পৃথিবীতে মানুষের আগমন নিয়ে আল-কুরআনের পথে বিজ্ঞান

পৃথিবীতে মানুষের আগমন নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তনবাদ এর মধ্যে বেশী পরিচিত। এটি "Darwin's theory of evolution" নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে Theory কাকে বলে? অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে থিউরির সংজ্ঞা হ’ল : এটি অনুমান বা ধারণা করার একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা কোন কিছু ব্যাখ্যা করা হয়। অর্থাৎ ডারউইনের বিবর্তনবাদ এখনো প্রমাণিত নয়। এটি একটি অনুমান, তাই এর নাম থিউরি। অপরদিকে বিজ্ঞানের আরেকটি পরিভাষা হচ্ছে সুত্র বা law যার সংজ্ঞা হ’ল : এটি একটি বৈজ্ঞানিক বিবৃতি, যা বারংবার পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোন প্রাকৃতিক ঘটনার নিয়ম পেশ করা হয়। যেহেতু বিজ্ঞান বিবর্তনবাদকে সূত্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি তাই এর কোনরূপ ভিত্তি বা গ্রহণযোগ্যতা নেই।[1]

পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে আসলো? এ প্রশ্নে দুই ধরনের মত হ’তে পারে এক.বিবর্তনবাদঃ অর্থাৎ অন্য প্রাণী হ’তে বিবর্তিত হয়ে মানুষের উৎপত্তি। দুই.এলিয়নবাদঃ অর্থাৎ মানুষ এই পৃথিবীর প্রাণী নয়। তাকে অন্য কোন স্থান হ’তে আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মধ্যে বিবর্তনবাদ ভিত্তিহীন এবং অগ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষণে আমরা আলোচনা করব এলিয়নবাদ সম্পর্কে এবং পরবর্তীতে দেখব কোনটিকে আল কুরআন স্বীকৃতি দিচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর আমেরিকান পরিবেশবিদ ডঃ এল্লিস সিলভার (Ellis Silver) ‘হিউম্যান আর নট ফ্রম আর্থ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করেন যে, মানুষ এই পৃথিবীর এলিয়ন অর্থাৎ অন্য কোন স্থান হ’তে পৃথিবীতে আনা হয়েছে। নিম্নে ডঃ এল্লিস সিলভারের প্রদত্ত তথ্য আমরা ব্যাখ্যা এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণসহ পেশ করছি।-

এল্লিস সিলভারের দাবী হচ্ছে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণী অর্থাৎ পশু-পাখি হ’ল এই পৃথিবীর প্রাণী। কারণ এই পৃথিবীতে বসবাসের জন্য যা যা বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তা কেবল পশু-পাখির মধ্যেই রয়েছে, মানুষের মধ্যে নয়। নিম্নে উদাহরণ সহ কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হ’ল :

১। সূর্যের আলো এবং তাপ : আমরা যে সোলার সিস্টেমে বসবাস করি তা পশু-পাখির জন্য বসবাস উপযোগী। তিনি বলেছেন, সূর্যের আলো মানুষকে দিনের কিছু অংশে ভিটামিন-ডি দেয় বেটে কিন্তু অতিরিক্ত সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মি মানুষের শরীরে স্কিন ক্যান্সার তৈরি করে। কিন্তু সূর্যের আলোতে পশু পাখির মধ্যে স্কিন ক্যান্সার তৈরি হয় না। কারণ হ’ল পশু-পাখির গায়ে পশম বিদ্যমান, যা তাদেরকে স্কিন ক্যান্সার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং যে সকল পশুর গায়ে পশম নেই তাদের স্কিনটা কালো হয়। যেমন হাতি, ডলফিন, গন্ডার ইত্যাদি। আমরা জানি, যার শরীরে মেলাটিনের পরিমাণ বেশী থাকে তার স্কিন কালো হয় এবং তা শরীরকে ক্ষতিকারক সূর্যের আলোকরশ্মি হ’তে রক্ষা করে।

আমরা সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আমাদের চোখে একেবারে সাদা দেখি এবং কিছুক্ষণ পর্যন্ত কিছুই দেখি না বললেই চলে। কিন্তু পশু-পাখিদের এ সমস্যা হয় না। ফলাফল এই দাড়াচ্ছে যে, মানুষ এই গ্রহের প্রাণী নয়। যদি তাই হ’ত তাহ’লে সূর্যের আলো তাদের জন্য ক্ষতিকর হ’ত না। অপরদিকে পশু-পাখি এই গ্রহের প্রাণী বলে সূর্যের আলো তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় (পৃ-১০)।

২। ঋতুভেদে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি : যখন ঋতু পরিবর্তন হয় তখন মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে পশু-পাখির ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের এ ধরনের সমস্যাগুলো হয় না। কিছু কিছু পাখিকে দেখা যায় যে, যখনই ঋতু পরিবর্তন হয় তখন এরা এক স্থান হ’তে হাযার হাযার মাইল ভ্রমণ করে এদের উপযোগী কোন স্থানে গিয়ে বসবাস শুরু করে। আবার ঋতু পরিবর্তন হ’লে পূর্বের স্থানে ফিরে আসে। যা আমরা আমাদের বাংলাদেশেও দেখতে পাই যে, শীতকালে অতিথি পাখির আগমন। পশু-পাখি ঋতুকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করে। দিনের দৈর্ঘ্য বা তাপমাত্রার পরিবর্তন পশু-পাখিদের হরমোন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং তাদের ঋতু অনুযায়ী আচরণ করে। সেকারণ, প্রাণীরা সহজাতভাবে জানে যে কখন তাদের সঙ্গম করার, বাসা বাঁধার, দক্ষিণে উড়ে যাওয়ার বা শীতের জন্য খাবার মজুদ করার সময়। অর্থাৎ পৃথিবীর এই ঋতুর পরিবর্তনে পশু-পাখি নিজেদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে এবং তাদের সে জ্ঞান রয়েছে। ফলে এই ঋতু পরিবর্তন তাদের জন্য ক্ষতিকর নয় (পৃ-১২)।

৩। কোমর ব্যথা ও মেরুদন্ডের ব্যাথা : দেখা যায় যে, পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষের মেরুদন্ড এবং কোমরে ব্যথা বিদ্যমান। এর কারণ হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি। এ শক্তির কারণেই মূলতঃ পৃথিবীর মানুষের মেরুদন্ড এবং কোমরের ব্যথা বেশী হয়। কিন্তু পশু-পাখির মধ্যে এ ধরনের ব্যথা দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে মানুষ পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সোজা হয়ে চলাফেরা করে। অপরদিকে বেশীরভাগ পশু-পাখির মেরুদন্ড ভূমির সমান্তরাল এবং অন্যরা কুজো হয়ে চলাফেরা করে। যেহেতু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর জন্য তৈরী করা হয়েছে তাই পশু-পাখির জন্য এমন শক্তি কোন ধরনের ক্ষতির কারণ হয়নি। অন্যদিকে মানুষ পৃথিবীর প্রাণী না হওয়ার কারণে এ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাদের মধ্যে কোমর এবং মেরুদন্ডে ব্যথা তৈরী করে (পৃ-১৩)।

৪। কোন ফসিল পাওয়া যায়নি : ডারউইন দাবী করেছে যে, মানুষের সৃষ্টি বানর হ’তে কিন্তু বানর হ’তে মানুষের সৃষ্টির একটা ফসিল লিংক প্রয়োজন-এর কোন অস্তিত্ব পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি (পৃ-১৭)।

৫। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র : Magnetoreception হ’ল এমন একটি অনুভূতি, যা একটি জীবকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সনাক্ত করতে দেয়। পৃথিবীর বেশীরভাগ পশু-পাখি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে পথ চলতে পারে। অর্থাৎ পশু-পাখিদের মধ্যে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সেন্স করার ক্ষমতা বিদ্যমান। যেমন সামুদ্রিক কচ্ছপ, স্যামন মাছ ইত্যাদি। অন্যদিকে মানুষ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সেন্স করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে মানুষ যে স্থান থেকে এসেছে ঐ স্থানের চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অপেক্ষা অনেক তীব্র। আর মানুষের চৌম্বক ক্ষেত্র সেন্স করার ক্ষমতা পশু-পাখির তুলনায় অনেক কম হওয়াতে তারা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা পথ চলতে পারে না। তাই পৃথিবীতে মানুষ কম্পাস ব্যবহার করে (পৃ-৪২)।

৬। খাদ্যাভ্যাস : পৃথিবীতে মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো মানের খাদ্য হচ্ছেঃ কাঁচা ফল, শাকসবজি, বাদাম, গোশত, মাছ। আবার এ পৃথিবীতে আমরা বেশীরভাগ মানুষ যে সকল খাদ্য কম খেতে পারি তা হচ্ছে কাঁচা ফল, শাকসবজি, বাদাম, গোশত, মাছ। অপরদিকে পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিকারক খাদ্যগুলোর মধ্যে হচ্ছে চকলেট, লবণ, চিনি, মদ, চর্বি। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বেশী খেতে ভালো লাগে এই খাদ্যগুলো। অর্থাৎ যদি আমরা পৃথিবীর প্রাণী হতাম তাহ’লে আমাদের শরীর ঐ খাদ্যগুলো গ্রহণ করত যে খাদ্যগুলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী (পৃ-২৪)।

৭। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস : প্রাণীরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত হ’তে পারে। যেমন সাপ, বেজি, ইঁদুর ইত্যাদি ভূমিকম্প হওয়ার কয়েকদিন পূর্বেই অনুভব করতে পারে। হাতি তার পায়ের সাহায্যে অনেক দূরের শব্দ শুনতে পায় এবং সে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে জানতে পারে। কোন জলাশয়ের ধারে যদি রাতেরবেলা ব্যাঙ জোরে আওয়াজ করে তবে বুঝতে হবে ঝড় হবে। একইভাবে পাখি, গরু, ভেড়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্ভাবাস জানতে পারে। কিন্তু মানুষের পক্ষে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস বলা সম্ভব হয় না। কারণ এটাই যে, মানুষ যেখান থেকে এসেছে সেখানে এ ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না।

৮। আত্মরক্ষার অভাব : আমরা দেখতে পাই যে, পৃথিবীর বেশীরভাগ পশু-পাখি নিজে আত্মরক্ষা করতে পারে। পশু-পাখির নখ, দাঁত, শিং ইত্যাদি দিয়ে তারা নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারে। যেমন তাদের পাগুলো এমনভাবে তৈরী যে, তারা মাটিতে খালিপায়ে হাটতে পারে কিন্তু মানুষের পক্ষে খালি পায়ে হাটা সম্ভব না। দেখা যায় যে, যে সকল মানুষ জঙ্গলে বসবাস বা চলাচল করে তারাও তাদের আত্মরক্ষার জন্য পায়ে বিশেষ ধরনের জুতা পরিধান করে। মানুষের পায়ের তলা নরম এবং পৃথিবীর মাটি খালি পায়ে হাঁটার জন্য উপযোগী নয়। তাই মানুষকে বাধ্য হয়ে জুতা পরিধান করতে হয়। মানুষ নিজের আত্মরক্ষার জন্য শরীরের কোন অংশ ব্যবহার করতে পারে না। এ কারণে মানুষ তার মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করে তা দিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু পশু-পাখির এই ধরনের কোন কিছুর দরকার হয় না। সুতরাং বলা যায়, মানুষ পৃথিবীর প্রাণী নয় (পৃ-২৭)।

৯। পৃথিবীর পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক : আমরা দেখতে পাই যে, পৃথিবীতে পশু-পাখির বিচরণ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে পৃথিবীর পরিবেশ তত উন্নত হচ্ছে। অপরদিকে মানুষের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষের বসবাস করার প্রবণতা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পৃথিবীর পরিবেশ তত খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি করোনাকালে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, লকডাউনে থাকার কারণে পৃথিবীর পরিবেশ অনেক উন্নত ও পরিচ্ছন্ন হয়েছে। গ্রীন হাউস ইফেক্ট কমে গেছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমে গেছে। ফলে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ডলফিন, লাল কাকরা দেখা দিয়েছে। এমনকি গত কিছুদিন আগে পত্রিকায় এসেছে ঢাকার বাতাস গত ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নির্মল হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ নিজেদেরকে ঘরে বন্দী করে রাখার কারণে পৃথিবীর পরিবেশ উন্নত হয়েছে। অপরদিকে পৃথিবীতে পশু-পাখির বিচরণ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিবেশ তত উন্নত হচ্ছে। অর্থাৎ পশু-পাখি এই গ্রহের প্রাণী হওয়ার কারণে তাদের দ্বারা পৃথিবী আরো উন্নত হচ্ছে আরও বাসযোগ্য হচ্ছে (পৃ-২৮)।

১০। রোগ বালাই : পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু পশু-পাখিকে তেমন রোগে আক্রান্ত হ’তে দেখা যায় না এবং হ’লেও তা খুবই কম। কারণ হচ্ছে এই গ্রহের পরিবেশটা তাদের জন্য মানানসই (পৃ-৩০)।

১১। ডিএনএ : একদল বিজ্ঞানী দাবী করেন যে, উল্কাপিন্ড এবং ধূমকেতুর মতো মহাজাগতিক বস্ত্তর দ্বারা পৃথিবীতে প্রাণ আনা হয়েছিল। গবেষকরা তিনটি উল্কাপিন্ড হ’তে উপাদান পরীক্ষা করে দেখেছেন। একটি ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি শহরে পড়েছিল। ২য়টি ১৯৬৯ সালে অষ্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যে পড়েছিল এবং ৩য়টি ২০০০ সালে কানাডার ব্রিটিশ কম্বডিয়া শহরে পড়েছিল। কিছু কিছু গবেষক এই উল্কাপিন্ডের মধ্যে ডিএনএ-এর বিল্ডিং ব্লক নিউক্লিওবেস পাওয়ার দাবী করেছেন। মানুষের DNA এর সাথে খাদ্য শস্যের এবং পশু-পাখির DNA এর সাথে আংশিক মিল রয়েছে। যেমন কলার সাথে ৫৫%, মাছির সাথে ৬০% , শিপাঞ্জির সাথে প্রায় ৯৮% মিল রয়েছে। যে DNA গুলোর মধ্যে মিল পাওয়া যাচ্ছে তা জীব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের অঙ্গ স্থানান্তর বিফল হয়েছে কারণ গুরুত্বপুর্ণ কিছু DNA ম্যাচ করেনি। বিজ্ঞানীরা মানুষের ২২৩টি এমন জীন খুঁজে পেয়েছেন, যা পৃথিবীর অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পৃথিবীর কোন প্রাণী হ’তে মানুষের বিবর্তন হয়নি (পৃ-১৫)।

উপরে আমরা এল্লিস সিলভারের প্রদত্ত তথ্য ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করলাম। এসকল তথ্যের আলোকে তিনি মত প্রকাশ করেছেন যে, মানুষ এই পৃথিবীর প্রাণী নয় বরং মানুষকে অন্য কোন গ্রহ হ’তে আনা হয়েছে।

এখন আমরা দেখব আল-কুরআন এ সম্পর্কে কি বলে। আল্লাহ বলেন,وَقُلْنَا يَاآدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ ‘আর আমরা বললাম, হে আদম তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং সেখান থেকে যা খুশী খাও। কিন্তু তোমরা এই বৃক্ষটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহ’লে তোমরা সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৫)

আল্লাহ বলেন,فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَى حِينٍ ‘অতঃপর শয়তান তাদেরকে ঐ বৃক্ষের কারণে পদস্খলিত করল। অতঃপর তারা যে সুখ-শান্তির মধ্যে ছিল সেখান থেকে সে তাদেরকে বের করে আনলো। তখন আমরা বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পরে শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে আবাসস্থল ও ভোগ-উপকরণ সমূহ নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত’ (বাক্বারাহ ২/৩৬)

আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের ভুলের কারণে তাদেরকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ পৃথিবীতে জান্নাত হ’তে মানুষের আগমন ঘটেছে। এল্লিস সিলভার দাবী করেছে অন্যকোন স্থান হ’তে মানুষের আগমন ঘটেছে এবং আল-কুরআন জানিয়েছে মানুষকে জান্নাত হ’তে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এক্ষণে আমরা দেখব এল্লিস সিলভারের বর্ণনা মতে, মানুষ যে স্থান হ’তে এসেছে তার সাথে জান্নাতের তুলনা কেমন হবে। আল্লাহ বলেন, مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا ‘তারা সেদিন সুসজ্জিত আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসবে। সেখানে তারা অতি গরম বা অতি শীত কোনটাই অনুভব করবে না’ (ইনসান ৭৬/১৩)। অর্থাৎ জান্নাতের কোন ঋতু পরিবর্তন হয় না। জান্নাতে সর্বদা একই রকম আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই ঋতু পরিবর্তনের কারণে মানুষের যে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই হয় তা জান্নাতে হয় না।

আল্লাহ বলেন, وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا ‘বাগিচার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফল-মূল সমূহ তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে’ (ইনসান ৭৬/১৪)। অর্থাৎ পৃথিবীতে সূর্যের আলো এবং তাপের কারণ মানুষের যে ক্ষতি হয় তা জান্নাতে হবে না। সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাব জান্নাতে থাকবে না।

বিজ্ঞানী এল্লিস সিলভার তার গবেষণার আলোকে দাবী করেছেন এই পৃথিবীতে মানুষ অসুখী এবং বিষণ্ণ কিন্তু পৃথিবীর পশু-পাখির এই ধরনের অবস্থা নেই। কিন্তু মানুষ যে স্থান হ’তে এসেছে সেখানে এরূপ অবস্থা নেই (পৃ-৩১)।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি দিয়ে জান্নাত তৈরী করা হয়েছে? তিনি (ছাঃ) বললেন, সোনা-রুপার ইট দিয়ে। একটি রূপার ইট, তারপর একটি সোনার ইট, এভাবে গাথা হয়েছে। এর গাথুনির উপকরণ (চুন-সুরকি-সিমেন্ট) সুগন্ধি মৃগনাভি এবং কংকরসমূহ মণি-মুক্তার ও মাটি হলো জাফরান। জান্নাতে প্রবেশকারী লোক অত্যন্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকবে, কোন দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন তাকে স্পর্শ করবে না।[2]

উপরোক্ত আলোচনা হ’তে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হ’লাম যে, ডারউইন বিবর্তনবাদের যে দাবী করেছিল তার কোনরূপ প্রমাণ ডারউইন এবং তার মতবাদের অনুসারীরা পেশ করতে পারেনি। এরপরও তারা এই মতবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে স্রেফ ইসলামকে ঠেকানোর জন্য। অপরদিকে ডঃ এল্লিস সিলভারের গবেষণায় এটা আরও দৃঢ় হয়েছে যে, মানুষের সৃষ্টি বিবর্তনবাদের মাধ্যমে হয়নি বরং মানুষকে অন্য স্থান হ’তে পৃথিবীতে আনা হয়েছে। আর আমরা আল-কুরআনের আয়াত হ’তে জানতে পেরেছি যে, মানুষকে জান্নাত হ’তে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রিয় পাঠক! গভীরভাবে চিন্তা করুন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা যত সূক্ষ্ম হচ্ছে তত আল-কুরআনের আয়াত এবং হাদীছসমুহ মানুষের নিকট প্রামাণিক হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মানুষের আগমন যে স্থান হ’তে ঘটেছে বলে মত প্রকাশ করছেন সে স্থানের বিবরণের সাথে আল-কুরআনের আয়াত এবং হাদীছে বর্ণিত জান্নাতের বিবরণের মিল পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের যেমন ক্ষমতা নেই জান্নাত হ’তে পৃথিবীতে আসার তেমনি ক্ষমতা নেই পৃথিবী হ’তে জান্নাতে যাওয়ার। কেবল আল্লাহ তা‘আলার সেই ক্ষমতা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এর ঘোষণাও কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে, তাদেরকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দাও, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত। যখন তারা সেখানে কোন ফল খাদ্য হিসাবে পাবে, তখন বলবে, এটা তো সেইরূপ, যা আমরা ইতিপূর্বে পেয়েছিলাম। এভাবে তাদেরকে দেওয়া হবে দুনিয়ার সাদৃশ্যপূর্ণ খাদ্যসমূহ। এছাড়া তাদের জন্য সেখানে থাকবে পবিত্রা স্ত্রীগণ এবং সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল’ (বাক্বারাহ ২/২৫)

অতএব, এই মনোরম জান্নাতে যেতে হ’লে অবশ্যই পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ হাদীছের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আল্লাহ আমাদের কুরআন অনুধাবন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!

(Book: Human are not from earth by Dr. Ellis Silver)


[1]. বিবর্তনবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ‘বিবর্তনবাদ’ বইটি অধ্যয়ন করুন! - লেখক।

[2]. সুনান তিরমিযী হা/২৫২৬






আল-কুরআনে কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পানি ও সূর্যের তরঙ্গচক্র - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
পৃথিবীতে মানুষের আগমন নিয়ে আল-কুরআনের পথে বিজ্ঞান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
মানুষ কি কৃত্রিম বৃষ্টি (ক্লাউড সিডিং) ঘটাতে সক্ষম? - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
ঘুমের কতিপয় সুন্নাতী পদ্ধতি ও আধুনিক বিজ্ঞান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আসমান ও যমীনের মাঝে বিদ্যমান পরিমাপ সমূহ - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
সূর্যের চারিদিকে গ্রহের সুশৃংখল গঠন - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আছহাবে কাহফের ঘটনায় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
চন্দ্র দিয়ে মাস এবং সূর্য দিয়ে দিন গণনা : মহান আল্লাহর এক অনন্য বিধান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
কুরআন বলছে আসমানে কোন ফাটল নেই; বিজ্ঞান কি বলে? - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আসমান হ’তে লোহা নাযিলের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও বৃষ্টির পানির উপকারিতা - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
রক্ত ও মৃত জন্তুর গোশত ভক্ষণ হারাম হওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
ভাষা জ্ঞান মানবজাতির জন্য আল্লাহর অনন্য নিদর্শন - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
আরও
আরও
.