পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬। পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯। শেষ পর্ব।
(১৫৯/৪) পৃ. ১১৩ একাত্তরের দিনগুলি -জাহানারা ইমাম (জন্ম : মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ ১৯২৯; মৃত্যু : ঢাকা ১৯৯৪)
আজ শরীফের কুলখানি। আমার বাসায় যাঁরা আছেন, তাঁরাই সকাল থেকে দোয়া দরুদ কুল পড়ছেন। পাড়ার সবাইকে বলা হয়েছে বাদ মাগরেব মিলাদে আসতে। এ.কে. খান, সানু, মঞ্জু, খুকু সবাই বিকেল থেকেই এসে কুল পড়ছে।
মন্তব্য : এগুলি বিদ‘আতী রীতি। বিখ্যাত হানাফী আলেম মাওলানা খলীল আহমাদ স্বীয় ‘কিতাবুল বারাহীনিল ক্বাতে‘আহ’ ১১১ পৃষ্ঠায় লিখেন যে, হিন্দুস্থানে প্রচলিত ‘তীজা’ অর্থাৎ তৃতীয় দিনে কুলখানীর রেওয়াজ হিন্দুদের দেখে মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে চালু করেছে’ (কোরআন ও কলেমাখানী, ২য় সংস্করণ ১৬ পৃ.)।
(১৬০/৫) পৃ. ১৮২ জুতা আবিষ্কার
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মন্তব্য : ১০০ লাইনের দীর্ঘ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের ‘কল্পনা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত। বাস্তবে এটি স্রেফ একটি কাল্পনিক কাহিনী মাত্র। যাতে শিক্ষার্থীদে ভুল বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে যে, জুতা আবিষ্কার হয়েছে রাজাদের মাধ্যমে। অথচ জুতা হযরত মূসা (আঃ)-এর আমলেও ছিল (ত্বোয়াহা ২০/১২)।
(১৬১/৬) পৃ. ১৯৩ ছায়াবাজি
-সুকুমার রায় (কলিকাতা, ১৮৮৭-১৯২৩ খৃ.)
চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পারো,
শুঁকলে পরে সর্দিকাশি থাকবে না আর কারো।...
মন্তব্য : ৩৬ লাইনের দীর্ঘ এ রূপক ও কাল্পনিক কবিতায় কোন শিক্ষণীয় নেই। এর কোন বাস্তবতা নেই। যার আড়ালে শিক্ষার্থীদের কুসংস্কার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে দাখিল নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য পাঠ্য বই হিসাবে নির্ধারিত ২৬৪ পৃষ্ঠার পুরা বইটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন ইসলামী শিক্ষা
সাহিত্য পাঠ
একাদশ-দ্বাদশ
৩৬২ পৃষ্ঠার এ বইয়ে গদ্য ৩০টি। এর মধ্যে ১০টির লেখক হিন্দু। আর কবিতা ৩০টি। এর মধ্যে ৯টির লেখক হিন্দু। লেখক ও সংকলক ৬ জন এবং সম্পাদক ১ জন সহ মোট পাঁচজন অধ্যাপক।
(১৬২/১) পৃ. ৯ বিড়াল
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (উত্তর ২৪ পরগণা, ১৮৩৮-১৮৯৪ খৃ.)
আমি শয়নগৃহে, চারপায়ীর উপর বসিয়া, হুঁকা হাতে ঝিমাইতেছিলাম।...প্রথমে মনে হইল, ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হইয়া, আমার নিকট আফিং ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে।
মন্তব্য : এযুগে কোন ভদ্রলোক প্রকাশ্যে ‘হুঁকা’ পান করেন না এবং কেউ কোন ভদ্রলোকের নিকটে ‘আফিং’ ভিক্ষা করেন না। অথচ এই হারাম বস্ত্তগুলি গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখানোর উদ্দেশ্য কি তাদেরকে এসবের প্রতি আকৃষ্ট করা?
(১৬৩/২) ১৬ পৃ. কাসেমের যুদ্ধযাত্রা
-মীর মশাররফ হোসেন (লাহিনীপাড়া, কুমারখালি, কুষ্টিয়া ১৮৪৭-১৯১২ খৃ.)
সূর্যদেব যতই ঊর্ধ্বে উঠিতেছেন, তাপাংশ ততই বৃদ্ধি হইতেছে।
মন্তব্য : মুসলিম শিক্ষার্থীরা সূর্যকে দেবতা বলেনা। তাছাড়া ‘বিষাদ সিন্ধু’ নামক মহাকাব্যিক উপন্যাসের অধিকাংশ চরিত্র ও বর্ণনা কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। এসব থেকে শিক্ষার্থীদের বিরত রাখা উচিৎ।
(১৬৪/৩) পৃ. ২১৪ নেকলেস
মূল : গী দ্য মোপাসাঁ (নর্মান্ডি, ফ্রান্স ১৮৫০-১৮৯৩ খৃ.)
অনুবাদ : পূর্ণেন্দু দস্তিদার (পটিয়া, চট্টগ্রাম ১৯০৯-১৯৭১ খৃ.)
...‘বল’ নাচের দিন এসে গেল।...সে ছিল সবচেয়ে সুন্দরী, সুরুচিময়ী, সুদর্শনা, হাস্যময়ী ও আনন্দপূর্ণ। সব পুরুষ তাকে লক্ষ করছিল, তার নাম জিজ্ঞাসা করে তার সঙ্গে আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করছিল। মন্ত্রীসভার সব সদস্যের তার সঙ্গে ‘ওয়ালটজ’ নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলেন।
মন্তব্য : এই ধরনের বিদেশী গল্প অনুবাদ করে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের কোন্ দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে? এসব ফালতু কাহিনী অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
(১৬৫/৪) পৃ. ২৩২ বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
-মাইকেল মধুসূদন দত্ত (সাগরদাঁড়ি, যশোর, ১৮২৪-১৮৭৩ খৃ.)
মন্তব্য : মেঘনাদবধ কাব্যে শ্রীলঙ্কার রাজা রাবণ-এর পক্ষে সেদেশে হামলাকারী রামচন্দ্র ও তার ভাই লক্ষ্মণের গোপন সহায়তাকারী ও রাবণের পুত্র ও সেনাপতি মেঘনাদকে হত্যায় লক্ষ্মণকে সুযোগ দানকারী রাবণের ভাই বিভীষণের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্যই বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। যদিও রামচন্দ্র কেবল মহাকাব্যে আছেন, বাস্তবে নেই। এইসব ভিত্তিহীন কাব্য-কাহিনী এবং তাতে ব্যবহৃত কঠিন ও অপ্রচলিত হিন্দুয়ানী শব্দসমূহে এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় কিছুই নেই।
বিষয় : আরবী সাহিত্য
বইয়ের নাম : আদ্দুরূসুল আরাবিয়্যাহ ওয়াল কাওয়াই
শ্রেণী : ১ম
(১৬৬/১) পৃ. ২৫ ১২তম পাঠে هَيَّا هَيَّا কবিতায় ছেলে ও মেয়ের ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে-
هَيَّا هَيَّا يَا اَصْحَابِيْ + سِيْرُوْا صَفًّا لِلْأَلْعَابِ...
অর্থ : এসো এসো, আমার বন্ধুরা। খেলার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দৌঁড়াও
মন্তব্য : সহশিক্ষার বীজ বপন করা হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদেরকে লিঙ্গসমতার দীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যা স্বভাবধর্মের বিরোধী
বিষয় : আরবী সাহিত্য
বইয়ের নাম : আদ্দুরূসুল আরাবিয়্যাহ
শ্রেণী : ২য়
(১৬৭/১) পৃ. ৪১ ও ৪৩ : ছালাতে মুক্তাদীদের নাভির নীচে হাত বাঁধার ছবি দেখানো হয়েছে।
মন্তব্য : ছালাতে মক্কার ইমামের ছবি দেওয়া হয়েছে নীচে হাত বাঁধা অবস্থায়। অথচ মক্কা-মদীনার স্থানীয় ইমাম ও মুছল্লীরা বুকে হাত বাঁধেন ও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করেন।
বিষয় : আরবী সাহিত্য
বইয়ের নাম : আদ্দুরূসুল আরাবিয়্যাহ ওয়াল কাওয়াইদ
শ্রেণী : ৩য়
(১৬৮/১) পৃ. ২৫ মেয়ের ছবি।
পৃ. ৩৫ ৯ম পাঠে ছেলে-মেয়ের যৌথ ক্লাস করার ছবি।
পৃ. ৪৬ ১১তম পাঠে পরিবারের ছবির মধ্যে মা ও বোনের ছবি।
মন্তব্য : এগুলি অপ্রয়োজনীয় বিষয়। তাছাড়া ইসলামে প্রাণীর ছবি নিষিদ্ধ, যদি সেটি সম্মানের উদ্দেশ্যে হয়।
বিষয় : আরবী সাহিত্য ও ব্যাকরণ
বইয়ের নাম : আদ্দুরূসুল আরাবিয়্যাহ ওয়াল কাওয়াইদ
শ্রেণী : ৫ম
(১৬৯/১) পৃ. ২৬ ৫ম পাঠের কবিতায় দাদা-দাদীর ছবি দেয়া আছে।
মন্তব্য : দাদী বুঝানোর জন্য ছবির কোন প্রয়োজন ছিল না।
(১৭০/২) ৪৮ পৃ. ৯ম পাঠে ছেলে-মেয়ের যৌথ পিটি করার ছবি।
(১৭১/৩) পৃ. ৮২ ১৫তম পাঠে ছেলে-মেয়ে এক সাথে হেঁটে মাদরাসায় যাওয়ার ছবি।
মন্তব্য : সহশিক্ষা সিদ্ধ করার তৎপরতা মাত্র।
বিষয় : আরবী সাহিত্য
বইয়ের নাম : আল-লুগাতুল আরাবিয়্যাতুল ইত্তেসালিয়া
শ্রেণি : ৭ম
(১৭২/১) পৃ. ৬৫ ১৫তম পাঠে শাহ জালাল আল-ইয়ামানী প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘মুসলমানেরা তার কবরকে পবিত্র মাযার হিসাবে গ্রহণ করেছে। তারা বরকত হাছিল ও অছীলা ধরার জন্য সকাল-সন্ধ্যা তার কবর যিয়ারত করে’।
মন্তব্য : বায়তুল্লাহ, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে নববী তিনটি মসজিদ ব্যতীত নেকীর উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করা যাবে না।[1] মৃত ব্যক্তির মাধ্যমে বরকত হাছিল বা অসীলা ধরা শিরক (ইউনুস ১০/১৮)। মূলতঃ অসীলা হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃত সৎকর্ম। যেমনভাবে গুহায় আটকে পড়া তিন যুবকের মুক্তির বিষয়ে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।[2]
বইয়ের নাম : আল্লুগাতুল আরাবিয়্যাতুল ইত্তেসালিয়াহ
দাখিল নবম-দশম শ্রেণি
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা
(১৭৩/২) পৃ. ১ ১ম ভাগ ১ম পাঠ ‘একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করা’
حكى أنه كان في بني إسرائيل رجل عابد، فجاءه قومه، وقالوا له: إن هناك قومًا يعبدون شجرة،...فأمَّنك الله مني، أمَّا في هذه المرة؛...فهزمتُك وغلبتُك
মন্তব্য : এগুলি ইস্রাঈলী বর্ণনা মাত্র।
(১৭৪/৩) পৃ. ৩ أَخْلِصْ دينَك يكفيك القليلُ من العمل
মন্তব্য : এটি যঈফ হাদীছ (বায়হাক্বী শো‘আব হা/৬৮৫৯; যঈফাহ হা/২১৬০)।
(১৭৫/৪) পৃ. ৪০ ৩য় ভাগ ১ম পাঠ ‘ন্যায়বিচার’
মন্তব্য : জ্যেষ্ঠ তাবেঈ ক্বাযী শুরাইহ (মৃ. ৭৮ হি.)-এর কাল্পনিক ছবি দেওয়া হয়েছে এবং ৪২ পৃষ্ঠায় তাঁর দাড়ি মুন্ডানো পুত্রের কাল্পনিক ছবি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আপত্তিকর।
(১৭৬/৫) পৃ. ১০৪ ৬ষ্ঠ ভাগ ১ম পাঠ ‘ইমাম আযম আবু হানীফা’ শীর্ষক প্রবন্ধে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ইবাদত সম্পর্কে বলা হয়েছে, আবু হানীফা প্রত্যেক দিন কুরআন খতম করতেন। অতঃপর যখন তিনি উছূল ও মাসআলা ইস্তিম্বাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন এবং সাথীরা (ছাত্রবৃন্দ) তাঁর পাশে একত্রিত হতে থাকেন, তখন তিনি তিন রাক‘আত বিতরে কুরআন খতম দিতে শুরু করতেন। আবু হানীফা এশার ওযূতে ৩০ বছর যাবৎ ফজরের ছালাত আদায় করেন এবং ৫৫ বার হজ্জ করেন।
মন্তব্য : উপরের বক্তব্যগুলি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে গিয়ে বরং তাঁর মর্যাদাহানি করা হয়েছে। কারণ তিন দিনের কমে কুরআন খতম দিতে হাদীছে নিষেধ রয়েছে (আবুদাঊদ হা/১৩৯৪; মিশকাত হা/২২০১)। আর ৩০ বছর এশার ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায়ের বিষয়টি অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য। এ সময় কি তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন বা ঘুমানোর কোন প্রয়োজন হয়নি? এরপরেও ৭০ বছরের জীবনে (৮০-১৫০ হি.) তিনি ৫৫ বার হজ্জ করেছেন, কথাটিও প্রমাণ সাপেক্ষ।
(১৭৭/৬) পৃ. ১১৮ ৬ষ্ঠ ভাগ ৩য় পাঠ حِضْنُ الْاُمَّهَاتِ ‘মায়ের কোল’ কবিতায় মায়ের বুকে সন্তানের দুধ খাওয়ানোর ছবি দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য : অথচ এ ছবির কোন প্রয়োজন ছিলনা।
বিষয় : আরবী সাহিত্য
বইয়ের নাম : اللغة العربية الية للعالم
শ্রেণী : আলিম
(১৭৮/১) পৃ. ৬০ ৩য় ভাগ ২য় পাঠ الموعظة الحسنة প্রবন্ধে কালো টুপি পরিহিত দাড়ি বিহীন এক ব্যক্তিকে ওয়াযকারী বা উপদেশ দাতা বানানো হয়েছে।
মন্তব্য : উপদেশ দাতার ছত্রছায়ায় সুন্নতী দাড়ি বিহীন লোকটিকে মডেল হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা সুন্নাতের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধের শামিল।
(১৭৯/২) পৃ. ৮৫-৮৬ ৪র্থ ভাগ ২য় পাঠ রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত ‘ক্বাছীদাতুল বুরদাহ’ নামক দীর্ঘ কবিতার একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে-
وكيف تدعو إلي الدنيا ضرورة من * لولاه لم تخرج الدنيا من العدم
অর্থ : আর কিভাবে প্রয়োজন তাঁকে দুনিয়ার দিকে ডাকবে? যিনি না হ’লে দুনিয়া অনস্তিত্ব হ’তে অস্তিত্বে আসতো না।
মন্তব্য : এখানে একটি জাল হাদীছের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। হাদীছটি হ’ল- لَوْلاَكَ مَا خَلَقْتُ الْأَفْلاَكَ ‘তুমি না হ’লে আমি নভোমন্ডল সৃষ্টি করতাম না’ (মওযূ‘; যঈফাহ হা/২৮২)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) কি দুনিয়াবী প্রয়োজনে সাড়া দিতেন না? নাকি সবসময় ‘খানক্বাহ নশীন’ হয়ে থাকতেন? তিনি কি প্রথম জীবনে ব্যবসা করেননি? তিনি কি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলা করেননি? বরং তিনি ছিলেন দুনিয়া ও আখেরাতের অভ্রান্ত পথ প্রদর্শক।
(১৮০/৩) পৃ. ৮৭ আরেকটি পংক্তিতে বলা হয়েছে,
لو ناسبت قدره آياته عظما أحيا * اسمه حين يدعي دارس الرمم
অর্থ : যদি তাঁর নিদর্শন সমূহ (মু‘জিযা সমূহ) তাঁর মর্যাদার সমপরিমাণ বড় হ’ত, তাহ’লে তাঁর নাম নিয়ে ডাক দিলে (মৃতদেহের) জীর্ণ অস্থিগুলি জীবিত হয়ে উঠত।
মন্তব্য : এই লাইনটি সরাসরি শিরক। এরূপ শিরকী আক্বীদায় পূর্ণ ক্বাছীদা রচয়িতাকে কিভাবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর চাদর উপহার দিতে পারেন? আর সেই চাদর তিনি মদীনার কবর থেকে মিসরের একজন ঘুমন্ত কবির গায়ে কিভাবে চড়িয়ে দিলেন?
উল্লেখ্য
যে, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসায় মিসরের কবি মুহাম্মাদ বিন সাঈদ আল-বূছীরী
(৬০৮-৬৯৬ হি./১২১২-১২৯৬ খৃ.) লিখিত ১৬৫ লাইনের দীর্ঘ কবিতা। যা বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। উক্ত দীর্ঘ কবিতাটি একটি অলৌকিক কবিতা হিসাবে
পরিচিত। যেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কবি স্বপ্নে রাসূল (ছাঃ)-এর দর্শন লাভ করেন
এবং স্বপ্নের মধ্যেই তাঁকে তাঁর প্রশংসায় লিখিত উক্ত ক্বাছীদাটি শুনান।
তাতে খুশী হয়ে রাসূল (ছাঃ) কবির গায়ে তাঁর চাদরটি জড়িয়ে দেন। অতঃপর ঘুম
থেকে উঠে কবি দেখেন যে, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তখন থেকে এটি রোগ নিরাময়ের
বরকতময় কবিতা হিসাবে প্রসিদ্ধি অর্জন করে। উক্ত ক্বাছীদার কিছু কিছু লাইনে
তাওহীদ পরিপন্থী কুফরী বক্তব্য রয়েছে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ সহ বিশ্ববিখ্যাত
বিদ্বানগণ এই ক্বাছীদার বরকত সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণা সমূহের তীব্র
প্রতিবাদ করেন।[3]
(১৮১/৪) পৃ. ১৩২ ৬ষ্ঠ ইউনিটের ২য় পাঠ আহমাদ শাওক্বী (১৮৬৮-১৯৩২ খৃ.) বিরচিত قُمْ لِلْمُعَلِّمِ কবিতার প্রথম লাইনটি হ’ল,
قُمْ لِلْمُعَلِّمِ وَفِّهِ التَّبْجِيْلا * كَادَ الْمُعَلِّمُ أَن يَكُوْنَ رَسُولا
অর্থ : তুমি শিক্ষকের সম্মানে দাঁড়াও এবং তাঁকে পূর্ণ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন কর * কেননা শিক্ষক হ’লেন রাসূল তুল্য।
মন্তব্য : কারু সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা ইসলামী শরী‘আতের পরিপন্থী। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যদি কেউ এতে আনন্দবোধ করে যে, লোকেরা তাকে দেখে দন্ডায়মান থাকুক, তাহ’লে সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’ (তিরমিযী হা/২৭৫৫; মিশকাত হা/৪৬৯৯)।
(১৮২/৫) পৃ. ১৩৮-৩৯ ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৩য় পাঠ الحوار حول الهواية শিরোনামের ৩য় কথপোকথনে ৬টি নামের একটি হ’ল, شادية যার অর্থ গায়িকা।
মন্তব্য : নাম কেবল আরবী হ’লেই চলবেনা। বরং ইসলামী অর্থবহ হ’তে হবে। আর এক পৃষ্ঠায় একটি চেহারা খোলা মেয়ের ছবি, আরেক পাশে ডাকটিকেটে মাওলানা ভাসানীর ছবি দেওয়া হয়েছে। নীচে আরবীতে আল্লাহর আটটি ক্যালিওগ্রাফিক নাম উলট-পালট করে ছবি আকারে দেওয়া হয়েছে। যা অন্যায়।
(১৮৩/৬) পৃ. ১৪৮ ৭ম অধ্যায় ১ম পাঠخطبة عمر بن عبد العزيز رحمه الله প্রবন্ধের শুরুতে যে ছবিটি দেওয়া আছে, তাতে দাঁড়ি-পাল্লা ও বিচারকের রায়প্রদানের হাতুড়ি রয়েছে। ছবির নীচে আরবীতে লেখা আছে, الناس في الحساب يوم القيامة ‘ক্বিয়ামত দিবসে মানুষ হিসাবের সম্মুখীন হবে’।
মন্তব্য : মীযানের পাল্লা সম্পূর্ণ গায়েবী বিষয়। যা ছবি দিয়ে বুঝানোর বিষয় নয়।
(১৮৪/৭) পৃ. ১৬০ ৭ম ইউনিটের ৩য় পাঠ الحوار عن العطلة শিরোনামের প্রবন্ধে পুত্রের ‘যাকাতুল ফিৎর কি?’ প্রশ্নের জওয়াবে পিতা বলেন,صاع من تمر أو نصف صاع من حنطة عن كل شخض. মাথাপিছু এক ছা‘ খেজুর অথবা অর্ধ ছা‘ গম।
মন্তব্য : এটি সম্পূর্ণ হাদীছ বিরোধী।
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের
ক্রীতদাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ছা‘
খেজুর, যব ইত্যাদি (অন্য বর্ণনায়) খাদ্যবস্ত্ত ফিৎরার যাকাত হিসাবে ফরয
করেছেন’।[4]
(১৮৫/৮) পৃ. ২১৬ ১০ম অধ্যায় ২য় পাঠ العصر الجاهلي প্রবন্ধে জাহেলী যুগের লোকদের দাড়ি-পাগড়ী পরিহিত পুরুষ ও চেহারা সহ সর্বাঙ্গ আবৃত মহিলার ছবি দেখানো হয়েছে।
মন্তব্য : এর দ্বারা যদি সুন্নাতী লেবাসকে জাহেলী লেবাস বলে ইঙ্গিত করা হয়, তবে সেটি হবে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ। কেননা জাহেলী যুগ বুঝানোর জন্য এরূপ পোষাক পরিহিত মানুষের ছবি দেখানোর কোন প্রয়োজন ছিলনা।
বই : আকাইদ ও ফিকহ
ইবতেদায়ি তৃতীয় শ্রেণি
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা
পূণর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১৮
(১৮৬/১) প্রসঙ্গ কথা
বিশুদ্ধ ইমানের জন্য সহিহ আকিদা ও নির্ভূল আমল অতীব প্রয়োজন। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে কুরআন মাজিদ ও হাদিস শরিফের দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে ‘আকাইদ ও ফিকহ’ পাঠ্য পুস্তকটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্তব্য : কিন্তু বইয়ে এর তেমন কোন প্রমাণ নেই। তবে যেহেতু সেখানে লেখা হয়েছে, ‘কোনো প্রকার ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে গঠনমূলক ও যুক্তিসঙ্গত পরামর্শ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে’ সেহেতু আমরা ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ভুল-ত্রুটি কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য নিম্নে পেশ করলাম।
(১৮৭/২) পৃ. ২ প্রথম অধ্যায় পাঠ-২ তাওহিদ
‘কালিমা তায়্যিবা’ বলে যেটা লেখা হয়েছে, সেটা হ’ল কালেমায়ে শাহাদাতের সংক্ষিপ্ত রূপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কালেমায়ে ত্বাইয়েবা হ’ল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (ইবনু আববাস, কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ইবরাহীম ২৪ আয়াত)।
(১৮৮/৩) পৃ. ৫ পাঠ-৩ ‘ইমান’
ইমানে মুফাস্সাল
وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ...
মন্তব্য : ঈমানের ৫ম স্তম্ভ শেষ দিবসের উপর বিশ্বাস-এর পর ৭ম স্তম্ভ হিসাবে ‘মৃত্যুর পর পুনরুত্থান’ বিষয়টি অতিরিক্তভাবে সংযোজিত হয়েছে। কেননা ‘শেষ দিবস’ অর্থ দুনিয়ার শেষ এবং আখেরাতের শুরু। যার পরেই হিসাব, কর্মফল, জান্নাত-জাহান্নাম সবকিছু আসে (মিরক্বাত)।
(১৮৯/৪) পৃ. ১০ দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৩ ফেরেশতা
ফেরেশতা ‘হযরত আজরাইল’ উল্লেখ। যা দলীল-প্রমাণহীন লকব।
মন্তব্য : আযরাঈল নামটি হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং ‘মালাকুল মউত’ নামটি প্রমাণিত (সাজদাহ ৩২/১১)। অনুরূপভাবে ‘ইস্রাফীল’ নাম সম্পর্কিত হাদীছটির সনদ কেউ ছহীহ, কেউ যঈফ বলেছেন।[5]
তৃতীয় অধ্যায়
‘তাহারাত’ পাঠ : ০১
(১৯০/৫) পৃ. ১৪ অজুর ফরজ :...৩. মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা। একইভাবে ইবতেদায়ী পঞ্চম শ্রেণীর ৩৪ পৃষ্ঠার পাঠ-৪ ‘অজু’-তেও লেখা হয়েছে।
মন্তব্য : মাথার কিছু অংশ বা এক চতুর্থাংশ মাসাহ করার কোন দলীল নেই। বরং পূর্ণ মাথা বা মাথার সামনের কিছু অংশ সহ পাগড়ীর উপর মাসাহ অথবা কেবল পাগড়ীর উপর মাসাহ করা প্রমাণিত (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৫৯ পৃ.)।
(১৯১/৬) পৃ. ১৫ অজু করার নিয়ম : ‘ভিজা হাতে মাথা, ঘাড় ও কান একবার মাসেহ করতে হবে’।
মন্তব্য : গর্দান মাসাহ করার কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। ইমাম নবভী (রহঃ) একে ‘বিদ‘আত’ বলেছেন।[6] ‘যে ব্যক্তি ওযূতে ঘাড় মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবেনা’ বলে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সেটি মওযূ বা জাল।[7]
(১৯২/৭) পৃ. ১৬ পাঠ-৩ তায়াম্মুম
তায়াম্মুমের ফরজ :...৩. ‘উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা’। একইভাবে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণীতেও লেখা হয়েছে (পৃ. ৩৭ পাঠ-৬)।
মন্তব্য : বরং পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটির উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার বুলাবে। দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৬৬ পৃ.)।
(১৯৩/৮) পৃ. ১৭ চতুর্থ অধ্যায় সালাত পাঠ-১
সালাত আদায়ের উপকারিতা :...দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে আল্লাহ পাঁচটি পুরস্কার দিবেন। যথা: ১. রিজিকের কষ্ট থাকবে না। ২. কবরে আযাব হবে না। ৩. হাশরের ময়দানে ডান হাতে আমলনামা পাবে। ৪. পুলসিরাত তাড়াতাড়ি পার হতে পারবে। ৫. বিনা হিসেবে জান্নাত লাভ করবে।
মন্তব্য : সরাসরি এরূপ বর্ণনা কুরআন বা হাদীছে নেই।
(১৯৪/৯) পৃ. ১৯ পাঠ-০২, ‘সালাতের নিয়ত’
মনে মনে নিয়ত করাই আসল নিয়ত। তবে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম’। এভাবে ১৯ ও ২০ পৃষ্ঠা জুড়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের অর্থসহ আরবী নিয়ত লেখা হয়েছে।
মন্তব্য : নিয়তের স্থান হ’ল অন্তরে। আর মুখে নিয়ত পাঠ করা ‘উত্তম’ নয় বরং মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি, যা ‘বিদ‘আত’- আর তা অবশ্যই ‘মন্দ’ ও পরিত্যাজ্য।
(১৯৫/১০) পৃ. ২৪ ‘দুটি দোআ’ ছালাত শেষে মুনাজাতের জন্য কুরআন মাজিদ থেকে দুটি দোআ নিম্নে দেওয়া হলো:رَبَّنَآ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ- (বাক্বারাহ ২/২০১) এবংرَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ- (আ‘রাফ ৭/২৩)। পৃষ্ঠার নীচে দেওয়া হয়েছে,
শান্তি মনে সালাত পড়ি+দু’হাত তুলে দোআ করি।
মন্তব্য : ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো‘আ পাঠের প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হ’তে এর পক্ষে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বরং একাকী হাত তুলে দো‘আ করা যাবে (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩৩ পৃ.)।
(১৯৬/১১) পাঠ-৫ ‘দেশপ্রেম’ দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ...।
মন্তব্য : হাদীছটি জাল (যঈফাহ হা/৩৬)। তবে নিঃসন্দেহে দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত। এতে দোষের কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হিজরতের রাতে জন্মস্থান মক্কার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন (বাক্বারাহ ২/১৪৪) দেশপ্রেমের কারণেই। ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ ‘হরকতে বরকত’ ‘সত্য বলা থেকে চুপ থাকা ব্যক্তি বোবা শয়তান’ কথাগুলি হাদীছ নয়, বরং প্রবাদ বাক্য হিসাবে সমাজে প্রচলিত।
(১৯৭/১২) পৃ. ৩২ অজুর পর যে দোআ পড়তে হয়
...سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ.
মন্তব্য : বইয়ে ওয়ূর দো‘আ ঠিক আছে। কিন্তু শেষে উপরোক্ত দো‘আটি যোগ করা হয়েছে। যা মূলতঃ তওবার দো‘আ। এটি ওযূর দো‘আর অন্তর্ভুক্ত নয়।
(১৯৮/১৩) পৃ. ৩৩ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে বের হয়ে যে দোআ পড়তে হয় غُفْرَانَكَ، الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى أَذْهَبَ عَنِّى الأَذَى وَعَافَانِى
মন্তব্য : দো‘আটির প্রথম অংশ ছহীহ।[8] দ্বিতীয় অংশটি যঈফ।[9]
(১৯৯/১৪) পৃ. ৩৩ ঘরে প্রবেশের সময় যে দোআ পড়তে হয় اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا-
মন্তব্য : হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ হা/৫০৯৬; মিশকাত হা/২৪৪৪; আলবানী, তারাজু‘আত হা/৩৭)। গৃহে প্রবেশের সুন্নাতী নিয়ম হ’ল, প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে।[10] অতঃপর গৃহবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দিবে (নূর ২৪/৬১)।
বিষয় : আকাইদ ও ফিকহ
ইবতেদায়ি চতুর্থ শ্রেণি
বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা প্রকাশকাল, পূণর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১৮
(২০০/১) পৃ. ০২ প্রথম অধ্যায় পাঠ-২, ইমান
ইমানে মুফাসসালে বর্ণিত ৭টি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত কেউ মুমিন হতে পারে না।
মন্তব্য : ৬টি বিষয় হবে, ৭টি নয়। এ বিষয়ে ক্রমিক (১৮৮/৩)-য়ে আলোচিত হয়েছে।
(২০১/২) পৃ. ১৩ সালাতের মধ্যে কুরআন থেকে তেলাওয়াত করা ফরজ।
মন্তব্য : কেবল
কুরআন নয়, বরং সূরা ফাতেহা পড়া ফরয। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ
ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না’।[11] তিনি
বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করল, যার মধ্যে ‘কুরআনের সারবস্ত্ত’ অর্থাৎ
সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ঐ ছালাত বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ,
অপূর্ণাঙ্গ’...। রাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) -কে বলা হ’ল, আমরা যখন ইমামের
পিছনে থাকি, তখন কিভাবে পড়ব? তিনি বললেন, إقْرَأْ بِهَا فِيْ نَفْسِكَ (ইক্বরা’ বিহা ফী নাফসিকা) ‘তুমি ওটা চুপে চুপে পড়’।[12]
অজুর ফরজ ৪টি। যথা- ...৩. মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা।
(২০২/৩) পৃ.১৭ পাঠ-২ প্রধান চার ফেরেশতা
আজরাইল ও ইসরাফিল...
মন্তব্য : উক্ত দুই ফেরেশতাকে মালাকুল মউত ও মালাকুছ ছূর বলা উচিৎ। আলোচনা দ্রষ্টব্য : ক্রমিক (১৮৯/৪)।
(২০৩/৪) পৃ. ২৬-২৭ চতুর্থ অধ্যায় তাহারাত, পাঠ-১ অজু
*মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা। *শরীরের কোন স্থান হতে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়া।
*মুখ ভরে বমি করা
মন্তব্য : আলোচনা দ্রষ্টব্য : ক্রমিক (১৯০/৫)।
(২০৪/৫) পৃ. ২৮ পাঠ-২ গোসল,
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে গোসল শুরু করা এবং পৃ. ২৯ তায়াম্মুমের ৩নং ফরজ- উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা।
মন্তব্য : উক্ত বিষয়ে আলোচনা দ্রষ্টব্য : ২য় কিস্তি ক্রমিক (২৭, ২৮, ৩০) এবং বর্তমান কিস্তি (১৯২/৭)।
(২০৫/৬) পৃ. ২৯ পাঠ-০৩ তায়াম্মুম।
যে সব অবস্থায় তায়াম্মুম করা যায় : *অজু করে আসতে গেলে জানাজা বা ইদের সালাত না পাওয়ার আশঙ্কা করলে।
মন্তব্য : এটি কেবল হানাফী মাযহাবে জায়েয, জমহূর বিদ্বানগণের নিকট নয়। কেননা জানাযার ছালাত বা ঈদের ছালাত ফরয নয় এবং এগুলি ওযূ করে পরেও পড়া যায়।
(২০৬/৭) পৃ. ৩০ পাঠ-৪ ইসতিনজা
প্রস্রাব-পায়খানা শেষে আবশ্যক মত মাটির ঢিলা, টয়লেট পেপার ইত্যাদি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নাত।
মন্তব্য : পানি পেলে কুলূখের (মাটির ঢেলা) প্রয়োজন নেই।[13] স্রেফ পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করায় ক্বোবাবাসীদের প্রশংসা করে আল্লাহ সূরা তওবাহ ১০৮ আয়াতটি নাযিল করেন।[14]
(২০৭/৮) পৃ. ৩০ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, কিবলামুখী হয়ে বা কিবলা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা নিষেধ।
মন্তব্য : বাধ্যগত অবস্থায় দাঁড়িয়ে পেশাব করা জায়েয।[15] আর ঘেরা টয়লেটের মধ্যে পেশাব-পায়খানায় কিবলা ধর্তব্য নয়।[16]
(২০৮/৯) পৃ. ৩৫ সালাত আদায়ের নিয়ম-
* জায়নামাজের দোআ পাঠ করা।
মন্তব্য : ছালাত শুরুর আগেই জায়নামাযের দো‘আ মনে করে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু...’ পড়ার রেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাফ। মূলতঃ জায়নামাযের দো‘আ বলে কিছু নেই।
* তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় পুরুষ দু’কান পর্যন্ত এবং মহিলা দু’কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠাবে। পুরুষ নাভির নিচে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে ধরবে। মহিলা বুকের উপর বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।
মন্তব্য : হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানোর হাদীছ যঈফ।[17] বরং নারী-পুরুষ প্রত্যেক মুছল্লী দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে (বুখারী হা/৮২৮; ঐ, মিশকাত হা/৭৯২)।
ছালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে হাত ও পুরুষের জন্য নাভীর নীচে হাত বাঁধার যে রেওয়াজ চালু আছে, হাদীছে বা আছারে এর কোন প্রমাণ নেই।[18] বরং এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, ছালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে।[19]
(২০৯/১০) পৃ. ৩৭ পাঠ-৩ সালাতের ফরজসমূহ
সালাতের ফরজ মোট ১৩টি।
মন্তব্য : ছালাতটাই ফরয। বাকী ছালাতের রুকন ৭টি, ওয়াজিব ৮টি (দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)।
(চলবে)
[1]. বুখারী হা/১১৮৯; মুসলিম হা/১৩৯৭; মিশকাত হা/৬৯৩।
[2]. বুখারী হা/৩৪৬৪; মুসলিম হা/২৯৬৪; মিশকাত হা/১৮৭৮।
[3]. ক্বাছীদাতুল বুরদাহ (কাব্যানুবাদ) ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান (প্রফেসর আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়); সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৬৮৫-৮৮ পৃ.।
[4]. বুখারী হা/১৫০৩, ১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৬, ৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৫-১৬।
[5]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৩১০; সুয়ূত্বী, জামে‘উল কাবীর হা/১১১; আলবানী, যঈফুত তারগীব হা/২০৮২; যঈফাহ হা/৬৮৯৫।
[6]. আহমাদ হা/১৫৯৯৩, আবুদাঊদ হা/১৩২, আলবানী, উভয়ের সনদ যঈফ; নায়লুল আওত্বার ১/২৪৫-৪৭।
[7]. আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪।
[8]. তিরমিযী হা/৭; ইবনু মাজাহ হা/৩০০; মিশকাত হা/৩৫৯।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/৩০১; মিশকাত হা/৩৭৪; ইরওয়া হা/৫৩।
[10]. মুসলিম হা/২০১৮; মিশকাত হা/৪১৬১ ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১।
[11]. বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; কুতুবে সিত্তাহ সহ প্রায় সকল হাদীছ গ্রন্থে উক্ত হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।
[12]. মুসলিম হা/৩৯৫ (৩৮); মিশকাত হা/৮২৩, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) সংশ্লিষ্ট অধ্যায়।
[13]. তিরমিযী হা/১৯; মির‘আত ২/৭২।
[14]. আবুদাঊদ হা/৪৪; আলবানী, ইরওয়া হা/৪৫, পৃ. ১/৮৩-৮৪; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অধ্যায়।
[15]. বুখারী হা/২২৪; মুসলিম হা/২৭৩; মিশকাত হা/৩৬৪।
[16]. বুখারী হা/৩১০২; মুসলিম হা/২৬৬; মিশকাত হা/৩৩৫, আবুদাঊদ হা/১১; মিশকাত হা/৩৭৩।
[17]. আবুদাঊদ হা/৭৩৭।
[18]. মির‘আত (লাহোর ১ম সংস্করণ, ১৩৮০/১৯৬১) ১/৫৫৮; ঐ, ৩/৬৩; তুহফা ২/৮৩।
[19]. মির‘আত ৩/৫৯ পৃ.; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯।