ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রথমবারের মতো সঊদী আরবের মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলালিংক জাতের তরমুজও চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন সাম্মাম (তরমুজ জাতীয় হলুদ) ফল ও তরমুজ চাষ প্রকল্প দেখতে এবং নতুন ফল সম্পর্কে জানতে অনেকেই ভিড় করছেন। নতুন ফল দেখতে এসে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উন্নতমানের বীজ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচর্যার কারণেই সাম্মাম ফল ও তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।

উপযেলা মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও বাংলালিংক নামের তরমুজ চাষ করেন মুহাম্মাদ মুস্তাক্বীম ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের আমজাদ হোসাইন। চাষের প্রথম বছরই ঐ দুই কৃষক ব্যাপক সফলতা পান। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হ’লে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি থেকে যাবতীয় খরচ বাদে ৪ লাখ টাকার ওপর তাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, সাম্মাম সঊদী আরবের একটি পুষ্টিকর ও মিষ্টি জাতের ফল। এরই মধ্যে সাম্মাম ফলটি স্থানীয় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ফলের বাইরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল। বীজ বপনের দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সাম্মাম গাছে ফল আসে। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ক হয়। এ ফলটি জমির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে এ ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি।

উপযেলার আদমপুর গ্রামে মুস্তাক্বীম ও আমজাদ হোসাইন সাম্মাম ফল, তরমুজসহ নানা প্রকার সবজি আবাদ করতে ২৬ বিঘা জমি বার্ষিক চুক্তিতে ইজারা নেন। সেখানে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। ঐ কৃষি প্রকল্পের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে আড়াই বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। বাকী জমিতে তারা নানা ধরনের সবজি চাষ করেন।

আমজাদ হোসাইন জানান, সাম্মাম ফলটি মূলত সঊদী আরবের হ’লেও তারা ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে চারা করে আবাদ করেন। আড়াই বিঘা জমির মধ্যে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে বাংলা লিংক জাতের তরমুজের প্রায় ১৫ হাযার চারা রোপণ করা হয়। সাম্মাম ফল প্রতি ১০ গ্রাম বীজ দিয়ে ১৫ শতক জমি করা যায়। একইভাবে তরমুজও। প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করতে সেচ, বীজ, চারা রোপণ, জমি ইজারা, পরিচর্যা, সারসহ অন্যান্য খরচ হয় তাদের প্রায় ৭ লাখ টাকা। এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করা হয়েছে। আর ৫০ হাযার টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে তরমুজ। তিনি আশা করছেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জমির বেশির ভাগ সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি হবে। সব মিলিয়ে সাম্মাম ফল বিক্রি হবে ৪ লাখ টাকার ওপর। আর  তরমুজ বিক্রি হবে ৭ লাখ টাকারও বেশি। খরচ বাদে এ দুই ফল থেকে ৪ লাখ টাকার ওপর আয় হবে বলে তারা আশা করছেন। একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির ওপরে হয়। পাইকারি দেড় শ এবং খুচরা ১৭০ টাকায়  বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন।                       \ সংকলিত \

 






আরও
আরও
.