আমি মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম। নওগাঁ যেলার রাণীনগর উপযেলার গোপালপুর গ্রামে আমার বসবাস। আমার বড় বোনের চাকুরীর সুবাদে আমি কিছুদিন রংপুর যেলার শঠিবাড়িতে ছিলাম। সেখানে একটি মসজিদে ছালাত আদায় করতাম। সেই মসজিদে মাঝেমধ্যে মাসিক আত-তাহরীক, ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ও আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ-এর লেখা বিভিন্ন বই দেখা যেত। একদিন নিজ ইচ্ছায় কিছু বই ক্রয় করি এবং শঠিবাড়ি বাজার থেকে তাঁদের বক্তব্য সংগ্রহ করে শুনি। এতে বুঝতে পারলাম যে, তাদের বক্তব্যের সাথে আমাদের ছালাতসহ অন্যান্য বিষয়ে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। উল্লেখ্য যে, আমার পরিবার, গ্রাম এবং এলাকার মানুষ হানাফী মাযহাবের কট্টরপন্থী অনুসারী।

অতঃপর একদিন শঠিবাড়ি মসজিদের পাশে পোষ্টার দেখে জানলাম, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর যেলা সম্মেলন রংপুর শহরে অনুষ্ঠিত হবে (পরে তা হারাগাছে অনুষ্ঠিত হয়)। আমি সেখানে গিয়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শুনি এবং তার ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) বইটি ক্রয় করি। কিছুদিন পর আমি আমার গ্রামে ফিরে আসি। ইতিমধ্যে আমি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ছালাত আদায় শুরু করে দেই এবং শিরক ও বিদ‘আত হ’তে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করি। এভাবে ছালাত আদায় করতে দেখে মানুষ বিভিন্ন কথা বলতে লাগল। কেউ বলে, আমি মুহাম্মাদী হয়ে গেছি। আবার কেউ বলে, অন্য আরেকটি মাযহাব আসতেছে। আমি সেই মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের গ্রামে আমার একজন চাচাশ্বশুর আছেন। তিনি তাবলীগ জামাআতের আমীর এবং আমাদের মসজিদের সভাপতি। চাচার সাথে আমার প্রায় সকল বিষয়ে যেমন ছালাতে হাত বাঁধা, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা, জোরে আমীন বলা, কুলূখ ব্যবহার, তাবীয ব্যবহার, তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা, সম্মিলিত মুনাজাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত বিষয়ে চাচার সাথে আমার মাঝেমধ্যে বিতর্কও হ’ত। রামাযান মাসে কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে আমার স্ত্রী বাড়িতে জামা‘আতে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছে। এটা শুনে চাচা বলেন, মহিলাদের ইমামতি করা জায়েয নয়। চাচা মহিলাদের বাড়িতে গিয়ে বলে এসেছে, তারা যেন জামা‘আতে তারাবীহর ছালাত আদায় না করে। চাচা আমাকে বলেন, তোমার জোরে ‘আমীন’ বলায় মুছল্লীদের সমস্যা হয়। তুমি গ্রামের মানুষের হাতে মার খাবে। তিনি আরও বলেন, তুমি ছালাত আদায় করবে মুহাম্মাদী মসজিদে। উল্লেখ্য যে, আমাদের এলাকায় পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে মুহাম্মাদী তথা আহলেহাদীছ আছে।

একদা একজন গ্রাম্য লোক আমাকে জিজ্ঞেস করল যে, তাবলীগ জামাআতে যাওয়া যাবে কি-না? আমি তখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কয়েকজন মুহাদ্দিছের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছিলাম, তাবলীগ জামাআতে যাওয়া যাবে না। কারণ তাবলীগ জামাআতে অনেক শিরক ও বিদ‘আত রয়েছে। এ কথা শুনে চাচা হয়ত সহ্য করতে পারেননি। তাই আমার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। মসজিদের সভাপতি হওয়ায় তিনি মসজিদের ইমামকে আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে বলতেন। যেমন আমি চাচাকে বলেছিলাম, পুরুষ ও মহিলার ছালাতে কোন পার্থক্য নেই। ফলে একদিন জুম‘আর ছালাতের আগে ইমাম মসজিদে এসে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)-এর কিতাব থেকে পুরুষ ও মহিলার ছালাতের অনেকগুলো পার্থক্য বর্ণনা করেন। সেদিন তারাবীহর ছালাতের পূর্বে ইমাম মসজিদে অনেকগুলো কিতাব নিয়ে এসে চুপে চুপে আমীন বলার হাদীছ পেশ করেন। এতগুলো কিতাব দেখে একজন মুছল্লী ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, হুযুর! কোনদিন এত কিতাব তো মসজিদে নিয়ে আসেননি, আজ হঠাৎ এত কিতাব নিয়ে এসেছেন কেন? তখন ইমাম বললেন, শুনলাম গ্রামের একটা ছেলে আহলেহাদীছ হয়ে গেছে, তাই এত কিতাব নিয়ে এসেছি। সেদিন আমি কিছু বললাম না। পরের দিন তারাবীহর ছালাতের পূর্বে আমি বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মুয়াত্তা ইমাম মালেক (রহঃ), বুলূগুল মারাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামায (মুহাম্মদ নাছিরুদ্দীন আলবানী), নবী করীম (ছাঃ)-এর ছালাত আদায়ের পদ্ধতি (শায়খ বিন বায), আল-লুলু ওয়াল মারজান (ফুয়াদ আব্দুল বাকী), ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) (মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব) বইগুলো থেকে জোরে আমীন বলার হাদীছ পেশ করার জন্য মসজিদে গেলাম। দু’টি হাদীছ শুনতেই ইমাম আমাকে প্রশ্ন করল, আপনার হাদীছগুলো কোন্ মাযহাবের? আমি বললাম, ছহীহ বুখারীর হাদীছগুলো কি কোন মাযহাবকে উদ্দেশ্য করে লেখা? ইমামের সদুত্তর পেলাম না। আমি ইমামকে বললাম, আপনি হানাফী কিভাবে হ’লেন? ইমাম বললেন, বাপ-দাদার আমল থেকে। আমি ইমামকে আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের নবী (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করার কতদিন পর মাযহাবের সুচনা হয়েছে? ইমাম বলল, আমার জানা নেই, এটা আমার গবেষণা করতে হবে। আমি তাকে বললাম, আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন, ‘হাদীছ ছহীহ হ’লে সেটাই আমার মাযহাব’। ইমাম কিছুই বললেন না। ইতিমধ্যে মুছল্লীদের মধ্যে গোলযোগ শুরু হয়ে গেল। অনেকে আমার উপর খুব রেগে গেল। তারা বললেন, তুমি হুযুরের চেয়ে বেশী বুঝ? অনেক তর্কের পর মুছল্লীরা আমাকে জিজ্ঞেস করল, তোমাকে কি কেউ জোরে আমীন বলতে নিষেধ করেছে? আমি বললাম, আমার চাচা আমাকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু চাচা তাৎক্ষনিকভাবে তা অস্বীকার করলেন।

শেষ পর্যন্ত মসজিদের মুছল্লীরা সিদ্ধান্ত নেন যে, যার যেভাবে খুশী সেভাবে ছালাত আদায় করবে। এখন কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুসারে ছালাত ও অন্যান্য আমল করার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষের কটূবাক্য শুনতে হয়। চাচার সাথে এখন শুধু সালাম বিনিময় হয়। আমি এখন গ্রামের মানুষকে সঠিক পথের দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করছি। হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর সকল বই ও অন্যান্য বিশুদ্ধ তথ্যসমৃদ্ধ বই ইতিমধ্যে ক্রয় করেছি, যাতে ছহীহ কথা জানতে পারি এবং মানুষকে তা জানাতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!!

মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলাম

গোপালপুর, গুয়াতা, রাণীনগর, নওগাঁ।






হকের পথে যত বাধা - মুহাম্মাদ ইসমাঈল হোসাইন - মাইজদী, নোয়াখালী
হকের উপরে অবিচল থাকতে দৃঢ় প্রত্যয়ী
এই মসজিদে এসো না, আসলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। - কাউছার, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
তোমাকে দাওয়াতী কাজের জন্য ঘর ভাড়া দেইনি - ডা. মুহাম্মাদ ফযলুল হক, সফিপুর, গাযীপুর।
ছালাতে রাফঊল ইয়াদায়েন করার কারণে চাকুরীচ্যুতি - .
স্রেফ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হোক আমাদের পথচলা
আহলেহাদীছ হওয়ার কারণে বাড়ীছাড়া! - -মুহাম্মাদ ইবরাহীম, দাগনভূঞা, ফেনী।
আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ্বাসী, এটাই কি আমার অপরাধ!
তুমি বেলাইনে চলে গেছ - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
যেভাবে আহলেহাদীছ আক্বীদা গ্রহণ করলাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
মাযহাবীদের চাপে নিজের মসজিদ ছাড়তে হ’ল - * মুহাম্মাদ দেলাওয়ার হোসাইনকুঠিপাড়া, ফরিদপুর।
হক-এর পথে যত বাধা - হাসান আলী ঈশ্বরদী,পাবনা
আরও
আরও
.