পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬

[হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ (৬৯১-৭৫১হিঃ/১২৯২-১৩৫০খৃঃ) হিজরী ৭ম শতকে সিরিয়ার দামেশকে জন্মগ্রহণকারী ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর একান্ত শিষ্য এই মহামনীষী একজন কালোত্তীর্ণ মুজাদ্দিদ ছিলেন। ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ নিয়ে তাঁর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুপ্রসিদ্ধ একটি গ্রন্থ হ’ল ‘ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ‘আন রবিবল ‘আলামীন’ (আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাক্ষরকারী তথা মুফতী ও বিচারকদের জন্য জ্ঞাতব্য)। একাধিক খন্ডে প্রকাশিত এই গ্রন্থে তিনি ফৎওয়া এবং ইজতিহাদের ক্ষেত্রে সালাফে ছালেহীনের মানহাজ বা নীতিমালা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন এবং ফিক্হ ও উছূলে ফিক্হের খুঁটিনাটি বিষয়াদি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেছেন। এর দ্বিতীয় খন্ডে তিনি দ্বীন অনুসরণে এবং ফৎওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে তাক্বলীদ তথা অন্ধ অনুসরণের কঠোর প্রতিবাদ করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে ৮১টি দলীল উপস্থাপন করেছেন। ইলমী গুরুত্ব বিবেচনায় উক্ত দলীলসমূহ বাংলাভাষী পাঠকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গানুবাদ পেশ করা হ’ল- সম্পাদক]।            

ইমাম চতুষ্টয় কর্তৃক তাঁদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করা

চারজন ইমামই তাঁদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন। যারা তাদের কথা বিনা দলীলে গ্রহণ করবে তাঁরা তাদের  নিন্দা করেছেন। এ সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন, مَثَلُ الَّذِي يَطْلُبُ الْعِلْمَ بِلَا حُجَّةٍ كَمَثَلِ حَاطِبِ لَيْلٍ، يَحْمِلُ حُزْمَةَ حَطَبٍ وَفِيهِ أَفْعَى تَلْدَغُهُ وَهُوَ لَا يَدْرِي ‘দলীল-প্রমাণ ছাড়া যে বিদ্যা অন্বেষণ করে সে রাতে কাঠ সংগ্রহকারীর মত। সে কাঠের বোঝা মাথায় করেছে, অথচ তার মধ্যে রয়েছে সাপ, যা তার অজান্তে তাকে দংশন করবে’।[1]

ইসমাঈল বিন ইয়াহ্ইয়া আল-মুযানী তাঁর মুখতাছার গ্রন্থের সূচনায় বলেছেন,اخْتَصَرْتُ هَذَا الْكِتَابَ مِنْ عِلْمِ الشَّافِعِيِّ، وَمِنْ مَعْنَى قَوْلِهِ لِأُقَرِّبَهُ عَلَى مَنْ أَرَادَهُ مَعَ إعْلَامِهِ نَهْيَهُ عَنْ تَقْلِيْدِهِ وَتَقْلِيْدِ غَيْرِهِ لِيَنْظُرَ فِيْهِ لِدِيْنِهِ وَيَحْتَاطَ فِيْهِ لِنَفْسِهِ- ‘আমি এ গ্রন্থটি মুহাম্মাদ বিন ইদরীস শাফেঈ (রহঃ)-এর ইলম থেকে সংক্ষিপ্ত করেছি। যাতে যে ব্যক্তি তা অনুধাবন করতে চায় সে সহজেই অনুধাবন করতে পারে। এর সাথে আমার ঘোষণা এই যে, ইমাম শাফেঈ নিজের ও অন্যের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সামনে রাখে এবং নিজের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করে’।[2]

আবুদাঊদ (রহঃ) বলেছেন, আমি ইমাম আহমাদকে বললাম,أَلَيْسَ الْأَوْزَاعِيُّ هُوَ أَتْبَعُ مِنْ مَالِكٍ؟ قَالَ لَا تُقَلِّدْ دِينَكَ أَحَدًا مِنْ هَؤُلَاءِ، مَا جَاءَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ فَخُذْ بِهِ، ثُمَّ التَّابِعِينَ  بَعْدُ الرَّجُلُ فِيهِ مُخَيَّرٌ- ‘ইমাম আওযাঈ কি ইমাম মালেকের চেয়ে বেশী অনুসরণের যোগ্য নন? তিনি বললেন, তুমি তোমার দ্বীন-ধর্মের ক্ষেত্রে এদের কারও তাক্বলীদ কর না। নবী (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে যা এসেছে তুমি তা গ্রহণ কর। তাদের পরে আগত তাবেঈদের মানা না মানার ব্যাপারে ব্যক্তি স্বাধীন’।[3]

ইমাম আহমাদ তাক্বলীদ ও ইত্তিবার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এ সম্পর্কে ইমাম আবুদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি,الِاتِّبَاعُ: أَنْ يَتَّبِعَ الرَّجُلُ مَا جَاءَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَنْ أَصْحَابِهِ، ثُمَّ هُوَ مِنْ بَعْدُ فِي التَّابِعِيْنَ مُخَيَّرٌ- ‘নবী (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম থেকে যা এসেছে তার অনুসরণ হ’ল ইত্তিবা। তাদের পরে আগত তাবেঈদের অনুসরণ করা না করায় ব্যক্তির স্বাধীনতা রয়েছে’।[4]

তিনি আরও বলেছেন,لَا تقلدني وَلَا تقلد مَالِكًا وَلَا الشَّافِعِي وَلَا الْأَوْزَاعِيّ وَلَا الثَّوْريّ وَخذ من حَيْثُ أخذُوا- ‘তুমি না আমার তাক্বলীদ করবে, না মালেকের, না ছাওরীর, না আওযাঈর। বরং তারা যেখান থেকে নিয়েছে তুমিও সেখান থেকে নাও’।[5]

তিনি আরও বলেছেন,مِنْ قِلَّةِ فِقْهِ الرَّجُلِ أَن يُقَلِّدَ دِيْنَهُ الرِّجَالَ- ‘দ্বীনের ক্ষেত্রে তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুকরণ ব্যক্তির স্বল্প বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক’।[6]

বিশর ইবনুল ওয়ালীদ বলেন, আবূ ইউসুফ বলেছেন,لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَقُولَ مَقَالَتَنَا حَتَّى يَعْلَمَ مِنْ أَيْنَ قُلْنَا- ‘কারও জন্য আমরা কোত্থেকে কথা বলেছি তা না জানা পর্যন্ত আমাদের কথার উদ্ধৃতি দেওয়া জায়েয হবে না’।[7]

ইমাম মালেক সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ‘ইবরাহীম নাখঈর বক্তব্যের কারণে যে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর উক্তি পরিত্যাগ করবে তাকে তওবা করাতে হবে? তাহ’লে ইবরাহীম-এর চেয়ে কম বা তার মতো মর্যাদাসম্পন্ন কারো কথায় যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বক্তব্য পরিহার করে তাহলে তার অবস্থা কি হবে?

জা‘ফর আল-ফিরইয়াবী বলেছেন, ‘আহমাদ বিন ইবরাহীম আদ-দাওরাক্বী আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হায়ছাম বিন জামীল আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,قلت لمالك بن أنس يا أبا عبد الله إن عندنا قوما وضعوا كتبا يقول أحدهم حدثنا فلان عن فلان عن عمر بن الخطاب بكذا وحدثنا فلان عن إبراهيم بكذا ونأخذ بقول إبراهيم قال مالك صح عندهم قول عمر قلت إنما هي رواية كما صح عندهم قول إبراهيم فقال مالك هؤلاء يستتابون ‘আমি মালেক বিন আনাসকে বললাম, হে আবূ আব্দুল্লাহ! আমাদের দিকে কিছু লোক আছে যারা বই লিখেছে। তাদের একজন বলছে, আমাদের নিকট অমুক অমুক থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব থেকে এই এই কথা বর্ণনা করেছেন। আবার আমাদের নিকট অমুক ইবরাহীম নাখঈ থেকে এই এই কথা বর্ণনা করেছেন। আমরা এক্ষণে ইবরাহীমের কথা গ্রহণ করছি। মালেক বললেন, তাদের নিকটে কি ওমরের কথা ছহীহ? আমি বললাম, এতো রেওয়ায়াত, যা কিনা তাদের নিকট ইবরাহীমের কথা যেমন ছহীহ তেমনি ছহীহ। তিনি তখন বললেন, এই লোকগুলোকে তওবা করাতে হবে’।[8] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাই বেশী জ্ঞাত।

একজন মুক্বাল্লিদ ও একজন হক্বের অনুসারী দলীল-প্রমাণওয়ালার মধ্যে বাহাছ

মুক্বাল্লিদ : আমরা মুক্বাল্লিদরা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী মেনে চলি, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘যদি তোমরা  না জানো, তাহ’লে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর’ (নাহল ১৬/৪৩)। এখানে আল্লাহ তা‘আলা যার জানা নেই তাকে তার থেকে বেশী জাননেওয়ালাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন। এটা আমাদের কুরআনী দলীল। এদিকে নবী (ছাঃ) যে জানে না তাকে জাননেওয়ালার কাছে জিজ্ঞেস করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মাথা ফেটে যাওয়া ছাহাবীর হাদীছে বলেছিলেন, أَلَا سَأَلُوا إِذْ لَمْ يَعْلَمُوا فَإِنَّمَا شِفَاءُ الْعِيِّ السُّؤَالُ ‘যখন তাদের জানা ছিল না তখন জিজ্ঞেস করল না কেন? অপারগ-অক্ষমের নিরাময়তা তো প্রশ্নের মধ্যে নিহিত’।[9]

এক মজুর তার মালিকের স্ত্রীর সাথে যেনা করেছিল। ঐ মজুরের পিতা বলেন, ‘আমি বিদ্বানদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে জানাল যে, আমার ছেলের উপর ১০০ বেত্রাঘাত ও এক বছরের নির্বাসন এবং ঐ লোকের স্ত্রীর উপর রজম কার্যকর হবে’।[10]

এই জিজ্ঞাসাকারীকে কিন্তু তার থেকে বেশী জাননেওয়ালার তাক্বলীদ করতে নিষেধ করা হয়নি। বিশ্বজ্ঞানী ওমরকে দেখুন, তিনি আবূবকরের তাক্বলীদ করেছেন। এ বিষয়ে শু‘বাহ আছেম আল-আহওয়াল থেকে, তিনি শা‘বী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূবকর (রাঃ) কালালা[11] সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি কালালা সম্পর্কে ফয়ছালা দিচ্ছি। যদি তা সঠিক হয় তাহ’লে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যদি বেঠিক হয় তাহ’লে তা আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে। আল্লাহ এ বিষয়ে দোষমুক্ত। কালালা সেই, যার সন্তান ও পিতা নেই। তার কথা শুনে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন, ‘আমি আবূবকরের বিরোধিতা করতে আল্লাহর খাতিরে লজ্জা বোধ করি’।[12]

ওমর থেকে ছহীহসূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,رَأْيُنَا لِرَأْيِكَ تَبَعٌ ‘আমাদের মত আপনার মতের অনুগামী’।[13]

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকেও ছহীহভাবে বর্ণিত আছে, ‘তিনি ওমরের কথা গ্রহণ করতেন’।[14]

মাসরূক সূত্রে শা‘বী বলেছেন, ‘নবী (ছাঃ)-এর ছয় জন ছাহাবী জনগণের মাঝে ফৎওয়া দিতেন। তারা হ’লেন ইবনু মাসউদ, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, আলী, যায়েদ বিন ছাবিত, উবাই ইবনু কা‘ব ও আবূ মূসা আশ‘আরী। এদের মধ্যে আবার তিনজন নিজেদের কথা অন্য তিনজনের কথার সমর্থনে পরিহার করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ ওমরের কথার সমর্থনে নিজের কথা ত্যাগ করতেন; আবূ মূসা আলীর কথার সমর্থনে নিজের কথা ত্যাগ করতেন; যায়েদ উবাই ইবনু কা‘বের কথার সমর্থনে নিজের কথা ত্যাগ করতেন।[15]

জুনদুব বলেছেন, ‘আমি অন্য কোনো মানুষের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইবনু মাস‘ঊদের কথা বর্জনের পক্ষে নই’।[16]

নবী (ছাঃ) বলছেন,إِنَّ مُعَاذًا، قَدْ سَنَّ لَكُمْ سُنَّةً، كَذَلِكَ فَافْعَلُوا- ‘মু‘আয তোমাদের জন্য একটি সুন্নাত (রীতি) জারি করেছে। তোমরাও সেইভাবে কর’।[17] তিনি ফরয ছালাতে ইমামের সাথে পরে যোগ দেন এবং ইমামের সাথে প্রাপ্ত ছালাত আদায়ের পর ছুটে যাওয়া রাক‘আত/ছালাত আদায় করেন। ইতিপূর্বে কিন্তু ছাহাবীগণ ইমামের থেকে ছুটে যাওয়া রাক‘আতগুলো নিজেদের মত আগে আদায় করে তারপর ইমামের সাথে যোগ দিতেন।

মুক্বাল্লিদ বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্য করতে এবং তাঁর রাসূল ও উলুল আমরের আনুগত্য করতে আদেশ দিয়েছেন। উলুল আমর হ’লেন আলেমগণ বা আলেম ও আমীরগণ। আর তাদের আনুগত্য অর্থ তাদের দেয়া ফৎওয়ার তাক্বলীদ তথা নির্বিচারে মেনে নেওয়া। কেননা যদি তাদের তাক্বলীদ নাই শুদ্ধ হবে তাহ’লে সেক্ষেত্রে এমন কোনো আনুগত্য থাকছে না, যা তাদের সাথে খাছভাবে যুক্ত (এমতাবস্থায় আল্লাহর আদেশই অকার্যকর হয়ে পড়বে)।

আল্লাহ বলেছেন,وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম দিককার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে নিষ্ঠার সাথে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’ (তওবা ৯/১০০)

তাদের এই অনুসরণই তাদের তাক্বলীদ। সুতরাং তাক্বলীদকারী তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। এ সম্পর্কে একটি মশহুর হাদীছ উলেলখযোগ্য أَصْحَابِيْ كَالنُّجُوْمِ، بِأَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ- ‘আমার ছাহাবীগণ নক্ষত্ররাজিতুল্য। তাদের যে কারোরই তোমরা অনুসরণ করবে হেদায়াত পাবে’।[18]

এদিকে ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কারও পায়রবী করতে চায় তাহ’লে সে যেন যারা মারা গেছে তাদের অনুসরণ করে। কেননা জীবিতদের বেলায় ফিৎনা-ফাসাদ থেকে নিঃশঙ্ক হওয়া যায় না। এই মারা যাওয়ারা হ’লেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ। তারা এই উম্মাহর মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্বচ্ছ অন্তরের অধিকারী, সবচেয়ে গভীর জ্ঞানী, সবচেয়ে কম বাহুল্যতাকারী। তারা এমন একটি দল, যাদেরকে আল্লাহ তার নবীর সাহচর্যের জন্য এবং তার দ্বীন কায়েমের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের হক জানতে সচেষ্ট হও এবং তাদের আদর্শ আঁকড়ে ধর। কেননা তারা ইসলামের সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।[19]

নবী (ছাঃ) থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত আছে,عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ بَعْدِي ‘তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার পরে আগত সৎপথপ্রাপ্ত হিদায়াতের দিশারী খলীফাদের সুন্নাতের অনুসরণ করবে’।[20]  তিনি আরও বলেছেন,اقْتَدُوْا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي: أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَاهْتَدُوْا بِهَدْيِ عَمَّارٍ، وَتَمَسَّكُوا بِعَهْدِ ابْنِ أُمِّ عَبْدٍ ‘তোমরা আমার পরে যে দু’জন থাকবেন তাদের অনুগমন করবে। এরা হ’লেন আবুবকর ও ওমর। তোমরা আম্মারের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং ইবনু উম্মে আব্দ (ইবনু মাসউদ)-এর অছিয়ত বা নির্দেশনা মেনে চলবে’।[21]

(চলবে)


[1]বায়হাক্বী, মানাকিবুশ শাফে‘ঈ ২/১৪৩; আল-মাদখাল, ক্রমিক ২৬৩। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী হাতেম, আদাবুশ শাফেঈ ওয়া মানাকিবুহ, পৃঃ ১০০; আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আউলিয়া ৯/১২৫।

[2]. মুখতাছারুল মুযানী, আল-হাবীর আল-কাবীরসহ, (প্রকাশনায় : দারুল ফিকর) ১/৪।

[3]মাসায়েলে আবীদাঊদ, পৃঃ ২৭৭, ক্রমিক ১৭৯৩; ফুল্লানী, ঈক্বাযু হিমামি উলিল আবছার, পৃঃ ১১৩।

[4]মাসায়েলে আবী দাঊদ পৃঃ ২৭৬, ক্রমিক ১৭৯৩; ঈক্বাযু হিমামি উলিল আবছার, পৃঃ ১১৩।  

[5]ঈক্বাযু হিমামি উলিল আবছার, পৃঃ ১১৩; শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী, আন-ইনছাফ, পৃঃ ১০৫; আবূ শামা মাক্বদেসী, মুখতাছারুল মুআম্মাল ফির-রাদ্দি আলাল আমরিল আউয়াল, পৃঃ ৬১

[6]ঈক্বাযু হিমামি উলিল আবছার, পৃঃ ১১৩।

[7]বায়হাক্বী, আল-মাদখাল, ক্রমিক ২৬২।

[8]ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ৬/১২০-২১, তিনি ফিরয়াবী পর্যন্ত সনদ বর্ণনা করেছেন।

[9]. ইবনু মাজাহ হা/৫৭২; দারাকুৎনী ১/১৯০-১৯১; আবূ নু‘আইম, আল-হিলয়াহ ৩/৩১৭-৩১৮; আবূ ইয়া‘লা হা/২৪২০; হাকেম ১/১৭৮; বায়হাক্বী, আল-খিলাফিয়াত ২/৪৯৩, ক্রমিক ৮৩৬; খত্বীব বাগদাদী, আল-ফক্বীহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ ২/৬৮; দারেমী ১/১৯২; আহমাদ ১/৩৩০; বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর ৮/২৮৮; আবূদাঊদ হা/৩৩৭; বায়হাক্বী ১/২২৭।

[10]. বুখারী হা/৬৮২৭, ৬৮২৮।  

[11]কালালা ঐ নারী ও পুরুষদেরকে বলা হয়, যাদের পিতা ও সন্তান জীবিত নেই। তারা মারা গেলে তাদের মীরাছ কিভাবে বণ্টিত হবে তা সূরা নিসার শেষ আয়াতে বলা হয়েছে।-অনুবাদক।

[12]ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ৬/১২৭; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/১৯১৯১, ১০/৩০৪; ইবনু আবী শায়বা ১১/৪১৫-৪১৬; সাঈদ বিন মানছূর ক্রমিক ৫৯১, ৩/১১৮৫; দারেমী ২/৩৬৫; ইবনু জারীর ৬/২৮৩-২৮৪; বায়হাক্বী ৬/২২৪।  

[13]. বুখারী হা/৭২২১; ফাৎহুল বারী ১৩/২১০; সুনানে বায়হাক্বী ৮/৩৩৫; জামেউ বায়ানিল ইলম ক্রমিক ১৮২৯।  

[14]তাবারানী হা/৮৮০২, ৮৮০৬; ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ৬/৬১, সনদ ছহীহ।

[15]ত্বাবারানী হা/৮৫১৩; ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ৬/৬৭; ফাসাবী, আল-মা‘রিফাতু ওয়াত-তারীখ ১/৪৪৪-৪৪৫; ইবনু সা‘দ ২/৩৫১; বায়হাক্বী, আল-মাদখাল, ক্রমিক ১৪৫।   

[16]ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ৬/৬৭।   

[17]. এটি একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশবিশেষ। আহমাদ ৫/২৪৬; আবূদাঊদ হা/৫০৬; হাকেম ২/২৭৪; বায়হাক্বী ২/২৯৬, সনদ মুনক্বাত্বি‘।    

[18]. ইবনু আববাস, জাবের, আবূ হুরায়রা, ইবনু ওমর, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী থেকে হাদীছটি বর্ণিত আছে। বায়হাকী, আল-মাদখাল হা/১৫২; খতীব বাগদাদী, আল-কিফায়া, ক্রমিক ৪৮; দায়লামী, আল-ফিরদাউস ৪/৭৫। বায়হাকী হাদীছটির সনদসমূহ আলোচনা শেষে বলেছেন, এ’টি একটি মশহুর হাদীছ, কিন্তু এর সবগুলো সনদ দুর্বল। যার একটিও প্রমাণিত নয়’। বিস্তারিত দেখুন : শায়খ মাশহূর হাসান, তাহক্বীক্ব ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ৪/৪৭৪-৪৭৭।   

[19]ইবনু আব্দিল বার্র, জামেউ বায়ানিল ইলম, ক্রমিক ১৮১০; হারবী, যাম্মুল কালাম, পৃঃ ১৭৭; মিশকাত ১/৬৭-৬৮; হিলয়াতুল আউলিয়া ১/৩০৫, ৩০৬। বর্ণনাটির সনদে বিচ্ছিন্নতা ও দুর্বলতা রয়েছে। বিস্তারিত দেখুন : তাহক্বীক্ব ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ৪/৪৭৭।   

[20]. মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৬-১২৭; আবুদাঊদ হা/৪৬০৭, ৪/২০০-২০১; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু জারীর, জামিউল বায়ান ১০/২১২; দারেমী ১/৪৪।

[21]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৫৫০৩, মুহাক্কিক্ব শায়খ মাশহূর হাসান বলেছেন, হাদীছটি তার সাক্ষ্যসমূহের সাথে ছহীহ। দেখুন : তাহক্বীক্ব ই‘লাম ৪/৪৭৯।   





মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
ইস্রাঈলীদের মন্দ পরিণতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হজ্জের ক্ষেত্রে প্রচলিত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি - মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ
মানবাধিকার ও ইসলাম - শামসুল আলম
ধর্মীয় কাজে বাধা দানের পরিণতি - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম (৭ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা (২য় কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
রামাযানকে আমরা কিভাবে অতিবাহিত করব? - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (প্রথম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতি ও অনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে - জামালুদ্দীন বারী
আরও
আরও
.