এ যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বহুমুখী ব্যবহার। প্রতিষ্ঠানের মাঠের চারদিকে বেড়ে উঠেছে বাহারি জাতের সবজি ও ফলের গাছ। কোনটিতে ফল এসেছে। আবার কোনগুলো ফল দেওয়ার উপযোগী হয়ে উঠেছে। এগুলো চাষ ও পরিচর্যা করছেন প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থীরা। পাবনার বেড়া উপযেলার কাশীনাথপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ মাঠে এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা গেছে। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও গবেষক ড. আমীনুদ্দীন মৃধা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

‘একজন শিক্ষার্থী একটি সমন্বিত কৃষি খামার’ নামের একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করছেন ড. আমীন। পাইলট প্রকল্পটি সফল হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বিদেশী অনেক বিশেষজ্ঞও এ ধারণাটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আমীন বলেন, দেশের অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠের চার পাশ অব্যবহৃত থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের অনেক সময় অবসর থাকে। পাঠের মাঝে তাদের মানসিক শান্তি দিতে বা সৃজনশীল কিছু করাতে পারলে তাদের দেহ-মন দু’টোই ভালো থাকবে। এ ধারণা থেকে তিনি এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। প্রকল্পটির আওতায় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীকে কাজে লাগাতে চান এ গবেষক।

ড. আমীন বলেন, তার প্রস্তাবিত প্রকল্পে সরকারীভাবে কোন বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও এ মডেল বাস্তবায়নে কোন অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। শাক-সবজির সামান্য বীজ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে আনা ফলজ বা কাঠের গাছের চারা আনলেই হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক রাস্তার পাশে এবং রেললাইনের কাছের জায়গাও এ প্রকল্পে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, উদাহরণস্বরূপ সজিনা গাছের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। এটি মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে যদি বাংলাদেশের তিন কোটিরও বেশি পরিবারের প্রতিটি ঘরে একটি বা দু’টি সজিনা গাছ লাগানো যায় তাহ’লে দেশে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ লাখ সজিনা গাছ থাকবে।

কাশীনাথপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ মাঠে ড. আমীনের পাইলট প্রকল্পটি এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কলেজের ভেতরে-বাইরে এখন যেন সবুজের মেলা। কলেজের ছাদ থেকে শুরু করে বারান্দা বা অফিস কক্ষ সব জায়গা নানা জাতের গাছ দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক সালাহুদ্দীন আহমাদ বলেন, একজন শিক্ষার্থী তার অবসর সময়ে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত হ’তে পারছেন। এতে সবজি বা ফলচাষের প্রতি তার একটা অভিজ্ঞতা ও হৃদ্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এ চর্চা তার বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে হবে। এটি তার সংসার জীবনেও কাজে লাগবে।

কলেজের দুই শিক্ষার্থীর বক্তব্য, তারা কলেজে সবজি ও ফলগাছের পরিচর্যা করেন। করোনাকালীন কলেজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে এসেও তারা বাগান ঘুরে দেখে যেতে ভুল করেননি। এতে তাদের ভালো লাগা তৈরী হওয়ায় নিজ বাড়িতেও তারা এখন সবজি ও ফল চাষ করছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ রোকসানা খানম বলেন, পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে ধারণাটি সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত হ’লে এ মডেলটি পরিপূর্ণতা লাভ করবে।






আরও
আরও
.