সদ্য সমাপ্ত উপযেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে ‘সীল মারার মহোৎসব’ বেলা ৮-টায় ভোটদান শুরুর আগেই ভোর ৪-টায় ভোটের বাক্স ভর্তি ইত্যাদি নানা চটকদার শিরোনাম পত্রিকা সমূহে এসেছে। বস্ত্ততঃ বিগত সময়ে প্রায় সকল নির্বাচনে কমবেশী এটাই হয়ে এসেছে। তবে অনেকের মতে এবার কোন কোন ভোট কেন্দ্রে দৃষ্টিকটুভাবে একটু বেশী হয়েছে। যদিও বিজয়ী সরকারী দলের পক্ষ থেকে পূর্বের সরকারগুলির ন্যায় একইভাবে বলা হয়েছে যে, নির্বাচন খুবই সুন্দর ও স্বচ্ছভাবে সমাপ্ত হয়েছে। জনগণ বিপুল উৎসাহে ভোট দিয়েছে। শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ভোট পড়েছে ইত্যাদি। সেজন্য সরকারী দল জনগণকে ধন্যবাদও জানিয়েছে। কিন্তু আসলে সবই শুভংকরের ফাঁকি। যা সবার নিকট দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। যুগ যুগ ধরে নির্বাচনের নামে এভাবেই প্রতারণা হয়ে আসছে। মাঝে মধ্যে অনেকের কাছ থেকে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায়। যেমন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলী খান কিছুদিন আগে বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নতুনভাবে ঢেলে সাজাবার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। কোন কোন জাতীয় পত্রিকায় বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা হয়েছে। যদিও কোন প্রস্তাব তারা দেননি বা দিতে পারেননি। পার্শ্ববর্তী ভারতেও এখন এই নির্বাচনী খেলা চলছে। বলা চলে যে, বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এই প্রথার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হচ্ছে। প্রধানতঃ দল ও প্রার্থী ভিত্তিক এই নির্বাচনী ব্যবস্থার কুফল হিসাবে সমাজিক দ্বন্দ্ব, রেষারেষি ও খুন-খারাবি কমবেশী সব দেশেই সমান। এমনকি এর ফলে সমাজের সর্বনিম্ন ইউনিট পারিবারিক ব্যবস্থা পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়ছে। সুশাসনের নামে ও নেতৃত্বের সুঁড়সুড়ি দিয়ে মানুষকে একাজে নামানো হলেও পরিণামে জনগণই শোষিত ও বঞ্চিত হয়। কিন্তু তখন তাদের আর কিছুই করার থাকে না।

এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব হ’ল, উপযেলা হৌক বা জাতীয় সংসদ হৌক কোন স্তরেই কোন নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। কেননা এগুলিতে স্রেফ জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি, পারস্পরিক হানাহানি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ব্যতীত কিছুই লাভ হয় না। তাছাড়া এই সকল জনপ্রতিনিধি জনকল্যাণে তেমন কোন ভূমিকা রাখেন না। উল্টা তারা প্রশাসনকে অহেতুক বাধাগ্রস্ত করেন মাত্র। আর এটাই বাস্তব ও সঠিক কথা যে, বিচক্ষণ নির্বাচক ব্যতীত বিচক্ষণ নেতা নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর বিধান এই যে, দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিরপেক্ষ পরামর্শের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একজন ‘আমীর’ নিযুক্ত হবেন। প্রয়োজনে দল ও প্রার্থীবিহীনভাবে তিনি নির্বাচিত হবেন। কেননা ইসলামে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া, নেতৃত্বের লোভ করা বা আকাংখা করা এবং নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়া করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (বুখারী, মুসলিম)। এভাবে ‘আমীর’ নির্বাচনের পর জনগণ তাঁকে সমর্থন দিবেন ও আনুগত্যের বায়‘আত বা অঙ্গীকার করবেন। কেউ আমীরকে দলীয়ভাবে চিন্তা করবে না এবং তিনিও কারু প্রতি দলীয় আবেগ বা বিদ্বেষ পোষণ করবেন না। কারণ তিনি প্রার্থী হননি। কোন দলের হয়ে ভোট চাননি এবং তিনি জানতে পারেন না, কারা তাঁকে ভোট দিয়েছে বা দেয়নি। ফলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সকলের প্রতি উদার হবে এবং তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হবেন। ‘আমীর’ রাষ্ট্রের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের মধ্য হতে নিজের জন্য একটি মজলিসে শূরা মনোনয়ন দিবেন। প্রয়োজনে অন্যান্য যোগ্য ও গুণী ব্যক্তিদের নিকট থেকেও তিনি পরামর্শ গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ। এ তিনটির মধ্যে বর্তমানে বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের প্রধান পদগুলি দেশের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হয়। ইসলামী শাসনে উপরোক্ত দু’টি বিভাগ ছাড়াও আইন সভার সদস্যগণও ‘আমীর’ কর্তৃক মনোনীত হবেন। অথচ গণতন্ত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটিকে জনগণের হাতে সোপর্দ করা হয়। ফলে অদক্ষ বা অযোগ্য ব্যক্তিরাই সাধারণতঃ এখানে নির্বাচিত হয়ে আসেন এবং সেই সাথে সমাজে সৃষ্টি হয় অনাকাংখিত ভাবে দলাদলি, হিংসা-হানাহানি ও চরম অশান্তি। আর নির্বাচনগুলি মেয়াদ ভিত্তিক হওয়ার কারণে মানুষ সর্বদা ক্ষমতা লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ আর গীবত-তোহমত এমনকি গুম-খুন ও অপহরণের মত নোংরা কাজের মধ্য দিয়ে তাদের মেয়াদ কাটে।

অতএব নির্বাচন বিষয়ে আমাদের পরামর্শ হ’ল, আমরা মুসলমান। আমাদের নেতা নির্বাচিত হবেন ইসলামী বিধান মতে দল ও প্রার্থীবিহীনভাবে বিচক্ষণ নির্বাচকদের মাধ্যমে। ইহূদী-নাছারা বা অন্য কারু মনগড়া বিধান মতে নেতৃত্ব নির্বাচনে আমাদের ইহকালে ও পরকালে কোন কল্যাণ নেই। আর সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হবেন আল্লাহ। কুরআন ও সুন্নাহ হবে দেশের আইন রচনার মানদন্ড। যা মুসলিম-অমুসলিম সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে কল্যাণকর। যেমন আল্লাহর দেওয়া আলো-বাতাস সবার জন্য কল্যাণকর। আর আল্লাহর চাইতে উত্তম বিধানদাতা আর কে আছে? ‘আমীর’ স্বেচ্ছাচারী হ’তে পারেন না। তিনি সর্বদা আল্লাহ ও মজলিসে শূরার নিকটে এবং জনগণের নিকটে দায়বদ্ধ থাকেন। যা Check & Balance-এর সর্বোত্তম নমুনা হিসাবে কাজ করে। দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে। যা ইসলামী বিধান মতে বিচার করবে। ‘আমীর’ বা যেকোন সরকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। আমীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এবং তা ইমারতের অযোগ্যতা প্রমাণ করলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এবং মজলিসে শূরা বা পার্লামেন্টের অনুমোদনক্রমে তিনি যেকোন সময় অপসারিত হবেন। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ইমারত-এর যোগ্য থাকা পর্যন্ত বা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঐ দায়িত্বে বহাল থাকবেন।

এই নির্বাচনের ফল দাঁড়াবে এই যে, জাতি সর্বদা একদল দক্ষ, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রশাসনের সর্বত্র দেখতে পাবে। ৪, ৫, ৬ বছর অন্তর নেতৃত্ব নির্বাচনের অন্যায় ঝামেলা, অহেতুক অপচয় ও জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে দেশ বেঁচে যাবে। সামাজিক অনৈক্য ও রাজনৈতিক হানাহানি থেকে জাতি রক্ষা পাবে। এর ফলে প্রশাসন ও জনগণ একাগ্রচিত্তে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারবে। সর্বোপরি আল্লাহর বিধান মেনে চলার কারণে দেশে আল্লাহর রহমত নেমে আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)






মিসকীন ওবামা, ভিকটিম ওসামা, সাবধান বাংলাদেশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নমরূদী হুংকার! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নেতৃবৃন্দের সমীপে - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ওয়াহহাবী সংস্কার আন্দোলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বানরবাদ ও ট্রান্সজেন্ডার, এরপর কি? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দেশের তরুণ সমাজ বিদেশমুখী হচ্ছে কেন? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুরসির বিদায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শাসন ব্যবস্থায় আল্লাহর ওয়াদা স্মরণ রাখুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
থার্টি-ফার্স্ট নাইট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস হৌক যাকাত ও ছাদাক্বা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
জবাবদিহিতার অনুভূতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পার্থক্যকারী মানদন্ড - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.