স্বদেশ
আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সেনা পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির হোটেল স্যুটে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিচার্ড সি হলব্রুক। হলব্রুক আফগানিস্তানে কমব্যাট সেনা পাঠানোর জন্য দীপু মনিকে অনুরোধ করেন। তিনি তাৎক্ষণিক কোন সুস্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি এ বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে জানিয়ে দেন। এদিকে আফগানিস্তানে সৈন্য না পাঠানোর জন্য তালেবান হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর যে অসামান্য সুনাম অর্জিত হয়েছে, আফগানিস্তানে সেনা পাঠালে তা বিনষ্ট হবে। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ হিসাবে বহির্বিশ্বে যে মর্যাদা এখন লাভ করেছে, তা থেকেও ছিটকে পড়বে এবং একটি বিতর্কিত অবস্থানে উপনীত হবে।
হাইকোর্টের রায়
কাউকে ধর্মীয় পোষাক পরতে বাধ্য করা যাবে না
হাইকোর্ট ঘোষণা করেছে, পঞ্চম সংশোধনী মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের চার মূলনীতি প্রতিস্থাপিত হওয়ায় ফিরে এসেছে ’৭২-এর আদি সংবিধান। সংবিধানে চার মূলনীতি ফিরে আসায় বাংলাদেশ আজ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কাউকে কোন ধর্মীয় পোষাক পরতে বাধ্য করা যাবে না। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মুহাম্মাদ যাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গত ৪ অক্টোবর এ আদেশ দেন।
ক্ষুধার্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৬৮তম
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। আবার বৈশ্বিক ক্ষুধার সূচকে অসহায় শিশুদের অবস্থানই সবার উপরে। গত ১১ অক্টোবর প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র (আইএফপিআরআই) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। বিশ্বের ৮৪টি দেশের তিনটি নির্দেশকের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইএফপিআরআই। প্রতিবেদনে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা ক্ষুধার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ৬৮।
মিনারেল ওয়াটারের ৯৯ শতাংশই দূষিত
বাজারে জারে বিক্রি করা মিনারেল ওয়াটারের ৯৯ শতাংশই বিশুদ্ধ নয়, দূষিত। ওয়াসা ও নলকূপের সাধারণ পানি সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ না করেই জারে ও বোতলে ভরে এসব পানি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি জার পানি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৭০ টাকায় এবং টি স্টল ও হোটেলে প্রতি গ্লাস বিক্রি হয় ১ টাকায়। গত ৬ অক্টোবর মতিঝিলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বোতলজাত পানির ২৮টি কোম্পানীর সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষা করলে এটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ২৪টি কোম্পানীর পানিতে দূষণ এবং কাগজপত্রে অসঙ্গতি পাওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়।
মর্মান্তিক
বখাটে ভাইয়ের হাতে বোন খুন
কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে অবস্থিত মিনাবাজার এলাকায় ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছে ছোট বোন। জানা গেছে, মিনাবাজার এলাকার মৃত ওছমান আহমাদের ছেলে কবীর হোসেন ভাই-বোনদের নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ছোট ভাই ফরীদ আলম (২৫) বারবার বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় ও কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে। ছোট ভাইয়ের এই বখাটেপনার কারণে তাকে ফরীদকে খাবার না দিতে ছোট বোন আয়েশাকে নির্দেশ দেন বড় ভাই কবীর। তারপরও ছোট বোন আয়েশা তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে দিত। আয়েশা ভাইকে ভাল পথে ফিরে আসার জন্য ৫ অক্টোবর গালমন্দ করে। এতে সে বোনের উপর ক্ষিপ্ত হয়। পরদিন (৬ অক্টোবর) ভোররাতে আয়েশা সাহারী খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এই সুযোগে ফরীদ তাকে গলাকেটে হত্যার চেষ্টা করে। তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে ফরীদকে আটক করে। পরে আয়েশাকে হাসপাতালে নেয়া হ’লে সে মারা যায়।
ইভটিজিংয়ের শিকার ৬২ ভাগ স্কুলছাত্রী
দেশের স্কুলের ৬২ ভাগ মেয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের ৬৪টি যেলার ৫১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর শিশু অধিকার সংগঠন ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ঐ প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে যে, ৮৬ ভাগ স্কুলের দেয়াল ও ছাদ ভাঙা। ৮১ ভাগ স্কুলে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। আর ৮৯ ভাগ স্কুলেই বন্যার পানি প্রবেশ করে। জরিপে আরো দেখা যায়, ৬২ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুলে ইভটিজিংয়ের শিকার হয় অথবা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এটি মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরেপড়া, বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যার অন্যতম একটি কারণ বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়।
প্রতি মাসে পাচার হচ্ছে ৪ শত নারী ও শিশু
প্রতিমাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে পাচার হচ্ছে ৪শ’ নারী ও শিশু। চাকরির প্রলোভনসহ নানা প্রলোভনে পাচারকারীর ফাঁদে পড়ছে নারী ও শিশুরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধ মাদক বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ১২ হাযার মানুষ নিহত হয়
দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২ হাযার মানুষ নিহত হয়। এসব দুর্ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশই সংঘটিত হয় দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (এআরআই)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ দাবী করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮০ শতাংশের বয়স পাঁচ থেকে ৪৫ বছর। তাদের মৃত্যু পরিবার ও সমাজের ওপর প্রভাব পড়ে। নিহত ব্যক্তিদের ৫৩ শতাংশই পথচারী। যাদের ২১ শতাংশের বয়স ১৬ বছরের নীচে।
বিদেশ
বাবরী মসজিদের বিতর্কিত রায়; মসজিদের জমি তিন ভাগে বিভক্ত
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্মৌ বেঞ্চ বাবরী মসজিদের বিরোধপূর্ণ ২ দশমিক ৭৭ একর ভূমির মালিকানা তিনভাগে বিভক্ত করে রায় দিয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী ভূমির এক-তৃতীয়াংশের মালিক হিন্দু মহাসভা এবং অপর দুই ভাগের মালিকানা সুন্নী ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার। এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারপতি এসইউ খান, সুধীর আগারওয়াল এবং ডিভি শর্মার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩-টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারক এসইউ খান তার রায়ে বলেন, অযোধ্যার বাবরী মসজিদ মুঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে মীর বাকী নির্মাণ করেছিলেন, তবে তা রামমন্দির ধ্বংস করে নয়। আদালত এই রায় বাস্তবায়নে আগামী তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
শোক সইতে না পেরে বাবরী মসজিদ মামলার প্রথম মুসলিম বাদীর মৃত্যু : এলাহবাদ হাইকোর্টের বিতর্কিত রায়ের শোক সইতে না পেরে এ মামলার প্রথম বাদী আসলাম ভুরে বায় ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গত ২ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন। ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ রক্ষায় দু’যুগ আগে তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রথম মামলা দায়ের করেছিলেন।
বাবরী মসজিদ ধ্বংসকারী বলবীর ও যোগীন্দর ইসলাম গ্রহণ করে মসজিদ নির্মাণ করছে :
বাবরী মসজিদ ধ্বংসযজ্ঞে প্রথম কোদাল চালনাকারী যুব শিবসেনার পানিপথ শাখার সহ-সভাপতি বলবীর সিং এবং মাইকে ঘোষণা দিয়ে বাবরী মসজিদের ইটের উপর শত শত শিবসেনাকে দিয়ে প্রস্রাব করাতে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী যোগীন্দর পাল ইসলাম গ্রহণ করে যথাক্রমে মুহাম্মাদ আমের ও মুহাম্মাদ ওমর নাম ধারণ করে মসজিদ ভাঙ্গার কাফফারা স্বরূপ প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর একটি করে বিরান মসজিদ আবাদ বা নির্মাণ করছে। ২০০৪ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তারা ১৩টি বিরান ও অধিকৃত মসজিদ আবাদ করেছে।
মসজিদ ভাঙ্গার পর যোগীন্দর পাল মসজিদের কিছু ইট এনে সেগুলোর উপর প্রস্রাব করার জন্য লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে লোকজন এসে সেই ইটগুলোর উপর প্রস্রাব করে। এ ঘটনার ৪/৫ দিন পর যোগীন্দর হঠাৎ পাগল হয়ে যায়। সে শরীরের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে উলঙ্গ অবস্থায় থাকতে শুরু করে। এমনকি ঐ অবস্থায় তার মাকেও জড়িয়ে ধরত। একদিন মা-এর সাথে এরূপ জঘন্য আচরণ করার পর থেকে তার বাবা তাকে শিকলে বেঁধে রাখেন। এরপর এক ব্যক্তির পরামর্শে দিল্লীর জনৈক আলেমের নিকট গিয়ে সব বৃত্তান্ত খুলে বলেন যোগীন্দরের বাবা চৌধুরী রঘুবীর সিং এবং তার সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে বলেন। তিনি মসজিদে উপস্থিত সবাইকে তার জন্য দো‘আ করতে বললেন এবং নিজেও দো‘আ করলেন। মসজিদ থেকে বের হতেই আল্লাহর মেহেরবানীতে যোগীন্দর তার বাবার মাথা থেকে পাগড়ি টেনে নিয়ে তার উলঙ্গ শরীর ঢেকে দিল এবং সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে গেল। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার পিতা-পুত্র ঐ মাওলানার কাছে ইসলাম গ্রহণ করলেন। পিতার নাম রাখা হ’ল মুহাম্মাদ ওছমান এবং পুত্র মুহাম্মাদ ওমর। পরে তার মাও মুসলমান হয়ে যায়। এরপর তার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বলবীর ১৯৯৩ সালের ২৫ জুন বাদ যোহর ইসলাম গ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয় মুহাম্মাদ আমের। পরে তার স্ত্রী ও মা মুসলমান হন।
বাবরী মসজিদ কেন্দ্রিক ঘটনাবলী (১৫২৮-২০১০) :
১৫২৮ : অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ নির্মাণ।
১৮৫৩ : বাবরী মসজিদ নিয়ে অযোধ্যায় প্রথমবারের মতো হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সহিংসতা।
১৮৫৯ : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা মসজিদ চত্বরে বেড়া দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানের উপাসনার জন্য আলাদা এলাকা নির্ধারণ করে দেয়। বেড়ার ভেতরের দিক মুসলমানদের জন্য আর বাইরের দিক হিন্দুদের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
১৮৮৫ : এক হিন্দু পুরোহিত আদালতের কাছে মসজিদের পাশে মন্দির স্থাপনের আবেদন করেন। তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
১৯৪৯ : মসজিদের ভেতরে রামের মূর্তি স্থাপন করে হিন্দুরা উপাসনা শুরু করে। মুসলমানরা এর প্রতিবাদ করে। উভয় পক্ষ আদালতে মামলা করে। সরকার মসজিদ এলাকাকে ‘বিতর্কিত’ এলাকা ঘোষণা করে এর ফটক বন্ধ করে দেয়।
১৯৮৪ : ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ (ভিএইচপি) রামমন্দির স্থাপনের মধ্য দিয়ে রামের জন্মস্থান উদ্ধারের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’র নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৮৬ : যেলা জজ মসজিদের ফটক খুলে দিয়ে সেখানে হিন্দুদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি দেন। মুসলমানরা এর প্রতিবাদে ‘বাবরী মসজিদ অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে।
১৯৯০ : বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থকরা মসজিদের একাংশ ভেঙ্গে ফেলে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন।
১৯৯২ : বিজেপির সমর্থনে শিবসেনা দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থকরা ৬ ডিসেম্বর বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে। তাদের উসকানিতে দেশটিতে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই হাযারের বেশী লোক মারা যায়, যাদের অধিকাংশই মুসলিম।
২০০১ : মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অযোধ্যায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আবারও বাবরী মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের ঘোষণা দেয়।
২০০২ : জানুয়ারীতে বাজপেয়ী তাঁর কার্যালয়ে বাবরী মসজিদ সংক্রান্ত একটি দপ্তর খোলেন। হিন্দু ও মুসলমান নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শত্রুঘ্ন সিংকে দায়িত্ব দেন।
২০০২ : ১৫ মার্চ মন্দির নির্মাণ শুরু করা হবে বলে ঘোষণা দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যায় সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুজরাটের গোধরায় একটি ট্রেনে হামলায় ৫৮ জন নিহত হয়। ট্রেনটিতে রামমন্দিরের সমর্থকরা ছিল। ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা। এতে প্রায় দুই হাযার মানুষ নিহত হয়, যার বেশির ভাগই ছিল মুসলমান।
২০০২ : ভারতের হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মামলার শুনানি শুরু করেন।
২০০৩ : জানুয়ারীতে অযোধ্যায় রামমন্দিরের অস্তিত্ব ছিল কি না, এমন প্রশ্নে আদালতের হুকুম অনুযায়ী অযোধ্যায় প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।
২০০৩ : আগষ্টে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান, মসজিদের নীচে তাঁরা মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। মুসলমানরা ঐ দাবী নাকচ করে দেয়। হিন্দুবাদী নেতা রামচন্দ্র দাস পরমহংসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাজপেয়ী ঘোষণা দেন, তিনি ঐ নেতার রামমন্দির নির্মাণের ইচ্ছা পূরণ করবেন।
২০০৩ : সেপ্টেম্বরে বাবরী মসজিদ ধ্বংসে উসকানি দেওয়ায় সাত হিন্দু নেতাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আদেশ দেন আদালত। কিন্তু উপপ্রধানমন্ত্রী আদভানির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন করা হয়নি। অথচ ১৯৯২ সালে মসজিদ ভাঙ্গার সময় আদভানী অযোধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
২০০৪ : অক্টোবরে আদভানী আবারও ঘোষণা দেন, অযোধ্যায় রামমন্দির হবেই।
২০০৪ : আদভানীকে মসজিদ ভাঙ্গার মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া সংক্রান্ত রায় নভেম্বরে পুনরায় পর্যালোচনার আদেশ দেন উত্তর প্রদেশের এক আদালত।
২০০৫ : জুলাইয়ে সন্দেহভাজন মুসলমান জঙ্গিরা বাবরী মসজিদ এলাকায় গাড়িবোমা হামলা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন এ সময় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে।
২০০৯ : ১৭ বছরের তদন্ত শেষে জুনে লিবারহ্যান কমিশন বাবরী মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। নভেম্বরে প্রতিবেদন পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে মসজিদ ধ্বংসের জন্য বাজপেয়ীসহ বিজেপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
২০১০ : ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দেন।
২০১০ সালের নোবেল বিজয়ীরা
শান্তিতে ২০১০ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন চীনের কারাবন্দী মানবাধিকার কর্মী লিউ জিয়াবো; সাহিত্যে পেরুর মারিও ভারগাস লোসা; পদার্থে রাশিয়ার দুই বিজ্ঞানী আন্দ্রে গিম ও কনস্টানটিন নভোসেলভ; রসায়নে জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আকিরা সুজুকি (৮০), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার পার্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানী গবেষক এইচি নেগিশি (৭৫) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রিচার্ড এফ হেক (৭৯); চিকিৎসায় টেস্টটিউব বেবির জনক রবার্ট জি এডওয়ার্ডস; অর্থনীতিতে মার্কিন নাগরিক পিটার অ্যা, ডায়মন্ড ও ডেল টি, মরটেনসন এবং ব্রিটিশ-সাইপ্রিয়ট অর্থনীতিবিদ।
চিলির খনি থেকে ৩৩ শ্রমিক জীবিত উদ্ধার; ২২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের সফল সমাপ্তি
দীর্ঘ ৬৯ দিন পর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর ৮০০ কিলোমিটার উত্তরে আতামাসা মরুভূমির কোম্পিয়াপো শহরের সালহোসে সোনা ও তামার খনি থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৩৩ শ্রমিককে। টানা প্রায় ২২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান সমাপ্ত হয় গত ১৪ অক্টোবর রাত ৯-টা ৫৫ মিনিটে শেষ শ্রমিক হিসাবে লুইস উরজুয়াকে উদ্ধারের মাধ্যমে। ১৩ অক্টোবর স্থানীয় সময় মধ্যরাতে খনি থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসাবে বের করে আনা হয় ৩১ বছর বয়সী ফ্লোরেলসিও অ্যাভালোসকে। গত ৫ আগষ্ট উক্ত খনি ধসে ৩৩ জন শ্রমিক দুই হাযার ৪১ ফুট (৬২২ মিটার) নীচে আটকা পড়েন। দুর্ঘটনার সময় তারা খনির সুড়ঙ্গপথের ৭ কিলোমিটার ভেতরে কাজ করছিলেন। বিশাল পাথরখন্ড ভেঙ্গে তাদের পথ বন্ধ হয়ে যায়। খনিশ্রমিকদের উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার ১৭ দিন পর আটকেপড়া শ্রমিকদের জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ড্রিল মেশিনে আটকে থাকা ছোট্ট একটি চিরকুট দেখার পর। তাদের উদ্ধারের জন্য একটি সুড়ঙ্গপথ খুড়ার কাজ শুরুর ৩৩ দিন পর শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হল খননকারীরা। বিশেষভাবে নির্মিত ‘ফিনিস্ক’ নামের একটি ২১ বর্গইঞ্চির খাঁচা সদৃশ্য ক্যাপসুল লিফট নামিয়ে সে পথেই একে একে তুলে আনা হয় ৩৩ শ্রমিককে। দীর্ঘ দু’মাসেরও বেশী সময় অপর একটি সুড়ঙ্গপথে তাদের খাবার, ওষুধপপত্র সহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাঠানো হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী এই উদ্ধার অভিযান ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বলা হচ্ছে, ১৯৬৯ সালের প্রথম চন্দ্রাভিযান শেষে অ্যাপোলো-১১ ফিরে আসার পর আর কোনো ঘটনা বিশ্ব মিডিয়াতে এমন আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই হাযার সাংবাদিক এই অভিযানের খবর সংগ্রহের জন্য চিলিতে জড়ো হয়েছিলেন। টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি এই উদ্ধার অভিযান সম্প্রচার করার ফলে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক অবাক বিস্ময়ে এই উদ্ধার অভিযান প্রত্যক্ষ করে। চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা সস্ত্রীক এই অভিযান তদারকি করেন।
সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে বেড়া তৈরির অনুমতি পেল ভারত
ভারতের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হ’ল বাংলাদেশকে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিল ভারত। প্রথমে বিডিআর এ কাজে বাধা দিলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে কেবল তারা সরেই আসেনি, মাপজোক করে স্থাপনা তৈরির জন্য বিএসএফকে জায়গাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। এর আগে বিএসএফ বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলেও এই প্রথম সীমান্তে বেআইনি স্থাপনা নির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিডিআর আনুষ্ঠানিক সম্মতি দিল।
এছাড়া সীমান্তের ৪৬টি পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূমিতে ঢুকে বেড়া নির্মাণ করার আবদার তুলেছে ভারত। এজন্য বাংলাদেশের ওয়ার্কিং টিম সরেজমিন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে। কমিটি ৬টি শর্তসাপেক্ষে সীমান্তের ১২টি পয়েন্টে বাংলাদেশের জমিতে বেড়া নির্মাণ করতে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শর্তগুলো হ’ল, তিন বিঘা করিডোর ইস্যু নিষ্পত্তি করা, ৩২টি ফেনসিডিল কারখানা সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া, ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধায় পর্যটন সুবিধা দেয়া, দুই দেশের যৌথ সিদ্ধান্তে লক্ষ্মীপুরে নির্মিত ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ১৫০ গজের মধ্যে দুই দেশের কেউ কোন স্থাপনা তৈরী করতে পারে না।