শায়খ আবূ ইসহাক আল-হুইনী তার এক বন্ধুর বাড়িতে যান। তখন তার বন্ধু খুবই বিষাদগ্রস্ত ছিলেন। তিনি তার দুঃখের কারণ জানতে চাইলে তার বন্ধু ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, শায়খ! আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমি বিগত কয়েক দিন যাবৎ তার পাশে আছি। শায়খ কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, আল্লাহ তাকে দ্রুত শিফা দান করুন। কিন্তু তুমি তো তার সাথেই আছ, তাহ’লে তোমার এত কান্নাকাটির কারণ কী?

তিনি বললেন, আপনি যদি আমার স্ত্রী সম্পর্কে জানতেন, তাহ’লে আমাকে দোষারোপ করতেন না। বরং আমার কান্নার কারণ বুঝতে পারতেন। তাহ’লে শুনুন আমার গল্প।-

তিনি বললেন, আমি খুবই সাধারণ একটা চাকুরী করি। আমার উপার্জন খুবই সামান্য। কোন রকমে জীবন চলে যায়। এমতাবস্থায় আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন এক ব্যক্তি আমার সততা ও সচ্চরিত্রতা দেখে মুগ্ধ হয়ে তার মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দেন। আমার শ্বশুর ছিলেন একজন ধনী ব্যক্তি। বিয়ের পর বুঝতে পারলাম, আমার স্ত্রী সম্ভ্রান্ত বংশের একজন বুদ্ধিমতী ও পুণ্যশীলা নারী। তার কারণে আমার জীবন প্রশান্তির বাগানে পরিণত হয়েছে। আমি সত্যিই একজন সৌভাগ্যবান পুরুষ।

একদিন আমার শ্বশুর আমার নিকটে এসে বললেন, আল্লাহকে ভয় কর! তোমার স্ত্রীর জন্য কিছু রুটি, পনির, ফালাফেল (ঝাল ডাল বড়া) এবং মটরশুটি কিনে নিয়ে যাও। তাকে বেশী মাছ-গোশত খেতে দিও না। সে মাছ-গোশত ও ফলমূল খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছে।

তার কথায় আমি হতবাক হয়ে গেলাম! আমি তো আমার স্ত্রীকে মাসে একবারও গোশত খেতে দিতে পারতাম না! আমি যখন আমার স্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলাম, তখন আমি এমন এক সত্য জানলাম, যা আমার হৃদয় কাঁপিয়ে দিল। তার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসায় আমার চোখে পানি চলে এলো।

আমার স্ত্রী যখন তার বাবার বাড়ি যায়, সেখানে তাকে সুস্বাদু গোশত, চর্বিযুক্ত খাবার ও দামী ফলমূল খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু সে বলে, আমি এগুলো আর খেতে চাই না। এসব খেতে খেতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি। আমার স্বামী আমাকে প্রচুর মাছ-গোশত খাওয়ান। তাই আমি এখন শুধু পনির, ফালাফেল ও শাক-সবজি খেতে চাই।

কিন্তু বাস্তবে আমাদের ঘরে মাছ মাঝে মাঝে আসলেও গোশত মাসে একবারও জুটতো না! আমাদের খাবার ছিল পনির, ফালাফেল, শাক-সবজি আর মটরশুটি। হয়তো এজন্য সে বাবার বাড়িতে মাছ-গোশত খেয়ে অভ্যস্ত হ’তে চায়নি।

আমার স্ত্রী জানতো, আমি গরীব। তবুও সে কখনো আমার অভাবের কথা তার পরিবারের কাছে প্রকাশ করেনি। বরং সে এমনভাবে কথা বলত, যাতে তার পরিবার মনে করে আমি একজন স্বচ্ছল ও সম্মানিত ব্যক্তি। শুধু যাতে আমি লজ্জিত না হই, এজন্য সে ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করত! সে আমাকে সান্ত্বনা দিত এবং বলত, আল্লাহ আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা করছেন। একদিন নিশ্চয়ই এর প্রতিদান দিবেন। সে একজন সত্যিকারের ধৈর্যশীলা নেককার স্ত্রী। আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট।

অতঃপর শায়খ আবু ইসহাক আল-হুইনীর দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, শায়খ! এখন কি আপনি বুঝতে পারছেন আমি কেন কাঁদছি? তার এরকম বহু অসাধারণ গুণ রয়েছে। এটি তার মধ্যে একটি ছোট অংশ মাত্র! আপনিই বলুন, আমি কি সৌভাগ্যবান নই?

শায়খ আবু ইসহাক মাথা নীচু করে নিলেন। তার চোখে পানি এসে গেল। তিনি তার জন্য দো‘আ করলেন আর বললেন, হ্যাঁ, তিনি সত্যিকারের একজন নেককার স্ত্রী! একজন নেককার স্ত্রী জানেন, কিভাবে আল্লাহর সাথে বাণিজ্য করতে হয়। তিনি জানেন যে, স্বামীর সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম এবং তার জান্নাতের চাবি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কোন নারী যখন মৃত্যুবরণ করে এমতাবস্থায় যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিযী হা/১১৬১; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৪, সনদ যঈফ)

মূল মুহসিন জববার

অনুবাদ : নাজমুন নাঈম

শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।






আরও
আরও
.