মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
বরং বিভিন্ন কাজে তাকে অন্যের উপরে নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে যারা মানুষকে
বেশী সহযোগিতা করে তারা হচ্ছে প্রতিবেশী। বাড়ীর পার্শ্বের এই মানুষগুলিই
সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপনজন হয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ প্রতিবেশীর সাথে সব সময়
সদাচরণ করে না। বরং তাদেরকে বিভিন্ন উপায় কষ্ট দিয়ে থাকে। কিন্তু উত্তম
প্রতিবেশী সেই যে প্রতিবেশীর দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে। এখানে প্রতিবেশীর
দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ সম্পর্কে দু’টি ঘটনা উল্লেখ করা হ’ল।-
১. মালেক বিন দীনার (রহঃ)-এর একজন ইহুদী প্রতিবেশী ছিল। সে মালেক বিন দীনারের গৃহের দেওয়াল ঘেষে একটি গোসলখানা নির্মাণ করে। দেওয়ালটি ছিল ভাঙ্গা। সেই ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করত। মালেক বিন দীনার প্রতিদিন তার ঘর পরিস্কার করতেন। কিন্তু প্রতিবেশীকে তিনি কিছুই বলতেন না। প্রতিবেশীর দেওয়া কষ্টে দীর্ঘদিন তিনি এভাবে ধৈর্যধারণ করে থাকলেন। এই কষ্টে অতিশয় ধৈর্যধারণের কারণে ঐ প্রতিবেশীর কাছে খারাপ লাগল। সে বলল, হে মালেক! আমি তোমাকে এই দীর্ঘ কষ্ট দিয়েছি, অথচ তুমি ধৈর্যধারণ করেছ। আর তুমি আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলনি। মালেক (রহঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ- ‘জিবরীল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি আমি মনে করলাম যে, তিনি প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন’ (বুখারী হা/৬০১৫; মুসলিম হা/২৬২৪-২৫; আবূদাউদ হা/৫১৫৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৭৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০১)। একথা শুনে ইহুদী লজ্জিত হ’ল এবং ইসলাম গ্রহণ করল (ইমাম গাযালী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ২/২১৩ পৃঃ)।
২. সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তসতরী (রহঃ)-এর একজন অগ্নিপূজক প্রতিবেশী ছিল। সে সাহল (রহঃ)-এর বাড়ীর উপর তলায় থাকত। সেই অগ্নিপূজক তার মেঝেতে বড় ছিদ্র করে। সেই ছিদ্র পথে সে সাহল (রহঃ)-এর গৃহে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলত। সাহল (রহঃ) ঐ ছিদ্রের নীচে একটি গামলা বা পাত্র রাখতেন। যার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পতিত হ’ত। অতঃপর রাত্রে তিনি পাত্রটি নিয়ে ময়লা-আবর্জনা দূরে ফেলে আসতেন। এভাবে দীর্ঘদিন সাহল (রহঃ) ঐ বাড়ীতে অবস্থান করেন। অবশেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সাহল (রহঃ) তার ঐ অগ্নিপূজক প্রতিবেশীকে ডেকে পাঠান। সে আসলে তাকে বললেন, এই ঘরের ভিতরে দেখ। সে তখন ঐ ছিদ্র ও ময়লা-আবর্জনা দেখে বলল, হে শায়খ! এসব কি?
তিনি বললেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তোমার ঘর থেকে এসব পতিত হচ্ছে। আমি দিনের বেলা তা জমা করি এবং রাত্রে তা দূরে ফেলে আসি। আজকে আমার যে অবস্থা দেখছ, যদি এ অবস্থা আমার না হ’ত, তাহ’লে আমি তোমাকে এ বিষয়ে অবহিত করতাম না। আর আমি আশঙ্কা করছি যে, এ কারণে তোমার সাথে আমার আচরণ খারাপ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং তোমার যা করণীয় কর। তখন ঐ অগ্নিপূজক বলল, হে শায়খ! আপনি এই দীর্ঘ সময়ে আমার সাথে এই উত্তম ব্যবহার করেছেন, আর আমি আমার কুফরীর উপরে অটল রয়েছি! আপনি হাত বাড়িয়ে দিন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন হক মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। এরপর সাহল (রহঃ) মৃত্যুবরণ করেন (আব্দুল্লাহ ইবনে আস‘আদ আল-ইয়াফেঈ, আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), পৃঃ ১২১-২২, ক্রমিক নং ৪৩৮)।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রতিবেশীর দেওয়া কষ্টে ধৈর্যধারণ করে এবং তার অসদাচরণে সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে উত্তম প্রতিবেশী তথা উত্তম মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা কর্তব্য। এতে যেমন অশেষ ছওয়াব লাভ করা যাবে তেমনি এক সময় ঐ প্রতিবেশী তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে। ফলে সে তার কৃতকর্ম থেকে স্থায়ীভাবে ফিরে আসবে। তাই মহান আল্লাহর কাছে আমাদের আকুল প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিবেশী হওয়ার তাওফীক দান করেন-আমীন!