মিয়ানমার
সেনাবাহিনীর দুই সেনা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে
ডজনেরও বেশী গ্রামবাসীকে হত্যার পর গণকবর দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে কমান্ডারের কাছ থেকে তারা
স্পষ্ট নির্দেশ পেয়েছিল, ‘যাকে দেখবে, গুলি করবে’। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য
কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এবং মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস
সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে।
এছাড়া রাখাইনে দায়িত্ব পালন করা আরো দুই সৈনিকও মুখ খুলেছে নিজ দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তাদের একজন বলেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনা কর্মকর্তারা তাকে বলতেন, ভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সবাই দাস। তাদের সঙ্গে সে হিসাবেই ব্যবহার করতে হবে।
উক্ত সৈনিক স্বীকার করেছে যে, তাদের ব্যাটালিয়নকে পাঠানো হয়েছিল সেখানকার কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালানোর জন্য। সে ৩০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। হত্যা শেষে তারা রোহিঙ্গাদের মরদেহ গণকবর খুঁড়ে পুঁতে দেয়। একজন নারীকে ধর্ষণের কথাও স্বীকার করেছে সে।
আরেক সেনা সদস্য জানিয়েছে, তার ব্যাটালিয়ন প্রায় ২০টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। এ পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। এই দু’জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে ফর্টিফাই রাইটস জানিয়েছে, তারা উভয়ে প্রায় ১৮০ রোহিঙ্গা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। উক্ত দুই সেনা আদালতে যবানবন্দী দেবে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে যে, প্রথমোক্ত দুই সেনা রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে
লড়ে যাওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ হেফাযতে ছিল। পরে তাদের
নেদারল্যান্ডসের হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে
(আইসিসি) এই সেনাদেরকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করা হ’তে পারে কিংবা বিচার করা
হ’তে পারে।
তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুনকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, তাদের বন্দি করে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে নির্মম বর্বরতা চালিয়েছে তা ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন-এর গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। বর্তমানে তার সাথে যোগ হয়েছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।
যার প্রেক্ষিতে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। যদিও মিয়ানমার তাদের বিরুদ্ধে এ তদন্তকে বেআইনি বলেছে। কারণ মিয়ানমার আইসিসি সনদে স্বাক্ষর করেনি। তাই তারা এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য নয়। কিন্তু আইসিসি বলছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র বাংলাদেশ অত্র সংস্থাটির সদস্য হওয়ায় এই তদন্তের এখতিয়ার তাদের রয়েছে।