বিদেশী সবজি
স্কোয়াশ চাষ শুরু হয়েছে নরসিংদীর মনোহরদীতে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় প্রথমবার
ভাল ফলন পেয়ে খুশি নরসিংদী জজকোর্টের অ্যাডভোকেট মুহাম্মাদ আলমগীর হোসাইন।
পেশায় একজন আইনজীবী হ’লেও নরসিংদীতে স্কোয়াশ চাষে অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন
তিনি।
উপযেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্কোয়াশ মূলত ইউরোপীয় দেশগুলোর শীতকালীন সবজি। এটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সবজি হিসাবে বিদেশীদের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। বেলে দো-আঁশ মাটিতে স্কোয়াশ চাষ ভাল হয়। বর্তমানে দেশে স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। প্রতিটি স্কোয়াশ গাছ রোপণের পর থেকে প্রায় আড়াই মাসে ১৪ থেকে ১৫টির মত ফল ধরে। এটি অনেকটা আমাদের দেশের বাঙ্গির মত দেখতে ও মিষ্টি কুমড়ার মত সবুজ। এই সবজির আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। স্কোয়াশ নরসিংদীর মনোহরদী উপযেলায় প্রথমবারের মত চাষ শুরু হ’লেও বাযারে এর চাহিদা ও দাম ভাল হয়েছে।
আলমগীর হোসাইন বলেন, গতানুগতিক কৃষি থেকে কৃষকদের দৃষ্টি পরিবর্তন করে আধুনিক এবং লাভজনক কৃষিতে প্রবর্তন করার জন্য স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হই। ‘বদলে যাও বদলে দাও’ সেলাগানে ‘সুদৃষ্টি অ্যাগ্রো’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে স্কোয়াশ রোপণ করি। এই সবজির ফলন অনেক ভাল হয়। বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৫০ দিনেই বাযারজাত করা যায়। প্রায় এক ফুট লম্বা একেকটি স্কোয়াশ দুই থেকে তিন কেজি ওযনের হয়। প্রতিটি স্কোয়াশের ওযন প্রায় এক কেজি হ’তেই স্থানীয় বাযারে বিক্রি শুরু করি। বর্তমান বাযারে স্কোয়াশ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৪০ শতাংশ জমিতে সবজির পরিচর্যা, বীজ ও সার ক্রয়সহ এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাযার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় লাভ অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাযার টাকার ফসল বিক্রি হয়েছে। বাযার ভাল থাকলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি আরো বলেন, তার ক্ষেতটি বিষমুক্ত। আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় পোকা-মাকড় থেকে রক্ষা করতে কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নি। এলাকায় এই সবজি নতুন হওয়ায় প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে আসছে অনেকেই। পরামর্শ নিচ্ছেন স্কোয়াশ চাষের। লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে স্কোয়াশ চাষে।
উপযেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আখতার বলেন, স্কোয়াশ সবজি হিসাবে খুবই ভাল এবং ফলনও খুব বেশী হয়। অল্প জায়গায় ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক একটি সবজি। স্কোয়াশ চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি কুমড়ার মত সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হ’লেও এর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ কুমড়ার চেয়ে অনেক বেশি। স্কোয়াশ শরীরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও বিটা ক্যারোটিন সরবরাহ করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হৃদরোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
চাষ পদ্ধতি :
বিদেশী সবজি স্কোয়াশ বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয়। কিন্তু আকার-আকৃতি একটা বড় মিষ্টি কুমড়ার সমান পর্যন্ত হ’তে পারে। বারি স্কোয়াশ-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।
স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। বসতবাড়ি ও চরেও এর আবাদ সম্ভব। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ লাগতে পারে।
সার প্রয়োগ ও সেচ :
চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে মাদা প্রতি গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ৬০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড ৮ গ্রাম। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম এমওপি প্রয়োগ করতে হয়। অতঃপর চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারণত স্কোয়াশে সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।
মালচিং : স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
অন্যান্য পরিচর্যা ও করণীয় :
জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। গাছের গোড়ার দিকে বের হওয়া ছোট ছোট শোষক শাখা ভেঙ্গে দিতে হবে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়। চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমন করতে হবে।
মাছি পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের উপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে।
বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়ণের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই মাস। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ বাযারজাত করা যায়।
একটি গাছে গড়ে ১২-১৬ কেজি ফল হয়। এক বিঘা জমিতে হয় প্রায় ২৪,০০০ কেজি। কোন কোন সময় ফলের সাইজের উপর মোট উৎপাদন কম-বেশি হ’তে পারে। প্রতি বিঘা জমিতে স্কোয়াশ উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৯-১০ হাযার টাকা। কিন্তু ১ বিঘা জমি থেকে মুনাফা হয় ৬০-৭০ হাযার টাকা।
\ সংকলিত \