্তু মিথ্যা মামলা যুলুম। এতে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا، ‘যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয় কোনরূপ অপরাধ না করা সত্ত্বেও, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’ (আহযাব ৩৩/৫৮)। মিথ্যা মামলা করলে তথ্য ও সাক্ষ্যও মিথ্যা হবে। কিন্তু মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান হারাম। আল্লাহ বলেন, وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ، ‘আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না’ (ফুরক্বান ২৫/৭২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ‏ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ‏.‏ قَالَ‏ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ‏ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ، أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ ‘আমি কি তোমাদের কবীরা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড়টির সম্পর্কে বলব না? আমরা বললাম, অবশ্যই বলবেন হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, মাতা-পিতার হুকুম অমান্য করা। এ সময় তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। সাবধান!! মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। কথাটি তিনি বারবার বলতে লাগলে এক পর্যায়ে আমি বললাম, তিনি কি চুপ করবেন না![3] সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হ’লে মামলা ডিসমিস হয়ে যাবে।

মামলা দায়েরের পর ঘটনার সত্যাসত্য যাচাইয়ের বিধান রয়েছে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ، ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের নিকটে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহ’লে তোমরা সেটা যাচাই কর, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশে কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধন না কর। অতঃপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হও’ (হুজুরাত ৪৯/৬)। এজন্য বিচারক মামলা দায়ের হওয়া মাত্রই বিবাদীর উপর দন্ড প্রদানে কোন তাড়াহুড়ো করবেন না। মামলার মধ্যে কোন সন্দেহ আছে কি-না, সাক্ষীদের সাক্ষ্যে কোন সন্দেহ পাওয়া যায় কি-না, ঘটনার বর্ণনায় কোন গরমিল পাওয়া যায় কি-না ইত্যাদি তাকে খুঁজে দেখতে হবে। কোন সন্দেহ পেলে হদ কার্যকর করা যাবে না। এজন্যে ওমর (রাঃ) বলেছেন, لَئِنْ أُعَطِّلَ الْحُدُودَ بِالشُّبُهَاتِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أُقِيمَهَا بِالشُّبُهَاتِ ‘সন্দেহের কারণে আমি যদি হদ বাতিল করি তবে তা সন্দেহমূলে হদ কার্যকর করা থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়’।[4] ইসলামী আইনের এটি একটি কমন ধারা যে, হদকে যথাসাধ্য রোধ করতে হবে। মামলার যুক্তিতর্কে যে পক্ষ হকের উপর রয়েছে তারা যদি হেরে যায় এবং নাহক পক্ষ জয়যুক্ত হয়, আর তারা মামলা থেকে প্রাপ্ত সুযোগ গ্রহণ করে তবে পরকালে তাদেরকে কঠিন শাস্তি পোহাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ وَإِنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إِلَيَّ وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أَنْ يَكُونَ أَلْحَنَ بِحُجَّتِهِ مِنْ بَعْضٍ فَأَقْضِي عَلَى نَحْوِ مَا أَسْمَعُ فَمَنْ قَضَيْتُ لَهُ مِنْ حَقِّ أَخِيهِ شَيْئًا فَلاَ يَأْخُذْهُ فَإِنَّمَا أَقْطَعُ لَهُ قِطْعَةً مِنْ النَّارِ ‘আমি মানুষ বৈ নই। তোমরা আমার কাছে বিবাদ নিয়ে এস। হয়তো তোমাদের কেউ অন্যজন অপেক্ষা তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে অধিক বাকপটু। আর আমি তো যেমন শুনি তদনুসারে বিচার করি। কাজেই আমি যদি তার ভাইয়ের হক থেকে তার জন্য রায় দিয়ে দেই তাহ’লে সে যেন তা গ্রহণ না করে। কেননা আমি তার জন্য যা নির্ধারণ করব তা হবে বস্ত্তত আগুনের একটি অঙ্গার’।[5]

ক্বিছাছ ও হদের মামলায় প্রমাণ হিসাবে কোন ক্ষেত্রে অন্তত দু’জন ন্যায়পরায়ণ পুরুষ এবং কোন ক্ষেত্রে চার জন পুরুষের চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রয়োজন হয়। সাক্ষীদের অবশ্যই সত্য সাক্ষ্য দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ ‘তোমরা আল্লাহর জন্য সত্য সাক্ষ্য দিয়ো’ (তালাক ৬৫/২)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়। (বাদী-বিবাদী) ধনী হৌক বা গরীব হৌক, আল্লাহ তাদের সর্বাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী। অতএব ন্যায়বিচারে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত’ (নিসা ৪/১৩৫)

আল্লাহ তা‘আলা বিচার কার্যে নিয়োজিতদের ন্যায়বিচার করতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার করতে আদেশ দিচ্ছেন’ (নাহল ১৬/৯০)। তিনি আরো বলেন,اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى ‘তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা আল্লাহভীতির সর্বাধিক নিকটবর্তী’ (মায়েদাহ ৫/৮)। বিচারে পক্ষপাতিত্ব করতে আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا، ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে অবিচারে প্ররোচিত না করে’ (মায়েদাহ ৫/৮)

বিচারটা হবে কুরআন ও সুন্নাহর নিরিখে। তার ব্যত্যয় করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ، ‘বস্ত্ততঃ যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়ছালা করে না, তারাই কাফের’ (মায়েদাহ ৫/৪৪)। রাসূলের ফায়ছালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا، ‘অতএব তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনোই (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয় সমূহে তোমাকে বিচারক রূপে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালায় তাদের মনে কোনরূপ দ্বিধা না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)

শাসক-শাসিত, ক্ষমতাধর-ক্ষমতাহীন, ধনী-গরীব, ছোট-বড়, স্বধর্মী-বিধর্মী নারী-পুরুষ সবার জন্য আইন ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রযোজ্য হবে। কারও প্রতি আইন পক্ষপাতিত্ব করবে না। তখনই তা হবে সুবিচার ও ইনছাফ। আইনের প্রথম কথা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন। এ লক্ষ্যেই ইসলামের প্রথম খলীফা আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) খিলাফতের আসনে আসীন হয়ে তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘শোন, তোমাদের মধ্যকার দুর্বল লোকটাও আমার নিকট সবল, যে পর্যন্ত না আমি আল্লাহ চাহে তো তার প্রাপ্য তাকে সোপর্দ করতে পারি। আর তোমাদের মধ্যকার সবল লোকটাও আমার নিকট দুর্বল, যে পর্যন্ত না আমি আল্লাহ চাহে তো তার থেকে প্রাপ্য হক আদায় করতে পারি’।[6] আইন যদি উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে পক্ষপাতমূলক হয়, শাসক শক্তিশালীর জন্য তাতে যদি সাত খুন মাফ, আর বিরোধী দুর্বলের জন্য পান থেকে চুন খসলেই জেল-যুলুমের খড়গ নেমে আসে তবে তা হবে আইনের নামে যুলুম ও অবিচার।

মানুষের এমনকি অন্যান্য সৃষ্টির জীবন রক্ষার প্রতি ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে। পশুর খেতে না দেওয়া, বেঁধে রেখে মেরে ফেলা, পাখির বাসা থেকে বাচ্চা তুলে আনা হাদীছে খুবই গর্হিত কাজ এবং ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে গাছের সবুজ ডাল পর্যন্ত ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরদিকে মানুষ পশুর প্রতি দরদমাখা আচরণ করলে, সে জান্নাতে পর্যন্ত যেতে পারে বলে হাদীছে প্রমাণ রয়েছে’।[7] আর মানুষের কথা তো বলাই বাহুল্য। মানুষ ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর সর্বাধিক সম্মানিত সৃষ্টি। তাই মানুষের জান, মাল ও ইয্যত ইসলামে সবচেয়ে বেশী মূল্যবান। অপরাধীরা যাতে অপরাধের মাধ্যমে মানুষের এই তিনটি দামী জিনিসের উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করে সেজন্য কুরআন ও হাদীছে বহু স্থানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। খোদ ব্যক্তিকেও নিজের জান-মাল ও ইয্যতের তছরূফ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত। আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (নিসা ৪/২৯)। এখানে নিজেদের জান-মাল রক্ষা করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ করছেন সুবিচার ও নেক কাজ করতে এবং নিকটাত্মীয়দের দিতে। আর নিষেধ করছেন অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও বিদ্রোহ থেকে’ (নাহল ১৬/৯০)। এ আয়াতে সার্বিকভাবে মানহানিমূলক কাজ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

মানুষ সচরাচর যেসব অপরাধ করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সে সকল অপরাধ না করার জন্য ছাহাবীদের থেকে বায়‘আত নিতেন। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لَا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ، ‘হে নবী! যখন মুমিন নারীগণ তোমার কাছে এসে এই মর্মে বায়‘আত করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, মিথ্যা অপবাদ দিবে না এবং বৈধ কর্মে তোমার অবাধ্যতা করবে না, তাহ’লে তুমি তাদের বায়‘আত গ্রহণ কর ও তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মুমতাহিনাহ ৬০/১২)

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّهُ قَالَ إِنِّيْ مِنْ النُّقَبَاءِ الَّذِيْنَ بَايَعُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ بَايَعْنَاهُ عَلَى أَنْ لَا نُشْرِكَ بِاللهِ شَيْئًا وَلَا نَسْرِقَ وَلَا نَزْنِيَ وَلَا نَقْتُلَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ وَلَا نَنْتَهِبَ وَلَا نَعْصِيَ بِالْجَنَّةِ إِنْ فَعَلْنَا ذَلِكَ فَإِنْ غَشِيْنَا مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا كَانَ قَضَاءُ ذَلِكَ إِلَى اللهِ

‘উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) বলেন, আমি সে সকল নকীবের একজন যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাতে (আকাবায়) বায়‘আত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা তাঁর নিকট এই মর্মে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলাম যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করব না, চুরি করব না, ব্যভিচার করব না, আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করব না, লুটতরাজ করব না এবং অন্যায় কাজ করব না। আমরা এ বায়‘আত মেনে চললে বিনিময়ে জান্নাত পাব। আর এগুলোর কোন একটায় আমরা লিপ্ত হ’লে তার বিচার আল্লাহর হাতে’।[8]

সূরা মুমতাহিনায় উল্লিখিত বায়‘আত মক্কা বিজয়কালে ঘটেছিল, কিন্তু উবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ)-এর বায়‘আতের ঘটনা ছিল হিজরতের পূর্বে মক্কায়, যখন তাঁর হাতে শাসন ক্ষমতা ছিল না। বুঝে দেখুন, সমাজে অপরাধ দূরীকরণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নবুঅতের সেই প্রথম লগ্ন থেকে কতটা সচেতন ছিলেন! প্রাক নবুঅত যুগে ‘হিলফুল ফুযূল’ গঠনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও সেকথার স্বাক্ষর বহন করে। সাধারণভাবে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন,كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ، دَمُهُ، وَمَالُهُ، وَعِرْضُهُ، ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমকে হত্যা করা, তার সম্পদ গ্রাস করা এবং তার মানহানি করা হারাম’।[9] বিদায় হজ্জের ভাষণেও তিনি এ কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন,إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ، ‏‏‏‏‏‏.‏ لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ، ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত (প্রাণ), তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের মান-সম্ভ্রম তোমাদের পরস্পরের জন্য তেমন হারাম যেমন হারাম তোমাদের এই (আরাফার) দিন, তোমাদের এই মাস, তোমাদের এই শহর। আর উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট এ বার্তা পৌঁছে দেয়।[10] এভাবেই ইসলাম মানুষের জান-মাল ও ইয্যতের উচ্চ মূল্য দিয়েছে। কেউ তা ক্ষুণন করলে সে অপরাধের শাস্তিও ইসলাম কঠোর করেছে।

দেখুন, ক্বিছাছ ও হদের সাথে জড়িত সকল অপরাধ কোন না কোনভাবে মানুষের জান-মাল ও ইয্যতের সাথে জড়িত। তাই সমাজে জান-মাল ও ইয্যতের নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে যেমন হদজনিত অপরাধ করতে নিষেধ করা হয়েছে তেমনি কেউ এহেন অপরাধ করে বসলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজ-রাষ্ট্রে যে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলছে এবং সামাজিক নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে তাতে দেশে চলমান বিচার ব্যবস্থা কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। একটি মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে যদি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহর আইন কার্যকর করা হয় এবং ক্বিছাছ ও হুদূদের আলোকে বিচার ব্যবস্থা সাজানো হয় তবে ইনশাআল্লাহ সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে যাবে। হদ, ক্বিছাছ ও তা‘যীর সম্পর্কে এখানে যে আলোচনা তুলে ধরা হচ্ছে তা থেকে ইনশাআল্লাহ বুঝা যাবে যে, কুরআন ও সুন্নাহ বর্ণিত হুদূদ ও ক্বিছাছ যথেষ্ট বিবেচনা প্রসূত এবং তা প্রয়োগে অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আদালতে মামলা এলেই চাবুক মারা, হাত-পা কেটে দেওয়া কিংবা পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের জন্যই ইসলামী আইন আদল ও ইনছাফের মূর্ত প্রতীক। ফলে এখানে আইনের শাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত থাকায় সমাজে অপরাধপ্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পাবে।

হদ ও ক্বিছাছ :

যে সকল অপরাধের জন্য আল্লাহর অধিকার ক্ষুণ্ণ করার দরুন নির্ধারিত দন্ডের কথা কুরআন ও হাদীছে বলা হয়েছে তা ‘হদ’ নামে পরিচিত। হদের বহুবচন হুদূদ। আর যে সকল অপরাধের বান্দার অধিকার ক্ষুণন করার দরুন কুরআন ও হাদীছে যে দন্ডের কথা বলা হয়েছে তা ক্বিছাছ ও দিয়াত নামে পরিচিত। হদ যেহেতু আল্লাহর হক তাই তা মওকুফ করা কিংবা হ্রাস-বৃদ্ধির কোন অধিকার মানুষের নেই তা সে যে পর্যায়েরই কেউ হোক না কেন। কিন্তু ক্বিছাছ যেহেতু বান্দার হক তাই তা মওকূফ করা কিংবা বাড়ান-কমানোর অধিকার বান্দার থাকে। হদ ও ক্বিছাছ ব্যতীত আদালত আর যেসব দন্ড বিধান করে থাকে তা তা‘যীর নামে পরিচিত।

যে সকল অপরাধে হদ প্রযোজ্য তার সংখ্যা সাত। যথা: ১. চুরি, ২. ডাকাতি, ৩. ব্যভিচার, ৪. সতীত্বে দোষারোপ (অপবাদ), ৫. মদ পান, ৬. রিদ্দাহ বা দ্বীন ইসলাম ত্যাগ ও ৭. বিদ্রোহ।

এখানে সংক্ষেপে উল্লিখিত অপরাধ ও তাদের হদগুলো আলোচনা করা হ’ল।

১. চুরি ও তার হদ : চুরিকে আরবীতে ‘সারেকাহ’, বলে। গোপনে অন্যের কোন জিনিস নেওয়াকে চুরি বলে। কোন ব্যক্তির হেফাযতকৃত জিনিস তার অজ্ঞাতে লুকিয়ে গ্রহণকারীকে আরবরা চোর বলে। চুরির মধ্যে তিনটি বিষয় থাকা শর্ত। ক. অন্যের মালিকানাধীন মাল নেওয়া। খ. নেওয়াটা হবে গোপনে ও লুকিয়ে। গ. মাল হবে হেফাযতকৃত বা সংরক্ষিত। সুতরাং কোন মাল অন্যের মালিকানাধীন না হ’লে অথবা অন্যের মালিকানাধীন মাল প্রকাশ্যে নিলে অথবা তার মাল হেফাযতকৃত না হ’লে তা হাত কাটার শাস্তিযোগ্য চুরি বলে গণ্য হবে না। একই কারণে আত্মসাৎকারী ও ছিনতাইকারীর হাত কাটা যাবে না। তবে এদের সকলের উপর তা‘যীর প্রযোজ্য হবে। এ আলোচনা থেকে বুঝা যায় চুরি দুই প্রকার। এক প্রকার চুরি, যেজন্য তা‘যীর প্রযোজ্য। দ্বিতীয় প্রকার চুরি, যেজন্য হদ প্রযোজ্য। উভয় প্রকারের বিস্তারিত বর্ণনা ফিক্বহের গ্রন্থগুলোতে রয়েছে।

চুরির শাস্তি হিসাবে আল্লাহ বলেছেন,وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللهِ، ‘চোর পুরুষ হৌক বা নারী হৌক তার হাত কেটে দাও তার কৃতকর্মের ফল স্বরূপ’ (মায়েদাহ ৫/৩৮)। যদিও চুরির প্রমাণ মিললে আল্লাহ তা‘আলা সাধারণভাবে নারী-পুরুষ উভয় প্রকার চোরের হাত কেটে দিতে বলেছেন, কিন্তু চুরির সংজ্ঞা ও হাদীছ থেকে প্রমাণ মেলে যে, হাত কাটার ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটা নেছাব রয়েছে, তার কমে হাত কাটা যাবে না। অনুরূপভাবে হাদীছে অনেক শ্রেণীর চোরের হাত কাটতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। পরিবারের সদস্যগণ এমনকি নিকটত্মীয় কেউ চুরি করলে তার হাত কাটা যাবে না। সব্জি ও পচনশীল দ্রব্য চুরিতে হাত কাটা নেই। মোটকথা চোর, চুরিকৃত দ্রব্য ও চুরির স্থান সম্পর্কিত কিছু দিক হদ জারীর ক্ষেত্রে বিবেচ্য।

বাহ্যদৃষ্টিতে চুরির জন্য হাত কাটাকে কঠোর শাস্তি মনে হ’তে পারে, প্রাচ্য-প্রতীচ্যের বিভিন্ন চিন্তাবিদগণ তা বলেও থাকেন। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে বুঝা যাবে চুরির জন্য তা‘যীরের সাথে হাত কাটার হদও অত্যন্ত উপযোগী।

২. ডাকাতি বা দস্যুতা ও তার হদ : ডাকাতি বা দস্যুতাকে আরবীতে ‘হিরাবাহ’ ও ‘কাতউত ত্বরীক’ বলা হয়। পরিভাষায় দ্বীন, আখলাক, শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে একদল সশস্ত্র লোক কর্তৃক ইসলামী রাষ্ট্রের জনগণের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, খুন-খারাবী, সম্পদ ছিনতাই, ইয্যতহানি, ক্ষেত-খামার ও পশুপাল ধ্বংস করার মতো কাজকে ডাকাতি বা দস্যুতা বলে।[11] এসব ডাকাত মুসলিম অমুসলিম যে কেউ হ’তে পারে। তারা দলবদ্ধও হ’তে পারে, আবার একজনও হ’তে পারে।

ডাকাতি বা দস্যুতা বড় ধরনের অপরাধ হিসাবে গণ্য। এজন্য কুরআন এহেন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধকারী এবং দেশের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টিকারী’ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। আর এ অপরাধের শাস্তিও এত কঠোর করেছে যে এমন শাস্তি অন্য কোন অপরাধের ক্ষেত্রে আরোপ করেনি। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ، ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা তাদের জন্য দুনিয়াবী লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি’ (মায়েদাহ ৫/৩৩)

আয়াত থেকে বুঝা যায়, ডাকাতির শাস্তি চার প্রকার : হত্যা, অথবা শূলে চড়িয়ে হত্যা, অথবা বিপরীতক্রমে হাত-পা কেটে দেওয়া, অথবা জন্মভূমি থেকে বের করে দেওয়া।

আয়াতে ‘অথবা’ শব্দ থাকায় অনেক ইমাম বলেছেন, বিচারক চারটি শাস্তির যে কোনটি কার্যকর করতে পারেন। আবার অনেক ইমাম বলেছেন, চার শাস্তি চার প্রকার অপরাধের সাথে যুক্ত। ডাকাত যদি শুধু হত্যা করে অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে না নেয় তাহ’লে হত্যা কার্যকর হবে। যদি হত্যা ও অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে থাকে তাহ’লে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। যদি হত্যা না করে কেবল অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে থাকে তাহ’লে বিপরীতক্রমে হাত-পা কেটে দেওয়া হবে।

আর যদি হত্যা ও অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার মতো কোন কিছুই না করে কেবল ভয়-ভীতি দেখায় তাহ’লে জন্মভূমি থেকে বের করে দেওয়া হবে।

অবশ্য ডাকাতির হদ জারীর জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। এক- ডাকাতকে প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ হওয়া, দুই- তার সাথে যে কোন ধরনের অস্ত্রপাতি থাকা, তিন- লোকালয় থেকে দূরে ডাকাতি হওয়া, চার- ডাকাতির কার্য লোকচক্ষুর সামনে করা। লোকচক্ষুর আড়ালে হ’লে তা চুরি বলে গণ্য হবে। তৃতীয় শর্ত ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম ছাওরী (রহঃ) আরোপ করেছেন। তাদের মতে, লোকালয়ে ডাকাতি ছিনতাই বলে গণ্য। কাজেই সেজন্য ডাকাতির শাস্তির স্থলে তা‘যীর আরোপিত হবে। কিন্তু ইমাম শাফেঈ, মালেক, আহমাদ, আবু ছাওর, আওযাঈ, লাইছ, আহলে যাহের প্রমুখের মতে লোকালয়, নির্জন রাস্তা, মরুভূমি সর্বত্রই ডাকাতির আইন একই। সুতরাং সব ক্ষেত্রে ডাকাতির শাস্তি কার্যকর হবে। আয়াতে তো কোন পার্থক্য টানা হয়নি। [ক্রমশঃ]


[1]. তিরমিযী হা/১৩৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৯৭; ইরওয়া হা/১৯৩৮।

[2]. বুখারী হা/১৮; মিশকাত হা/১৮।

[3]. বুখারী হা/৫৯৭৬।

[4]. ইবনু আবি শায়বা, আল-মুছান্নাফ, হুদুদ অধ্যায় হা/২৮৪৯৩।

[5]. বুখারী হা/৭১৬৯; মিশকাত হা/৩৭৬১; ছহীহাহ হা/১১৬২।

[6]. সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৬৬১, www.islamweb.net

[7]. বুখারী হা/৩৩২১; মিশকাত হা/১৯০২।

[8]. বুখারী হা/৩৮৯৩, ৬৮৭৩, ১৮, ৩৮৯২।

[9]. মুসলিম হা/২৫৬৪।

[10]. বুখারী হা/৬৭, ১৭৩৯; মুসলিম হা/৪২৭৬; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৯০৫; তিরমিযী হা/২১৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৫।

[11]. ফিকহুস সুন্নাহ ২/৪১৬।






আদল : মানব জীবনের এক মহৎ গুণ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ আজিবার রহমান
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৪র্থ কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল
আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পাঁচ দফা মূলনীতি : একটি বিশ্লেষণ (প্রথম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
তালাকের শারঈ পদ্ধতি ও হিল্লা বিয়ের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৭ম কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য - ইহসান ইলাহী যহীর
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের শিথিলতা : আমাদের করণীয় (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.