পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪।
বেশী বেশী ওযূ করা :
আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রদর্শিত জীবন বিধান সার্বজনীন, শাশ্বত ও কল্যাণকামী। অনুরূপ একটি বিধান হ’ল ওযূ। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ছালাত ও কা‘বা ঘর তওয়াফের জন্য আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল পবিত্রতা তথা ওযূ করা।[1] ওযূর সময় উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করতে হয়, গড়গড়ার সাথে কুলি করতে হয় এবং সেই সাথে নাকে পানি প্রবেশ করিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হয়। অতঃপর সমস্ত মুখমন্ডল উত্তমরূপে ধৌত করতে হয়; ভালোভাবে মাথা ও কান মাসাহ করতে হয় এবং সবশেষে উভয় পা উত্তমরূপে ধৌত করতে হয়। যাতে সামান্যতম অংশও শুকনা না থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমনটিই নির্দেশ দিয়েছেন।[2] এমনকি তীব্র শীত ও অসুস্থতার সময় বা পানি সংকটের সময়ও উত্তমরূপে ওযূ করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، ‘আমি কি তোমাদের এমন একটি কথা বলব না আল্লাহ তা‘আলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং (জান্নাতেও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? ছাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তখন তিনি বললেন, কষ্ট হ’লেও পরিপূর্ণভাবে ওযূ করা, মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত ছালাত আদায়ের পর অপর ওয়াক্ত ছালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হ’ল ‘রিবাত্ব’ (প্রস্ত্ততি গ্রহণ)।[3]
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ওযূতে যেসকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করতে হয়, সেগুলো হ’ল রোগজীবাণুর প্রবেশ দ্বার এবং রোগবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের প্রধান মাধ্যম। রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ ও সুন্দর পদ্ধতি এটাই। ওযূ মানবদেহে রোগজীবাণু প্রবেশে বাধা প্রদানে অতন্দ্র প্রহরী।
ওযূর সময় সর্বপ্রথম উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হয়। দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশের প্রধান মাধ্যম যে হাত তা বিশ্ববাসী মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল এ করোনার সময়ে। কেননা হাত দ্বারাই অধিকাংশ কাজ-কর্ম সম্পাদন করতে হয়। যে কারণে হাতেই সর্বপ্রথম রোগজীবাণু লেগে যায় এবং তা উত্তমরূপে ধৌত না করে খাবার খেলে, নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করলে তা দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে জন্ম দেয় অসংখ্য রোগব্যাধি। শুধু জাগ্রত অবস্থায়ই নয়, ঘুমের মাঝে অচেতন অবস্থায়ও হাতে লেগে যেতে পারে রোগজীবাণু ও অপবিত্রতা। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঘুম থেকে উঠে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত না করে পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَغْسِلْ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِى وَضُوئِهِ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِى أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ، ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখন সে যেন স্বীয় হাত পানির পাত্রে না ডুবায়, যে পর্যন্ত না তা তিনবার ধুয়ে নেয়’।[4]
ওযূর মাধ্যমে হস্তসমূহ পরিস্কার না করলে নিম্ন বর্ণিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (ক) চর্মরোগ (খ) ঘামাচি (গ) চর্মের জ্বালা-যন্ত্রণা (ঘ) ফ্যাঙ্গাশ ইত্যাদি।[5]
আমরা যখন আহার করি, তখন খাবারের ছোট ছোট কণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে এবং থুথুর সাহায্যে তা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। আর ঐ দুর্গন্ধযুক্ত পদার্থ ক্ষতি সাধন করে দন্ত ও মাড়ির। কুলি ও মিসওয়াক দ্বারা এ থেকে মুক্ত থাকা যায়। বাতাসে অসংখ্য ধ্বংসাত্মক রোগজীবাণু উড়ে বেড়ায়। আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই না। অথচ সেই রোগজীবাণু বাতাসের সাহায্যে আমাদের মুখের মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে এবং থুথুর সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন না করলে নিম্নবর্ণিত রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
(১) মুখ পাকা (যা এইডসের প্রাথমিক লক্ষণ) মুখের কিনারা ফেটে যাওয়া, মুখে দাদ হওয়া, মুখে ছেতো রোগ হওয়া ইত্যাদি। মোটকথা কুলি করা এমনই একটি আমল, যার দ্বারা মানুষ এমন রোগ থেকে মুক্তি পায়। ঐ রোগ হ’লে মানুষের দ্বীন-দুনিয়া উভয়ই বরবাদ হয়ে যায়। তদুপরি কুলির মধ্যে গড়গড়া করা, যা দ্বারা মুছল্লী টনসিল ও গলার বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পায়। এমনকি বার বার গলায় পানি পৌঁছানো গলাকে ক্যানসার থেকেও রক্ষা করে।[6]
(২) শ্বাস গ্রহণের একমাত্র পথ হ’ল নাক। আর যেই বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণ করা হয়, তার মধ্যে লালিত-পালিত হয় অসংখ্য রোগজীবাণু, যা নাকের ভিতর দিয়ে অতি সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করে। সুতরাং এ রোগজীবাণু মিশ্রিত ধুলোবালি সর্বদা শ্বাসের সাহায্যে নাকের মধ্যে প্রবেশ করছে। এভাবে যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করতেই থাকে, তাহ’লে বিপদজনক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল আকার ধারণ করে। তাই স্থায়ী সর্দি-কাশি ও নাকের রোগীদের জন্য নাক ধৌত করা খুবই উপকারী।[7]
নাক মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আল্লাহ রাববুল আলামীন এই নাকের মধ্যে এমন একটি যন্ত্র সৃষ্টি করে রেখেছেন, যার মাধ্যমে মানব দেহের চির শত্রু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জীবাণু যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশের চেষ্টা করে তখন সেগুলোকে আটকে দেয়। হামলা প্রতিহত করে ও ধ্বংস করে দেয়। এদিকে রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা অনুযায়ী মুছল্লী কম পক্ষে দৈনিক পাঁচ বার উক্ত নাক পরিস্কার করে। এর ফলে মুছল্লীদের স্থায়ী সর্দি, কাশি কিংবা নাকে মারাত্মক ব্যাধি পরিলক্ষিত হয় না।[8]
(৩) মানুষের সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু হ’ল মুখ। বাতাসের সাথে ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য ধূলিকণা, ধোঁয়া ও রোগজীবাণু। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাপড়ে ঢাকা থাকলেও মুখ সব সময়ই খোলা থাকে। ফলে ধূলোবালি, ধোঁয়া ও রোগজীবাণু মুখের চামড়ার সাথে লেগে যায়। বার বার মুখ ধৌত না করলে চেহারার লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায় এবং এলার্জি, চর্মরোগ, মেছতা ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। ওযূর মাধ্যমে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার মুখ ধৌত করার ফলে এসকল রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
(৪) মুখমন্ডলের মধ্যে রয়েছে চোখ ও ভ্রূ। ওযূ করার সময় চোখের ভ্রূগুলো ভিজে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ভ্রূতে আর্দ্রতা থাকলে চক্ষু এমন এক মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পায়। যা চোখের ভিতরের আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে নিঃশেষ হয়ে পড়ে। ফলে রোগী ধীরে ধীরে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে।
চোখে ব্যথা বা কোন অসুখ হ’লে চিকিৎসকগণ বলেন, চোখে শীতল পানি ছিটিয়ে দিতে। বস্ত্তত পানি এমন এক মহা প্রতিষেধক যার দ্বারা চোখের সর্বপ্রকার রোগ নিঃশেষ হয়ে যায়। ধূলোবালি যেভাবে চেহারা ও নাককে প্রভাবিত করে, তেমনিভাবে চোখকেও প্রভাবিত করে থাকে। চোখ উঠা রোগ ধূলোবালির কারণেই হয়ে থাকে।
(৫) কনুই পর্যন্ত সাধারণত আবৃত থাকে। এতে যদি পানি ও বাতাস না লাগে, তাহ’লে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর নানাবিধ রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। কনুইতে হৃদপিন্ড, মস্তিষ্ক ও যকৃতের সাথে সম্পৃক্ত তিন প্রকার বৃহৎ শিরা (Veins) থাকে। কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করলে উপরিউক্ত তিনটি অঙ্গে শক্তি সঞ্চার হয় এবং তা রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে।
ফ্রান্সের জনৈক ডাক্তারের গবেষণা মতে, মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল পুরো শরীরে বিস্তৃত হয়ে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্মক্ষম হয়। তাই মাথা মাসেহ করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
(৬) বেশী ধূলাবালি ও জীবাণু আক্রান্ত হয় আমাদের পা সমূহ। মানব দেহের ‘ইনফেকশন’ সর্বপ্রথম শুরু হয় পায়ের আঙ্গুলের মধ্য হ’তে। তাই ইসলাম আমাদের জন্য দিনে পাঁচবার পা ধৌত করা ও আঙ্গুলসমূহ খেলালের নির্দেশ দিয়েছে। যেন আঙ্গুলের মধ্যে কোন প্রকার জীবাণু আটকে না থাকে। পা ধৌত করার দ্বারা বহু রোগ-ব্যাধিরও অবসান ঘটে। যেমন অস্থিরতা, ব্যাকুলতা, দুশ্চিন্তা, মস্তিষ্ক-শুষ্কতা, অনিদ্রা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ব্যাধি নিঃশেষ হয়ে যায়।[9]
American council for beauty সংস্থার সম্মানিত সদস্যা লেডী হীচার বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন প্রকার রাসায়নিক লোশন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তারা ইসলামী পন্থায় ওযূ দ্বারা চেহারার যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা পায়। জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘চক্ষু-পানি-সুস্থতা’। উক্ত প্রবন্ধে তিনি এ কথার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন যে, নিজের চক্ষুকে দিনে কয়েক বার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে, নতুবা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হ’তে পারে।[10]
ছালাত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ও সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যায়াম :
ছালাত শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতই নয়; বরং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যায়ামও বটে। ছালাতের মধ্যকার প্রতিটি কর্মকান্ড মানব শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এক একটি ব্যায়াম। যেমন- উভয় পা সমান্তরাল রেখে উভয় পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে কিবলামুখী হয়ে দন্ডায়মান হওয়া। অতঃপর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে[11] বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে বুকে হাত বেঁধে দন্ডায়মান হওয়া।[12] এ সময় দৃষ্টি সিজদার স্থান বরাবর রাখা[13], ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা বা আয়াত পাঠ করা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা।[14] অতঃপর তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দু’হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করে[15] দুই হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে দু’হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে মাথা ও পিঠ সমান্তরাল রেখে রুকূ করা[16] এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে স্থির রাখা।[17] রুকূ থেকে মাথা উত্তোলনের সময় পূর্বের ন্যায় দু’হাত উত্তোলন করা।[18] অতঃপর নাক সহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগসহ মোট সাতটি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে[19] এমনভাবে সিজদা করা যাতে হাত দু’খানা কিবলামুখী করে এবং মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর রেখে[20] কনুই ও বগল ঢেকে রাখা।[21] সিজদাতে বগল ও বুক এতটুকু উঁচু রাখা যাতে বুকের নীচ নিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে।[22] সিজদা হ’তে উঠে এমনভাবে বসা যাতে বাম পায়ের পাতার উপর নিতম্ব থাকে এবং ডান পায়ের আঙ্গুল সমূহ মাটিতে রেখে পা খাড়া থাকে।[23] অতঃপর পূর্বের ন্যায় দ্বিতীয় সিজদা করা এবং সিজদা থেকে উঠে সুস্থির হয়ে বসা।[24] অতঃপর মাটির উপর দু’হাতে ভর করে দন্ডায়মান হওয়া।[25] অতঃপর ক্বিরাআত পাঠ শেষে পূর্বের ন্যায় রুকূ-সিজদা করা এবং সিজদা থেকে উঠে ১ম বৈঠক হ’লে বাম পা পেতে তার উপর বসা এবং শেষ বৈঠক হ’লে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপর বসা এবং ডান পা খাড়া রাখা।[26] বৈঠকের সময় বাম পায়ের আঙ্গুল সমূহ বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর কিবলামুখী রাখা এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর পূর্ব পর্যন্ত ইশারা করতে থাকা।[27] সবশেষে শরীর স্থির রেখে ডান দিকে ও বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে সালাম দেয়া।[28]
ছালাতের মধ্যকার উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো এক একটি আদর্শ ব্যায়াম। ব্যায়ামের সময় যেসকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা হয়, তার সব ক’টিই রয়েছে ছালাতের মধ্যে। এজন্য পাকিস্তানের প্রখ্যাত ডাক্তার ও ইসলামী গবেষক মুহাম্মাদ তারেক মাহমূদ বলেন, ‘ছালাত হ’ল এক উত্তম শরীর চর্চা। অলসতা, বিষণ্ণতা ও বে-আমলীর এ যুগ-সন্ধিক্ষণে ছালাতই এমন এক ব্যায়াম, যা সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা হ’লে তার দ্বারা ইহকালীন সকল ব্যথার উপশম সম্ভব। ছালাতের ব্যায়াম যেমনিভাবে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণ, তেমনি আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন- হৃৎপিন্ড, যকৃত, মূত্রাশয়, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, নাড়িভুড়ি, পাকস্থলী, মেরুদন্ড, গর্দান, বক্ষ ও সর্বপ্রকার Glands-কে বর্ধিত করে শরীরকে সুঠাম ও সুন্দর করে তোলে। আর এ ব্যায়ামগুলির দ্বারা আয়ুও বৃদ্ধি পায়। পাওয়া যায় এক অসাধারণ শক্তি।[29]
পাকিস্তানের আরেক প্রথিতযশা ডাক্তার মাজেদ যামান ওছমানী বলেন, ছালাতের মাধ্যমে নিম্নোক্ত রোগগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। (১) মানসিক রোগ (২) স্নায়ুবিক রোগ (৩) অস্থিরতা, ডিপ্রেশন, ব্যাকুলতার রোগ (৪) মনস্তাত্ত্বিক রোগ (৫) হার্ট-এর রোগ (৬) হাড় জোড়া রোগ (৭) ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (৮) পাকস্থলী ও আলসার রোগ (৯) ডায়াবেটিস ও তার প্রভাব (১০) চক্ষু ও গলা রোগ।[30]
সতর্কতা :
ছালাতের স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য যদি কেউ আজীবন ছালাত আদায় করে তাহ’লে সে উপকারিতা সে পাবে বটে। কিন্তু এ ছালাতের বিনিময়ে সে পরকালে কিছুই পাবে না। কেননা সমস্ত আমলের প্রতিদান নির্ভর করে তার নিয়তের উপর।[31] ছালাতসহ যেকোন আমলে ছালেহ করতে হবে আল্লাহ রাববুল আলামীনের রেযামন্দি হাছিল ও পরকালীন মুক্তির প্রত্যাশায়। নচেৎ এ ধরনের আমলের কারণেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে হবে।[32]
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা :
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায়ের গুরুতব অপরিসীম। মসজিদে গিয়ে জামা‘আতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন,صَلاَةُ الرَّجُلِ فِى الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاَتِهِ فِىْ بَيْتِهِ وَفِىْ سُوْقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِيْنَ ضِعْفًا، ‘ঘরে অথবা বাজারে ছালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করার ছওয়াব ২৫ গুণ বেশী’।[33] অন্য বর্ণনায় ২৭ গুণের কথা এসেছে।[34] অন্ধ ব্যক্তিকেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে জামা‘আতে শরীক হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।[35] মসজিদে জামা‘আতে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের বাড়ী-ঘর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছা পোষণ করতেন।[36] এমন আরো অনেক হাদীছ রয়েছে, যেগুলো দ্বারা জামা‘আতের গুরুত্ব বুঝা যায়।
মসজিদে জামা‘আতে শরীক হওয়াতে যেমন রয়েছে পরকালীন কল্যাণ, তেমনি রয়েছে ইহকালীন তথা স্বাস্থ্যগত কল্যাণ। শারীরিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত হাঁটাহাটি অনেক উপকারী। আর মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতে হ’লে মুছল্লীকে নিয়মিত হাঁটাহাটি করতে হয়। মুছল্লীদের বাড়ী মসজিদ থেকে গড়ে ৫০০ গজ দূরে থাকলে ঐ মুছল্লীকে ৫ ওয়াক্ত জামা‘আতে শরীক হওয়ার জন্য দৈনিক কমপক্ষে দুই মাইল হাঁটতে হয়। যা একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ নিয়মিত হাঁটাহাঁটির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে সমস্ত আমলে ছালেহ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে। এ সকল আমলে দুনিয়াবী কোন কল্যাণ থাকলে সেটা হবে বোনাস তথা অতিরিক্ত প্রাপ্য।
ডাঃ এ হাসনাত শাহীন বলেন, ‘স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিয়মিত হাঁটাহাঁটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাতে শরীরের ওযন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কমবে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকি। হাঁটু ব্যথা হয় সাধারণত অস্টিও আথ্রাইটিসের কারণে। মধ্য বয়সের পরে হাঁটু, কোমর বা পায়ের জোড়া বা সন্ধি ক্ষয়ে যেতে পারে। অস্তিসন্ধিতে দুই হাড়ের মাঝে যে পিচ্ছিল তরল পদার্থ থাকে, তা নড়াচড়ার সময় হাড়ের পরস্পর ঘর্ষণে বাধা দেয়। কিন্তু এই তরল পদার্থ শুকিয়ে গেলে হাড়ের ঘর্ষণে তরুণাস্থি ক্ষয়ে যায়। তখনই শুরু হয় হাঁটুর ব্যথা। হাঁটু ব্যথা কমাতে হ’লে শরীরের ওযন কমানো যরূরী। আর ওযন কমানোর কার্যকর একটি উপায় হ’ল হাঁটা। একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় আধা কেজি ওযন কমালে হাঁটুর ওপর চাপ প্রায় চারগুণ কমে। তাছাড়া নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে পায়ের মাংসপেশী সুগঠিত হয়ে হাঁটুর উপর চাপ কমে এবং অস্থিসন্ধির কার্যকারিতা বাড়ে’।[37]
প্রখ্যাত স্নায়ু বিজ্ঞানী শেন ওমারা হাঁটার কিছু উপকারিতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, হাঁটার আছে অনেক উপকারিতা। এর ফলে পেশী সুগঠিত হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে ও মেরামত হয়, হজমে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রেখে বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। হাঁটাহাঁটির ফলে মানুষের চিন্তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, মেযাজ ভাল থাকে এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। আমরা যখন হাঁটি তখন পেশীতে তৈরী হওয়া মালকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখে এবং শক্তিশালী করে। হৃদপিন্ড ভাল থাকার জন্য হাঁটা খুবই উপকারী। হাঁটা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্য বন্ধুর মত কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে ঔষধ না খেয়ে হাঁটলে খুব সহজে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। বিষণ্ণতা এক ধরনের রোগ। এক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকার মতো কাজ করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদেরকে সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিংবা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে শারীরিক গঠনে বিশেষ করে পিঠে ব্যথা হ’তে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।[38]
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত নিয়মিত মসজিদে গিয়ে আদায় করলে পৃথকভাবে আর হাঁটাহাঁটি অথবা অন্য কোন ব্যয়ামের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে মসজিদ থেকে দূরবর্তী মুছল্লী অধিক লাভবান হন। নেকী ও স্বাস্থ্যগত উভয় দিক থেকেই তিনি লাভবান হন।
ওযূ সহ ডান কাতে শয়ন করা :
ওযূ করে ডান কাতে শয়ন করা সুন্নাত।[39] পাকিস্তানের বিখ্যাত ডাক্তার ও গবেষক তারেক মাহমূদ বলেন, হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) ‘আত-তিববুন নববী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ঘুমানোর সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে ডান কাতে ঘুমানো। এতে করে খাবার পেটে ভালোভাবে স্থির হয়ে যায়। কেননা পাকস্থলী এমনিতে বাম দিক ঝুঁকে থাকে। অতঃপর দ্রুত খাবার হজমের সুবিধার্থে সামান্য সময়ের জন্য বাম কাতে চলে আসবে। কারণ পাকস্থলী কলিজার দিকে ঝুঁকে থাকে। এরপর ডান কাতে স্থির হয়ে যাবে। যেন খাবার দ্রুত পাকস্থলী থেকে নেমে যায় এবং নাড়িভূঁড়িতে পৌঁছে যায়। এভাবে ঘুমের শুরু হবে ডান কাতে এবং শেষ হবে ডান কাতে। আর বাম কাতে বেশী সময় ঘুমানোর কারণে কলবের ক্ষতি হয়। কারণ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকর্ষণ ধাবিত থাকে কলবের দিকে। তাই উচ্ছিষ্ট পদার্থ বাম দিকে ঝুঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।[40]
আজকের বিজ্ঞান বলে, বাম কাত হয়ে শয়ন করলে গভীর ঘুম আসে। তবে ডান কাতে শয়ন করলে গভীর নিদ্রাও আসে আবার তার ঘুম শীঘ্র পূর্ণও হয়ে যায়। ফলে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জাগতে পারে।
অপর এক গবেষণা অনুযায়ী বাম দিকে কাত হয়ে শয়ন করলে ভয়াবহ স্বপ্ন বেশী হয়। কারণ মানুষের হার্ট থাকে বাম দিকে। আর বাম দিকে শয়নকারী ব্যক্তির পাকস্থলী ও নাড়ীভুঁড়ির চাপ হার্টের উপর পড়ে এবং হার্টের উপর বৃদ্ধি পায় ফিজিক্যাল প্রেসার। আর হার্টের উপর প্রেসার বৃদ্ধি পেলে ভয়াবহ স্বপ্ন দেখতে পায়। যেন কেউ হৃদপিন্ডকে ধরে রেখেছে।[41]
উপুড় হয়ে শয়ন আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,رَأَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً مُضْطَجِعًا عَلَى بَطْنِهِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ ضَجْعَةٌ لاَ يُحِبُّهَا اللهُ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন, এভাবে শয়ন করা আল্লাহ তা‘আলা পসন্দ করেন না’।[42]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু যার গিফারী (রাঃ) বলেন,وَأَنَا مُضْطَجِعٌ عَلَى بَطْنِى فَرَكَضَنِى بِرِجْلِهِ وَقَالَ يَا جُنَيْدِبُ إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ، ‘আমি উপুড় হয়ে শুয়েছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি স্বীয় পা দ্বারা আমাকে ঠোকা দিয়ে বললেন, হে জুনদুব! শোয়ার এ পদ্ধতি জাহান্নামীদের শয়ন পদ্ধতি’।[43]
হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) ‘আত-তিববুন নববী’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘প্রাচীন গবেষক বুকরাত স্বীয় গ্রন্থ আত-তাকদিমাহ-তে লিখেছেন, অসুস্থ ব্যক্তির অভ্যাস ছাড়া উপুড় হয়ে শোয়া তার মস্তিষ্কের বিকৃতি অথবা পেট ব্যথার প্রমাণ। আত-তাকদিমাহ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার লিখেছেন, কারণ সে নিজের ভাল অভ্যাস ছেড়ে খারাপ আকৃতিকে গ্রহণ করেছে। অথচ তার ভেতরে অথবা বাইরে কোন অপারগতা নেই।[44]
মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, ‘উপুড় হয়ে শয়ন করলে নাকে-মুখে রক্ত এসে মৃত্যু হ’তে পারে। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করেছেন’।[45]
দেহের অর্ধেক ছায়ায় ও অর্ধেক রোদে রেখে বসা নিষেধ :
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِى الْفَىْءِ فَقَلَصَ عَنْهُ الظِّلُّ وَصَارَ بَعْضُهُ فِى الشَّمْسِ وَبَعْضُهُ فِى الظِّلِّ فَلْيَقُمْ، ‘তোমাদের কেউ যখন ছায়ায় বসে অতঃপর তার উপর হ’তে ছায়া চলে যায় এবং এ অবস্থায় তার শরীরের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় থাকে, তবে সে যেন সেখান থেকে উঠে চলে যায়’।[46]
অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় ডাক্তারগণ গবেষণা করে বের করেছেন, শরীরে কিছু অংশ রোদে আর কিছু অংশ ছায়ায় থাকলে, মানুষের দেহে ও মেযাজে যথেষ্ট ক্ষতি হ’তে পারে। এতে কুষ্ঠরোগ ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মানসিক দিক দিয়ে মেযাজ খিটখিটে ও চঞ্চল হয়ে পড়ে। ফলে কোন ভালো কাজে লিপ্ত থাকে না। তাই এরূপ স্থানে বসতে নিষেধ করা হয়েছে।[47]
সাদা সুতি পোষাক পরিধান করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْبَسُوا الثِّيَابَ الْبِيْضَ فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ وَكَفِّنُوْا فِيْهَا مَوْتَاكُمْ، ‘তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কেননা তা অতি পবিত্র ও অধিক পসন্দনীয়। আর তোমাদের মৃতদেরকে সাদা কাপড়ে কাফন পরাও’।[48]
সাদা কাপড় সর্বপ্রকার আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে থাকে। তীব্র গরম মওসুমে সাদা পোষাক গরম হয় না। কেননা তা গরমকে আকর্ষণ করে না। অপরদিকে তীব্র শীতের মওসুমে ঠান্ডার কারণে তা শীতলও হয়ে যায় না।
ক্রোমোপ্যাথির অভিমত : রঙ ও আলো বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, সাদা পোষাক হ’ল ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষার সর্বোত্তম ঔষধ। এমনকি বিশেষজ্ঞগণের মতে সাদা পোষাক পরিধানকারী ব্যক্তি ঘামের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ও ছোতো রোগ (Fungal Infection)-এর মতো মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারে। তারা চর্ম এলার্জি (Skin Allergy) এবং উচ্চ রক্তচাপে (High Blood Pressure) আক্রান্ত রোগীদেরকে সর্বদা সাদা পোষাক পরিধানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্রোমোপেথী নীতি অনুযায়ী সাদা পোষাক মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড ও চর্মের সংরক্ষক।[49]
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন,كَانَ أَحَبُّ الثِّيَابِ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَلْبَسَهَا الْحِبَرَةَ- ‘নবী করীম (ছাঃ) হিবারাহ কাপড় পরিধান করতে অধিক পসন্দ করতেন’।[50]
‘হিবারাহ’ বলা হয় সাদা কাপড়ের মধ্যে সবুজ অথবা লাল ডোরাযুক্ত ইয়ামান দেশে বুনানো অতীব উন্নত সুতী কাপড়কে।[51]
ডাঃ তারেক মাহমূদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পোষাক ছিল সুতী কাপড়ের। সুন্নাত অনুযায়ী সুতী পোষাকের কি কি উপকারিতা রয়েছে এবং অন্যান্য পোষাকে কি কি অপকারিতা রয়েছে, তা আমাদের জানা দরকার। (১) আল্লাহ না করুন! কারও শরীরে আগুন লেগে যায়, তাহ’লে শরীরে সুতী পোষাক থাকলে তাতে ক্ষতি কম হয়।
(২) সুতী পোষাক গরম সহিষ্ণু হয়। উষ্ণ দেশসমূহে এতদ্ভিন্ন অন্য কোন সুব্যবস্থাই নেই।
(৩) যে শরীরে সুতী পোষাক থাকবে, সে শরীর চর্মরোগে আক্রান্ত হবে না। কেননা পলিয়েস্টার বা নায়লন সুতার পোষাক শরীরের ঘর্ষণে তীব্র গরম হয়ে যায়। আর এর তাপ শরীরের তাপের সাথে মিশে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে চর্মরোগ সৃষ্টি হয়।
সুতী পোষাক দেহের তাপমাত্রায় ভারসাম্য রাখে। ফলে চর্মরোগ ও মানসিক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অথচ পলিয়েস্টার কাপড়ের পোষাক দু’টি মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। একটি হ’ল মহিলাদের লিকুরিয়া আর অপরটি হ’ল পুরুষদের যৌনরোগ।[52]
ডাঃ লূথর এম এর গবেষণা :
ডা. লূথর ছিলেন জার্মানের প্রসিদ্ধ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, যখন থেকে মানুষ সুতী পোষাক পরিত্যাগ করেছে, তখন থেকে তারা নিম্নোক্ত রোগসমূহে আক্রান্ত হ’তে বাধ্য হয়েছে।
ক. চর্ম ক্যান্সার (Skin Cancer)
খ. চামড়ার গোশতগ্রন্থির ক্যান্সার (Skin Glands Cancer)
গ. মহিলাদের বক্ষ ক্যান্সার (Breast Cancer)
ঘ. টিসু ক্যান্সার (Tussues Cancer)
ঙ. হরমোন ক্যান্সার (Harmonies Cancer)
চ. চর্ম চুলকানী (Allergic Cancer)
ছ. একজিমা (Eczema)।[53]
[ক্রমশঃ]
ক্বামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসা, জামালপুর।
[1]. মুসলিম হা/২২৪; আবূদাঊদ হা/৫৯; তিরমিযী হা/১।
[2]. বুখারী হা/১৯৩৪; মুসলিম হা/২২৬; মিশকাত হা/২৮৭।
[3]. মুসলিম হা/২৫১; মিশকাত হা/২৮২।
[4]. বুখারী হা/১৬২; মুসলিম হা/২৭৮।
[5]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, ১/৪৪ পৃঃ।
[6]. ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ৩৭।
[7]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ৪৫-৪৬।
[8]. ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ৩৮।
[9]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান ১/৪৩-৫২।
[10]. ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ৩৮।
[11]. বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২।
[12]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবূদাঊদ হা/৭৫৫, সনদ ছহীহ।
[13]. হাকেম, বায়হাক্বী, ছিফাতু ছালাতিন্নাবী, পৃঃ ৬৯।
[14]. বুখারী হা/৭৪৪; মুসলিম হা/৫৯৮; আবূদাঊদ হা/৮৫৯, ৮৬০; মিশকাত হা/৮০৪, ৮১২।
[15]. বুখারী হা/৭৩৫, ৭৩৯; মিশকাত হা/৭৯৪-৭৯৫।
[16]. বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২।
[17]. হাকেম, বায়হাক্বী, ছিফাতু ছালাতিন্নাবী, পৃঃ ৬৯; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১০৪।
[18]. বুখারী হা/৭৩৫, ৭৩৯; মিশকাত হা/৭৯৪-৭৯৫।
[19]. বুখারী হা/৮১২; মুসলিম হা/৪৯০; মিশকাত হা/৮৮৭।
[20]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৩; আবূদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১।
[21]. মুসলিম হা/৪৯৫; বুখারী হা/৩৯০; মিশকাত হা/৮৯১।
[22]. আবূদাঊদ হা/৮৯৮; মুসলিম হা/৪৬৯; মিশকাত হা/৮৯০।
[23]. বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২।
[24]. বুখারী হা/৮২৩; মিশকাত হা/৭৯৬।
[25]. বুখারী হা/৮২৪।
[26]. বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২।
[27]. মুসলিম হা/৫৮০; মিশকাত হা/৯০৬; মির‘আত ৩/২২৯।
[28]. আবূদাঊদ হা/৬৬৯; নাসাঈ হা/১৩২৪; মিশকাত হা/৯৫০।
[29]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, ১/৫৬ পৃঃ।
[30]. প্রাগুক্ত ১/৫৯ পৃঃ।
[31]. বুখারী হা/১, ৫৪, ২৫২৯; মুসলিম হা/১৯০৭; আবূদাঊদ হা/২২০১।
[32]. মুসলিম হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২০৪।
[33]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৭০২।
[34]. বুখারী হা/৬৪৫; মুসলিম হা/৬৫০; মিশকাত হা/১০৫২।
[35]. মুসলিম হা/৬৫৩; মিশকাত হা/১০৫৪।
[36]. বুখারী হা/৬৪৪, ২৪২০; মিশকাত হা/১০৫৩।
[37]. দৈনিক প্রথম আলো, হাঁটু ব্যথায় হাঁটাহাঁটি (প্রবন্ধ), ১লা মার্চ ২০১৭।
[38]. bbc.com, ২০শে জানুয়ারী ২০২০।
[39]. বুখারী হা/২৪৭, ৬৩১১, ৬৩১৩; মুসলিম হা/২৭১০।
[40]. আত-তিববুন নববী, পৃঃ ৩৮১-৩৮২।
[41]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান ১/১২৯ পৃঃ।
[42]. তিরমিযী হা/২৭৬৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৭৯।
[43]. ইবনু মাজাহ হা/৩৭২৪; আহমাদ হা/২৩৬১৪, সনদ ছহীহ।
[44]. আত-তিববুন নববী, পৃঃ ৩৮২।
[45]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৪৭১৮ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[46]. আবূদাঊদ হা/৪৮২১; ছহীহাহ হা/৮৩৫; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৮৪।
[47]. মিরকাতুল মাফাতীহ, ৪৭২৫ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[48]. আহমাদ হা/২০২০; তিরমিযী হা/৯৯৪, ২৮১০; নাসাঈ হা/১৮৯৬, সনদ ছহীহ।
[49]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান ১/৯৩০।
[50]. বুখারী হা/৫৮১৩; মুসলিম হা/২০৭৯; তিরমিযী হা/১৭৮৮।
[51]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/১৯০ পৃঃ।
[52]. সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান, ১/১৩১ পৃঃ।
[53]. প্রাগুক্ত, ১/১৩২ পৃঃ।