ভূমিকা :

আল্লাহ রাববুল আলামীন যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন মানবজাতিকে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ প্রদর্শনের জন্য। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে যার ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে। অতঃপর যুগের পরম্পরায় নবীগণের উত্তরাধিকার হিসাবে ওলামায়ে কেরাম এ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। 

দ্বীনী ইলম দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকার হ’ল দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান তথা ঈমান ও তা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ, বিশুদ্ধ ও বাতিল আক্বীদা, তাওহীদ-শিরক, হালাল-হারাম, ছালাত-ছিয়াম, হজ্জ-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ফরয ইবাদত পালনের নিয়ম-পদ্ধতি সমূহ।[1] যে সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা সকল মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য।[2]

দ্বিতীয় প্রকার ইলম হ’ল দ্বীনের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় গভীর জ্ঞান অর্জন। সমাজের কিছু মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা এ সৌভাগ্য দান করেন। যারা শরী‘আতের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন এবং মানব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য উক্ত জ্ঞান বিতরণ করেন। এরূপ আলেমগণ ইহকালে ও পরকালে অসামান্য মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। কারণ তাঁরাই নববী দাওয়াতের প্রকৃত ধারক বা বাহক। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনার দিক-নির্দেশনা দেওয়াই তাঁদের মৌলিক দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ ‘অতএব তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে (আল্লাহর নাফরমানী হ’তে) ভয় প্রদর্শন করে যাতে তারা সতর্ক হয়’ (তওবা ৯/১২২)

তবে একজন আলেমকে বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হ’তে হয়। প্রকৃত আলেম তিনি, যিনি আল্লাহ সম্পর্কে, তাঁর প্রেরিত জীবন-বিধান পবিত্র কুরআন এবং ছহীহ সুন্নাহ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখেন। যিনি মানুষের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করেন। যিনি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে জ্ঞান অর্জন ও তার প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাকেই প্রকৃত আলেম বলা হয়।

আলোচ্য প্রবন্ধে আলেমে দ্বীনের মর্যাদা ও মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-

আলেমে দ্বীনের মর্যাদা :

(১) আলেম ও জাহেলের মধ্যে পার্থক্য : ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নে‘মত। যা জ্ঞানী ও মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ (যুমার ৩৯/৯)। তিনি অন্যত্র বলেন, قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হ’তে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হ’তে পারে?’ (রা‘দ ১৩/১৬)

(২) আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী : নবী-রাসূলগণ মানব সমাজের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী সর্বোত্তম মানুষ। তাই আলেমদের সবচেয়ে বড় মর্যাদা হ’ল, রাসূল (ছাঃ) তাঁদেরকে নবীগণের উত্তরাধিকারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، وَإِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوْا دِيْنَارًا، وَلَا دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ، ‘আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামকে উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে যান না। বরং তারা রেখে গেছেন কেবল ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে’।[3]

(৩) আলেমগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রভূত কল্যাণের অধিকারী : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّيْنِ ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’।[4]  অতএব মহান আল্লাহ যার কল্যাণ চান, যাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করতে চান, তাঁকেই কেবল তিনি আলেম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন।

আল্লাহ বলেন,يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ أُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)

তিনি আরো বলেন, يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। বস্ত্ততঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ব্যতীত কেউই উপদেশ গ্রহণ করে না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৯)

(৪) প্রকৃত আলেমের জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যায় : আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন,مَنْ سَلَكَ طَرِيْقًا يَطْلُبُ فِيْهِ عِلْمًا سَلَكَ اللهُ بِهِ طَرِيْقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالْحِيْتَانُ فِيْ جَوْفِ الْمَاءِ ‘যে ব্যক্তি ইলম হাছিলের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার মাধ্যমে তাকে জান্নাতের পথ সমূহের একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম তলবকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানাসমূহ বিছিয়ে দেন। নিশ্চয়ই যারা আলেম তাদের জন্য আসমান ও যমীনে  যারা আছে, তারা আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে, এমনকি মাছ সমূহ পানির মধ্যে থেকেও তাদের জন্য দো‘আ করে।[5]

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اَلْخَلْقُ كُلُّهُمْ يُصَلُّونَ على مُعَلِّمِ الخَيْرِ حَتَّى حِيْتَانِ البَحْرِ ‘মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদানকারীর জন্য সমগ্র সৃষ্টি, এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্তও তার জন্য দো‘আ করে’।[6]

(৫) আলেমের মর্যাদা আবেদের চেয়ে বেশী : রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِআলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপরে ঐরূপ, পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য তারকাসমূহের উপরে যেরূপ’।[7]

ক্বাযী আয়ায বলেন, এই তুলনার কারণ এই যে, নক্ষত্রের আলো দ্বারা সে কেবল নিজেই আলোকিত হয়। কিন্তু চাঁদের আলো নিজেকে ছাড়াও অন্যকে আলোকিত করে। অনুরূপভাবে আবেদ তার ইবাদত দ্বারা কেবল নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটায়। কিন্তু আলেম তার ইল্ম দ্বারা নিজে যেমন উপকৃত হন, তেমনি অন্যকে উপকৃত করে থাকেন। আলেম উক্ত নূর লাভ করেন রাসূল (ছাঃ) থেকে। যেমন চন্দ্র জ্যোতি লাভ করে থাকে সূর্য থেকে। আর সূর্য কিরণ লাভ করে আল্লাহ থেকে। একইভাবে রাসূল (ছাঃ) ‘অহি’ লাভ করে থাকেন আল্লাহ থেকে’ (মিরক্বাত)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, قَصْدٌ فِي عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِي عِبَادَةٍ ‘অধিক ইবাদত করার চেয়ে অধিক ইলম অর্জন করা উত্তম।[8]

আবূ উমামা বাহেলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হ’ল। যাদের একজন আলেম অপরজন আবেদ। তখন তিনি বলেন, فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ ‘আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর। যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর’।[9]

(৬) ইলম বিতরণকারী আমলকারীর সমপরিমাণ নেকী লাভ করবেন : একজন আলেম লেখনী, শিক্ষাদান বা বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। ফলে যত মানুষ তার মাধ্যমে হেদায়াত লাভ করবে, নেকীর কাজের দিশা পাবে এবং তদনুযায়ী আমল করে ছওয়াব অর্জন করবে, উক্ত আলেম তাদের সমপরিমাণ নেকী লাভে ধন্য হবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا فَلَهُ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهِ، لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الْعَامِلِ ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিবে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় ছওয়াব পাবে, যে তার উপর আমল করবে। তবে আমলকারীর ছওয়াব থেকে সামান্যতমও কমানো হবে না’।[10]

এমনকি মৃত্যুর পরেও তিনি উক্ত নেকী লাভ করতে থাকবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ: إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ، ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। ১. প্রবাহমান দান ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং ৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’।[11]

আলেমে দ্বীনের বৈশিষ্ট্য :

নিম্নে ওলামায়ে কেরামের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) আল্লাহভীরু হওয়া : একজন আলেমের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হ’ল তিনি আল্লাহভীরু হবেন। আল্লাহভীতি ছাড়া পাহাড় পরিমাণ জ্ঞান কোনই কাজে আসবে না। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মূলতঃ আলেমরাই তাঁকে ভয় করে’ (ফাতির ৩৫/২৮)। আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,لَيْسَ الْعِلْمُ بِكَثْرَةِ الرِّوَايَةِ، إِنَّمَا الْعِلْمُ الْخَشْيَةُ ‘অধিক হাদীছ জানাই প্রকৃত জ্ঞানার্জন নয়। বরং প্রকৃত জ্ঞানার্জন হ’ল আল্লাহভীতি অর্জন করা।[12]

জনৈক আরবী কবি বলেন,لو كان للعلم شرف من دون التقي* لكان أشرف خلق الله إبليس ‘যদি তাক্বওয়াবিহীন ইলমের কোন মর্যাদা থাকত, তবে ইবলীস আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সেরা বলে গণ্য হ’ত।[13]

জ্ঞানের অহংকার সবচেয়ে বড় অহংকার। তাই তাক্বওয়া বিহীন ইলম ব্যক্তির আত্মগরিমাকে পরিপুষ্ট করে। ফলে ঐ ইলম তার ক্ষতির কারণ হয়। অন্যদিকে তাক্বওয়াশীল আলেম সর্বদা বিনয়ী হন। ফৎওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে তারা কখনো সর্বজান্তা ভাব প্রকাশ করেন না। বরং প্রতিটি আমলের ব্যাপারে, প্রতিটি ফৎওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেন। ভুল হয়ে যাওয়ার ভয়ে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। তাই দেখা যায় যে ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বিশ্ববিশ্রুত ইমাম হওয়া সত্বেও তাঁকে ৪৮টি প্রশ্ন করা হ’লে ৩২টির জবাবে তিনি বলেন, لاَ أدْرِيْ ‘আমি জানি না’।[14]

(২) দ্বীনের বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা : আলেমে দ্বীনের দায়িত্ব হ’ল মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত প্রদানের পূর্বে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান আহরণ করা। ইমাম বুখারী (রহঃ) ছহীহ বুখারীতে ‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন।[15]

অতএব কোন আমল সম্পাদন বা তার প্রতি মানুষকে দাওয়াত দানের পূর্বে সেসম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক। অন্যথা সে ব্যাপারে চুপ থাকবে। বরং এসময় চুপ থাকাটাও প্রকৃত জ্ঞানের পরিচায়ক।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,مَنْ عَلِمَ فَلْيَقُلْ، وَمَنْ لَمْ يَعْلَمْ فَلْيَقُلِ اللهُ أَعْلَمُ. فَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ يَقُولَ لِمَا لاَ يَعْلَمُ لاَ أَعْلَمُ ‘যে জানে সে যেন তাই বলে, আর যে জানে না সে যেন বলে, আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। কারণ এটাও একটা জ্ঞান যে, যার যে বিষয় জানা নেই সে বলবে, আমি এ বিষয়ে জানি না।[16] ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) বলেন, مَن قال لاَ أدْرِيْ فقد أحرز نصفَ العلم ‘যে বলবে, আমি জানি না। সে অর্ধেক জ্ঞান অর্জন করল’।[17]

(৩) কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তের নিরঙ্কুশ অনুসরণ :

আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا، ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি আরো বলেন,وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلاَ مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُبِيْنًا- ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’ (আহযাব ৩৩/৩৬)

অন্যত্র তিনি বলেন,فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا- ‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)

আলেমে দ্বীনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছহীহ হাদীছ পেলেই তা গ্রহণ করা। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেন, إذَا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ، ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, যেনো সেটাই আমার মাযহাব’।[18] সাথে সাথে সকল প্রকার যঈফ ও জাল হাদীছ   থেকে সর্বোতভাবে দূরে থাকা। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করল, সে তার নিজের স্থান জাহান্নামে করে নিল’।[19]

এছাড়া সকল প্রকার বিদ‘আতী আক্বীদা ও আমল থেকে বিরত থাকা এবং মানুষকে বিশুদ্ধ ইসলামের পথে আহবান করা আলেমে দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(৪) নবী-রাসূলগণের দাওয়াতী নীতি অনুসরণ করা : আলেমে দ্বীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল দাওয়াতের ক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণের নীতি অনুসরণ করা। নবী-রাসূলগণ মূলতঃ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শিরক বিমুক্ত তাওহীদ বিশ্বাস ও বিদ‘আতমুক্ত আমলের দিকে মানুষকে আহবান করেছেন। আলেমগণ মানুষকে সেদিকেই আহবান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ- ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকটে আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে দূরে থাক’ (নাহল ১৬/৩৬)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ ‘আর আমরা তোমার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি এই অহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা আমার ইবাদত কর’ (আম্বিয়া ২১/৮২৫)

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনে প্রেরণকালে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, ‘তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকটে যাচ্ছ। সুতরাং প্রথমে তাদেরকে এই সাক্ষ্য প্রদানের দাওয়াত দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি তাঁর রাসূল। যদি তারা তোমার এ দাওয়াত মেনে নেয় তাহ’লে তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি তারা তোমার একথাও মেনে নেয়, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট হ’তে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে’।[20]

(৫) সালাফে ছালেহীনের পদাংক অনুসরণ করা : দ্বীনী বিধি-বিধান সাব্যস্তের ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামকে সালাফগণের অনুসরণ করতে হবে। তথা শারঈ কোন বিষয়ে জানা ও বোঝার জন্য কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে সামনে রাখার সাথে সাথে  ছাহাবায়ে কেরাম কিভাবে সেটি ব্যাখ্যা করেছেন এবং কিভাবে বুঝেছেন তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছ থেকে বিধান গ্রহণের ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজকে সামনে রাখতে হবে। এটাই শরী‘আত গবেষণার মূলনীতি। এ নীতির ব্যত্যয় ঘটলে সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।

কারণ ছাহাবায়ে কেরাম শারঈ বিধি-বিধান সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে গ্রহণ করেছেন, যথাযথভাবে অনুধাবন করেছেন এবং নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করেছেন। তারাই রাসূল (ছাঃ)-এর পর উম্মতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, خَيْرُ أُمَّتِىْ قَرْنِىْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ‘আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠ হ’ল আমার যুগের লোক (অর্থাৎ ছাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবেঈগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক (অর্থাৎ তাবে তাবেঈন)।[21]

(৬) ইখলাছ বজায় রাখা : আলেম দ্বীনের সকল কর্ম সকল ইবাদত হবে ইখলাছপূর্ণ। কারণ ইখলাছবিহীন কোন আমল আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنِّيْ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّيْنَ، ‘বল, আমি আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আল্লাহর ইবাদত করি একনিষ্ঠভাবে তাঁর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য সহকারে’ (যুমার ৩৯/১১)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا، وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার জন্য একনিষ্ঠভাবে সম্পাদিত ও তার সন্তুষ্টি কামনায় নিবেদিত আমল বৈ কবুল করেন না’।[22]

অতএব দ্বীনী ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে পূর্ণ ইখলাছ বজায় রাখা আবশ্যক। কেউ যদি দুনিয়াবী কোন স্বার্থসিদ্ধি বা সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ইলম অন্বেষণ করে, তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُجَارِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ يَصْرِفَ بِهِ وُجُوْهَ النَّاسِ إِلَيْهِ أَدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ، ‘যে ব্যক্তি আলেমদের উপর গৌরব করার জন্য অথবা মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন’।[23]

তিনি বলেন,مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيْبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ইলম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে ক্বিয়ামতের দিন সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’।[24]

(৭) ইলম অনুযায়ী আমল করা : ইলম অনুযায়ী আমল করা একজন আলেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ তারা মানুষকে সৎ পথের দিকে আহবান করেন এবং অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করেন। এক্ষণে তারা যদি নিজেরাই তা পালন না করেন, তবে তাদের পরিণতি কত ভয়াবহ হ’তে পারে তা রাসূল (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। যেখানে তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জনৈক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আগুনে তার নাড়ী-ভূড়ি বেরিয়ে যাবে। তখন সে ঐ নাড়ী-ভূড়ির চতুর্দিকে ঘুরতে থাকবে। যেমনভাবে গাধা ঘানির চারদিকে ঘুরে থাকে। এ অবস্থা দেখে জাহান্নামবাসীরা তার চার পাশে জড়ো হবে ও তাকে লক্ষ্য করে বলবে, হে অমুক! তোমার এ কি অবস্থা? তুমি না সর্বদা আমাদেরকে ভাল কাজের উপদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে? তখন লোকটি জবাবে বলবে, আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু নিজে তা করতাম না। আমি তোমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম; কিন্তু আমি নিজেই সে কাজ করতাম’।[25]

সাহল ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, যখন কোন মুমিন তার ইলম অনুযায়ী আমল করবে, তখন তার ইলম তাকে তাক্বওয়া ও পরহেযগারিতার দিকে পথ প্রদর্শন করবে। আর যখন সে তাক্বওয়া অবলম্বন করবে, তখন তার অন্তর আল্লাহ রাববুল আলামীনের সাথে যুক্ত হবে।[26]

(৮) হকের উপর অবিচল থাকা : আল্লাহ বলেন,الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلاَ تَكُنْ مِنَ الْمُمْتَرِينَ ‘সত্য কেবল তোমার পালনকর্তার পক্ষ হ’তে আসে। অতএব তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/৬০)। আলেমে দ্বীনের বৈশিষ্ট্য হ’ল হকের উপর অটল থাকা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপর বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।[27]

(৯) উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া : আলেমগণ সর্বসাধারণের জন্য আদর্শ মানুষ হিসাবে গণ্য হন। তাই একজন আলেমের জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। সেকারণ আল্লাহ  রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা উত্তম যে চরিত্রের দিক থেকে উত্তম’।[28]

আলেমদের কখনোই কর্কশভাষী, অশ্লীলভাষী, বদমেজাজী হওয়া চলবে না। সেকারণ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবী (ছাঃ)- কে উদ্দেশ্য করে বলেন, وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ ‘আপনি যদি কর্কশভাষী, কঠোর হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার সংসর্গ হ’তে দূরে সরে যেত’ (আলে ইমরান ১৫৯)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَثْقَلَ شَيْءٍ يُوْضَعُ فِىْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ وَإِنَّ اللهَ يُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيءَ ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে আমলটি রাখা হবে তা হ’ল উত্তম চরিত্র। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলভাষী দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন’।[29]

জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, আমাকে নছীহত করুন। তিনি বললেন, لاَ تَغْضَبْ ‘তুমি রাগ কর না’। তিনি কয়েকবার একথাটি বললেন’।[30]

(১০) সহনশীল হওয়া : ওলামায়ে দ্বীনকে অবশ্যই ধৈর্যশীল, সহনশীল ও ঠান্ডা মাথার অধিকারী হ’তে হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূল (ছাঃ) আব্দুল কায়েস গোত্রের নেতা, আশাজ্জ মুনযির ইবনু আয়েযকে বললেন,إِنَّ فِيْكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ الْحِلْمُ وَالأَنَاةُ، ‘তোমাদের মধ্যে এমন দু’টি ভাল গুণ রয়েছে, যাকে আল্লাহ পসন্দ করেন। তা হ’ল সহনশীলতা ও ধীর-স্থিরতা’।[31]

(১১) লজ্জাশীল ও নম্র হওয়া : ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِى إِلاَّ بِخَيْرٍ ‘লজ্জা কল্যাণ বৈ কিছুই আনয়ন করে না’। তিনি বলেন, مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ ‘যাকে কোমলতা ও নম্রতা হ’তে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হ’তে বঞ্চিত করা হয়’।[32]

(১২) নিজের বিরুদ্ধে হ’লেও সর্বদা হক কথা বলা :

আলেমগণ সর্বদা হকের পথের দিশারী হবেন। যেমন কোন বক্তব্য বা ফৎওয়া প্রদানের পর পরবর্তীতে যদি তা ভুল প্রমাণিত হয়, তবে তা থেকে ফিরে আসা এবং ভুল স্বীকার করে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান একজন আলেমের জন্য আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার জন্য ইলম গোপন করা, জেনেশুনে ভুল ফৎওয়া প্রদান করা চরম অন্যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ يَعْلَمُهُ فَكَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ، ‘কাউকে তার জ্ঞাত কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে যদি সে তা গোপন রাখে, ক্বিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’।[33]

উপসংহার :

উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, আলেমগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাদের মাধ্যমেই মানব সমাজ ঐশী হেদায়াতের আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে। সেকারণ একজন আলেমের জন্য প্রবন্ধে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণ করা আবশ্যক। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ধারণপূর্বক তোমার দ্বীন সঠিকভাবে বুঝার, তা একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করার এবং তার প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তাওফীক্ব দান কর এবং আলেমে দ্বীন হিসাবে কবুল কর- আমীন!


[1]আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ হা/১৬৩।

[2]. রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)।

[3]. আবূদাঊদ হা/৩১৫৭; ইবনু মাজাহ ২/২২৩; তিরমিযী হা/২৬০৬, সনদ ছহীহ।

[4]. বুখারী হা/৭১।

[5]. আবু দাঊদ হা/৩৬৪১, মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়।

[6]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৫২।

[7]. তিরমিযী, আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২১২ ‘ইলম’ অধ্যায়।

[8]. মিশকাত হা/২৫৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭, সনদ ছহীহ।

[9]. তিরমিযী হা/২৬৮৫; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; ছহীহ তারগীব হা/৮১; মিশকাত হা/২১৩;, সনদ ছহীহ।

[10]. ইবনু মাজাহ হা/২৪০, সনদ হাসান।

[11]. মুসলিম হা/১৬৩১; আবূদাঊদ হা/২৮৮০; নাসাঈ হা/৩৬৫১; তিরমিযী হা/১৩৭৬।

[12]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, ১৪৭ পৃঃ।

[13]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, নবীদের কাহিনী, ১/১৩।

[14]. কুরতুবী, বাক্বারাহ ৩২ আয়াতের তাফসীর দ্র.।

[15]. বুখারী পৃঃ ১৬।

[16]. বুখারী হা/৪৭৭৪; মুসলিম হা/২৭৯৮; ছহীহ ইবনু হিববান ৬৫৮৫।

[17]. আবু ওছমান আল-জাহেয, আল-বায়ান ওয়াত তাবয়ীন, ১/৩১৪।

[18]. ইবনু আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার ১/১৬৭।

[19]. বুখারী হা/৬১৯৭; মুসলিম হা/৩; মিশকাত হা/১৯৮।

[20]. বুখারী হা/১৪৫৮; মুসলিম হা/১৯।

[21]. বুখারী হা/৩৬৫০; মুসলিম হা/২৫৩৩।

[22]. নাসাঈ হা/৩১৪০।

[23]. তিরমিযী হা/২৬৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৬; মিশকাত হা/২২৫।

[24]. আহমাদ ৮২৫২; আবূদাঊদ হা/৩৬৬৪; ইবনু মাজাহ হা/২৫২; ছহীহ তারগীব হা/১০৫; মিশকাত হা/২২৬।

[25]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১৩৯, ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ।

[26]. হিলয়াতুল আউলিয়া ১০/২০৫।

[27]. মুসলিম হা/১৯২০।

[28]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; বুখারী হা/৩৫৫৯; মিশকাত হা/৫০৭৫।

[29]. তিরমিযী হা/২০০২; মিশকাত হা/৫০৮১।

[30]. বুখারী হা/৬১১৬।

[31]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৫৪।

[32]. মুসলিম হা/২৫৯২; মিশকাত হা/৫০৬৯।

[33]. আহমাদ ২/৭৮৮৩; আবূদাঊদ ২/৩৬৫৮; তিরমিযী ২/২৬৪৯; ছহীহুল জামে‘ ৬২৮৪; মিশকাত হা/২২৩।





আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কর্তব্য (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাক্বলীদের বিরুদ্ধে ৮১টি দলীল - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
কথাবার্তা বলার আদব বা শিষ্টাচার - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের আবশ্যকতা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বিদ‘আত ও তার পরিণতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
কুরআনের আলোকে ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
চিন্তার ইবাদত (শেষ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
হাদীছ ও কুরআনের পারস্পরিক সম্পর্ক - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আরও
আরও
.