গত ১৬ ও ১৭ অক্টোবর’০৩ মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় অনুষ্ঠিত পৃথিবীর ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠন ওআইসির ১০ম শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে মালয়েশিয়ার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ৭৩ বছর বয়স্ক মাহাথির মুহাম্মাদ তাঁর উদ্দীপনাময় ভাষণে বলেন যে, ‘ইহূদীরা অন্যদের মাধ্যমে পৃথিবী শাসন করছে’। তাঁর এই বক্তব্যে ইহূদীদের মদদদাতা খ্রিষ্টান বিশ্বের ক্রুসেড কণ্ঠ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ জুনিয়র বুশ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মাহাথিরকে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেছেন। মাহাথির এসবের ধারে কাছে না গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ওরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমনকি তাদের নবীর বিরুদ্ধে ঢালাও বক্তব্য দিয়ে পার পেয়ে যাবে, আর আমরা তাদের বিরুদ্ধে সামান্য কিছু বললেই সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসের মদদদাতা বনে যাব, এটা হ’তে পারে না। তিনি বলেন, আমার বক্তব্যে ইউরোপ-আমেরিকার নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হওয়াতেই প্রমাণিত হয় যে, ইহূদীরা কাদের মাধ্যমে বিশ্ব শাসন করছে। অথচ এই ইউরোপীয়রাই ১ কোটি ২০ লাখ ইহূদীর ৬০ লাখকেই হত্যা করেছিল’। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইহূদীরা আজ ইউরোপীয়দের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সারা বিশ্বে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। যাকে তাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলছে। সমস্ত আরব বিশ্বকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রেখেছে। এমনকি সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে টার্গেট করার অজুহাত সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে তারা ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা ঘটায়। এরপর থেকেই তাদের বরকন্দাজ প্রেসিডেন্ট বুশ তার শাসনকালের প্রথম দু’বছরেই আফগানিস্তান ও ইরাক দু’টি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রকে গ্রাস করেছে। পাকিস্তানকে বগলদাবা করেছে। সঊদী আরব, ইরান ও সিরিয়ার দিকে এখন বন্দুক তাক করে রেখেছে। যেকোন সময়ে সে ঐসব অঞ্চলে হামলে পড়ে মুসলমানদের জান-মাল, ইয্যত লুণ্ঠন ও তৈল শোষণে মেতে উঠবে।

মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ দেখছেন ও বুঝছেন সবকিছু। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছেন না প্রধানতঃ কয়েকটি কারণে। ১. অতি ভোগবাদী, বিলাসী ও অলস মস্তিষ্ক হওয়ার কারণে নেতৃস্থানীয় মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের ও ঐসব দেশের এলিট শ্রেণীর অধিকাংশের চিন্তাশক্তির প্রখরতা, আত্মসম্মানবোধ ও লক্ষ্য অর্জনের দৃঢ়তা ভোঁতা হয়ে যাওয়া। ২. অধিকাংশ মুসলিম দেশে ইহূদী-খ্রিষ্টানদের চালান করা গণতন্ত্রের নামে দলাদলি ও পারস্পরিক হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনৈতিক কালচার চালু হওয়া। প্রথমোক্ত দলের নেতাগণ তাদের তৈল বিক্রির অর্থ জমা রেখেছেন পাশ্চাত্যের ব্যাংকগুলিতে। আর এভাবেই তারা বন্দী হয়ে আছেন ইহূদীদের হাতে। শেষোক্ত দলের নেতাগণ আভ্যন্তরীণ হিংসা-হানাহানি ও শোষণ-লুটপাটের রাজনীতির ফলে রাজকোষ খালি করে ইহূদী নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ নেতাদের কাছে ঋণ ও অনুদান প্রাপ্তির আশায় সর্বদা ঘুরে বেড়ান ভিক্ষুকের মত। ফলে তারাও বন্দী হয়ে আছেন ইহূদীদের কাছে। এভাবে মুসলিম বিশ্বের কোন দেশই আজ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়।

রাষ্ট্র নেতাদের চরম ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত সমাজের হতাশাগ্রস্ত মানুষ অবশেষে নিজেদের জীবন বাজি রেখে চূড়ান্ত পন্থা বেছে নিয়ে থাকে। যা অনেক সময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের সাময়িকভাবে হ’লেও নিবৃত্ত করে। উপমহাদেশে বৃটিশ বিরোধী জিহাদ আন্দোলন ও বিভিন্ন সময়ের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বর্তমান কালে কাশ্মীর, ফিলিস্তীন, আফগানিস্তান, চেচনিয়া ও ইরাকী জনগণের মুক্তি আন্দোলন একথাই মনে করিয়ে দেয়। যদিও এসব বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। ইহূদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ও রাষ্ট্রনেতারা এইসব প্রতিরোধ আন্দোলনকে আজকাল সন্ত্রাসবাদ বলে আখ্যায়িত করছে নিজেদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আড়াল করার জন্য। জানিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তারা কি বলে আখ্যায়িত করবেন।

ইতিমধ্যেই ইহূদী-নাছারা নিয়ন্ত্রিত এনজিও গোষ্ঠী তাদের ঋণের জালে বাংলাদেশের জনগণকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। তাদেরই তাঁবেদার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর চোখ রাঙ্গানিতে দেশ চলছে ভীত-সন্ত্রস্ত গতিতে। অতএব ইহূদী-নাছারা ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ত্রয়ী শক্তির হিংস্র থাবা থেকে বাঁচার জন্য হে নিপীড়িত জনগণ গা ঝাড়া দিয়ে জেগে ওঠো। আল্লাহর উপরে ভরসা করে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসো। ঐ শোন আল্লাহর ঘোষণা : ‘(হে নবী!) ইহূদী-নাছারাগণ কখনোই তোমার উপরে খুশী হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের অনুসারী হবে। তুমি বল, আল্লাহর হেদায়াতই চূড়ান্ত হেদায়াত। এক্ষণে যদি তুমি তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অনুসারী হও তোমার নিকটে ইল্ম (অহি-র জ্ঞান) এসে যাওয়ার পরেও, তাহ’লে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অভিভাবক বা কোন সাহায্যকারী থাকবে না (বাক্বারাহ ২/১২০)। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন![1]


[1]. ৭ম বর্ষ ২য় সংখ্যা নভেম্বর ২০০৩।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারই সুখী সমাজের চাবিকাঠি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জাতীয় সংসদ নির্বাচন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ছিয়াম দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভাল আছি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছ আন্দোলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
গিনিপিগ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তবে কি বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামী খেলাফত : জাতির নিকটে আমাদের প্রস্তাব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাবরী মসজিদের রায় : ভূলুণ্ঠিত ন্যায়বিচার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বিশ্বের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর তাকীদ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আসামে মুসলিম নিধন
হিংসা ও অহংকার সকল পতনের মূল - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.