বসরা শহরের এক গৃহস্থের দুই পুত্র ছিল। বড়জনের নাম হাতেম ও ছোটজনের নাম কাযেম। একবার ব্যবসায় তারা কিছু বাড়তি অর্থ লাভ করল এবং মনে করল বিদেশে সফরে যাবে। দিন তারিখ দেখে তারা দু’ভাই এক সাথে বেরিয়ে পড়ল। তিনদিন সফরের পর তারা এক মুসাফির খানায় আশ্রয় নিল। সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে আবার যাত্রা শুরু করল।

কিছু দূর যেতেই তারা নদীতে একটি পুটলী ভেসে যেতে দেখে উপরে তুলল। খুলে দেখে তারা অবাক হয়ে গেল। পুটলীতে এক হাযার সোনার মোহর ও দু’টি হীরকখন্ড পেয়ে তারা আল্লাহর প্রশংসা করল। স্বর্ণমুদ্রা ও হীরকখন্ড নিজেরা সমানভাবে ভাগ করে নিল। এরপর আবার চলতে শুরু করল। কিন্তু সঙ্গে এত অর্থ ও মূল্যবান হীরক নিয়ে চলা তারা নিরাপদ মনে করল না। তাই দু’জনে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিল যে, ছোট ভাই এগুলোকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। আর বড় ভাই কিসরা নগরে যাবে। হাতেম বলল, এগুলি নিয়ে তুমি বাড়ি গিয়ে তোমার ভাবীর হাতে দিবে। ছোট ভাই কাযেম বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের দেওয়া স্বর্ণমুদ্রাগুলি ভাবীর কাছে দিল। কিন্তু হীরকখন্ড না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিল। এ সম্পর্কে হাতেমের স্ত্রী কিছুই জানতে পারল না।

এদিকে বড় ভাই হাতেম নানা দেশ ঘুরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে টাকা-পয়সা ও মালামাল নিয়ে তিন বছর পর দেশে ফিরে এলো। কয়েকদিন পর সে স্ত্রীকে সোনার মোহর ও হীরকখন্ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল যে, কাযেম হীরকখন্ড দেয়নি। তখন হাতেম কাযেমকে জিজ্ঞেস করল, হীরক খন্ডের খবর কি? তা তুমি তোমার ভাবীর হাতে দাওনি। কাযেম কসম করে বলল, ভাই আপনার স্ত্রী মিথ্যা বলেছে। কাযেমের কথা বিশ্বাস করে হাতেম তার স্ত্রীকে তিরস্কার করল। হাতেমের স্ত্রী গালাগাল শুনে অপমানিত হয়ে স্বামীকে না জানিয়ে উক্ত শহরের কাযীর কাছে গেল এবং আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করে সুবিচার প্রার্থনা করল।

কাযী হাতেম ও কাযেমকে ডেকে আনলেন এবং তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়ে সত্য কথা বলার জন্য অনুরোধ করলেন। কাযী কাযেমকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যখন হীরকখন্ড হাতেমের স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর কর তখন কোন সাক্ষী ছিল কি? সে বলল, হ্যাঁ, দুই জন সাক্ষী ছিল।

কাযী সাক্ষীদেরকে আদালতে হাযির করার হুকুম দিলেন। কাযেম গিয়ে দু’জন লোককে কিছু অর্থ দিয়ে বলল, ভাই তোমরা আমার সঙ্গে আস। কাযীর দরবারে তোমরা সাক্ষ্য দিবে যে, তিনবছর পূর্বে অমুক দিন তোমাদের উপস্থিতিতে আমি আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে পাঁচশত সোনার মোহর ও একখন্ড হীরক দিয়েছিলাম। অর্থের বিনিময়ে সে দুই সাক্ষী কাযীর কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দিল।

কাযী সাক্ষীর পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিলেন যে, হাতেমের স্ত্রীর কাছে হীরকখন্ড রয়েছে। হাতেমকে হুকুম দিলেন তার স্ত্রীর কাছে থেকে তা উদ্ধার করতে।

এমতাবস্থায় হাতেমের স্ত্রী নিরুপায় হয়ে বাদশাহর দরবারে গিয়ে কান্নাকাটি করে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়ে সুবিচার চাইল। বাদশাহ বললেন, তুমি কাযীর কাছে গেলে না কেন? সে বলল, হুজুর গিয়েছিলাম। কিন্তু সুবিচার পাইনি। এখন আপনার কাছেও সুবিচার না পেলে স্বামীর ঘরে থাকা আমার দায় হয়ে পড়বে।

বাদশাহ হাতেম, কাযেম ও সাক্ষীদ্বয়কে দরবারে ডাকলেন এবং তাদের কাছে সবকিছু বিস্তারিত জানলেন। কাযেম ও তার সাক্ষীরা আগের মতই সাক্ষ্য দিল।

বাদশাহ হাতেম, কাযেম, দু’সাক্ষী ও হাতেমের স্ত্রীকে জেল-হাজতে ঢুকালেন। তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সেল বা কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করলেন। আর প্রত্যেককে কিছু মোম দিয়ে হুকুম দিলেন, হীরকখন্ডের আকৃতি তৈরী কর, তাহ’লে ছেড়ে দেওয়া হবে।

হাতেম ও কাযেম দুই ভাই মোম দ্বারা অভিন্ন আকৃতির হীরক তৈরী করল। আর সাক্ষীদ্বয়ের হীরকের আকৃতি হ’ল ভিন্ন ভিন্ন। এদিকে হাতেমের স্ত্রী কিছুই তৈরী করতে পারল না। বাদশাহ সবাইকে দরবারে ডেকে মোম নির্মিত হীরকের আকৃতি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন। দুই ভাই ও সাক্ষীদ্বয়ের তৈরীকৃত হীরক আকৃতি বাদশাহর সম্মুখে পেশ করা হ’ল। দরবারের সকলেই দেখল যে, দুই ভাইয়ের হীরকের আকৃতি এক। কিন্তু সাক্ষীদের হীরকের আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন।

তখন বাদশাহ ও দরবারের সকলেই বুঝতে পারলেন যে, সাক্ষীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। তারা হীরক আদৌ দেখেনি। তাই তাদের তৈরী হীরকের আকৃতিতে মিল নেই। তখন বাদশাহ বললেন, হাতেমের স্ত্রীর তৈরী হীরক আকৃতি কোথায়? হাতেমের স্ত্রী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, হুজুর। আমি তো হীরক কখনই দেখিনি। আমি কিভাবে হীরক আকৃতি তৈরী করব? তাই আমি কিছুই তৈরী করতে পারিনি। বাদশাহ এবং দরবারে উপস্থিত সকলেই বুঝলেন যে, ছোট ভাই কাযেমই হীরকখন্ড রেখে দিয়েছে এবং অর্থের বিনিময়ে দু’জন মিথ্যা সাক্ষীও হাযির করেছে।

কাযেম হীরকখন্ডদ্বয় দরবারে হাযির করল এবং দুই হাতে দুই কান ধরে কসম করল যে, আর কোন দিন মিথ্যা কথা বলব না। আমার অন্যায় হয়েছে, আমাকে ক্ষমা করুন। বাদশাহ তাকে মাফ করে দিলেন।

বাদশাহ দু’ভাইকে দু’খন্ড হীরক দিয়ে বিদায় দিলেন। আর হাতেমের স্ত্রীকে তার সততা ও সাহসের জন্য পুরস্কৃত করলেন। আর সাক্ষীদ্বয়কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যথাযোগ্য শাস্তি দিয়ে কয়েদখানায় পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর কাযীকে ডেকে বললেন, আপনি সবদিক জেনে-শুনে বুদ্ধি-বিবেচনা করে বিচার করলেন না কেন? সত্য ঘটনা না জেনেই সেই মহিলার কাছ থেকে হীরকখন্ড আদায় করতে বললেন। এরূপ রায় দেওয়া আপনার উচিত হয়নি।

শহীদুল্লাহ (ফারূক)

পিয়ারপুর, মোহনপুর, রাজশাহী। 






হক্বের সন্ধান পেলাম যেভাবে - -মুহাম্মাদ আবু বকর ছিদ্দীক, টংগী, গাযীপুর।
দরদিনী - মুহাম্মাদ আতাউর রহমান
বাদশাহর বিচার - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
পাপী ব্যক্তি তার পাপের শাস্তি পাবে - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
উত্তম আচরণের মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তন করা যায় - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মৃত্যুর মুখে অপূর্ব ভ্রাতৃত্ব
সামাজিক কুরবানী - জাবির হোসাইন
মৃত্যু যাত্রায় কেউ আমাদের সাথী হবে কি? - আনাস বিন আমানুল্লাহ, নওদাপাড়া, রাজশাহী
সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় - আত-তাহরীক ডেস্ক
বিপদের সময় আল্লাহর নিকট সুপারিশ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বুদ্ধিমান বালক - মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
যেমন পিতা তেমনি সন্তান - হাফেয মুহাম্মাদ সাইফুয্যামান, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব
আরও
আরও
.