চলনবিল অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌ চাষীরা। এ বছর সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিন শতাধিক মৌ চাষী। চলনবিলের চারপাশের উপযেলাগুলোর মাঠে কৃষকের জমির পাশে মৌমাছির খামার নিয়ে তাঁবু টাঙ্গিয়ে বসতি গড়েছে অনেক আগেই। অল্প জমিতে সরিষা ফুল ফোটায় এখনও মধু সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পরই শুরু হবে মধু সংগ্রহ। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় মৌমাছি দিয়ে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ করে একদিকে যেমন মৌ চাষীরা সচ্ছল হচ্ছেন। অন্যদিকে মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছির পরাগায়নের ফলে চাষীরা অধিক ফলন পাচ্ছেন।
দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত চলনবিল অঞ্চলে জমির সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে শত শত বেকার যুবক। দিনাজপুর সদরের যুবক মাহবূব আলম সরিষা ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য এসেছেন চলনবিলের উল্লাপাড়া উপযেলার মানিকদিয়া গ্রামের মাঠে। তিনি বলেন, আট বছর আগে সামান্য পুঁজি নিয়ে গড়ে তোলেন মৌমাছির খামার। কঠিন মনোবল আর নিজ পায়ে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞায় এখন সফল মৌ চাষী। তার খামারে ২১০টি মৌবাক্স রয়েছে। এই মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে প্রায় ২০০ মন মধু উৎপাদন করবেন। খামারে উৎপাদিত মধু সংগ্রহ করে ছয় হাযার টাকা মন দরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করেন। তিনজন শ্রমিক নিয়ে সব খরচ বাদে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হয়। সিরাজগঞ্জ মৌ চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রশীদ ২৬ বছর ধরে মৌ চাষের সাথে জড়িত। এক সময় হকারীসহ অন্যান্য কাজ করে চলতো তার সংসার। অভাবের কারণে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে চলছিল তার জীবন। মাত্র চারটি মৌ বাক্স নিয়ে শুরু করেন খামার। মৌ চাষের মাধ্যমে পরিবারের অভাব দূর করে আব্দুর রশীদ এখন সচ্ছল স্বাবলম্বী। তিনি বলেন, সরকারীভাবে মধুর বাযার নিয়ন্ত্রণে কাজ না করায় মৌ চাষীরা ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫০ টাকা দরে মধু বিক্রি করছে। অথচ একই মধু কিনে প্রক্রিয়াজাত করে দেশী-বিদেশী কোম্পানীগুলো ৭/৮ গুণ বেশী দামে দেশের বাযারে বিক্রি করছে। উত্তরাঞ্চলে কমপক্ষে ৮০০ মৌ খামারী রয়েছে। এই অঞ্চলে একটি মধু প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট স্থাপন হ’লে মৌ চাষীরা ব্যাপকভাবে লাভবান হ’ত।