মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল নন মর্মে পেশকৃত দলীল সমূহের সঠিক ব্যাখ্যা

১. মহান আল্লাহ বলেন, لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ ‘আমরা রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করি না’ (বাক্বারাহ ২/১৩৬)। যারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল বলতে চান না তাদের সবচেয়ে বড় দলীল এই আয়াতটি।

মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে এই আয়াতটি নিয়ে এসেছেন দুই জায়গায়। সূরা বাক্বারাহ ১৩৬, সূরা আলে ইমরান ৮৪। সব জায়গাতে আগে রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন, তারপর এই আয়াত নিয়ে এসেছেন। আমরা সূরা বাক্বারার সম্পূর্ণ আয়াত পেশ করছি। কারণ অনেকেই শুধু আয়াতের এই অংশকে পেশ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। মহান আল্লাহ বলেন,

قُولُوا آمَنَّا بِاللهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوْسَى وَعِيْسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّوْنَ مِنْ رَبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُوْنَ-

‘তোমরা বল আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং তাদের বংশধরদের প্রতি। আরও যা দেয়া হয়েছে মূসা ও ঈসাকে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য নবীদেরকে যা দেয়া হয়েছে তাঁর প্রতি। বস্ত্তত আমরা তাদের কারো মাঝে পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণকারী’ (বাক্বারাহ ২/১৩৬)

এই আয়াত পড়ার পর একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবে যে, এখানে পার্থক্য করি না অর্থ কুফরী করি না বরং ঈমান আনি। কেননা আয়াতের আগের আলোচনাতে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান আনতে বলেছেন এবং শেষে ঈমানের বিপরীত কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। এজন্যই মহান আল্লাহ হরফে আতফ বা সংযোজক অব্যয় নিয়ে আসেননি। সালাফে ছালেহীনও এই আয়াতের এমন তাফসীরই করেছেন। যেমন হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,وأن لا يفرقوا بين أحد منهم، بل يؤمنوا بهم كلّهم، ولا يكونوا كمن قال الله فيهم- ‘এবং তারা যেন রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য না করে বরং তাদের সকলের প্রতি ঈমান আনে। আর আল্লাহ যাদের সম্পর্কে এমনটি বলেছেন তারা যেন তাদের মতো না হয়’।[1]

এরপর হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) কুরআনের তাফসীর কুরআনের আয়াত দিয়ে করেছেন।

সূরা বাক্বারার আয়াতে আল্লাহ রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করতে নিষেধ করলেন। এখন এই পার্থক্য করা দ্বারা আল্লাহর কি উদ্দেশ্য তা আমরা তখনই জানতে পারব, যখন জানতে পারব যে, মহান আল্লাহ এই পার্থক্য করাকে অন্য জায়গায় কি অর্থে ব্যবহার করেছেন। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) এখানে সূরা নিসার ১৫০-১৫১ নং আয়াত নিয়ে এসেছেন, যেখানে এই পার্থক্য করার কথা রয়েছে। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَّخِذُوْا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيْلاً، أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّا- ‘আর তারা চায় যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করবে এবং বলবে, আমরা কারো উপর ঈমান আনি এবং কারো কুফরী করি এবং তারা এর মাঝে একটা রাস্তা গ্রহণ করতে চায়। বস্ত্তত তারাই সত্যিকারের কাফের’ (নিসা ৪/১৫০-১৫১)

এখানে মহান আল্লাহ পার্থক্য করার কথা স্পষ্টভাবে বলছেন যে, কারো উপর ঈমান আনা এবং কারো সাথে কুফরী করা হ’ল রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করা।

ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (রহঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘আমরা কতিপয় নবীর প্রতি ঈমান আনি এবং কতিপয় নবীর সাথে কুফুরী করি এরূপ করি না। আমরা কতিপয় নবীর সাথে সম্পর্ক করি আবার কতিপয় নবীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি এরূপ করি না। যেমনটা ইহুদীরা ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং এ দু’জন ব্যতীত সকলের প্রতি ঈমান এনেছে। অনুরূপভাবে নাছারারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনেনি। তিনি ব্যতীত সকলের প্রতি তারা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমরা সকল নবী ও রাসূলগণের জন্য সাক্ষ্য দেই যে, তাঁরা সকলেই মহান আল্লাহর নবী ও রাসূল ছিলেন। তাঁরা সত্য ও হেদায়াতসহ প্রেরিত হয়েছিলেন’।[2]

অতএব এই কথা এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আমরা রাসূলগণের মাঝে পার্থক্য করি না আয়াতের অর্থ যদি করা হয় যে, আমরা রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করি না তাহ’লে কুরআনের আয়াতের অর্থের বিকৃতি ঘটানো হবে। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তিনি নিজেও কুরআনে রাসূলগণের একজনকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ ‘হে নবী! তুমি রাসূলগণের মধ্যে থেকে যারা উলুল আযম বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সাহসী রাসূল তাদের মত ধৈর্যধারণ কর’ (আহকাফ ৩৫/৩৫)

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে শুরু করে সকল মুফাসসিরে কুরআন এই বিষয়ে একমত যে, এই উলুল আযম রাসূল হচ্ছেন ৫ জন- মুহাম্মাদ (ছাঃ), ইবরাহীম, নূহ, মূসা ও ঈসা (আঃ)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, خِيَارُ وَلَدِ آدَمَ خَمْسَةٌ نُوْحٌ وإبْراهِيْمُ ومُوْسَى وَعِيْسَى ومُحَمَّدٌ وَخَيْرُهُمْ مُحَمَّد ‘আদম (আঃ)-এর শ্রেষ্ঠ সন্তান হচ্ছেন পাঁচ জন, নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা, ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আর তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)।[3]

এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মাঝে পাঁচজনকে এই মহান গুণে গুণান্বিত করে অন্যদের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ বলেন, تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ وَآتَيْنَا عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوْحِ الْقُدُسِ- ‘এই যে রাসূলগণ, এদের কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। এদের মধ্যে এমনও আছে যাদের সাথে মহান আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাদের কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। ঈসা ইবনু মারিয়ামকে স্পষ্ট প্রমাণ দান করেছি এবং তাকে রুহুল কুদুস (জিব্রীল) দ্বারা সহযোগিতা করেছি’ (বাক্বারাহ ২/২৫৩)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ রাসূলগণের মাঝে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তাইতো ইবনু কাছীর (রহঃ) এই আয়াতের তাফসীরে ঐ সমস্ত হাদীছের পাঁচভাবে জবাব দিয়েছেন যেখানে রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এই আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, রাসূলগণ শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে সমান নন।[4]

যদি এই আয়াতের অন্য উদ্দেশ্য হ’ত তাহ’লে তোমরা রাসূলগণের মাঝে কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দিও না মর্মে বর্ণিত হাদীছকে তিনি এই আয়াতের বিরোধী মনে করতেন না এবং এই হাদীছের পাঁচভাবে জবাব দিতেন না।

অতএব উপরে উল্লিখিত দু’টি আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তাই তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন।

২. তোমরা নবীদের মাঝে প্রাধান্য দিও না :

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ تُفَضِّلُوا بَيْنَ أَنْبِيَاءِ اللهِ ‘তোমরা রাসূলগণের মাঝে কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দিও না’।[5] আলোচ্য হাদীছের নিম্নোক্ত তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

১. শাব্দিক বিশ্লেষণ :

মূলত এই হাদীছটি তিনটি শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

১. لَا تُفَضِّلُوا بَيْنَ أَنْبِيَاءِ اللهِ ‘তোমরা রাসূলগণের মাঝে কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দিও না’। উক্ত হাদীছটি আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ এবং তাঁর থেকে আব্দুল্লাহ বিন ফযল বর্ণনা করেছেন।

২. لَا تُخَيِّرُونِيْ عَلَى مُوسَى ‘তোমরা মূসাকে বাদ দিয়ে আমাকে বেছে নিও না’।[6]

৩. لَا تُخَيِّرُوا بَيْنَ الْأَنْبِيَاءِ ‘তোমরা রাসূলগণের মাঝে কাউকে বেছে নিও না’।[7]

এখানে لَا تُخَيِّرُوْا শব্দটি প্রাধান্য পাবে। কেননা لَا تُفَضِّلُوا এই শব্দে শুধুমাত্র আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ থেকে আবদুল্লাহ বিন ফযল বর্ণনা করছেন। অথচ এই হাদীছই ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ থেকে বর্ণনা করছেন لَا تُخَيِّرُوْنِي শব্দ দিয়ে। শুধু আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ থেকেই তিনি এভাবে বর্ণনা করেননি; বরং আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ ব্যতীত আরো দু’জন রাবী থেকেও তিনি এই শব্দে বর্ণনা করছেন। তাঁর মধ্যে একজন হচ্ছেন বিখ্যাত তাবেঈ সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রহঃ)।

অতএব তিনটি কারণে لَا تُخَيِّرُوا ‘তোমরা নবীদের মাঝে কাউকে বেছে নিও না’ এই শব্দটি প্রাধান্য পাবে।

(১) সংখ্যাধিক্য। কেননা তিন জন রাবী এভাবে বর্ণনা করছেন এবং এই তিন জনের মধ্যে সাঈদ বিন মুসাইয়িব-এর মত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর খাছ ছাত্র আছেন।

(২) যে আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ থেকে আবদুল্লাহ বিন ফযল বর্ণনা করছেন, সে আব্দুর রহমান আল-আ‘রাজ থেকে ইবনু শিহাব যুহরীও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি আব্দুল্লাহ বিন ফযল থেকে ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করছেন। আর মুহাদ্দিছ মাত্রই ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ)-এর দৃঢ়তা ও শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি অবগত।

(৩) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত সকল সনদে এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে।

অতএব যখন প্রমাণিত হ’ল যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) মূলত لاَ تُخَيِّرُوْا বা ‘তোমরা নবীদের মাঝে কাউকে বেছে নিও না’ শব্দ বলেছেন। এখন এবার আমরা এই শব্দের কি অর্থ হতে পারে তা বিশ্লেষণ করব।

মি‘রাজের রাত্রে যখন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সামনে দুধ ও মদ দিয়ে যে কোন একটি গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল, তখন তিনি দুধ বেছে নিয়েছিলেন (فَاخْتَرْتُ اللَّبَنَ)।[8]

এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, ‘তাখয়ীর’ হচ্ছে একটাকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটাকে গ্রহণ করা। যারা আরবী ভাষায় পারদর্শী তাঁরা ভালভাবেই জানেন যে, ‘তাখয়ীর’ মাছদার এর অর্থ হচ্ছে, একটিকে ছেড়ে দিয়ে আরেকটিকে গ্রহণ করা বা একটির মধ্যে কোন দুর্বলতা থাকার কারণে তার উপর আরেকটিকে প্রাধান্য দেয়া।

সুতরাং এই হাদীছের কেউ যদি এই অর্থ করে যে, তোমরা রাসূলগণের মাঝে কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ো না তাহ’লে সে অর্থের বিকৃতি ঘটাবে। বরং সঠিক অর্থ হবে তোমরা অন্য রাসূলকে ছেড়ে আমাকে প্রাধান্য দিয়ো না। আর এই ধরনের কাজ মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয। যে করবে সে কাফের।

আর যদি ‘লা তুফায্যিলূ’ শব্দ তথা শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া অর্থ মেনে নেওয়া হয় তাহ’লে শানে উরূদ বা হাদীছের প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

২. শানে উরূদ : কুরআনের তাফসীরে যেমন শানে নুযূলের গুরুত্ব থাকে, তেমনি হাদীছের ব্যাখ্যায় শানে উরূদের গুরুত্ব থাকে। অর্থাৎ এই হাদীছ বলার পিছনের কাহিনী বা প্রেক্ষাপট কি?

ঘটনাটি হচ্ছে, রাসূল (ছাঃ)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দিতে গিয়ে আরেকজনের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে অন্য নবীর শানে গুস্তাখী বা অসমীচীন আচরণ করলে তিনি এই হাদীছ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ তোমরা রাসূলগণের মাঝে এভাবে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তাদের শানে গুস্তাখী কর না। কেননা অন্য নবীগণও অনেক সম্মানী, তারাও আল্লাহর রাসূল।

৩. সালাফে ছালেহীন-এর ব্যাখ্যা :

১. ইমাম বাগাভী (রহঃ) তাঁর ‘শারহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থে এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘রাসূলগণের মাঝে একজনকে আরেকজনের উপর প্রাধান্য দেয়ার অর্থ এটা নয় যে, আমরা বিশ্বাস করব তাঁরা সকলেই মর্যাদাগতভাবে সমান। কেননা স্বয়ং আল্লাহই আমাদেরকে অবগত করেছেন যে, তিনি কোন রাসূলকে অন্য রাসূলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘এই যে নবীগণ, তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’ (বাক্বারাহ ২/২৫৩)। বরং এর অর্থ হচ্ছে কোন নবীর শানে অসমীচিন কথা বলে এবং তাদের অমর্যাদা করে অন্য নবীকে প্রাধান্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এতে তাদের কারো ব্যাপারে আক্বীদায় ফাসাদ সৃষ্টি হয়। আর এটা কুফুরী’।[9]

২. অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)ও একই কথা বলেছেন। অর্থাৎ এখানে এটা উদ্দেশ্য যে, ফযীলত দিতে গিয়ে যেন অন্য নবীদের অপমান না করা হয়।[10]

৩. ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) তাঁর দালায়েলুন নবুঅতে বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমি রাসূলগণের কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিয়েছি। এই আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তিনি তাদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে পার্থক্য করেছেন। আর রাসূলগণের মাঝে কাউকে প্রাধান্য দেওয়া নিষেধ মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো মূলতঃ আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্কের সময়ে তাদের নবীর উপর আমাদের নবীকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে। কেননা যখন দুই ধর্মের অনুসারীর মাঝে নবীগণকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে ঝগড়া হবে, তখন তাঁরা নবীগণের শানে বেয়াদবী করবে এবং তাদের মানহানি করে ফেলবে। ফলে এর দ্বারা তাঁরা কাফের হয়ে যাবে’।[11] মোটকথা হচ্ছে- প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন কোন নবী ও রাসূলের মানহানি না হয়।

৩. ‘যে বলবে, আমি ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সে মিথ্যুক’।  

আমরা এই হাদীছেরও তিনভাবে ব্যাখ্যা করব।

হাদীছের অর্থ :

এখানে আমি দ্বারা কে উদ্দেশ্য? যদি বলি মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাহ’লে এই হাদীছের ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। কিন্তু এই হাদীছের আরেকভাবেও অর্থ করা যায়। আমি দ্বারা প্রত্যেক কথক উদ্দেশ্য। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) বলতে চেয়েছেন, কেউ যদি বলে যে, আমি তথা ঐ কথক ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাহ’লে সে মিথ্যুক। আর এটা স্পষ্ট যে, আম জনসাধারণ যদি নিজেকে ইউনুস (আঃ)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে তাহ’লে সে মিথ্যুক হবে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে দু’টি দলীল পেশ করা হ’ল-

১. হাদীছটি ছহীহ বুখারীতে এভাবে এসেছে- وَلاَ أَقُولُ إِنَّ أَحَدًا أَفْضَلُ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‘আমি বলি না যে, কেউ ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ’।[12]

এখানে রাসূল (ছাঃ) আমি ব্যবহার করেননি; বরং বলেছেন, কেউ। সুতরাং এখান থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য নেয়ার যে সম্ভাবনা ছিল তা শেষ হয়ে যায়। বরং আম জনসাধারণের কেউ যদি দাবী করে যে, সে ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাহ’লে সে মিথ্যুক হবে।

২. একটি হাদীছে কুদসী এই অর্থকে নিশ্চিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, لاَ يَنْبَغِى لِعَبْدٍ لِى أَنْ يَقُولَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى عَلَيْهِ السَّلاَمُ ‘আমার কোন বান্দার উচিত নয় যে, সে বলবে আমি ইউনুস বিন মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ’।[13] সুতরাং একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এখানে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দা উদ্দেশ্য; মুহাম্মাদ (ছাঃ) নয়।

প্রশ্ন হ’তে পারে, আম জনসাধারণ কিভাবে নিজেকে একজন নবীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলতে পারে? আরেকটি প্রশ্ন হ’তে পারে, শুধু ইউনুস (আঃ)-এর সাথে কেন খাছ করলেন? অন্য নবীদের কথা কেন বললেন না? এ বিষয়ে জানার জন্য আমাদেরকে শানে উরূদ বা হাদীছের প্রেক্ষাপট জানতে হবে।

শানে উরূদ :

মূলতঃ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আমাদের রাসূলকে বলেছিলেন যে, فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تَكُنْ كَصَاحِبِ الْحُوتِ ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের উপর ধৈর্য ধারণ কর, ইউনুস এর মত হয়ো না’ (ক্বালাম ৪৮)

আর নিষেধ করার কারণ হচ্ছে, ইউনুস (আঃ) তাঁর জাতির আচরণে ধৈর্য ধারণ না করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাই আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলছেন, তুমি ইউনুস (আঃ)-এর মত ধৈর্যহীন হয়ো না; বরং উলুল আযমদের মত ধৈর্যশীল হও!

এর দ্বারা অনেকের মনে হ’তে পারে যে, এই আয়াতে ইউনুস (আঃ)-এর মত হ’তে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব তিনি খারাপ (নাউযুবিল্লাহ)

এখন এই দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ যদি আমাদের রাসূলকে ভাল এবং ইউনুস (আঃ)-কে খারাপ বলে বা নিজেকেই ভাল বলে তাহ’লে সে মিথ্যুক হবে। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীদের অন্তর থেকে এই আয়াতের কারণে সৃষ্টি হওয়া খারাপ ধারণা দূর করার উদ্দেশ্যে এই হাদীছ বলেছেন। 

তাই আজও যদি কুরআন পড়ার সময় এই আয়াত পাঠে কারো অন্তরে ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয় তাহ’লে তাঁর আক্বীদাকে সংশোধন করার জন্য তাঁর সামনে এই হাদীছ পেশ করা হবে।

সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যা :

আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,

‘রাসূল (ছাঃ) এই কথা তখনই বলেছিলেন, যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আয়াত নাযিল হয়েছিল যে, ইউনুস (আঃ) তাঁর জাতির আচরণ সহ্য না করে রাগান্বিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং এর ফলে তাঁর যা হবার তাই হ’ল। কেননা আল্লাহর রাসূলগণের সম্মান করা, তাদেরকে ভালবাসা এবং তাদের প্রশংসা করা ওয়াজিব’।[14]

একই ব্যাখ্যা করেছেন ইমাম নববী (রহঃ) ও ইমাম সৈয়ূতী (রহঃ)। তাঁরা বলেন, ‘আলেমগণ বলেছেন, এটা ঐ সমস্ত জাহেলদের প্রতি সতর্কীকরণ, যারা ইউনুস (আঃ)-এর সম্মানে বিন্দুমাত্রও কমতি করে। এজন্য যে, কুরআনে তাঁর কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে এবং এজন্যই এখানে শুধুমাত্র ইউনুস (আঃ)-এর নাম নেয়া হয়েছে, অন্য নবীদের নাম নেয়া হয়নি’।[15]

অতএব কেউ যদি এই হাদীছ দ্বারা সালাফে ছালেহীনের বুঝের বিপরীত বলতে চায় যে, এই হাদীছে বলা হয়েছে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) ইউনুস (আঃ)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ নন। তাহ’লে হাদীছের অর্থের ও উদ্দেশ্যের বিকৃতি ঘটবে।

কেউ যদি এই হাদীছ দ্বারা বলতে চায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) ইউনুস (আঃ)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ নন। তাহ’লে তাঁর জন্য যরূরী হবে সে যেন কুরআনের ঐ আয়াতের জবাব দেয় যেখানে আল্লাহ ইউনুস (আঃ)-এর মত হ’তে নিষেধ করেছেন এবং উলুল আযম-এর মত হ’তে বলেছেন এবং আমাদের রাসূল উলুল আযম-এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন।

কেননা তখন এই আয়াত এবং হাদীছ পরস্পর বিরোধী হবে। কেননা আয়াত আমাদের রাসূলকে শ্রেষ্ঠ বলছে এবং হাদীছ তা অস্বীকার করছে।

আর ফযীলতের বিষয়ে বর্ণিত সকল হাদীছের আরেকটা ব্যাখ্যা নিম্নরূপ- কেউ যদি এক রাসূলকে আরেক রাসূলের উপর এই মনে করে প্রাধান্য দেয় যে, অন্য রাসূলগণ তাদের নবুঅতের হক আদায় করতে পারেননি অর্থাৎ মূসা, ইউনুস (আঃ) তাদের নবুঅতের হক আদায় করতে পারেননি, আমাদের রাসূল পেরেছেন; তাহ’লে সে মিথ্যুক এবং পাপী এমনকি কাফেরও হয়ে যেতে পারে। সকল নবী তাদের নবুঅতের দায়িত্ব পালনে সমান। কিন্তু এটা মহান আল্লাহর রহমত যে তিনি কাউকে কারও উপর ফযীলত দিয়েছেন। তদ্রূপ আমাদের রাসূলকে অন্য সকল রাসূলের উপর ফযীলত দিয়েছেন।

ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ :

একদা এক লোক মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বলল, হে সৃষ্টির সেরা মানুষ! তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে তো ইবরাহীম। অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা মানুষ ইবরাহীম (আঃ)।[16]

যারা রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করে তাদেরকে আগে এই হাদীছের জবাব দিতে হবে। কেননা এই হাদীছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর উপর এবং সকল নবীর উপর ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রাধান্যকে মেনে নিচ্ছেন। এই হাদীছ একটা বড় দলীল যে, রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে কমবেশী আছে।

আমরা এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ঐ হাদীছ পেশ করতে চাই, যেখানে মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বয়ং নিজেকে খায়রুল বারিইয়াহ বলেছেন। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

يَخْرُجُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ أَحْدَاثُ الأَسْنَانِ سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ-

‘শেষ যামানায় কিছু মানুষ বের হবে যারা হবে অল্প বয়সী বোকা। তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কথা থেকে কথা বলবে তথা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হাদীছ শুনাবে। তাঁরা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তাঁরা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর বের হয়ে যায় শিকার ভেদ করে’।[17]

এই হাদীছ থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) খায়রুল বারিয়্যাহ বা সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। এছাড়া আরও অনেক দলীল রয়েছে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার। কিন্তু এই হাদীছ বলছে ইবরাহীম (আঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ।

সালাফে ছালেহীন এই হাদীছের দু’ভাবে জবাব দিয়েছেন। ১. মানসূখ ২. ভদ্রতা ও সম্মানের জন্য।

মানসূখ : রাসূল (ছাঃ) আগে জানতেন না যে, মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে যেভাবে খলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন, তাকেও সেভাবে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। এটাও জানতেন না যে, তিনি সকল আদম সন্তানের সরদার এবং ইবরাহীম (আঃ) ক্বিয়ামতের মাঠে তাঁর ঝান্ডার নীচে হবেন। এও জানতেন না যে, মহান আল্লাহ তাঁর আগের ও পিছনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তিনি এই কথা বলেছিলেন। যখন জানতে পারলেন যে, তিনিই শ্রেষ্ঠ তখন আবার ঐ সমস্ত হাদীছ বলেন, যা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন

করে। যেমন নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,

وأجاب العلماء عن هذا بأن النبي صلى الله عليه وسلم قال ذلك تواضعاً وهضماً لنفسه، أو أنه قال ذلك قبل أن يوحى إليه بأن الله تعالى اتخذه خليلاً كما اتخذ إبراهيم خليلاً، وأنه سيد الناس يوم القيامة، آدم فمن دونه تحت لوائه صلى الله عليه وسلم- كما جاء في الأحاديث الصحيحة-

‘আলেমগণ এই হাদীছের দু’ভাবে জবাব দিয়েছেন। হয় তিনি এটা সম্মান ও ভদ্রতার খাতিরে বলেছেন বা তিনি এই খবর জানার আগে বলেছেন যে, মহান আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে যেভাবে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন তাকেও সেভাবে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি ক্বিয়ামতের মাঠে আদম সন্তানের সরদার হবেন এবং আদম (আঃ) সহ সকলেই তাঁর ঝান্ডার নীচে হবেন। যেমন এই কথাগুলো ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।[18]

মানসূখ হওয়ার দলীল হ’তে পারে এই যে, এই হাদীছ আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এবং আদম সন্তানের সরদার হওয়ার হাদীছ আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আর আবু হুরায়রা (রাঃ) অনেক পরে অর্থাৎ ৭ম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাই তাঁর বর্ণিত হাদীছগুলো শেষের দিকের হাদীছ।

রাসূল (ছাঃ) আসলে ভদ্রতার কারণে অন্য কাউকে তাঁর সামনে তাঁর প্রশংসা করতে দিতেন না। এজন্যই তিনি যখনই তাঁর সম্মানের কথা জনগণের সামনে জানিয়েছেন তখনই বলেছেন, وَلاَ فَخَرَ ‘আমি এই কথা গর্ব করত বলছি না’। বরং তোমাদেরকে দ্বীনের একটা বিষয় জানানোর জন্য বলছি, যেন তোমরা তার উপর ঈমান আন।[19]

অবশ্য এই হাদীছ মানসূখ হ’লেও সম্পূর্ণরূপে মানসূখ নয়। কেননা এই হাদীছই দলীল যে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও মানব হচ্ছেন ইবরাহীম (আঃ)। যেমন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, فَإِبْرَاهِيمُ أَفْضَلُ الْخَلْقِ بَعْدَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘ইবরাহীম (আঃ) মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পর সৃষ্টির সেরা’।[20]

সালাফে ছালেহীনের ঐক্যমত :

যুগ যুগ থেকে লালন করে আসা আক্বীদা যদি এমন হয়, তাহ’লে যারা আম জনসাধারণ তাদের আক্বীদার কোনও ভরসা নেই। কিন্তু সেই আক্বীদা যদি হয় কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সালাফে ছালেহীন দ্বারা প্রচারিত যুগ যুগ থেকে লালন করে আসা ছাহাবায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিছীনে ইযামের আক্বীদা, তাহ’লে তাতে ভুলের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। বিশেষ করে যখন তা আক্বীদা সম্পর্কিত মাসাআলা হয়। কেননা একমাত্র আক্বীদার মাসআলাই এমন যাতে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীন-এর কোন মতভেদ নেই।

মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এটা আক্বীদা সম্পর্কিত মাসাআলা। আর আক্বীদার অন্য মাসআলাগুলোর মত এই মাসআলাতেও সালাফে ছালেহীনের কোনও মতভেদ নেই। যেমন :

১. শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, قوله صلى الله عليه وسلم: أنا سيد ولد آدم صريح في تفضيله صلى الله عليه وسلم على جميع ولد آدم ‘রাসূল (ছাঃ)-এর এই কথা যে, ‘তিনি আদম সন্তানের সরদার’ স্পষ্ট দলীল যে তিনি সকল আদম সন্তানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ’।[21]

২. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) স্বীয় ‘রিসালাহ’ গ্রন্থে বলেন,

فكان خيرته المصطفى لوحيه المنتخب لرسالته المفضل على جميع خلقه بفتح رحمته وختم نبوته وأعم ما أرسل به مرسل قبله المرفوع ذكره مع ذكره في الاولى والشافع المشفع في الأخرى-

‘মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন মুহাম্মাদ মুছত্বফা (ছাঃ) তাঁর অহি-র জন্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে এবং এমন রিসালাতের জন্য যা সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠ আল্লাহর রহমতের কারণে ও খতমে নবুঅতের কারণে এবং তাঁর রিসালাতের বিশ্বব্যপ্তির কারণে, যা ইতিপূর্বে প্রেরিত কোনও নবীর ক্ষেত্রে ছিল না এবং দুনিয়াতে মুহাম্মাদের যিকর বা স্মরণকে স্বয়ং মহান আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পর্কিত করার কারণে এবং আখিরাতে তাঁকে প্রথম শাফা‘আত ও প্রথম যার শাফা‘আত গৃহীত হবে এই মর্যাদা দানের কারণে’।[22]

ইমাম ইবনে হাজার আল-হায়ছামী (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এখানে স্পষ্ট আকারে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন সেটার উপরই রয়েছেন সমস্ত ওলামায়ে কেরাম’।[23]

৩. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, وَقَدِ اتَّفَقَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْظَمُ الْخَلْقِ جَاهًا عِنْدَ اللَّهِ ‘মুসলমানগণ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর নিকটে মর্যাদাগতভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি’।[24] তিনি الفرقانُ بينَ أولياءِ الرَّحمَنِ وأولياءِ الشَّيْطان গ্রন্থে বলেন,

 أَفْضَلُ أَوْلِيَاءِ اللَّهِ هُمْ أَنْبِيَاؤُهُ، وَأَفْضَلُ أَنْبِيَائِهِ هُمُ الْمُرْسَلُونَ مِنْهُمْ، وَأَفْضَلُ الْمُرْسَلِينَ أُولُو الْعَزْمِ : نُوحٌ وَإِبْرَاهِيمُ وَمُوسَى وَعِيسَى وَمُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-

‘আল্লাহর ওলী বা বন্ধুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন নবীগণ। নবীগণের মাঝে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন রাসূলগণ। রাসূলগণের মাঝে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন উলুল আযম বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সাহসী পাঁচজন রাসূল। তারা হ’লেন নূহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ) এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)। এরপর ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, وَأَفْضَلُ أُولِي الْعَزْمِ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সাহসী পাঁচ জন রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)’। এই কথা বলার পর ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উচ্চ মর্যাদার বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ বহন করে।[25]

৪. শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) স্বীয় আক্বীদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত বইয়ে উল্লেখ করেছেন, রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। তারপর ইবরাহীম (আঃ), তারপর মূসা (আঃ), তারপর নূহ (আঃ), তারপর ঈসা (আঃ)।

৫. শায়খ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে তাঁর অন্য নবী ভাইদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে কোনও মতভেদ নেই’। 

৬. ইমাম নববী (রহঃ) তাঁর শরহে মুসলিম-এ ‘আমি আদম সন্তানের সরদার’ মর্মে বর্ণিত হাদীছের উপর এই নামে অধ্যায় রচনা করেছেন,باب تَفْضِيلِ نَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم عَلَى جَمِيعِ الْخَلاَئِقِ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব’ অধ্যায়।

এরপর এই হাদীছের ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন,وَهَذَا الْحَدِيثُ دَلِيْلٌ لِتَفْضِيْلِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْخَلْقِ كُلِّهِمْ لِأَنَّ مَذْهَبَ أَهْلِ السُّنَّةِ أَنَّ الْآدَمِيِّيْنَ أَفْضَلُ مِنَ الْمَلَائِكَةِ وَهُوَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الْآدَمِيِّيْنَ وَغَيْرِهِمْ ‘এই হাদীছ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠ হওয়ার দলীল। কেননা আহলুস সুন্নাহ-এর মাযহাব হচ্ছে, মানুষ ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর মুহাম্মাদ (ছাঃ) সকল মানুষ ও অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ’।[26]

৭. ইমাম রাযী এই বিষয়ে সালাফে ছালেহীনের ঐক্যমতের কথা উদ্ধৃত করেছেন।[27] সেখানে তিনি বলছেন, وَقَدْ حَكَى الرَّازِيّ الْإِجْمَاعَ عَلَى أَنَّهُ مُفَضَّلٌ عَلَى جَمِيعِ الْعَالَمِيْنَ ‘রাযী এই বিষয়ে ইজমা নকল করেছেন যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ’।

৮. ইমাম কুরতুবী বলেন, لأن النبي صلى الله عليه وسلم أفضل الأنبياء عليهم السلام ‘কেননা মুহাম্মাদ (ছাঃ) হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী’।[28]

৯. শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, أن نبينا صلى الله عليه وسلم هو أفضل الأنبياء ‘নিশ্চয়ই আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী’।[29]

১০. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমার ফৎওয়া নং ২০৯৭২-এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল।

অতএব যারা দলীল জানার পরেও রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল স্বীকার করবে না এবং সালাফে ছালেহীন-এর বিশ্বাস ও আক্বীদা পরিপন্থী বিশ্বাস ও আক্বীদা পোষণ করবে তাঁরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত থেকে বের হয়ে যাবে। 

রাসূল (ছাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কিন্তু তিনি মানবতার উপরে নন। তিনি নূরের তৈরী নন এবং তিনি গায়েবের খবর জানতেন না। আর তাঁর কাছে প্রার্থনা করা শিরক।

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল স্বীকার না করা নতুন ফিৎনা। যারা একই দিনে ঈদ করার পক্ষে তারাই এই ফিৎনার উদ্ভাবক। এই ফিৎনা মুসলিম উম্মাহর রাসূল (ছাঃ)-এর উপর যে সীমাহীন ভালবাসা আছে সেই ভালবাসাকে হ্রাস করে ইত্তিবায়ে সুন্নাহ-এর জাযবাকে খতম করার এক নতুন ষড়যন্ত্র। কেননা ইসলাম ধর্মের সম্পূর্ণ ভিত্তি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর। তাঁর প্রতি উম্মতে মুসলিমার ভালবাসা ও সম্মান যত বাড়বে তত তাঁরা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করবে। তাই ইহুদী-খ্রিস্টানরা সর্বদা চায় মুসলিম উম্মাহর অন্তর থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ভালাবাসা দূরীভূত করে ফেলতে। বিশেষ করে তারা বলে, তাদের নবী ও মুহাম্মাদ (ছাঃ) একই। সকলেই আল্লাহর নবী যেকোন একজনের আনুগত্য করলেই যথেষ্ট। এজন্য তাঁরা বলে থাকে যে, পবিত্র কুরআনে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নামের চেয়ে ঈসা (আঃ)-এর নাম অধিকবার উল্লিখিত হয়েছে। বর্তমানে অনেক মুসলিম ভাইও তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে প্রকারান্তরে তাদেরই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন ।

সালাফে ছালেহীন-এর বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও হাদীছ না বুঝলে যে মানুষ পথভ্রষ্ট হ’তে বাধ্য তাঁর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ এই মাসআলা। অতএব আসুন, আমরা শুধুমাত্র কুরআন অনুসরণ করব না। বরং কুরআন ও হাদীছ উভয়কেই মুক্তির দিশা হিসাবে গ্রহণ করব এবং সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর আমল করব। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!

 আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রাযযাক

দাওরায়ে হাদীছ (শেষ বর্ষ), দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত।


[1]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ

[2]. তাফসীরে তাবারী, ৩/১১০, সূরা বাকারার ১৩৬ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।

[3]. মুসনাদে বাযযার, সিলসিলাতুল আছার আছ-ছাহীহাহ হা/৪৬৪, সনদ হাসান, মাজমাঊয যাওয়ায়েদ হা/১৩৯২৯, যঈফুল জামে‘ হা/২৮৭৬

[4]. তাফসীর ইবনে কাছীর-এর এই আয়াত সংশ্লিষ্ট তাফসীর দ্রঃ।

[5]. বুখারী হা/৩৪১৪, মুসলিম হা/২৩৭৩, মিশকাত হা/৫৭০৯

[6]. বুখারী হা/২৪১১

[7]. বুখারী হা/২৪১২

[8]. মুসলিম হা/১৬২, মিশকাত হা/৫৮৬৩

[9]. শারহুস সুন্নাহ, ১৩/২০৪।

[10]. ফাতহুল বারী, হা/৩১৫৬, ১০/২০৫।

[11]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৫/৪৯১।

[12]. বুখারী হা/৩৪১৫; মুসলিম হা/২৩৭৩ ‘মুসা (আঃ)-এর ফযীলত’ অধ্যায়।

[13]. বুখারী হা/৩৩৯৫, মুসলিম হা/২৩৭৬।

[14]. শরহে আবু দাউদ, ২৬/৪৫২, ‘নবীদের মধ্যে প্রাধান্য দেয়া’ অনুচ্ছেদ দ্রঃ।

[15]. ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ১৫/১৩২, ইমাম সৈয়ূতী, শরহে মুসলিম ৫/৩৬০, হা/২৩৭৬-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ।

[16]. মুসলিম, ‘ইবরাহীম (আঃ)-এর ফযীলত’ অধ্যায়।

[17]. বুখারী ‘নবুঅতের আলামত’ অধ্যায়, হা/৩৪১৫, তিরমিযী হা/২১৮৮।

[18]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৪৪।

[19]. ইবনু মাজাহ হা/৪৩০৮, তিরমিযী হা/৩৬১৫।

[20]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ১৭/৪৮৩।

[21]. সিলসিলা যইফাহ হা/৫৬৭৮।

[22]. ইমাম শাফেঈ, কিতাবুর রিসালাহ ১/১৩।

[23]. আল-ফাতাওয়া আল-হাদীছিয়াহ ১/১৩৬, দারুল ফিকর।

[24]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ, দারুল ওয়াফা, ১/১৪৫।

[25]. ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ, আল-ফুরকান বায়না আওলিয়াইর রহমান ও আওলিইয়াইশ শায়তান, তাহক্বীক ও টীকা : আলী বিন নায়িফ আশ-শুহুদ, ‘উলুল আযমদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাম্মাদ (ছাঃ)’ অধ্যায়, ১/৮৩। 

[26]. শরহে নববী, ১৫/৩৭, ‘আমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব’ অধ্যায়।

[27]. ইমাম নববীর, মিনহাজুত তালেবীল-এর শারহ তুহফাতুল মুহতাজ-এর ভূমিকা, ১/১০০।

[28]. সূরা নাহল ১২৩ নং আয়াতের তাফসীর।

[29]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১/১৭৯।






হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
বিবাহের গুরুত্ব ও পদ্ধতি - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৪র্থ কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
অনুমতি গ্রহণের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হকের পথে বাধা : মুমিনের করণীয় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (শেষ কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
ইবাদতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
জুম‘আর কতিপয় বিধান - মুহাম্মাদ আকমাল হুসাইন
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
সার্ভকোয়াল মডেলের আলোকে শিক্ষা পরিষেবার গুণমান নির্ণয় - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
দাওয়াত ও সংগঠন (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
শিক্ষকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, শিশুর পাঠদান পদ্ধতি ও শিখনফল নির্ণয় - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.