সেচ ছাড়া নোরিকা ধান চাষ সম্ভব
আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত নতুন জাতের ‘নোরিকা’ ধান চাষে সেচের প্রয়োজন হয় না। ব্যবহার করতে হয় না সার কিংবা কীটনাশক। যশোর যেলার ঝিকরগাছা উপযেলার কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এ জাতের ধান চাষ করেছেন। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ঝিকরগাছা উপযেলার পানিসারা ইউনিয়নের রাজাপুর বটতলা গ্রামের জনৈক চাষী পরীক্ষামূলকভাবে ১৭ শতক জমিতে প্রথম নোরিকা ধানের চাষ করেন। উপযেলা কৃষি অধিদফতর থেকে তিনি এ ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। চারার বয়স ১০ দিন হ’লে বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে জমিতে রোপণ করতে হয়। এরপর ৬০ দিনের মধ্যে ধান গাছ সম্পূর্ণ বেড়ে ধানের ফুলে দুধ আসে। এরপর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই এ ধান কাটা যায়।
ঝিকরগাছা উপযেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আফ্রিকা থেকে আমদানিকৃত নোরিকা ধান আমাদের দেশে যে কোন মৌসুমে চাষ করা সম্ভব। এ ধান চাষের ৯০ দিনের মাথায় ঘরে তোলা যায়। এ ধান চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না। সেচ, সার বা কীটনাশক ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। এ ধান জলাভূমি ও ডাঙ্গায় চাষ করা যায়। নতুন এ ধান গাছ মোটা ও লম্বা আকৃতির। তবে স্থানভেদে আকৃতিতে পরিবর্তন ঘটে। জলাভূমি বা নিচু জমিতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাছও বাড়তে থাকে। অল্প সময়ে ও বিনা পরিচর্যায় এ ধান পাওয়া যায়। তাছাড়া অন্য জাতের চেয়ে নোরিকা ধানের ফলনও বেশি। কৃষকদের বিশেষ করে দুর্যোগকবলিত অঞ্চলের চাষীদের জন্য এ ধান চাষ বেশি উপযোগী। তাই নোরিকা ধান চাষে কৃষকরা উৎসাহী হবেন বলে আশা করা যায়।
একই জমিতে মাছ ও সবজি চাষ
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপযেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ছোট্ট একটি গ্রাম পূর্ব পারুলিয়া। এ গ্রামের দরিদ্র চাষী বিশ্বজিৎ মন্ডল ও সনজিৎ মন্ডল ৬ বিঘা জমি নিয়ে দু’ভাই চাষাবাদ করেন। এর মধ্যে দু’বিঘা অন্যের কাছ থেকে বর্গা নেয়া।
২০১০ সাল থেকে পরিবেশ বান্ধব চিংড়ি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে একই ঘেরে ধান, বাগদা, গলদা ও সাদা মাছের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। বড় ভাই বিশ্বজিৎ নিজ উদ্যোগে ঘের পাড়ে ধুন্দল, বরবটি, ওল, পেঁপের চাষ করে এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। দু’ভাইয়ের এখন আর সাংসারিক প্রয়োজনীয় মাছ, তরকারি বাজার থেকে কিনতে হয় না। বরং তারা এখন তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে মাছ ও তরকারি বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখে এলাকায় ঘেরপাড়ে এ ধরনের সবুজ বেষ্টনী সম্বলিত অনুকরণীয় চাষীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাঁকরোল চাষে সচ্ছলতা
সীতাকুন্ডে কাঁকরোলের প্রচুর ফলন হয়। অতিরিক্ত ফলন হওয়ায় এখানে উৎপাদিত কাঁকরোল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানী হচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে। জানা যায়, কাঁকরোল সীতাকুন্ডের অতি প্রাচীন সবজি। সুদীর্ঘকাল ধরে চাষীরা এই ফসল উৎপাদন করে বাজারে সবজির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি নিজেদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ধরে রাখেন। উপযেলার ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে ১০নং সলিমপুর পর্যন্ত সর্বত্রই কাঁকরোলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কাঁকরোল চাষ হয় সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, পৌরসদর, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরা ইউনিয়নে। সমগ্র উপযেলার পাহাড় থেকে সাগর উপকূল পর্যন্ত সর্বত্রই কাঁকরোল চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়া রেল লাইন ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’ধারে পরিত্যক্ত সরকারী জায়গায় সারি সারি কাঁকরোলের বাগান গড়ে তুলেছেন চাষীরা। মহাদেবপুর এলাকার চাষী মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম পাহাড়ে ৪০ শতক, কৃষি জমিতে ১০ শতক ও রেল লাইনের পরিত্যক্ত ৩/৪ শতক জমিতে কাঁকরোল, করলা, বরবটি, পেঁপে, ঝিঙ্গে প্রভৃতি ফসল চাষ করেছেন। এর মধ্যে কাঁকরোল ও করলার প্রচুর ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতিকেজি কাঁকরোল পাইকারী ৪০/৪৫ টাকাতে বিক্রি করেছেন। মৌসুমের শেষদিকে প্রতি কেজি কাঁকরোল ১৩/১৪ টাকায় পাইকারী এবং খুচরা মূল্যে ১৮/২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এসব জমি থেকে মাসে প্রায় ২০ হাযার টাকার কাঁকরোল বিক্রি হয়। বারৈয়াঢালা ছোট দারোগার হাটের কৃষক মুহাম্মাদ আলী কয়েক প্রকার ফসল উৎপাদন করেন। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ করেন কাঁকরোল। তিনি বলেন, আমার আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে এই সবজি। শুধু ছোট দারোগার হাট এলাকাতেই কমপক্ষে শতাধিক চাষী কাঁকরোল বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ধরে রাখেন। কাঁকরোল চাষ সম্পর্কে সীতাকুন্ড উপযেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখানে ৭০ হেক্টর জমিতে ৪৫০ জন চাষী কাঁকরোল চাষ করেন। এবার ফলন খুবই ভাল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে উৎপাদিত কাঁকরোল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন রংয়ের (হলদে-সবুজ) হয়ে থাকে। এটি ভাল সিদ্ধ হয় এবং খুবই সুস্বাদু। হলুদ হওয়ায় এতে ক্যারোটিনের পরিমাণও বেশি। সুন্দর রং ও আকৃতির কারণে আকর্ষণীয় হওয়ায় মানুষ এই কাঁকরোল কিনতে পসন্দ করেন। ফলে চাষীরাও লাভবান হচ্ছেন।
\ সংকলিত \