গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট অধঃপতনের আরেক মাধ্যম : গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট যে কি সাংঘাতিক, তা আপনি জানেন কি? অনেক গণমাধ্যম তার সকল উপকরণসহ আজ অধঃপতনের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইয়েরা, কোন কোন গণমাধ্যমের কাজই হ’ল কামনা-বাসনার রগরগে বর্ণনা তুলে ধরা, মানুষের মনে যৌন সুড়সুড়ি উস্কে দেওয়া, প্রণয় ভালবাসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, সমাজ থেকে লজ্জা-শরম উঠিয়ে দেওয়া, যারা লজ্জা-শরম মেনে চলে তাদের নিন্দা করা, যুবকরা যাতে অপরাধ ও অবক্ষয়মূলক কাজের অনুশীলনে মেতে ওঠে সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা, তারা যাতে পরস্পরে মিলে সমাজ ও চরিত্র বিধ্বংসী অনুষ্ঠান করে তাদের জন্য সে ধরনের অনুষ্ঠানের রূপরেখা তুলে ধরা ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ আমাদের এ জাতীয় আচরণ থেকে হেফাযত করুন!
কোন কোন গণমাধ্যমের কাজ হ’ল মানুষের মাঝে সন্দেহের বীজ বপন করা, তাদের মন খারাপ করে দেওয়া, তাদের মনে হিংসার চাষ করা এবং এমন সব রীতি-নীতি চালু করা, যা মানুষের অন্তরকে ইসলাম থেকে বিগড়ে দেয়। মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট করে দেয় এবং তাদেরকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যে পথ বুঝেছিলেন এবং মেনে চলেছিলেন উম্মতের সালাফগণ। এসব গণমাধ্যম সর্বদা কিছু লোকের দিকে, কিছু গ্রন্থের দিকে এবং কিছু নতুন নতুন চিন্তা ও দর্শনের দিকে আহবান জানায়। যার দ্বারা প্রভাবিত যুবসমাজ নিজেদের সমাজ এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় আলেম ও শাসক শ্রেণীকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে থাকে। রাজনীতির নামে কিংবা ধর্মের নামে তারা এমন করে থাকে।
কিছু গণমাধ্যম তো ঈমান-আক্বীদার গোড়া কাটায় ব্যস্ত। যাদু-টোনা, রাশিফল, আপনার ভাগ্য আজ কেমন যাবে, নক্ষত্রের সাহায্যে কিভাবে আপনার ভবিষ্যৎ জানবেন ইত্যাদি খারাপ বিষয় প্রচার করা তাদের কাজ।
আমার ভাইয়েরা! মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত ইন্টারনেট আরেকটি প্রচার মাধ্যম। এই প্রচার মাধ্যমের সার্চ ইঞ্জিন সংখ্যাও অনেক। এসব সার্চ ইঞ্জিন বহুলাংশেই অপরাধ ও অবক্ষয়ের দিকে উঁচু স্বরে আহবান জানায়। ইন্টারনেটের কোন কোন মাধ্যম প্রচুর সংখ্যায় অবৈধ প্রণয়-প্রীতি ও কামনা-বাসনার কথা প্রচার করে। এর ফলে বহু মানুষ অধঃপতনের শিকার হ’তে থাকে। কোন কোন মাধ্যম প্রচুর পরিমাণে বাতিল চিন্তা ছড়িয়ে দেয়। সেখানে মিলে অজ্ঞাত পরিচয় লোকদের বহু লেখালেখি, অজ্ঞাতনামা লোকদের অনেক বক্তৃতা-বিবৃতি ও ফৎওয়া ইত্যাদি। আফসোস আমার ভাইয়েরা! আজ অনেক যুবক ইন্টারনেটের প্রতি ভীষণভাবে আসক্ত। তারা ইন্টারনেটে প্রচারিত সেসব বিষয় খুবই পসন্দ করে। সেগুলো কে বলেছেন তার নাম জানা নেই, অথবা জানা গেলেও সেই লোকই যে তা বলেছেন, অন্য কেউ বলেননি তা নিশ্চিত নয়, আবার তিনি যে ইসলামের শত্রু না মিত্র তাও জানা যায় না।
ভাইয়েরা আমার! আজ অনেক যুবকই ইন্টারনেটে উপস্থাপিত কথা খুব পসন্দ করে, অথচ তারা বিশ্বস্ত আলেমদের কথা গ্রহণে ইচ্ছুক নয়, বিশ্বস্ত আলেমগণ রচিত গ্রন্থ মানতে তারা প্রস্ত্তত নয়। এ এক দুরারোগ্য ব্যাধি। আমাদের কর্তব্য এ ব্যাধির চিকিৎসা গ্রহণের কথা জোরেশোরে বলা। এ ব্যাধির চিকিৎসা হিসাবে বলব, যাদের অন্তরে যথার্থ মর্যাদাবোধ আছে, যারা কল্যাণের পথের পথিক, যারা গণমাধ্যম সম্পর্কে অবহিত, যারা মুসলিম উম্মাহকে সাথে নিয়ে আল্লাহর দেখানো ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের উপর চলতে আগ্রহী তাদের অবশ্যই গণমাধ্যমের এই ভয়াবহ ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই প্রচার মাধ্যমে এমন কথা তুলে ধরতে হবে যা হবে গঠনমূলক, যা ধ্বংসাত্মক হবে না; উম্মাহকে হকের উপর ঐক্যবদ্ধ করবে, তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবে না। সুন্নাহ আমলে নেওয়ার জন্য মানুষকে আহবান জানাবে, সুন্নাহ থেকে তাদের মন বিগড়ে দেবে না। দ্বীনী প্রোগ্রামে যারা আলোচনাকারী তাদের এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, তারা আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারী।
তাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, আজ তারা কথা বলছে, বই-পুস্তক ইত্যাদি লিখছে, আগামীকাল তাদেরকেই প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সেদিন তারা জিজ্ঞাসিত হবে। সেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। কেবল সরল মন নিয়ে যে আল্লাহর দরবারে হাযির হবে সেই ফায়েদা লাভ করবে। তাদের আরো জেনে রাখতে হবে যে, শরী‘আতের আলোকে জনমানুষের উপকার সাধন, যে ধরনের কথায় তাদের কল্যাণ হবে তা তাদের সামনে তুলে ধরা তাদের জন্য অবধারিত ও নির্ধারিত ফরয। জনগণ তাদের পিছনে আসুক কিংবা না আসুক এবং তাদের কথা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হোক কিংবা না হোক, সর্বাবস্থায় তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে। গণমাধ্যমের আলোচকমাত্রই নিম্নের হাদীছের বাস্তবায়ন তাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَلَهُ أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে ভাল কোন কাজ চালু করবে সে তার এ কাজের ছওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা তার দেখে এ কাজ করবে তাদের ছওয়াবও সে পাবে। তবে এতে তাদের ছওয়াব হ্রাস পাবে না। আর যে ইসলামের মধ্যে মন্দ কোন কাজ চালু করবে ঐ মন্দ কাজের পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে এবং তার পরে যারা তার দেখে ঐ কাজ করবে তাদের সে কাজের পাপের বোঝাও তার উপর বর্তাবে। তবে এতে তাদের পাপ হ্রাস পাবে না’।[1]
সুতরাং যিনি আলোচনা করেন তিনি যেকোন ক্ষেত্রে বিশেষত প্রচার মাধ্যমে আলোচনাকালে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে, তিনি যদি লোকজনকে কল্যাণের দিকে আহবান জানান তাহ’লে তিনি কল্যাণ লাভ করবেন এবং একের পর এক আগত কল্যাণের সুসংবাদ লাভ করবেন। পক্ষান্তরে কোন আলোচক যদি ভ্রান্ত কোন কথা কিংবা কাজের দিকে আহবান জানান, আর যদিও লোকেরা তার সে কথা কিংবা কাজকে খুব চমৎকার ভাবে, যদিও লোকেরা সেই কথা কিংবা কাজের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে এবং যদিও প্রচুর লোক তাতে অংশ নেয় তবুও তার মনে রাখতে হবে যে, এ আলোচনার মাধ্যমে তিনি নিজের কাঁধে এমন বোঝা চাপাচ্ছেন যা বহনের ক্ষমতা তার নেই। এর ফলে বস্ত্তত তিনি নিজের উপর একের পর এক অথৈ ভ্রান্তি তুলে নিচ্ছেন। আর নানাজনে তার কথিত ভ্রান্তপথ অবলম্বনের কারণে ক্বিয়ামত দিবসে তিনি এমন অবস্থায় হাযির হবেন যে, সেই নানাজনের ভ্রান্তির পর ভ্রান্তির দায় নিজ কাঁধে বয়ে বেড়াবেন।
কাজেই কোন মুসলিম যখন গণমাধ্যমে কিংবা অন্য কোথাও কথা বলবেন তখন তাকে অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করে কথা বলতে হবে। হাশরের ময়দানের সেই ভয়ঙ্কর অবস্থানক্ষেত্রের কথা তার চোখের সামনে জাগরূক রাখতে হবে। কথা বলার সময় তার চোখের উপর আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সে দৃশ্য ভাসবে, যখন আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন, কি কি কথা তিনি বলেছিলেন এবং কি কি কাজ করেছিলেন? যদি তিনি তার কথার সমর্থনে আমাদের রবের কিতাব থেকে এবং আমাদের রাসূলের সুন্নাহ থেকে সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুসারে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন তবেই যেন তিনি আলোচনা করেন, নচেৎ চুপ থাকাই হবে তার জন্য শ্রেয়। আল্লাহর কসম! একাকী নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন, যাকে কেউ জানে না, চিনে না, যার প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না তার জন্য ঐ জীবন-যাপন থেকে অনেক শ্রেয় যে জীবনে প্রচুর খ্যাতি অর্জিত হয়েছে বটে, কিন্তু তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাহর বিরুদ্ধে গিয়ে অর্জিত হয়েছে।
প্রিয় ভাই আমার! আপনি বরং আপনার আলোচনায় প্রচার মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সমাজে যে দ্বীনী মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যথাসাধ্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারের চেষ্টা করুন। ঈমানের পথে অবিচল থাকার সঠিক উপায়- উপকরণ অবলম্বনের মাধ্যমে তার মুকাবিলা করুন। আপনার আগ্রহ থাকবে ঈমানের পথে অবিচল থাকার উপকরণসমূহ যাতে ঘরে ঘরে প্রচুর বিদ্যমান থাকে সে চেষ্টা করা এবং আপনার আগ্রহ থাকবে যেন আল্লাহর দেখানো পথের উপকরণও ঘরে ঘরে মওজূদ থাকে সে উপায় বাতলানো।
ভাইয়েরা আমার! সংখ্যাগরিষ্ঠ খারাপ লোকের অনুসরণ করা এবং অধিকাংশ লোক যেহেতু এ মতাদর্শের অনুসারী সেহেতু তা ভাল না হয়ে পারে না বলে হুজ্জতি করা যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ। অনেক যুবককেই দেখা যায়, তারা একটা কিছু করে এবং তার পিছনে একটা খেয়াল কিংবা একটা চিন্তা গড়ে তোলে। কেননা সে দেখে, সমাজে অধিকাংশ লোক ঐ একই কাজ করে। সে দেখে, অধিকাংশ যুবক ঐ খেয়ালের উপর রয়েছে। সে দেখে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ঐ মত মেনে চলছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللهِ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ-
‘অতএব যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমান ভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১১৬)।
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! যদি আপনি ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষের মত অনুসরণ করেন, তাহ’লে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপদগামী করে ছাড়বে। তার আলামত এই যে, তারা না হেদায়াতের অনুসরণ করে, না বাহ্যিক দলীলের। তারা অনুসরণ করে ধারণার, অনুসরণ করে নানা মতের, অনুসরণ করে বিভিন্ন চিন্তাদর্শনের, অনুসরণ করে বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজের, যা কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোন ব্যক্তিবিশেষের খাড়া করা রীতি। তারা কেবল আন্দায-অনুমানের পিছনে ছোটে। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ ‘আর তুমি যতই আকাংখা করোনা কেন অধিকাংশ লোক ঈমানদার হবে না’ (ইউসুফ ১২/১০৩)।
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেন, সম্মানিত তাবেঈ ওমর বিন মায়মূন একবার আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-কে জামা‘আতের পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,اَلْجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَإِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ- ‘হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও’।[2] শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘যখন তুমি ন্যায়ের পথে থাকবে তখন তুমি নিজেই হবে জামা‘আত। সুতরাং জামা‘আত তারাই যারা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং পূর্বসূরি নেককার ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের কার্যধারা মেনে চলে’। শায়খ
বিন বায (রহঃ)-এর কথা এখানেই শেষ।
অতএব জামা‘আত, কল্যাণ ও ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ় পথের আশ্রয় গ্রহণ অর্থ আপনি হকের উপর ন্যায়ের উপর থাকবেন, তাতে আপনি অল্প সংখ্যক লোকের সঙ্গে থাকুন না কেন। কেননা হক ও ন্যায়ই হচ্ছে ইস্তিক্বামাত বা সুদৃঢ় পথ।
আবেগতাড়িত হওয়া এবং কল্যাণকর ক্ষেত্রে আবেগকে আবদ্ধ না রেখে লাগামছাড়া আবেগ পোষণ যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ। তাই দেখা যায় অনেক যুবক আবেগতাড়িত হয়ে প্রেম-ভালবাসার নামে কামনা-বাসনার জোয়ারে হাবুডুবু খায়। কেউ কেউ বুদ্ধি-বিবেক না খাটিয়ে শুধুই আবেগের বশে ইসলামের উপর নানা সন্দেহ আরোপ করে। যুবকরা এতটাই আবেগ মথিত যে, তাদের মনে আবেগ প্রায়শ উথলে ওঠে এবং তারা আবেগ দ্বারা চালিত হ’তে চায়। আবেগ মানুষের মনের এক ধরনের ঝড়, যে ঝড় মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং তাকে অনুশোচনা ও অধঃপতনের উপত্যকায় নিক্ষেপ করে। আমার ভাইয়েরা, আবেগ কিন্তু মানুষের একটি প্রকৃতিগত বিষয়। মানুষের ভিতর তার অস্তিত্ব প্রশংসার কারণও বটে। কিন্তু যখন তা বিবেককে অকার্যকর করে দেয়, কিংবা শরী‘আতের উপর কর্তৃত্ব করে তখনই আবেগের ভূমিকা নিন্দনীয় হয়ে দাঁড়ায়।
ভাইয়েরা! এর প্রতিকার হিসাবে প্রত্যেক যুবককে তার আবেগের উপর বিবেককে স্থান দিতে হবে। বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা আবেগকে বেঁধে রাখতে হবে এবং বিবেককে আল্লাহ রাববুল আলামীনের শরী‘আতের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুতরাং বিবেক যাতে বাধা দেয় আবেগ তার দিকে আহবান জানালেও সেদিকে পা তোলা যাবে না। আবার শরী‘আত যার অনুমোদন দেয় না, বিবেক সেদিকে ডাকলেও তার দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে না।
শব্দ হেরফের করে তাকে অযথা, অমূলক ও অন্যায্য অর্থে ব্যবহারের ফলেও যুবসমাজ অধঃপতিত হচ্ছে। এমন কিছু শব্দ আছে যা উপর উপর অনেক মধুর মনে হ’লেও ভিতরে ভিতরে তা সাক্ষাৎ বিষ- সেসব শব্দেও বহু যুবক প্রতারিত হয়। যেমন, কাফের বানানোর কাজে মশগূল লোকদের মুখে নিজেদের কর্ম-পদ্ধতির নাম ‘মানহাজে-তাওহীদ বা তাওহীদমূলক কর্ম-পদ্ধতি বলে উল্লেখ অথবা ‘মানহাজে-কুফর’ বা কুফর জাতীয় কর্ম-পদ্ধতির স্থলে ‘সালাফী মানহাজ’ বা পূর্বসূরিদের কর্ম-পদ্ধতি শব্দের ব্যবহার। এগুলো শরী‘আত সম্মত নয় বরং ধ্বংসাত্মক। ‘মানহাজে তাওহীদ বা তাওহীদমূলক কর্ম-পদ্ধতি’, ‘সালাফী মানহাজ বা পূর্বসূরিদের কর্ম-পদ্ধতি’ ইত্যাদি শব্দ মুসলিমদের নিকট খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু এসব শব্দ তো ‘মানহাজে-কুফর বা কুফর জাতীয় কর্ম-পদ্ধতি’ থেকে মুক্ত। তাই কুফরী মানহাজের ধারক-বাহকরা যখন তাদের মানহাজকে তাওহীদী মানহাজ কিংবা সালাফী মানহাজ বলে উপস্থাপন করে তখন যুবক-বৃদ্ধ যে কেউ প্রথম প্রথম তাকে সঠিক মানহাজ বলে প্রতারিত হ’তে পারে। পরে সত্য উন্মোচিত হ’লে তখনই কেবল মুখে মধু অন্তরে বিষ প্রমাণিত হবে।
অনেকে নিজেদের জন্য ‘মধ্যপন্থী’ শব্দ ব্যবহার করে। মধ্যপন্থী বলে তারা শারঈ অনেক ফরয নিজেরা পালন করে না অথবা শারঈভাবে হারাম অনেক কাজে তারা জড়িত হয়। এভাবে বর্জন ও গ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেদের লিবারেল মুসলিম পরিচয় দেয় এবং তাদের বিপরীতে যারা ইসলামকে সামগ্রিকভাবে পালন করে তাদেরকে কোন ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় বিশেষণে আখ্যায়িত করে। উম্মাহর স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য আলেমগণ কুরআন ও সুন্নাহর মূল বক্তব্যকে যেভাবে বুঝেছেন সেই বুঝ আঁকড়ে ধরতে যারা আহবান জানান, কিংবা যারা সুন্নাহ মেনে চলতে আহবান জানান, সুন্নাহর বিরুদ্ধে আরোপিত আপত্তি-অভিযোগ খন্ডন করেন এবং বিদ‘আত থেকে সতর্ক করেন তাদেরকে ‘রাসূল (ছাঃ)-এর মর্যাদা হেয়কারী’ নামে আখ্যায়িত করাও শব্দ হেরফের করার অন্তর্ভুক্ত। ভাইয়েরা আমার, এহেন ধোঁকাপূর্ণ শব্দ একটা দু’টা নয়। এ ধরনের শব্দে বহু যুবকই প্রতারিত হয়। তারা বুঝতেও পারে না যে, কোন কথায়, কোন আচরণে নিজেদের অজান্তেই তারা ধোঁকায় ফেঁসে গেছে।
তাদের অনেকে দর্শন-চিন্তার পাকচক্রে আপতিত হয়, যে দর্শন-চিন্তার ভিত্তি হচ্ছে নানা রকম সন্দেহ। এহেন বড়-সড় চক্রান্তে পড়ে তারা সুন্নাহর অনুসারীদের ঘৃণা করতে শুরু করে, আর শয়তান ও বাতিলপন্থীরা এ কাজে তাদের মদদ যোগায়।[3]
আমার যুবক ভাইয়েরা! আমাদের অবশ্য কর্তব্য হবে এমন কোন শব্দ কানে শোনামাত্রই যেন আমরা তা লুফে না নেই। বরং আমরা এসব শব্দ বাজিয়ে দেখব, তার সত্যাসত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হব এবং উম্মাহর পূর্বসূরি জ্ঞানীগুণীদের বুঝের আলোকে তা নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আনা শরী‘আতের সাথে মিলিয়ে দেখব। তারপর সঠিক হ’লেই কেবল তা আমরা মানব, সঠিক না হ’লে তা দূরে ছুঁড়ে ফেলব।
যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি কারণ কাজে-কর্মে তাড়াহুড়া করা, ধীরতা অবলম্বন না করা। অনেক যুবকের কাজে ধীর-স্থিরতা থাকে না, তারা তাদের কাজ-কর্ম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে না এবং কাজের ফলাফল কী দাঁড়াবে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না।
তাড়াহুড়া করে কাজের দরুন আখেরে তাদের পস্তাতে হয়। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ আস-সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الأَنَاةُ مِنَ اللهِ وَالْعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ ‘ধীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে’।[4] আমাদের আলেমগণ বলেছেন, তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হওয়ার অর্থ শয়তান তার কুমন্ত্রণা দ্বারা মানুষকে তাড়াহুড়া করতে প্ররোচিত করে। কারণ তাড়াহুড়া দৃঢ়তায় ও কাজের পরিণাম চিন্তায় বাধা সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ ধ্বংসের গহবরে পতিত হয়। শয়তানের চক্রান্ত ও প্ররোচনাই এজন্য দায়ী।
ভাইয়েরা, এ সমস্যার প্রতিকার হিসাবে ছোটকাল থেকেই শিশুদের ধৈর্য অবলম্বন ও তাড়াহুড়া বর্জন শিখাতে হবে। ধৈর্যের উপর তাদের লালন-পালন করতে হবে। এর ফলে তাদের যা করা উচিত ও ন্যায়সঙ্গত তা তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তারা জানতে পারবে, ধীরে কাজ করার নীতিই দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপদ থাকার পথ এবং আল্লাহ তা‘আলা ধীরে কাজ করা ভালবাসেন। তিনি বলেন,كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ ‘কখনই নয়, তোমরা (মানুষ) বরং দ্রুতলভ্যকে (দুনিয়াকে) ভালবাস’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/২০)।
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত ‘كَلَّا’ শব্দ দ্বারা তাড়াহুড়া না করতে সতর্ক করা হয়েছে এবং ধীরতা অবলম্বনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আশাজ্জ আব্দুল কায়েসকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ: الْحِلْمُ، وَالْأَنَاةُ ‘তোমার মধ্যে দু’টি গুণ আছে যা আল্লাহ ভালবাসেন, সহিষ্ণুতা ও ধীরতা’।[5] সুতরাং হে যুবক! ধীরতা এমন গুণ যা আল্লাহ ভালবাসেন, সুতরাং তুমি তা অবলম্বন করো। তুমি নিরাপত্তা লাভকারী ও দৃঢ়
পথের পথিক হ’তে পারবে।
অধঃপতনের আরেকটি কারণ ফিৎনা-ফাসাদে জড়িয়ে পড়া। ফিৎনার জাঁকজমকভাব ও জেŠলুস দেখে বহু যুবক তাতে অবাক হয়ে যায়। অনেক সময় বেহুদা কাজে মশগূল তরুণ-যুবকরা তাদের ফিৎনার পথে টেনে নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় ফিৎনাবাজদের বিলাসী জীবন যাপন করতে দেখেও তারা ফিৎনার প্রতি প্রলুব্ধ হয়। অথচ ফিৎনা থেকে দূরে থাকা এবং তার ধারে-কাছেও না যাওয়াই ছিল ফরয।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ، وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي، وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفُهُ، وَمَنْ وَجَدَ فِيهَا مَلْجَأً فَلْيَعُذْ بِهِ ‘অচিরেই বহু ফিৎনা দেখা দেবে। সেই ফিৎনাকালে বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি দ্রুত বেগে ধাবিত ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। যে ব্যক্তি ফিৎনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিৎনা তাকে গ্রাস করে ছাড়বে। আর যে ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে সে যেন সেই আশ্রয় গ্রহণ করে’।[6]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন যে, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, تَكُونُ فِتْنَةٌ، النَّائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْيَقْظَانِ، وَالْيَقْظَانُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ، وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، فَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَسْتَعِذْ ‘এক সময় এমন ফিৎনা দেখা দেবে যখন ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। আর জাগ্রত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। আবার দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম অবস্থানে থাকবে। সুতরাং যে ব্যক্তি ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য কোন স্থান কিংবা আশ্রয় পাবে সে যেন সেই আশ্রয় গ্রহণ করে’।[7]
অর্থাৎ হে আল্লাহর বান্দাগণ, মানুষ যতই ফিৎনার নিকটবর্তী হবে ততই তারা খারাপের সাথে জড়িয়ে পড়বে। এজন্যই যুবসমাজের অধঃপতন এবং ফিৎনায় জড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ ফিৎনা ও ফিৎনাবাজদের পাশে তাদের অবস্থান।
আবূদাঊদ (রহঃ) ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سَمِعَ بِالدَّجَّالِ فَلْيَنْأَ عَنْهُ، فَوَاللهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَأْتِيهِ وَهُوَ يَحْسِبُ أَنَّهُ مُؤْمِنٌ فَيَتَّبِعُهُ، مِمَّا يَبْعَثُ بِهِ مِنَ الشُّبُهَاتِ ‘যে দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনবে সে যেন তার থেকে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহর কসম! যে কোন লোক যখন তার কাছে যাবে, তখন সেই তাকে মুমিন মনে করবে এবং তার মধ্যে তখন নানা সন্দেহ জাগবে বিধায় সে দাজ্জালের পিছু নেবে’।[8]
সুতরাং যখন কোন ব্যক্তি কারো সম্পর্কে শুনতে পাবে যে, সে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহর বিপরীতে আইন-কানূন খাড়া করছে এবং মানুষকে আলেম-ওলামা ও (কুরআন-সুন্নাহর বিধি অনুযায়ী) শাসন ক্ষমতায় আসীন নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে, তখন সে যেন অবশ্যই তার থেকে দূরে থাকে। যদিও তার মনে হয় যে, লোকটার কথার পিছনে দলীল-প্রমাণ আছে এবং সে হক পথের উপর আছে তথাপি এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য কী তা সে জানে না। ফলে সে না বুঝে কখনো কখনো তার কাছে এসে তার কথা শোনার ফলে ফেৎনায় পতিত হয়। অথচ সে মনে করে যে, সে ভালই করছে এবং তার মনে প্রকৃত ইসলাম নিয়ে সন্দেহ জাগতে থাকে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা, ফেৎনা থেকে কঠিনভাবে দূরে থাকবে।
খোদ পাপ কাজ অধঃপতনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আবার পাপ কাজের পিছনে পেরেশানি ও কুচিন্তার মতো যেসব কারণ কাজ করে সেগুলোও অধঃপতনের কারণ। পাপ, পেরেশানি ও কুচিন্তা সর্বতোভাবে মানুষকে বিপদগামী করে। ভাইয়েরা আমার! তার কারণ একটা পাপ আরেকটা পাপ টেনে আনে। পাপ একে অপরের সঙ্গে গলা ধরে জড়িয়ে থাকে। তাই দেখা যায়, একটা পাপ করলে তা সামনের আরেকটা পাপের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللهُ قُلُوبَهُمْ ‘অতঃপর যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তর সমূহকে বক্র করে দিলেন’ (ছফ ৬১/০৫)।
পাপের এ দরজা ব্যাপক প্রশস্ত। এজন্যই জনৈক পূর্বসূরি বলেছেন, ‘ভালোর প্রতিদান ভালো এবং মন্দের প্রতিফল মন্দ’। ভাইয়েরা আমার! পাপ ও গর্হিত কাজের ফলশ্রুতিতে ব্যক্তির জীবন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও সংকুচিত হয়ে পড়ে। তা থেকে কখনই তার মুক্তি মেলে না। কখনও তার চেহারায় হাসি ফুটে উঠলেও তার অন্তর থাকে মহা দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى، قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا، قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى،
‘আর যে ব্যক্তি আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন তুমি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? অথচ আমি তো দুনিয়াতে ছিলাম চক্ষুষ্মান। আল্লাহ বলবেন, এটাই বিধান। তোমার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আর সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হ’ল’ (ত্ব-হা ২০/১২৪-১২৬)।
তাদের কারো কারো জীবনে তো সঙ্কট খুবই গভীর হয়ে দাঁড়ায় এবং তার জন্য বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেয়। আল্লাহ আশ্রয় দিন এমন জঘন্য কাজ থেকে। আত্মহত্যা তো অনেক বড় কবীরা গুনাহ। অনেকের মন আবার দুশ্চিন্তায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে সে তার প্রতিকারার্থে অন্য একটা পাপ করে বসে। তাতে তার দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি আরো বেড়ে যায়। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, প্রত্যেক জাতির সাধারণ মানুষ ও জ্ঞানীজন এ কথায় একমত যে, পাপ-পঙ্কিলতা ও ফিৎনা-ফাসাদে জড়িয়ে পড়ার ফলে মানুষের মনে দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, ভয়-ভীতি, দুঃখ-বেদনা, মানসিক সংকীর্ণতা, হার্টের রোগ ইত্যাদির জন্ম হয়। এমনকি ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারীরা যখন কোন একটা ফিৎনা-ফাসাদে পতিত হয় এবং তাদের মন তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তারা নিজেদের মনের মধ্যে বিদ্যমান সংকীর্ণতা, দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর করতে নতুন কোন ফিৎনা-ফাসাদ আমদানিতে সচেষ্ট হয়। যেমন ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের জনৈক ব্যক্তি এক পংক্তিতে বলেছেন,
وَكَأسٍ شَرِبتُ عَلى لَذَّةٍ + وأخرى تَداوَيتُ مِنها بِها
এক পিয়ালা পান করি আমি মজা পেতে,
আর এক পিয়ালা পান করি তার প্রতিকারে।
আমার ভাইয়েরা! এ রোগের ওষুধ হ’ল : পাপী ব্যক্তি দ্রুতই আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে এবং খালেছ মনে তওবা করবে। তওবা ছাড়া আর কোন উপায়ে তা থেকে আরাম ও প্রশান্তি মিলবে না। যে অধঃপতনের নানা কারণ থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছুক তার কর্তব্য হবে আল্লাহর কাছে সত্য ও খাঁটি মনে তওবা করা।
ভাইয়েরা আমার!
অধঃপতনের কারণ অনেক। আমাদের বর্ণিত কারণ ছাড়াও এক্ষেত্রে আরও অনেক কারণ আছে।[9]
তবে আমার পক্ষে সময় যতটুকু সুযোগ দিয়েছে ততটুকু আলোচনা করা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা আমার! আমাদের সকলেরই কর্তব্য হবে অধঃপতনের বিপদ উপলব্ধি করা। আমরা যেন বিচ্যুতির কারণসমূহের প্রতিকারে খুব সচেষ্ট থাকি। আমাদের মধ্যে যারা অধঃপতন ও বিচ্যুতির শিকার হয়েছে তাদের সোজা পথে ফিরিয়ে আনতে যেন আমরা তৎপর হই। কারো সোজা পথে ফিরে আসা নিয়ে আমরা যেন হতাশ না হই। কেননা মানুষের অন্তর তো করুণাময় আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে। তিনি যেভাবে চান পরিবর্তন করেন। ভাইয়েরা, আমাদের কর্তব্য উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং আমাদের রব আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করা। আমাদের রবের নিকটেই তো রয়েছে চূড়ান্ত কৌশল। তার হাতেই তো রয়েছে সকল কাজ।
আমার ভাইয়েরা!
আমরা আল্লাহর পথের দাঈ হই আর খতীব হই, যা-ই হই না কেন, আমাদের নিজেদের বেলাতেও অধঃপতনের কারণাদি থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। আমরা যেন নিজেদের নিয়ে ধোঁকায় না পড়ি। আমাদেরকে অবশ্যই নিজেদের অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। অবশ্যই নিজেদের কথাবার্তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই নিজেদের দাওয়াতী বিষয় ও কাজ পর্যালোচনা করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের রবের কিতাব এবং আমাদের নবী (ছাঃ)-এর সুন্নাতের পাল্লায় নিজেদের কার্যাবলী মাপতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ কেন্দ্রিক এই মাপামাপি না আমাদের বুঝ অনুযায়ী হবে, না আমাদের মতো লোকেদের বুঝ অনুযায়ী হবে। বরং তা হ’তে হবে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর বুঝ অনুযায়ী। তাদের বুঝ অনুযায়ী যারা এক আলোকোজ্জ্বল ধারায় ছাহাবায়ে কেরামের বুঝের বার্তা আজ আমাদের নিকট তুলে ধরেছেন, তারা হ’লেন সেই সকল আলেম যারা সুন্নাহর জ্ঞানে সুপরিচিত, জ্ঞান-গরিমা ও জানা-বোঝায় সুপ্রসিদ্ধ।
হে আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীগণ! আমাদের দায়িত্ব হবে নিজেদের বিচার করা এবং আমাদের মাঝে অধঃপতন ও বিচ্যুতির যেসব কারণ রয়েছে তার চিকিৎসা ও প্রতিকারে এগিয়ে আসা। আমাদের যুবসমাজ যেন আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং অধঃপতনজাত কোন কাজের মজায় যেন তারা বিভোর হয়ে না থাকে। কেননা অধঃপতনের শুরুতে মজা মিললেও তার শেষ পরিণতি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই অত্যন্ত ভয়াবহ। সুতরাং ভাইয়েরা আমার, আসুন, আমরা আল্লাহকে ভয় করি। তার সুন্দর ও মহতী নাম ধরে তার নিকট এই আবেদন-নিবেদন করি, তিনি যেন পথহারা মুসলিমদের পথের দিশা দান করেন।
হে আল্লাহ! তুমি পথহারা মুসলিমদের পথের দিশা দাও, আমাদেরকে সঠিক পথের অগ্রপথিক করো এবং সঠিক পথপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল করো।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করো এবং আমাদের মাধ্যমে অন্যদের সঠিক পথ দান করো। হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু, তুমি এই উম্মতের জন্য সঠিক কাজ, সঠিক পথ ও তাক্বওয়া লাভ সহজ করে দাও; হে সকল সৃষ্টির প্রতিপালক।
হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার কাছে এই মিনতি করছি যে, তুমি সকল মুসলিমের অন্তরকে হেদায়াত ও দ্বীন ইসলামের উপর একাট্টা করে দাও; হে সকল সৃষ্টির প্রতিপালক আল্লাহ! উম্মাহর মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও বিরোধের যত কারণ আছে তা তুমি দূর করে দাও। হে আল্লাহ! উম্মাহর মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও বিরোধের যত কারণ আছে তা তুমি দূর করে দাও। হে সকল সৃষ্টির প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে সুন্নাহর অনুসারী হিসাবে বাঁচিয়ে রাখো, সুন্নাহর অনুসারী হিসাবে মরণ দিও এবং সুন্নাহর উপরে হাশরে উঠায়ো! হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমাদের তুমি সামর্থ্য দাও তোমার নবী করীম (ছাঃ)-কে ভালবাসার; তোমার নবী (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে ভালবাসার। আর আমাদেরকে তুমি তাঁর সুন্নাতের উপর অটল ও স্থির রেখো সেদিন পর্যন্ত, যেদিন আমরা তোমার সাক্ষাতে মিলিত হব। হে রাববুল আলামীন। আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদেরকে আড়াল করে রাখ ধরণীর বুকে, আড়াল করে রেখো ধরণীর তলে এবং আড়াল করে রেখো আমলনামা উত্থাপনের দিনে। আমলনামা উত্থাপনের দিনে আমাদের পাপের কারণে তুমি আমাদেরকে তোমার সামনে অপদস্থ করো না। আ-মীন ইয়া রাববাল আলামীন। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। আল্লাহ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন তার নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ-এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীগণের উপর।
[1]. মুসলিম হা/১০১৭; মিশকাত হা/২১০।
[2]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব, সনদ ছহীহ; আলবানী, হাশিয়া মিশকাত হা/১৭৩; লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিকাদি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ১/১২২, হা/১৬০।
[3]. আমাদের সমাজে ইসলাম ও মুসলিমদের কেন্দ্র করে এমন বেশ কিছু গর্হিত ও অন্যায় শব্দ চালু আছে। যারা ইসলামী আইন-কানূন মেনে চলতে চেষ্টা করেন, ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতার মোকাবিলা করেন তাদের বিরুদ্ধে ‘মৌলবাদী’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘ধর্মান্ধ’, ‘প্রতিক্রিয়াশীল’, ‘প্রগতি বিরোধী’, ‘ওহাবী’, ‘গোঁড়া’, ‘চরমপন্থী’, ‘উগ্রপন্থী’, ‘কট্টরপন্থী’, ‘জিহাদী’, ‘জঙ্গী, ‘পশ্চাৎপদ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা নামে মুসলিম কিন্তু ইসলামী বিধিবিধান ঠিকমতো মেনে চলেন না তারা তো ধার্মিক মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ ধরনের শব্দ ব্যবহারকে পোয়াবারো মনে করেন। আর যারা দ্বীন-ধর্ম যথাসাধ্য পালন করেন; কিন্তু এ ধরনের গালিসূচক শব্দের শিকার হ’তে চান না তারাও যাদের বিরুদ্ধে এরূপ শব্দ প্রয়োগ করা হয় তাদের সংস্রব এড়িয়ে চলেন। ফলে সত্য জানার পরেও বহু তরুণ-যুবক দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়ে থাকে। কাজেই শব্দ হেরফের করে তাকে গর্হিত, অমূলক ও অন্যায্য অর্থে ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কোন শব্দ শয়তানীমূলক, কোন শব্দ আল্লাহর নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং কোন শব্দ আল্লাহর পথে থাকার দলীল বহন করে তা আমাদের জানতে হবে, বুঝতে হবে। বাতিলপন্থীদের শব্দের কুহক থেকে আমাদের অবশ্যই বাঁচতে হবে। মনে রাখতে হবে কাউকে অন্যায়ভাবে গালিসূচক শব্দ ব্যবহার করলে তার অন্তর যেভাবে আহত হয় তা তলোয়ারের আঘাত থেকেও মারাত্মক। জনৈক কবি বলেছেন,
جراحات السنان لها التئام ... ولا يلتام ما جرح اللسان
‘তলোয়ারের সৃষ্ট ক্ষত নিরাময় হয়, কিন্তু মুখের ভাষা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত নিরাময় হয় না’। তাই গালি ও নির্যাতন-নিষ্পেষণের ভয়ে অনেক যুবক সত্যকে জানার পরেও তা গ্রহণে এগিয়ে আসে না। এ ধরনের গর্হিত ও অন্যায় শব্দ ব্যবহারকারীরা কিন্তু নিজেদের যথার্থ ও ভাল মানুষ বুঝাতে ‘মুক্তবুদ্ধিচর্চাকারী’, ‘মুক্তচিন্তাশীল’ ‘মুক্তমনা’, ‘প্রগতিশীল’, ‘আধুনিকতামনস্ক’, ‘উদার নৈতিকতাবাদী’, ‘অসাম্প্রদায়িক’, ‘সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে ছাফাই গান। এরা ইসলামপ্রিয় সরল মানুষদের প্রতারণা করতে প্রায়শই বলে থাকেন ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’, ‘সংস্কৃতি ও ধর্ম আলাদা, ধর্মের নামে সংস্কৃতির উপর আঘাত হানা অধর্ম’ ‘দেহ আমার সিদ্ধান্তও আমার’ ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে মিথ্যার বেসাতি করে সমাজে এরাই ফিৎনা-ফাসাদ ছড়ান, কিন্তু এরা তা স্বীকার করতে চান না।- অনুবাদক।
মূল (আরবী) : ড. সুলায়মান আর-রুহাইলী
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ঝিনাইদহ।
[4]. তিরমিযী, হা/২০১২, সনদ দুর্বল।
[5]. মুসলিম হা/১৭।
[6]. বুখারী হা/৩৬০১; মুসলিম হা/৭১৩৯।
[7]. মুসলিম হা/৭১৪১।
[8]. আবুদাঊদ হা/৪৩১৯, সনদ ছহীহ।
[9]. সম্মানিত লেখক যুবসমাজের অধঃপতনের যেসব কারণ ও প্রতিকার বর্ণনা করেছেন সেগুলো যদি জেনে-বুঝে আমরা এবং আমাদের যুবসমাজ অধঃপতনের কারণ থেকে মুক্ত হ’তে সচেষ্ট হই তবে আমাদের সমাজ ইনশাআল্লাহ সুন্দর ও নিরাপদ হবে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থিত ছিরাতুল মুস্তাক্বীমে চলতে পারব ইনশাআল্লাহ। তাঁর বর্ণিত কারণ ছাড়াও যেমনটা তিনি বলেছেন আরো অনেক কারণ রয়েছে। আমরা তেমন কিছু কারণ এখানে তুলে ধরছি। সেসব কারণের মধ্যে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ অন্যতম। বিশ্ব জুড়ে আজ পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির জয়জয়কার। এ সভ্যতার কিছু ভাল দিক থাকলেও আমরা তার ভালটুকু গ্রহণের স্থলে মন্দ দিকই বেশী গ্রহণ করছি। নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা, লিভ টুগেদার, বিবাহ বিচ্ছেদ, মাদকাসক্তি, ধূমপান, মাতা-পিতা ও বয়স্কদের দায়িত্ব বহন না করা, পারিবারিক ভাঙনের মাঝে এক অব্যক্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠা ইত্যাদি বর্তমানে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশও আজ পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির ছোবলে আক্রান্ত। ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সাও যুবসামাজের অধঃপতনের পিছনে দায়ী। ক্ষমতার অলিন্দে যাদের বসবাস তারা পার্থিব সুযোগ-সুবিধা ও আরাম-আয়েশ কতটা ভোগ করছে এবং দেশে-বিদেশে কিভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ছে তা দেখে যুবসমাজের মনে ক্ষমতা ও অর্থলিপ্সা জাগা অসম্ভব নয়। সুনীতির মাধ্যমে সবসময় এসব কিছু উপার্জন সম্ভব নয় বলে দুর্নীতিকে এখন সকলেই প্রশ্রয় দিতে চায়। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সবাই দহরম-মহরম গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যাতে পরবর্তীতে কোন জটিলতায় পড়তে না হয়।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও যুবকদের অধঃপতনে কম-বেশী ভূমিকা রাখছে। পার্থিব জীবনের সুযোগ-সুবিধা অর্জনই এ শিক্ষার মূল লক্ষ্য। পরকালের চিত্র আলোচনা এখানে একেবারেই গৌণ। আখেরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার আলোচনা আমাদের উচ্চশিক্ষায় বলতে গেলে একেবারেই নেই। কেউ হয়তো বলবেন, আমাদের শিক্ষা আমাদেরকে খারাপ কিছু করতে বলে না। কথা সত্য বটে, কিন্তু খারাপ পরিবেশে আত্মরক্ষার কোন উপায়ও তা নির্দেশ করে না। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে এই শিক্ষিত শ্রেণীই যে অফিস-আদালত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, গণমাধ্যম ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে তা তো অসত্য নয়।
আমাদের পরিবার ও সমাজও যুবসমাজের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী। পরিবার থেকে অবক্ষয় রোধের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণের কোন ব্যবস্থা নেই। কারো ছেলেমেয়ের মধ্যে অবক্ষয় দেখা দিলে প্রয়োজন মুহূর্তে তাদের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। অনেকে গান-বাজনা, খেলাধূলা ও সংস্কৃতিচর্চার নামে বিকৃত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সংশোধন করতে চায়। এতে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজ থেকে দলবদ্ধভাবে যুবসমাজকে অবক্ষয়মুক্ত করার চেষ্টা আমাদের মাঝে কমই পরিলক্ষিত হয়।- অনুবাদক!