আসমান ও যমীনের মাঝে বিদ্যমান পরিমাপ সমূহ

এই জগতে যা কিছু পরিমাপ করা হয় তাদেরকে বলা হয় রাশি। প্রতিটি রাশি পরিমাপ করা নির্ভর করে প্রকৃতিতে বিদ্যমান আল্লাহ প্রদত্ত মানদন্ডের উপর। অর্থাৎ সবকিছু পরিমাপের সুনির্দিষ্ট মানদন্ড এবং পদ্ধতি রয়েছে। আজ আমরা আসমান ও যমীনের মাঝে বিদ্যমান পরিমাপকের মানদন্ড এবং সীমারেখা সম্পর্কে আলোচনা করব। আল্লাহ বলেন, وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا وَوَضَعَ الْمِيزَانَ، أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ، وَأَقِيمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ وَلَا تُخْسِرُوا الْمِيزَانَ- ‘আকাশকে আল্ল­াহ উঁচু করেছেন এবং সেখানে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। যাতে তোমরা পরিমাপে সীমালংঘন না কর। আর তোমরা ন্যায্যভাবে ওযন প্রতিষ্ঠা কর এবং ওযনে কম দিও না’ (রহমান ৫৫/৭-৯)

আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছুই পরিমাপ করি। যেমন- যেকোন কঠিন বস্ত্তর ভর, তরল পদার্থের আয়তন, গ্যাসীয় পদার্থের চাপ ইত্যাদি। এছাড়া আমরা কি পরিমাণ কথা বলছি, কথার তীব্রতা কত ছিল, কি পারিমাপের শব্দ আমরা শুনতে পারব, কত দূরত্ব স্পষ্ট দেখছি, কি কি আমরা দেখতে পারব, কোন ধরনের ঘ্রাণ আমরা নিতে পারব ইত্যাদি সবকিছু পরিমাপ করা যায় এবং এর পরিমাপক আল্লাহ তা‘আলা এই আসমান ও যমীনের মাঝে স্থাপন করে রেখেছেন। কিছু পরিমাপক আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত করে দিয়েছেন, যার কমবেশী আমরা করতে পারব না। এগুলো আমাদের কল্যাণের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। যদি এগুলো আমাদেরকে পরিমাপ করে গ্রহণ করার অধিকার দেওয়া হ’ত তবে আমাদের পক্ষে পৃথিবীতে বসবাস কষ্টকর হয়ে যেত।

আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীনের মাঝখানে বিভিন্ন পরিমাপের তরঙ্গ স্থাপন করছেন, যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা পরিমাপ। প্রত্যেকের নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং কম্পাংক রয়েছে। প্রত্যেকটি তরঙ্গের সুনির্দিষ্ট ব্যবহার রয়েছে, যার দ্বারা আমরা দুনিয়ার মানুষেরা বিবিধ উপকার লাভ করে থাকি। নিম্নে এর বর্ণনা দেওয়া হ’ল :

রেডিও তরঙ্গ : যাদের কম্পাংক 30 Hz - 300 GHz এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। এই তরঙ্গ মূলত AM/FM রেডিও, টেলিভিশন সম্প্রচার, সেল ফোন এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মাইক্রোওয়েভ : যাদের কম্পাংক 300 MHz - 300 GHz এর মধ্যে বিদ্যমান। এগুলো মূলত রাডার, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন এবং কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ইনফ্রারেড (IR) বিকিরণ : এর কম্পাংক 300 GHz-400 THz এর মধ্যে বিদ্যমান। এগুলো মূলত রিমোট কন্ট্রোল, নাইট-ভিশন ইকুইপমেন্ট এবং থার্মাল ইমেজিং এ ব্যবহৃত হয়।

দৃশ্যমান আলো : এর কম্পাংক 400 THz-790 THz এর মধ্যে বিদ্যমান। সাতটি দৃশ্যমান আলো যার সাহায্যে আমরা যেকোন বস্ত্ত দেখতে পাই, যা বেনীআসহকলা নামে পরিচিত যথা- বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এই আলোর সুনির্দিষ্ট পরিমাপ আছে বলেই আমরা যেকোন বস্ত্তকে তার নিজস্ব রঙ্গে দেখতে পাই। যদি আলোর পরিমাপ না থাকতো তবে আমরা সব বস্ত্ত সাদা দেখতে পেতাম।

অতি বেগুনি (UV) বিকিরণ : এর কম্পাংক 790 THz - 30 PHz এর মধ্যে বিদ্যমান। এগুলো মূলত জীবাণুমুক্তকরণ এবং ফ্লুরোসেন্ট লাইটে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের শব্দ তরঙ্গ রয়েছে যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা কম্পাংক এবং ব্যবহার যার বিবরণ নিম্নে দেওয়া হ’ল :

ইনফ্রাসাউন্ড : এর কম্পাংক 20 Hz এর কম। এর সাহায্যে ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক ঘটনা অধ্যয়নে ব্যবহৃত হয়।

শ্রবণযোগ্য শব্দ : এর কম্পাংক 20 Hz - 20 kHz এর মধ্যে বিদ্যমান। মানুষ যে কম্পাংকের শব্দ শুনতে পায় এটি হ’ল সে কম্পাংকের তরঙ্গ।

আল্ট্রাসাউন্ড : এর কম্পাংক হ’ল 20 kHz এর বেশী। এটি মূলত মেডিক্যাল ইমেজিং (আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান), পরিষ্কার করা এবং উপকরণের ত্রুটি সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এই পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে দেওয়ার মাধ্যমে এই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। এই ভারসাম্য যদি কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায় তবে আমাদের পক্ষে জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভারসাম্য শব্দটিকে আমরা যদি ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করি এবং যদি প্রকৃতির ভারসাম্য অর্থে ব্যবহার করি, তাহ’লে আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে একটি চমকপ্রদ বিষয় বেরিয়ে আসে।

আসমান-যমীনের সকল বিষয় তৎসহ আকাশের সমুন্নতি সব কিছুই পরম ভারসাম্যময় প্রক্রিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রকৃতির এই ভারসাম্যকে লংঘন না করার জন্য মানব জাতিকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানকালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘পরিবেশ দূষণ’ নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করতে পারি। পরিবেশের উপাদানকে প্রধানত দু’টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যেতে পারে : (ক) ভৌত উপাদান ও (খ) জীবতাত্ত্বিক উপাদান। ভৌত উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বায়ু। আমরা জানি যে, নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২১%), কার্বন-ডাই-অক্সাইড .০৩%) ও অন্য কয়েকটি উপাদান নিয়ে বায়ু গঠিত। বায়ুতে এ সকল উপাদানের অনুপাত রক্ষিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বহুসংখ্যক cycle (আবর্তনশীল পরিবর্তনধারা) যেমন কার্বন cycle ও নাইট্রোজেন cycle-এর মাধ্যমে প্রকৃতিতে এ সকল উপাদানের অনুপাত সংরক্ষণ করেছেন। এ সকল cycle ব্যতীত জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তো। যে পরিবেশে মানুষ পৃথিবীতে বাস করে, তা যেন তাদের নিজেদের অপব্যবহারের ফলে মারাত্মকভাবে পরিবর্তিত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ করা প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, উদ্ভিদ জগতসহ সকল জীব অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। তবে উদ্ভিদ দিনের বেলায় সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে অক্সিজেন মুক্ত করে। এখন যদি জ্বালানী চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা বাছবিচার না করে গাছ কেটে ফেলি এবং যদি অনির্দিষ্ট সংখ্যায় মোটরযান বৃদ্ধি পায়, তাহ’লে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি সঞ্চয় গড়ে উঠবে যা পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলবে। অধিকন্তু বর্তমানকালের যান্ত্রিক সভ্যতার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ও সিএফসি (Cloroflouro Carbon) নামক বেশ কিছু সংখ্যক ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত করে চলেছি। ‘গ্রীন হাউস গ্যাস’ (Greenhouse gases) নামে অভিহিত এ সকল গ্যাস সূর্যরশ্মি যখন ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগস্থ বস্ত্তসমূহের উপর পড়ে প্রতিসরিত হয়, তখন এর বিকিরণের দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে আটকে ফেলে। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, দীর্ঘতর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে সংযুক্ত হয়ে বায়ুমন্ডলে তাপ সঞ্চিত হওয়া। এখানে একটি সতর্ক সংকেত রয়েছে যে, বায়ুমন্ডলে এরূপ তাপ বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচচতা বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। সিএফসি বায়ুমন্ডলের ওজোন (Ozone) স্তরের ক্ষতি করবে এবং ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি (Ultraviolet radiation) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে পারবে। যদিও তথাকথিত গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়ার পরিমাণ মাপক কোন মডেল নেই, তবুও এই সতর্কবাণী সচেতন মহল কর্তৃক গুরুত্বের সাথে গৃহীত হয়েছে। অবশ্য এই ক্ষতিকর অবস্থার প্রতিবিধানের উপায় হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা।

সকল মানবীয় কর্মকান্ড এমনভাবে পুনর্গঠিত হওয়া দরকার যে, বায়ুর পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপাদানসমূহের অণুমাত্রও যেন পরিবর্তন না ঘটে। কারণ জীবজগতের বাঁচার জন্য বায়ুর অতীব প্রয়োজন। বায়ুমন্ডলের জীবতাত্ত্বিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লক্ষ্য করা যায় যে, মানুষ ও জীবমন্ডলের অন্যান্যের মধ্যে একটি অর্থবহ মিথষ্ক্রিয়া বিদ্যমান। পরিবেশের মধ্যে সেগুলো হচ্ছে এক বিপুলসংখ্যক অতি ক্ষুদ্র জীব। এ সকল অতি ক্ষুদ্রদেহীর (micro- organisms) মধ্যে মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ (৫%) রোগ সৃষ্টিকারী অর্থাৎ রোগের কারণ ঘটায়। আর অবশিষ্ট সকল অংশ আমাদের খাদ্য, ওষুধ প্রভৃতি তৈরির মত নানা প্রকার উপকারে আসে। এখন পরিবেশের মধ্যে মানুষ যদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, তাহ’লে এসব অতি ক্ষুদ্র অণুজীবের কিছু কিছু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এর ফলে আমরা এক অপরিবর্তনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হব। নিবন্ধের শুরুতে আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যে বার্তা প্রেরণ করেছেন, তা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিতে যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বিদ্যমান, তা বুঝতে চেষ্টা করা এবং কোনভাবেই তা লংঘন না করা। সুন্দর সমন্বয় রেখে আমাদের বাঁচা প্রয়োজন। তবে প্রকৃতিকে জয় করার নামে কোন ক্ষতিকর পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রকৃতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা বাঞ্ছনীয় নয়। (আল-কুরআনে বিজ্ঞান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃ-৫২৬-৫২৭)

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুবিধার জন্য যেসকল পরিমাপ স্থাপন করেছেন তার কিছু বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হ’ল :

ওযন পরিমাপ : আমরা কোন কিছু ওযন করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত যে পরিমাপক ব্যবহার করি তা হ’ল অভিকর্ষ। কোন বস্ত্তকে পৃথিবী যে বলে আকর্ষণ করে তাকে অভিকর্ষ বলে। আমরা দাঁড়িপাল্লায় একপাশে কোন বস্ত্ত এবং অন্য পাশে যখন বাটখারা রাখি তখন উভয় পাশের অভিকর্ষ বল সমান হ’লে তথা ওযন সমান হ’লে দাঁড়িপাল্লার কাটাটি মধ্যখানে চলে আসে এবং ঐ বাটখারায় যে ভর থাকে তা আমরা ঐ বস্ত্তর ভর বলে নির্ধারণ করি। এভাবে আল্লাহ প্রদত্ত পরিমাপক দিয়ে আমরা কোন বস্ত্তর ওযন নির্ণয় করি।

শব্দ পরিমাপ : শব্দ হচ্ছে এক ধরনের অণুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ যা সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। এখানে বাতাস হচ্ছে শব্দকে এক স্থান হ’তে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার বাহক। বাতাসের আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, ঘনত্ব, চাপ ইত্যাদি হিসাব করে শব্দের তীব্রতা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এছাড়া বাতাসের কম্পনের উপর ভিত্তি করে শব্দের কম্পাংক নির্ণয় করা হয়। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য শব্দের তীব্রতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ তা‘আলা শব্দের সু-নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা অতিক্রম করলে শব্দদূষণ ঘটবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, দিনের বেলা শব্দের তীব্রতা লেভেল 70dB এবং রাতের বেলা 40dB অতিক্রম করলে তা শব্দ দূষণ হিসাবে গণ্য হবে। আর আমরা পৃথিবীর মানুষেরা বিভিন্ন অন্যায় কাজে বিকট আকারে শব্দ উৎপন্ন করি। যথা: কনসার্ট, বোমা-পটকা ফোটানো ইত্যাদি কর্ম সম্পাদন করে আল্লাহ প্রদত্ত সীমা লংঘন করছি।

বাতাসের চাপ : আমরা সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করি, টায়ারে বাতাস ভর্তি করি। এগুলো কিভাবে পরিমাপ করা হয়? এগুলো মূলত বাতাসের চাপের উপর ভিত্তি করে পরিমাপ করা হয়। আমাদের চারপাশে যে বায়ু রয়েছে তার চাপ হ’ল ৭৬ সেমি পারদ চাপের সমান। সিলিন্ডার বা টায়ারে গ্যাস ভর্তি করে তা ব্যারোমিটারের সাহায্যে গ্যাসের চাপ নির্ণয় করি যা স্বাভাবিক বায়ু চাপের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই স্বাভাবিক বায়ুর চাপও আল্লাহ প্রদত্ত একটি পরিমাপক, যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি।

আলোর পরিমাপ : সূর্য হ’তে যে আলো আমাদের নিকট আসে অথবা আমাদের ঘরে থাকা টিউবলাইট বা বালব থেকে যে আলো আমরা পাই তাও পরিমাপ করা যায়। ফটোমিটারের সাহায্যে আলোর তীব্রতা পরিমাপ করা হয়, যার একক হ’ল ক্যান্ডেলা। দৃশ্যমান আলো পরিমাপের একক হ’ল লুমেন (Lumen)। প্রতি বর্গমিটার স্থানে যে পরিমাণ আলো এসে পড়ে তা Lux Meter দিয়ে নির্ণয় করা হয়। একটা স্থানে আলো কি পরিমাণ উজ্জ্বল তা Luminance Meter দিয়ে নির্ণয় করা হয়। Colorimeter বা Spectrometer এর সাহায্যে আলোর রঙ নির্ণয় করা হয়। আলো উষ্ণ হ’লে হলুদ বা লাল এবং শীতল হ’লে নীল বর্ণ নির্দেশ করে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য যে আলো সৃষ্টি করেছেন তাও পরিমাপ করা যায়।

রাস্তার ব্যংকিং : আমরা অনেক সময় দেখতে পাই যে, রাস্তার বাকের পাশে দুর্ঘটনার কারণে গাড়ি উল্টে পড়ে আছে। এর কারণ হ’ল পরিমাপে কমবেশী। যখন কোন বস্ত্ত কোন বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরে তখন কেন্দ্রবিমুখী বলের উদ্ভব হয় যা বস্ত্তকে বাইরের দিকে ছিটকে ফেলতে চায়। এই বল মূলত গাড়ির বেগ, রাস্তার বাকের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে। প্রত্যেক বাকের জন্য একটি সর্বোচ্চ বেগ নির্ধারিত হয়েছে যার বেশী বেগে গাড়ি বাক অতিক্রম করলে দুর্ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ এটিও আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত একটি পরিমাপক যার সীমালংঘন করলে বিপদে পড়তে হবে। যে ইঞ্জিনিয়ার এই রাস্তার বাক তৈরী করবেন তার দায়িত্ব হ’ল সঠিকভাবে পরিমাপ করে ঐ বাকের জন্য সর্বোচ্চ গতিবেগ নির্ধারণ করা, যাতে গাড়ি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। যদি ইঞ্জিনিয়ার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে তবে তিনিও ওযনে কম দিলেন।

আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমীনের মাঝে পরিমাপক স্থাপন করেছেন এবং আমাদেরকে পরিমাপে কমবেশী করতে নিষেধ করেছেন। যা পরিমাপ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব এবং যা পরিমাপ করা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আমাদেরকে দিয়েছেন। কিন্তু যা পরিমাপ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় এবং যা পরিমাপ করা আমাদের কোন উপকারে আসবে না তার ক্ষমতা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। যেমন একজন কি পরিমাণ অন্যায় করেছে বা একজন কি পরিমাণ ভাল কাজ করেছে তার পরিমাপ মানুষ কখনই করতে পারব না। একজন মানুষ অন্য আরেকজন মানুষকে কি পরিমাণ ভালোবাসে বা হিংসা করে বা ঘৃণা করে তা পরিমাপ করার কোনরূপ পদ্ধতি আল্লাহ তা‘আলা দান করেননি। এগুলো পরিমাপ করার একচ্ছত্র অধিকার কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলার রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়ার সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর বিষয় পরিমাপ করার সুযোগ দিয়েছেন। যা ব্যবহার করে আমরা কোন কিছুর ভর পরিমাপ করতে পারি, আলো পরিমাপ করতে পারি, শব্দ পরিমাপ করতে পারি, চাপ পরিমাপ করতে পারি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। যে আল্লাহ আমাদেরকে এত সূক্ষ্ম বিষয় পরিমাপ করতে পারার ক্ষমতা দান করেছেন সে আল্লাহর পক্ষে সবকিছু পরিমাপ করা সম্ভব। অতএব আমাদেরকে সকল কথা ও কর্ম সতর্কতার সাথে করতে হবে, যাতে অন্যায় না হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।






ঘুমের কতিপয় সুন্নাতী পদ্ধতি ও আধুনিক বিজ্ঞান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আল-কুরআনে কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পানি ও সূর্যের তরঙ্গচক্র - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
সূর্যের চারিদিকে গ্রহের সুশৃংখল গঠন - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
কুরআন বলছে আসমানে কোন ফাটল নেই; বিজ্ঞান কি বলে? - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আসমান হ’তে লোহা নাযিলের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও বৃষ্টির পানির উপকারিতা - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
চন্দ্র দিয়ে মাস এবং সূর্য দিয়ে দিন গণনা : মহান আল্লাহর এক অনন্য বিধান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
ভাষা জ্ঞান মানবজাতির জন্য আল্লাহর অনন্য নিদর্শন - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
মানুষ কি কৃত্রিম বৃষ্টি (ক্লাউড সিডিং) ঘটাতে সক্ষম? - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আছহাবে কাহফের ঘটনায় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
রক্ত ও মৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণ হারাম হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
পৃথিবীতে মানুষের আগমন নিয়ে আল-কুরআনের পথে বিজ্ঞান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আসমান ও যমীনের মাঝে বিদ্যমান পরিমাপ সমূহ - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আরও
আরও
.