জাপান ১৯৬৪ সালে বুলেট ট্রেন উদ্বোধন করে এবং টোকিও অলিম্পিক আয়োজন করে। দেশটির অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান শুরু সেখান থেকেই। ১৯৬৪ সালের ১লা অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায় টোকিও ও ওসাকা থেকে দুই দিকে দু’টি ট্রেন যাত্রা শুরু করে। এটি ছিল জাপানের ভবিষ্যৎ গড়ার একটি পরীক্ষা। এই বুলেট ট্রেনই পরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিশালী জাপানের রূপান্তরের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
এই ট্রেনের কারণে ৫১৪ কি.মি. পথ যাত্রীদের আগে যেখানে যেতে সাত ঘণ্টা সময় লাগত, সেখানে মাত্র চার ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছেছিলেন যাত্রীরা। জাপানের গণপরিবহন অবকাঠামোর মুকুটে এই ট্রেনকে বিশেষ মুকুট বলা হয়। ছয় দশক পর এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে তখন অনেকেই বুলেট ট্রেনকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি। এ রেলপথ গড়তে ভূমি অধিগ্রহণ ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছিল। সমালোচকেরা বলেছিলেন, সমৃদ্ধির যুগে এই ট্রেন হবে ব্যয়বহুল সেকেলে বস্ত্ত। কারণ মানুষ রেলপথের পরিবর্তে আকাশ ও সড়কপথের ভ্রমণের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেবে। অথচ জাপান রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬০ বছরে শুধু এ পথেই ৬৪০ কোটি মানুষ যাতায়াত করেছেন। অথচ এই রেল নেটওয়ার্কে এখন পর্যন্ত কোন দুর্ঘটনা বা কোন কারণে হতাহতের একটি ঘটনাও নেই। এ যাত্রাপথে ট্রেনের গড় বিলম্ব এক মিনিটের কম। জাপানের বুলেট ট্রেনের সফলতা মূলত এর নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করেই এসেছে। বর্তমানে এই ট্রেনের নেটওয়ার্ক জাপানের গুরুত্বপূর্ণ চারটি দ্বীপের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। এই ট্রেন নেটওয়ার্ক এখন ১৮০০ মাইল বিস্তৃত, যা জাপানের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরকে স্পর্শ করেছে। সেখানকার যাত্রীদের গড়ে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে।