সিরাজগঞ্জ যেলার চৌহালী উপযেলার যমুনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের মধ্যে একটি চরের নাম স্থলচর। বর্তমানে এটি একটি গ্রাম। সেই অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে আমি। পিতার নাম সন্তেষ আলী। হানাফী পরিবারে আমার জন্ম। পিতার বড় ছেলে হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকে আমি একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। যেমন গান-বাজনার জন্য যত ধরনের যন্ত্র দরকার, সব আমার সংগ্রহে ছিল। ছোটবেলা থেকে গানের নেশায় মত্ত থাকায় খুব বেশী দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করা হয়নি। তবে যতটুকু লেখাপড়া করেছিলাম সেটুকুর সদ্ব্যবহার করেই আজকের এই লেখা। আর এর ফলেই হকের পথে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

লেখাপড়া বেশী ভাল না করার কারণে অর্থ উপার্জনের জন্য কর্মের পিছনে ছুটতে হয়েছে আমাকে। তাই একটু বড় হয়েই কাঠমিস্ত্রির কাজ শিখতে শুরু করি। এর মাধ্যমেই আমি হকের পথের সন্ধান পাই। আহলেহাদীছ আলেম-উলামার বক্তব্য শুনে আমার চিন্তা-চেতনা হকের দিকে ফিরে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি ঘরের ভিতরে ছালাত পড়ার সময় রাফঊল ইয়াদায়ন শুরু করি এবং বাইরে মাযহাবীদের মত করে ছালাত আদায় করতে থাকি। এভাবে ভয়ে ভয়ে প্রায় এক মাস কেটে গেল। তারপর আমি চিন্তা করলাম, এভাবে ছালাত বা ইবাদত করে কি হবে? তারপর আমি আমার এক সাথীকে বললাম, আমি ঘরের ভিতরে ছহীহ হাদীছ অনুসারে ছালাত আদায় করি। সে বলল, আমিও তো এভাবেই ছালাত আদায় করি! তারপর সেই সাথী (যে ছিল হানাফী মাযহাবের এবং পরে ছহীহ হাদীছের অনুসারী) একদিন আমাদের এক আহলেহাদীছ ভাইয়ের সাথে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময় তার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ায়। এরপর ছালাত শেষে সেই পুরানো আহলেহাদীছ ভাই জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা হানাফী মাযহাবের লোক হয়ে বুকে হাত বেঁধে ছালাত আদায় করলে কেন? সেই সাথী ভাই তখন বলে দিলেন যে, আরেক জন আছে তার নাম আশরাফুল। সেও আমার মত করে গোপনে ছালাত আদায় করে। অতঃপর এই আহলেহাদীছ দুই ভাই আমাকে পরিপূর্ণভাবে ছহীহ হাদীছ মানার জন্য দাওয়াত দেন। ফলে আমার বুকে সাহস সঞ্চারিত হয় এবং আমি পরিপূর্ণভাবে হাদীছ মানতে শুরু করি। অতঃপর আমি ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) বইটি ক্রয় করি। সেটা নিয়ে আমি আমাদের মসজিদে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে যাই। আমার ছালাত দেখে সবাই আমার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। ছালাত শেষ করে বাড়ির দিকে আসতেই আমাকে পিছন থেকে ডাকা হয়। আমি মসজিদে ফিরে এসে বললাম, আমার ছালাত দেখে আপনারা কি সবাই অসন্তুষ্ট? সবাই বলল, হ্যাঁ। তারা বলল, বাপ-দাদারা কি ভুল করে গেছেন? এত বড় বড় আলেমরা কি ভুল করছেন? আমি তখন ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ বইটা বের করে বললাম, দেখেন এটাতে আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ আরো অনেক ছাহাবীর হাদীছ আছে। আমার এক চাচা বলল, এই বইটা কে লিখেছে? আমি বললাম, ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। তাদের মধ্যে একজন তাঁর সম্পর্কে কটূক্তি করল। পরে আমাকে ঘিরে অনেক কথা হ’ল। আমি বললাম, আমি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপরীতে কারো কথা মানি না। তারপর থেকে আমাকে নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হ’ল। গ্রামের মাতববররা বলল, ওকে না ঠেকালে আমাদের মান-সম্মান ধূলোয় মিশে যাবে। আমাকে বলল, তুই ফিরে আয়। আমি বললাম, ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে রাযি আছি, তবুও জোরে ‘আমীন’ বলেই মরব। কারণ হাদীছে জোরে আমীন বলার কথা আছে। তারা বলল, তাহ’লে তাই হবে। পরে তিন গ্রামের মানুষ ডেকে শালিস হ’ল। শালিসে আমার চাচা আমাকে বলল, তুই হয় ওদের গোত্রে যাবি, আর না হয় আমাদের গোত্রে আসবি। আমি তখন ভয়ে ভীত হয়ে তিন কুল সহ দো‘আ ইউনুস পড়া শুরু করলাম। আমি বললাম, আমি হকের পথ থেকে ফিরে আসব না। তারা বলল, তাহ’লে ৭ দিনের মধ্যে এ এলাকা থেকে বাড়ি ভেঙ্গে নিতে হবে। তা না হ’লে আমরা তোমার বাড়ি ভেঙ্গে দিব। আর যদি ফিরে আস তাহ’লে তোমার সব সমস্যা আমরা সমাধান করে দিব। অতঃপর বাড়িতে ফিরে এলে স্ত্রী বলল, আমার বাবা তো আমাকে রফাদানীর সাথে বিয়ে দেননি। অবশেষে স্ত্রীর কথায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হ’লাম। ঢাকার সাভারে গিয়ে ১৫ দিন থাকলাম। ১৫ দিন পরে বাড়িতে ফিরে আসলাম। বাড়িতে আসার পর লোকজন বলছে, ও এখন ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকে। পরে স্থানীয় আহলেহাদীছ ভাইদের সহযোগিতায় বাড়ি ভাঙ্গতে হয়নি। কিন্তু বাবা তার সমস্ত সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করে ছোট ভাইকে সব জমি লিখে দিয়েছেন। আমি এখন আহলেহাদীছ সমাজেই আছি। আমি সকলের কাছে দো‘আ প্রার্থী। আল্লাহ যেন আমাকে সকল বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে হকের পথে টিকে থাকার তাওফীক দান করেন-আমীন!!







অবশেষে হক-এর সন্ধান পেলাম - কামাল আহমাদ, লাকসাম, কুমিল্লা
তোর মতো ছালাত পড়া তো জীবনে কোথাও দেখিনি! - আকীকুল হাসান
যেভাবে আহলেহাদীছ আক্বীদা গ্রহণ করলাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
ছালাতে রাফঊল ইয়াদায়েন করার কারণে চাকুরীচ্যুতি - .
তোমাকে দাওয়াতী কাজের জন্য ঘর ভাড়া দেইনি - ডা. মুহাম্মাদ ফযলুল হক, সফিপুর, গাযীপুর।
যেভাবে হকের দিশা পেলাম! - আত-তাহরীক ডেস্ক
‘সকলের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে বল, এখন থেকে ইমাম আবু হানীফার আদর্শ অনুযায়ী জীবন-যাপন করব’ (!)
থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব - -আব্দুল্লাহ, গাযীপুর।
ও চটি বই পড়ে পাগল হয়ে গেছে...
স্রেফ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হোক আমাদের পথচলা
‘তোমাকে সঊদী আরবের ভূতে ধরেছে’ - নূরুল ইসলাম, নাটোর
হক-এর পথে যত বাধা
আরও
আরও
.