ভুল ধারণা-৪ :
আহলেহাদীছগণ আল্লাহর ওলীদেরকে অস্বীকারকারী :
কেউ কেউ এটা মনে করেন যে, আহলেহাদীছগণ আল্লাহর ওলীদেরকে মানেন না। কোন কোন বক্তা একথাকে রংচং লাগিয়ে আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে আমজনতাকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ প্রকৃত সত্য এই যে, আহলেহাদীছগণ বেলায়াত (আল্লাহর নৈকট্য) মানেন। এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত এর দরজা উন্মুক্ত থাকার আক্বীদা পোষণ করেন।
১. আহলেহাদীছদের নিকটে ওলী কারা? মহান আল্লাহ বলেন,أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ- ‘মনে রেখ আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না। যারা ঈমান আনে এবং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে’ (ইউনুস ১০/৬২, ৬৩)।
কুরআন মাজীদের অসংখ্য আয়াতে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, কোন কোন বান্দাকে তাদের পরিপূর্ণ ঈমান ও সার্বক্ষণিক আল্লাহভীতি অবলম্বনের ভিত্তিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে ‘বেলায়াত’ প্রদান করে থাকেন। তাদেরকে তাঁর একান্ত আপন ও নৈকট্যশীল বান্দা করে নেন। একথা অস্বীকার করা কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছ সমূহকে অস্বীকার করার নামান্তর। আহলেহাদীছগণ এসব দলীলের উপর দৃঢ় বিশ্বাস করতঃ অকপটে আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা প্রদান করে থাকেন। কিন্তু কুরআনের উল্লেখিত আয়াতে যেখানে ওলীদের মর্যাদা ও তাদের জন্য আল্লাহর ওয়াদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তাদের গুণাবলীও বর্ণনা করা হয়েছে। যেসব গুণের কারণে ওলীগণ এ মর্যাদায় অভিষিক্ত সেগুলি কী? তা হ’ল দু’টি বিষয়- (১) পরিপূর্ণ ঈমান (২) পূর্ণ তাক্বওয়া। আহলেহাদীছদের আক্বীদা এই যে, মযবুত ঈমান ও তাক্বওয়ার গুণে বিভূষিত হওয়া ছাড়া কোন মানুষ আল্লাহর ওলী হ’তে পারে না। ঐ ব্যক্তিই আল্লাহ তা‘আলার বেলায়াত বা বন্ধুত্বের হকদার, যার আক্বীদা হবে বিশুদ্ধ এবং জীবনাচরণ হবে তাক্বওয়ার মূর্তপ্রতীক।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হ’ল, অনেক মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত মানদন্ডকে অবজ্ঞা করে কপোলকল্পিত মূলনীতি সমূহের আলোকে যাকে ইচ্ছা ওলী বানিয়ে দেয়। চাই তার জীবন নবীদের সর্দার মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শিক্ষা সমূহের যতই খেলাফ হোক না কেন এবং ঈমান ও আমলের দিক থেকে সেই শিক্ষার সাথে তার দূরতম সম্পর্কও না থাক। বিস্ময়কর কিছু প্রকাশিত হওয়াকে ওলী হওয়ার মানদন্ড বানিয়ে নেয়। ফলে তারা এমন লোককেও আল্লাহর ওলী বানিয়ে দেয় যারা ছালাত-ছিয়াম পরিত্যাগ করে নেশায় চুর হয়ে অনর্থক কথা বলায় ব্যস্ত থাকে। যখন অন্তর্দৃষ্টির উপর প্রচলিত ধ্যান-ধারণার পট্টি বেঁধে দেওয়া হয় তখন এরূপ কারিশমা প্রকাশিত হয়।
২. আহলেহাদীছদের নিকটে বিস্ময়কর ঘটনা সমূহ ওলী হওয়ার দলীল নয় : কিছু অলৌকিক জিনিস কাউকে ওলী প্রমাণের জন্য দলীল হ’তে পারে না। বরং আসল কষ্টিপাথর হল কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ। আসুন! এ ব্যাপারে জানা যাক যে, ইমাম শাফেঈ (রহঃ) কী মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّجُلَ يَمْشِي عَلَى الْمَاءِ وَيَطِيرُ فِي الْهَوَاءِ فَلَا تَغْتَرُّوا بِهِ حَتَّى تَعْرِضُوا أمرَه على الكتابِ والسنةِ ‘যখন তুমি কাউকে পানির উপর হাঁটতে এবং হাওয়ায় উড়তে দেখবে, তখন মোটেই ধোঁকায় পড়বে না। যতক্ষণ না তার কর্মকান্ডকে কুরআন ও সুন্নাহর মানদন্ডে পরিমাপ করবে’।[1] অর্থাৎ কেউ যতই অলৌকিক কিছু দেখাক না কেন তাতে ধোঁকায় পড়বে না। বুঝা গেল যে, কেবল কারামতের ভিত্তিতে কাউকে ওলীর মর্যাদা প্রদান করা আলেমদের রীতি নয়। বরং তাদের নিকট প্রকৃত ওলী তিনি যার আক্বীদা ও আমল, প্রকাশ্য ও গোপন সব কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণে হবে।
এ কথাটি বর্ণনা করেছেন দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন প্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন খলীল ইবনু আহমাদ আল-ফারাহীদী, যিনি বড় তাবে তাবেঈদের অন্যতম। তিনি বলেন,إِنْ لَمْ يَكُنْ أَهْلُ الْقُرْآنِ وَالْحَدِيثِ أَوْلِيَاءَ اللهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ وَلِيٌّ ‘যদি কুরআন ও হাদীছের অনুসারী ব্যক্তি আল্লাহর ওলী না হন তবে পৃথিবীতে আল্লাহর কোন ওলী নেই’।[2] অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃত ওলী হওয়ার হকদ্বার তারাই যারা কুরআন ও হাদীছের ধারক-বাহক এবং তার উপর আমলকারী।
৩. আহলেহাদীছদের নিকট আল্লাহ্ই উপকার ও ক্ষতি করার মালিক : এখানে এ বিষয়টিও লক্ষণীয় যে, ওলীদেরকে মানা ও তাদের কবরের নিকট চাওয়ার মধ্যে আসমান-যমীন পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি স্বয়ং ঈমানের দাবী, কিন্তু দ্বিতীয়টি তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলেহাদীছদের আক্বীদা হল, পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর হয়। মানুষের উপর সুখ-দুঃখ, আরাম-কষ্ট যা কিছু আসে তা আল্লাহরই ফায়ছালার ফলশ্রুতি। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত না কেউ কাউকে কিছু দিতে পারে, আর না কারো নিকট থেকে কিছু ছিনিয়ে নিতে পারে। সৃষ্টিজগতে আল্লাহর ইচছাই কার্যকর হয়। এজন্য একজন মুসলিমকে তার সকল বিষয়ে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ‘আল্লাহ যদি তোমাদের কাউকে কোন কষ্ট দিতে চান, তবে তিনি ব্যতীত আর কেউ সেটাকে প্রতিহত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদের কারো কল্যাণ করতে চান, তবে তোমাদের উপর কৃত অনুগ্রহকে কেউ ফিরাতে পারবে না। তিনি স্বীয় বান্দাদের যাকে চান অনুগ্রহ দান করেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়াবান (ইউনুস ১০/১০৭)।
৪. আহলেহাদীছদের নিকট কবরের ইবাদত করা ও তাকে সিজদার স্থানে পরিণত করা হারাম : সম্মানিত ওলীগণ বা যেকোন মুসলমানের কবরকে অসম্মান করা আহলেহাদীছদের নিকট গুনাহের কাজ। কিন্তু ওলীদের কবরের নিকটে কামনা-বাসনা করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, সেখানে গিয়ে সিজদা করা এবং এই আক্বীদা পোষণ করা যে, তারা আমাদের সমস্যা সমাধান করেন, আমাদেরকে রিযিক ও সন্তান-সন্ততি দান করেন এবং রোগমুক্তি দান করেন, এমনকি তাদের কবরের মাটি ও দড়িও আমাদের সফলতা ও পরিত্রাণ দিয়ে থাকে, এ সকল আক্বীদা-আমল আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা ও তাঁর ছাহাবীদের কর্মপদ্ধতির সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলেহাদীছগণ অবশ্যই ওলীদেরকে সম্মান করেন, কিন্তু তাদেরকে আল্লাহর রুবূবিয়াত ও উলূহিয়াতে শরীক করেন না। তারা তাদের কবরকে অসম্মান করেন না, কিন্তু তাদের কবরগুলিকে রব ও মা‘বূদও বানিয়ে নেন না।
কবর সমূহকে ইবাদতখানা বানানো ইহুদী-নাছারাদের তরীকা।
ইহুদী-নাছারাদের অনুকরণ করা তো এমনিতেই নিষেধ, উপরন্তু ইসলামে কবরগুলিকে
সিজদার স্থান বানানোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا
يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا
فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ، إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
‘সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের
কবরগুলিকে মসজিদ (সিজদার স্থান) বানিয়ে নিত। সুতরাং তোমরা কখনো কবর সমূহকে
মসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদের এ থেকে নিষেধ করছি’।[3]
ইসলামে মসজিদ এমন স্থানকে বলা হয়, যেখানে আল্লাহকে সিজদা করা হয়। যখন কবর সমূহকে মসজিদ বানানো জায়েয নয়, তখন সেই কবরে কিভাবে সিজদা দেওয়া যায়? সিজদা ইবাদত। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে নিষেধ করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে সিজদা না করি। মহান আল্লাহ বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ- ‘আর এ রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র আললাহ তা‘আলার নিদর্শনের অন্যতম। সেকারণ না তোমরা সূর্যকে সিজদা করবে, না চন্দ্রকে। বরং ঐ আল্লাহকে সিজদা করবে যিনি এসবকে সৃষ্টি করেছেন। বাস্তবে যদি তোমরা আল্লাহর ইবাদত করে থাক’ (ফুছছিলাত ৪১/৩৭)।
তাওহীদের স্বীকৃতি প্রদানের পর শিরকী পথে চলা মুমিনের নিদর্শন নয়। সেজন্য আহলেহাদীছগণ যেকোন ইবাদতে আল্লাহর সাথে কোন ব্যক্তিকে শরীক করেন না। চাই সে ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন। আহলেহাদীছগণ তাদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য কবরস্থ নেক্কার ব্যক্তিদেরকে ডাকেন না। আহলেহাদীছদের নিকট এরূপ কাজ শিরক। কারণ দো‘আ ইবাদত। আর আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে দো‘আ-প্রার্থনা করা তাকে আল্লাহর ইবাদতে শরীক করার নামান্তর।
৫. আল্লাহর ওলীগণ স্বয়ং ঐ সকল ব্যক্তির দুশমন, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকে : মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ، وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ- ‘তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কে আছে, যে আল্লাহকে ছেড়ে এমন বস্ত্তকে ডাকে যে কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না? আর তারাও তাদের আহবান সম্পর্কে কিছুই জানেনা। যেদিন মানুষকে সমবেত করা হবে, সেদিন এইসব উপাস্যরা তাদের শত্রু হবে এবং তারা তাদের পূজার বিষয়টি অস্বীকার করবে’ (আহক্বাফ ৪৬/৫-৬)।
এ আয়াতে ঐ সকল মানুষকে গোমরাহ বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট প্রার্থনা করে। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকটে দো‘আ করা মূলতঃ তার ইবাদত করার নামান্তর। সেকারণ আহলেহাদীছদের নিকট আল্লাহ ছাড়া কোন কবর বা কবরস্থ ব্যক্তিদের নিকটে প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা করা শিরক। এ ধরনের আমল না কুরআন ও সুন্নাহতে রয়েছে। আর না কোন ছাহাবী থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যদি এটা আসলেই ইসলামে বৈধ হ’ত তাহলে ছাহাবীগণ অবশ্যই নবী (ছাঃ)-এর কবরের নিকট গিয়ে তাদের দ্বীন-দুনিয়ার সব সমস্যার সমাধান চাইতেন।
৬. আহলেহাদীছরা আল্লাহর নিকটে ইবাদত পৌঁছার জন্য ওলীদের অসীলা নির্ধারণ করেন না : আহলেহাদীছদের আক্বীদা এই যে, আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের জন্য তাঁর বান্দাদেরকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর ইবাদতে তাদেরকে শরীক করা হারাম। সকল ইবাদত আল্লাহর জন্যই খাছ। এজন্য আল্লাহর ওলীদেরকে এভাবে অসীলা বানানো যে, তাদের নামে নযর-নেয়ায মেনে তাদের নামে পশু যবেহ করা অথবা তাদের নৈকট্য হাছিলের জন্য পশু যবেহ করা, তাদের কবর সমূহকে তওয়াফ করা, তাদের কবরে সিজদা করা প্রভৃতি শিরক। উপরন্তু এটা হুবহু সেই শিরক, যা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে আরব মুশরিকদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। এটা শিরকের সেই প্রকার যার খন্ডনে কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللهِ زُلْفَى إِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ-
‘যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তো এদের পূজা কেবল এজন্যেই করি যেন এরা (সুফারিশের মাধ্যমে) আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে। আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন, যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সরল পথে পরিচালিত করেন না’ (যুমার ৩৯/৩)।
আরবের মুশরিকরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নিজ হাতে তৈরী মূর্তির পূজা করত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ, কিন্তু সে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যে পদ্ধতি তারা অবলম্বন করেছিল তা ভুল ছিল। আল্লাহর নিকট পৌঁছার জন্য শয়তান তাদেরকে যে পথ দেখিয়েছিল তা তাদেরকে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।
আহলেহাদীছগণ মনে করেন যে, সফলতা লাভের জন্য স্রেফ ভাল উদ্দেশ্যই যথেষ্ট নয়, বরং সে উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গৃহীত পন্থা আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাঃ) আনীত শরী‘আত মোতাবেক হওয়াও যরূরী।
[চলবে]
[1]. হাফেয ইবনু কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৩/২১৭।
[2]. খতীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ ক্রমিক ৯৬।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/৮২৭ ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অধ্যায়।