পিতা-মাতা হ’লেন মানুষের পৃথিবীতে আসার একমাত্র মাধ্যম। একজন সন্তানকে সৎ ও আদর্শবান হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পিতা-মাতার। সন্তান আদর্শবান না হ’লে সারাজীবন পিতা-মাতাকে কষ্ট ভোগ করতে হয়। কেবল আদর্শবান সন্তান তার পিতা-মাতাকে প্রাপ্য অধিকার প্রদান করে থাকে। মাতা অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে দীর্ঘ প্রায় দশ মাস সন্তানকে পেটে ধারণ করে। তারপর সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে প্রসব করে। দুই-আড়াই বছর যাবৎ দুধ পান করিয়ে বড় করে তোলে। এখানেই শেষ নয়, তার পড়ালেখা, চাকুরী-বাকরী সব নিয়ে পিতা-মাতা চিন্তায় থাকেন। পিতা সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্তান ও তার মাতার চিকিৎসা, প্রতিপালনসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ উপার্জন করেন। এজন্য সন্তানরা পিতা-মাতার খিদমত করবে। তাদেরকে কষ্ট দিবে না, তাদের জন্য দো‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া তোমরা অন্যের উপাসনা করবে না। আর তোমরা পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমাদের সামনে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয় তাহ’লে তোমরা তাদের প্রতি বিরক্তিকর কিছু বলবে না এবং তাদের তিরস্কারকরবে না। বরং তাদের প্রতি বলবে সম্মনসূচক নম্র কথা বলবে’ (ইসরা ১৭/২৩)

জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘তোমার মায়ের খেদমত কর। কারণ তোমার মায়ের পায়ের সন্নিকটে তোমার জান্নাত’ (ছহীহ তারগীব হা/২৪৮৫; মিশকাত হা/৪৯৩৯)। বাবা-মায়ের খেদমতে বরকত রয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি গল্প আমরা এখানে উপস্থাপন করব।-

আরবে এক সময় এক সৎ লোক বাস করতেন। তার চারটি ছেলে ছিল। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হ’লেন এবং মৃত্যু শয্যায় শায়িত হ’লেন, তখন তার ছোট ছেলে স্বীয় ভাইদেরকে বলল, তোমরা পিতার খেদমত কর এবং তার অতিরিক্ত সম্পদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাক। অথবা তোমরা আমাকে তার খেদমত করার সুযোগ দাও। আমি তার খেদমতের বিনিময়ে বেশী সম্পদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকব।

অন্যান্য ভাইদের জন্য এটা ছিল সুযোগ। কারণ খেদমত না   করেই বাবার সম্পদ পেয়ে যাবে। এমনকি তাদের ছোট ভাই   পিতার সম্পদ থেকে খেদমতের বিনিময়ে কোন কিছু নিবে না। তাই তারা বলল, বরং তুমি পিতার খেদমত কর এবং তার সম্পদ থেকে বেশী কিছু গ্রহণ থেকে বিরত থাক। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

ছোট ভাই পিতার খেদমত করতে থাকল। লোকটি খুশি হয়ে একদিন আল্লাহর কাছে হাত তুলে ছোট ছেলের জন্য দো‘আ করে বললেন, হে আল্লাহ! আমার ছেলের সম্পদে বরকত দিয়ো। আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী তিনি একদিন মৃত্যুবরণ করলেন। ওয়াদা মাফিক ছোট ভাই সম্পদের অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকল। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পিতার খেদমতের প্রতিফল এভাবে দিলেন যে, সে একদা স্বপ্নে দেখল, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও সেখানে তুমি একশ’ দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, না।

সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। স্ত্রী বলল, যাও একশ’ দীনার নিয়ে আস, তা দিয়ে আমরা কাপড় কিনে সেলাই করব এবং বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারব। কিন্তু সে অস্বীকার করল।

পরের রাতে আবার সে স্বপ্নে দেখল। কোন ব্যক্তি যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও তুমি সেখানে দশ দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, না।

সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। তার স্ত্রী তাকে জোর দিয়ে বলল, যাও এবং তা থেকে উপকৃত হও। কিন্তু সে অস্বীকার করল। কেননা এতে বরকত নেই।

কিছুদিন পর সে আবার স্বপ্নে দেখল, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক স্থানে যাও, সেখানে তুমি এক দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, হ্যাঁ আছে।

সে সকালে সেখানে গেল এবং সত্যিই এক দীনার পেল। ফিরে আসার সময় সে বাজারে প্রবেশ করল। দেখল এক ব্যক্তি মাছ বিক্রি করছে। সে মাছের মূল্য জিজ্ঞেস করল এবং বিক্রেতার নিকট থেকে এক দীনারে দু’টি মাছ ক্রয় করে বাড়ি আসল। মাছ দু’টি কেটে-কুটে পরিস্কার করার সময় তাদের পেটে একটি করে মোতি পেল। যা অতি সুন্দর ও মূল্যবান ছিল। এত সুন্দর মোতি কম লোকেই দেখেছে। সে মোতিটি অনেক দামে বিক্রি করল। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সে ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হ’ল। সে তার পিতার খেদমতের বদলা পেয়ে গেল। সে পিতার রেখে যাওয়া সম্পদে প্রাপ্য অংশের অতিরিক্ত গ্রহণ করেনি। কিন্তু আল্লাহ তার জন্য রিযিকের দরজাসমূহ এভাবে খুলে দিলেন।

সুতরাং সন্তানের কর্তব্য পিতা-মাতার খেদমত করা এবং তাদের জন্য বেশী বেশী দো‘আ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর এক সৎ বান্দাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিবেন। তখন সে বলবে, এটা কী করে পেলাম? তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬১৭; মিশকাত হা/২৩৫৪






বিষয়সমূহ: শিষ্টাচার
আরও
আরও
.