‘সালাফী’ অর্থ পূর্বসূরীদের অনুসারী। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের তরীকার অনুসারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ইহূদীরা ৭১ ফের্কায়, নাছারারা ৭২ ফের্কায় এবং আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। তার মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত দল হবে মাত্র একটি। যারা আমার ও আমার ছাহাবীগণের তরীকার উপরে চলবে’ (তিরমিযী হা/২৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২)। এক্ষণে সেই হকপন্থী জামা‘আত বা নাজী ফের্কা কোনটি, সে সম্পর্কে সালাফে ছালেহীন বিদ্বানগণ এক বাক্যে বলেছেন যে, তারা হ’ল আহলুল হাদীছ-এর দল। যেমন (১) ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, ‘উক্ত দল হ’ল ‘আহলুল হাদীছ জামা‘আত’। যারা রাসূলের বিধানসমূহের হেফাযত করে ও তাঁর ইল্ম কুরআন ও হাদীছের পক্ষে প্রতিরোধ করে। নইলে মু‘তাযিলা, রাফেযী (শী‘আ), জাহমিয়া, মুরজিয়া ও আহলুর রায়দের নিকট থেকে আমরা সুন্নাতের কিছুই আশা করতে পারি না। বিশ্বপ্রভু এই বিজয়ী দলকে দ্বীনের পাহারাদার হিসাবে নিযুক্ত করেছেন এবং ছাহাবা ও তাবেঈনের সনিষ্ঠ অনুসারী হবার কারণে তাদেরকে হঠকারীদের চক্রান্তসমূহ হ’তে রক্ষা করেছেন। .. এরাই হ’লেন আল্লাহর সেনাবাহিনী। নিশ্চয়ই আল্লাহর সেনাবাহিনী হ’ল সফলকাম’ (শারফ ৫)। (২) ইয়াযীদ ইবনে হারূণ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘তারা যদি আহলেহাদীছ না হন, তবে আমি জানি না তারা কারা? (তিরমিযী)। ইমাম বুখারীও এবিষয়ে দৃঢ়মত ব্যক্ত করেছেন’। ক্বাযী ইয়ায বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) একথা দ্বারা আহলে সুন্নাত এবং যারা আহলুল হাদীছ-এর মাযহাব অনুসরণ করে, তাদেরকে বুঝিয়েছেন’ (ফাৎহুল বারী হা/৭১-এর ব্যাখ্যা)। (৩) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘যখন আমি কোন আহলেহাদীছকে দেখি, তখন আমি যেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জীবন্ত দেখি’ (শারফ ২৬)। (৪) খ্যাতনামা তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হিঃ) বলেন, ‘নাজী দল হ’ল আহলেহাদীছ জামা‘আত’।... লোকদের মধ্যে তারাই ছিরাতে মুস্তাক্বীম-এর উপর সর্বাপেক্ষা দৃঢ়’ (শারফ ১৫, ৩৩)। (৭) আহমাদ ইবনু সারীহ বলতেন, ‘দলীলের উপর কায়েম থাকার কারণে আহলেহাদীছগণের মর্যাদা ফক্বীহগণের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে (শা‘রানী, মীযানুল কুবরা ১/৬২)। (৮) ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আহলেহাদীছ জামা‘আত যদি না থাকত, তাহ’লে ইসলাম দুনিয়া থেকে মিটে যেত’ (শারফ ২৯ পৃঃ)।
(১) খ্যাতনামা তাবেঈ ইমাম শা‘বী (২২-১০৪ হি.) ছাহাবায়ে কেরামের জামা‘আতকে ‘আহলুল হাদীছ’ বলতেন। একদা তিনি বলেন, এখন যেসব ঘটছে, তা আগে জানলে আমি কোন হাদীছ বর্ণনা করতাম না, কেবল ঐ হাদীছ ব্যতীত, যার উপরে ‘আহলুল হাদীছগণ’ (অর্থাৎ ছাহাবায়ে কেরাম) একমত হয়েছেন’ (যাহাবী, তাযকেরাহ ১/৮৩)। (৩) ছাহাবায়ে কেরামের শিষ্যমন্ডলী তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন সকলে ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন। ...(৪) ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ), ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ), ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) সকলেই ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন। স্বীয় যুগে হাদীছ তেমন সংগৃহীত না হওয়ার ফলে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) অধিকহারে রায় ও ক্বিয়াসের আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে তাঁকে ‘আহলুর রায়দের ইমাম’ বলা হয়ে থাকে। তিনি নিজে কোন কিতাব লিখে যাননি। বরং শিষ্যদের অছিয়ত করে গিয়েছেন এই বলে যে, যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, জেনে রেখ সেটাই আমার মাযহাব’ (রাদ্দুল মুহতার ১/৬৭)। (৬) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর প্রধান শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) একদা তাঁর দরবারের সম্মুখে কতিপয় আহলেহাদীছকে দেখে উল্লসিত হয়ে বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে আপনাদের চেয়ে উত্তম আর কেউ নেই’ (শারফ ২৮)। (৭) শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী বলেন, জেনে রাখ হে পাঠক! ৪র্থ শতাব্দী হিজরীর পূর্বে কোন মুসলমান নির্দিষ্টভাবে কোন একজন বিদ্বানের মাযহাবের তাক্বলীদের উপরে সংঘবদ্ধ ছিল না (হুজ্জাতুল্লাহ ১/১৫২)।
মুজতাহিদ ইমামগণের সকলেই তাঁদের তাক্বলীদ তথা দ্বীনী বিষয়ে বিনা দলীলে অন্ধ অনুসরণ বর্জন করে কুরআন ও সুন্নাহর প্রকাশ্য অর্থের উপর আমল করার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন (শা‘রানী, মীযানুল কুবরা ১/৬০)। এ জন্য তাঁরা সবাই নিঃসন্দেহে ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন। কিন্তু তাঁদের অনুসারী মুক্বাল্লিদগণ ইমামদের নির্দেশ উপেক্ষা করে পরবর্তীতে ছহীহ হাদীছ পাওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে গিয়েছেন এবং পরবর্তী যুগের স্ব স্ব মাযহাবী বিদ্বানদের রায় ও তাঁদের রচিত ফিক্বহ ও ফৎওয়াসমূহের অন্ধ অনুসারী হয়ে প্রকৃত প্রস্তাবে এক ইমামের নামে অসংখ্য আলেমের রায়পন্থী ‘আহলুর রায়’ বনে গেছেন। এ জন্য অনুসারীগণ দায়ী হ’লেও ইমামগণ দায়ী নন। সেকারণ খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আবদুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী বলেন, ‘ইমামের ওযর আছে, কিন্তু অনুসারীদের জন্য কোন ওযর নেই’ (মীযান ১/৭৩)। ইমামদের ওযর আছে এজন্য যে, তাঁরা যে অনেক হাদীছ জানতেন না, সেকথা খোলাখুলিভাবে বলে গেছেন ও পরবর্তীতে ছহীহ হাদীছ পেলে তা অনুসরণের জন্য সবাইকে তাকীদ দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু অনুসারীদের কোন ওযর নেই এ কারণে যে, তারা তাদের যুগে ছহীহ হাদীছ পাওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেনি ও তার উপরে আমল করেনি। এতদ্ব্যতীত চার ইমামের নামে প্রচলিত ফৎওয়াসমূহ ও বিশেষ করে হানাফী ফিক্বহে বর্ণিত ক্বিয়াসী ফৎওয়াসমূহের সবটুকু অথবা অধিকাংশ ফৎওয়াই ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নয় বলে শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী সহ বহু বিদ্বান মন্তব্য করেছেন (হুজ্জাতুল্লাহ, দিরাসাত প্রভৃতি)। শুধু ফিক্বহী বা ব্যবহারিক বিষয়েই নয় বরং উছূলে ফিক্বহ বা ব্যবহারিক আইন সূত্রসমূহেও ইমামের শিষ্যদ্বয় ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর বিরোধিতা করেছেন (সুবকী, ত্বাবাক্বাত ১/২৪৩)। ইমাম শাফেঈ ব্যতীত বাকী তিন ইমামের কেউ ফিক্বহী বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনা করে যাননি। সেকারণ ইবনু দাক্বীকুল ঈদ (মৃ. ৭০২ হি.) বলেন, চার ইমামের নামে প্রচলিত ফৎওয়া সমূহকে তাঁদের দিকে সম্বন্ধ করা হারাম। এগুলির মাধ্যমে তাদের উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে মাত্র’ (ঈক্বায ৯৯ পৃ.)। অতএব ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এবং অন্যান্য ইমামদের যেসব মাযহাব বর্তমানে চালু আছে, তার অধিকাংশ পরবর্তী যুগে দলীয় আলেমদের সৃষ্টি।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত এবং ছাহাবী ও তাবেঈগণের জামা‘আতের অনুসারী ব্যক্তিকে ‘আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’ বলা হয়। তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হি.) বলেন, ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত- যাদেরকে আমরা হকপন্থী ও তাদের বিরোধী পক্ষকে বাতিলপন্থী বলেছি, তাঁরা হ’লেন (ক) ছাহাবায়ে কেরাম (খ) তাঁদের অনুসারী শ্রেষ্ঠ তাবেঈগণ (গ) আহলেহাদীছগণ (ঘ) ফক্বীহদের মধ্যে যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন যুগে যুগে আজকের দিন পর্যন্ত এবং (ঙ) প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ঐ সকল আম জনসাধারণ, যারা তাঁদের অনুসারী হয়েছেন’ (কিতাবুল ফিছাল ১/৩৭১)। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম, মুহাদ্দেছীন ও হাদীছপন্থী ফক্বীহগণই কেবল আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বা ‘আহলুল হাদীছ’ ছিলেন না, বরং তাঁদের তরীকার অনুসারী আম জনসাধারণও ‘আহলুল হাদীছ’ নামে সকল যুগে কথিত হ’তেন এবং আজও হয়ে থাকেন।
আহলেহাদীছের বিরুদ্ধে বিদ‘আতীদের ক্রোধ বর্ণনা করতে গিয়ে শায়খ আব্দুল ক্বাদির জীলানী (৪৭০-৫৬১ হি.) বলেন, ‘জেনে রাখ যে, বিদ‘আতীদের কিছু নিদর্শন রয়েছে, যা দেখে তাদের চেনা যায়। বিদ‘আতীদের লক্ষণ হ’ল আহলেহাদীছদের গালি দেওয়া ও বিভিন্ন বাজে নামে তাদেরকে সম্বোধন করা। এগুলি সুন্নাতপন্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় গোঁড়ামী ও অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই একটি নাম ব্যতীত। সেটি হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’। বিদ‘আতীদের এই সব গালি প্রকৃত অর্থে আহলেহাদীছদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন মক্কার কাফিরদের জাদুকর, কবি, পাগল, মাথা খারাপ, গায়েবজান্তা প্রভৃতি গালি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য প্রযোজ্য ছিল না’ (কিতাবুল গুনিয়াহ ১/৯০)। ইমাম আহমাদ ইবনু সিনান আল-ক্বাত্বান (মৃ. ২৫৯ হি.) বলেন, ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী নেই, যে আহলেহাদীছের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না। যখন কোন ব্যক্তি বিদ‘আত করে, তখন তার অন্তর থেকে হাদীছের স্বাদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়’ (ছাবূনী, আক্বীদাতুস সালাফ ১০২ পৃঃ)। বিখ্যাত তাবেঈ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হিঃ) বলেন, ‘দ্বীনকে ধ্বংস করে মাত্র তিনজন : অত্যাচারী শাসকবর্গ, দুষ্টমতি আলেমরা ও ছূফী পীর-মাশায়েখরা’ (শরহ আক্বীদা ত্বাহাভিয়া ২০৪ পৃঃ)।
সালাফী বা আহলেহাদীছ তাই প্রচলিত অর্থে কোন ফের্কা বা মতবাদের নাম নয়, এটি একটি পথের নাম। এ পথ আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র পথ। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথ। এ পথের শেষ ঠিকানা হ’ল জান্নাত। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের যাবতীয় হেদায়াত এপথেই মওজুদ রয়েছে। সালাফী বা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সেই জান্নাতী পথেই মানুষকে আহবান জানায়। এ আন্দোলন তাই মুমিনের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র আন্দোলন।
‘ফ্রান্সে সালাফীবাদ মোকাবেলায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার চাপ বাড়ছে’ শিরোনামে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে (ইনকিলাব ২৯ মার্চ‘১৮) দীর্ঘ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। পরের সপ্তাহে পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক লিখিত ‘ইসলামের রূপ কেউ বদলাতে পারবে না’ শিরোনামে কথিত ওয়াহাবীবাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে সালাফীদের বিরুদ্ধে খুশীমত ভিত্তিহীন মন্তব্য করা হয়েছে (ইনকিলাব ৯ই এপ্রিল‘১৮)। তাঁর ভাষায়, হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম ঐক্য, প্রতিষ্ঠিত ৪ মাযহাব ও সমাজের শান্তি-শৃংখলার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে আত্মঘাতী’। বেশ, তাহ’লে নিন্দিত যুগে চতুর্থ শতাব্দী হিজরীতে প্রচলিত ৪ মাযহাব প্রতিষ্ঠার আগে স্বর্ণযুগের মুসলমানদের অবস্থা কি ছিল? হানাফী-শাফেঈ ও শী‘আ দ্বন্দ্বে ৬৫৬ হিজরীতে বাগদাদের খেলাফত ধ্বংসের রক্তাক্ত ইতিহাস কি মিথ্যা? মাযহাবী তাক্বলীদের বিষাক্ত ফল হিসাবে ৮০১ হিজরীতে মুসলিম ঐক্যের প্রাণকেন্দ্র কা‘বা গৃহের চারপাশে ৪ মাযহাবের পরস্পরে মারমুখী লোকদের জন্য পৃথক পৃথক চার মুছাল্লা কায়েম করার মর্মান্তিক ইতিহাস কি মুসলমানেরা ভুলে গেছে? যে চার মুছাল্লা বর্তমান সউদী শাসক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আযীয ১৩৪২ হিজরীতে ৫৪১ বছরের প্রাচীন বিদ‘আত উৎখাত করেছিলেন। যার ফলে আজ সকল মুসলমান আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী (বাক্বারাহ ১২৫) একই ইবরাহীমী মুছাল্লায় এক ইমামের পিছনে এক সাথে ছালাত আদায় করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। তাই হাযার বছর হ’লেও বিদ‘আত কখনো সুন্নাত হবে না, শিরক কখনো তাওহীদ হবে না। অতএব আমরা বলব, ‘ছাহাবায়ে কেরামের যুগের বিশুদ্ধ ইসলামের রূপ কেউ বদলাতে পারবে না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল হক-এর উপর বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম হা/১৯২০)। তারাই হলেন সালাফী এবং তারা চিরদিন মানুষকে রাসূল (ছাঃ)-এর যুগের বিশুদ্ধ ইসলামের দিকে আহবান জানিয়ে যাবেন। কোন রাজা-বাদশাহ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের করুণায় নয়, বরং আল্লাহর গায়েবী মদদে সালাফী বা আহলেহাদীছ আন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। শিরক ও বিদ‘আতের জাঁক-জমক ও দুনিয়াবী ক্ষমতার তখত তাঊস আল্লাহর রহমতে উবে যাবে।
তিনি লিখেছেন, এমনকি নাঊযুবিল্লাহ, এক সালাফিস্ট প্রফেসর কর্তৃপক্ষের প্রণোদনায় এক থিসিস তৈরি করে। যেখানে বলা হয় ভক্ত উম্মতের ভীড় সামাল দিতে নবী করিম সা. এর পবিত্র রওজা মোবারক কারফিউ দিয়ে রাতের অন্ধকারে বর্তমান জায়গা থেকে তুলে নিয়ে বাকী গোরস্থানের বিশাল ময়দানের অজ্ঞাত কোন স্থানে স্থাপন করা হবে যেন কোন উম্মত চিনতে না পারে। হজ্জ ও ওমরাহ যাত্রীরা জিয়ারতে গিয়ে নবী সা. এর রওজা খুঁজে না পায়। এ প্রস্তাবের পর বিশ্বব্যাপী আশেকে রাসূলরা রীতিমতো মৃত্যু যন্ত্রণায় পড়ে যান। আল্লাহর রহমত বাদশাহ সালমান এ বিষয়টি বুদ্ধির সাথে শেষ করে দেন। তিনি নিজে দীর্ঘ সময় রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সরকারী তত্ত্বাবধানে তা বিশ্ব মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারেরও ব্যবস্থা করেন। কিছু দিন পর তিনি আবার পাক মদিনায় চলে যান’।
বলা বাহুল্য এ এক বিস্ময়কর তথ্য। আমরা জানতে পারলে খুশী হতাম সেই সালাফিস্ট প্রফেসর কে? এবং তার থিসিসটাই বা কি? তাছাড়া বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হলেও বাংলাদেশের মিডিয়াগুলিতে প্রচার হয়েছে বলে আমরা জানি না। বাদশাহ সালমানই বা এজন্য কখন পাক মদীনায় ছুটে গেলেন ও রাসূলের রওযা মোবারকের সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দীর্ঘ মোনাজাত করলেন, এর প্রমাণ কোথায়? অথচ আজও সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকে। যাতে কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দীর্ঘ মুনাজাত করতে না পারে।
ধন্যবাদ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপকে। যিনি ২৭শে মার্চ‘১৮ মঙ্গলবার আইন প্রণেতাদের ব্যাপক করতালির মধ্যে ফরাসী পার্লামেন্টে বলেছেন, আমরা কোন মতাদর্শকে নিষিদ্ধ করতে পারি না। বরং উস্কানীগত আচরণ, জন শৃংখলা ভঙ্গ, দেশের আইন লঙ্ঘন বা সামাজিক জীবনে ন্যূনতম বিঘ্ন সৃষ্টি করার জন্য আমরা শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু নিষিদ্ধ করতে পারি না’। সেদেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোন ধর্মীয় আন্দোলনকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হবে বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিরোধী। যা কখনও আদালতে টিকবে না’। যদিও সেদেশের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ সালাফী মসজিদগুলো এবং তাদের ইমামদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালাতে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সরকারী হিসাব মতে ফ্রান্সে ২৫০০ মসজিদ ও নামাযের হল রয়েছে। তন্মধ্যে ১২০টি উগ্রপন্থী সালাফীবাদ প্রচার করছে বলে মনে করা হয়’ (ইনকিলাব ২৯শে মার্চ‘১৮)।
বাংলাদেশের সরকার যেন বিদ‘আতীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হন এবং ২০০৫ সালের কথিত ইসলামী মূল্যবোধের সরকারের ন্যায় পুনরায় সালাফীদের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, আমরা সে আশাই করব। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ (ক) ধারা অনুযায়ী ‘প্রত্যেক নাগরিকের যেকোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে’ (খ) ‘প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে’। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন আহলেহাদীছ ভাইদের উপর ও তাদের মসজিদগুলির উপর হামলা হচ্ছে ও সেগুলি দখলের অপচেষ্টা চলছে। এভাবে মাযহাবী আলেমরাই সমাজের শান্তি-শৃংখলা ভঙ্গের উসকানী দিয়ে যাচ্ছেন, সালাফী আলেমরা নন। উল্লেখ্য যে, উগ্রপন্থার সাথে প্রকৃত সালাফীদের কোনই সম্পর্ক নেই। বরং চরমপন্থীরা হ’ল খারেজী মতবাদের অনুসারী। ইসলামের বিশুদ্ধ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসাবে এদেরকে সালাফিস্ট বলা হচ্ছে মাত্র। অথচ উগ্রপন্থীরা না সালাফী, না আহলেহাদীছ। আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে প্রকৃত সালাফী ও আহলেহাদীছ হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন! (স.স.)।